ক্যাডেট কলেজের মা-বাবা ছাড়া দিনগুলিতে কিছু মানুষের নিবিড় স্নেহ-মমতা আমাদের আজীবন ঋণী করে রেখেছে। আমাদের সবার প্রিয় ম্যাথাম্যাটিক্সের নুরুল ইসলাম স্যার তাঁদের অন্যতম প্রধান। ক্যাডেটদের স্বভাবসিদ্ধ ‘শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা’র উর্ধের এই মানুষটি ছিলেন দার্শনিক গোত্রের। তিনি কেন রাগ করতে পারেন না, বা করেন না – এটাই আমাদের কাছে বিস্ময়ের বিষয় ছিল। অন্যদের বেদম প্রহারে যা হত না – নুরুল ইসলাম স্যারের ‘কি রে বেটা!’ ‘স্টুপিড’ বা ‘বোকা ছেলে’ ধরনের বকাঝকাতেই কাজ হয়ে যেত – আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পারতাম, লজ্জিত হতাম, শপথ করতাম আর কোনদিন কৃত অপরাধের পুনরাবৃত্তি করব না।
অংক শেখানোর ব্যাপারে স্যার ছিলেন প্রফেসর শ্রেণীর, একই অংক কয়েকভাবে করিয়ে তিনি প্রমান করতেন, অংক ব্যাপারটায় অনেক মজাও আছে। স্যার আমাদের মাঝে মাঝে ইংরেজিও পড়াতেন, শেখাতেন ইংরেজি আবৃত্তি। মনে পড়ে, উইলিয়ম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর দ্য সলিটারি রিপার, তার শেখানো স্টাইলে আবৃত্তি করেই প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলাম।
পরম শ্রদ্ধেয় এই সাধুশ্রেণীর মানুষটি, আমার ক্লাসমেট তৌফিকের (২০/১১৩৯) বাবা, জনাব নুরুল ইসলাম আজ সকালে তাঁর ঝিনাইদহের বাসায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। যে মানুষটি দীর্ঘতম সময়ের জন্য ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ছোট ছোট ছেলেগুলোকে স্নেহরসে সিক্ত করে আমাদের হৃদয়ে আমাদের নিজেদের বাবা-মায়ের মতই আজীবনের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন, তাঁকে পরম করুণাময় নিজে হাজার লক্ষগুণ উত্তম আশীর্বাদে সিক্ত করে রাখবেন – এই কামনা করি।
🙁
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাই, বহুদিন পর আপনার দেখা পেলাম। কিন্তু খবরটা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গল।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
প্রয়াত শিক্ষকের প্রতি এ শ্রদ্ধাঞ্জলি ভালো লাগলো।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। আমি যদি ভুল করে না থাকি, নুরুল ইসলাম স্যার বেশ আগেই ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে অবসরে যান। স্যার বেশ হালকা পাতলা মানুষ ছিলেন। তখন ২০০৩ সাল। এরশাদের আমলের পর আবার ক্যাডেট কলেজে ইংরেজী ভার্সনে পড়াশুনা চালু হয়েছে। আমরা সেই গিনিপিগ ব্যাচ। তখনকার পুরাতন/ বয়স্ক স্যারেরা তখন সোৎসাহে আমাদের দিগুণ-তিনগুণ-চতুর্গুণ উদ্যমে ইংরেজী মাধ্যমে শিক্ষাদানে নিজেদের নিয়োজিত করলেন। ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন সৈয়দ রফিকুল হোসেন (রফিক নওশাদ) স্যার। তিনিও চেষ্টায় কোন কমতি রাখলেন না। হঠাৎ একদিন শুনলাম এক স্যার আসবেন, আমাদের অঙ্ক শেখাবেন। যথারীতি আমাদের দুই সেকশনকে ক্লাস টেনের গ্যালারিতে নেওয়া হলো। একজন ভদ্রলোককে নিয়ে ভাইস-প্রিন্সিপাল স্যার গ্যালারিতে প্রবেশ করলেন। স্যার পরিচয় করিয়ে দিলেন। সাবেক গণিতের শিক্ষক, বর্তমানে কোটচাঁদপুর কলেজে শিক্ষকতা করেন। তোমাদের অনেক উপকার হবে। সাথে মনে হয় মতিউর রহমান স্যার, সানাউল হক স্যার, আবদুল মান্নান স্যার, আবুল কালাম আজাদ স্যারদের কেউ একজন ছিলেন (মনে করতে পারছি না)। পরিচয় পর্ব শেষ করে স্যাররা গ্যালারির পিছনে গিয়ে বসলেন। আমরা ভয়ে মাথা ঘুরানোর সাহস করছিনা, ভিপি স্যারকে আমরা যমের মত ভয় পেতাম। স্যার ক্লাস শুরু করলেন। একটি বর্ণও বাংলা বললেন না। আমার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বোধকরি সবারই মাথার উপর দিয়ে গেলো। স্যার কালো ব্ল্যাকবোর্ডে সাদা চক দিয়ে একপাশ থেকে অন্যপাশ অংক করিয়ে গেলো। একসময় ক্লাস শেষ হলো। স্যারের দুই হাত, জামার হাতা চকের পাউডারে ছেয়ে গেছে। রফিক স্যার উপর থেকে নেমে আসলেন। নেমে এসে স্যারকে ধন্যবাদ দিলেন। তখন স্যারের চোখে সম্মান- শ্রদ্ধা ছিলো। তারপর উনারা মিল্কের জন্য টিচার লাউঞ্জের দিকে চলে যান। এখন উপলব্ধি করতে পারি, হয়তো আমাদের উপকারের জন্য ভিপি স্যার ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন, কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়, হয়তো পুরনো সহকর্মীদের সাথে মিলিত হবেন, কিছু সময় গল্প করবেন, চা-নাস্তা খাবেন, ক্যাডেটদের কথা চিন্তা করে ছুটে এসেছেন পুরনো কর্মস্থলে। নুরুল স্যার বিদায় নিলেন, রফিক স্যারও নেই অনেকদিন। আরো অনেকে চলে গেছে। উনারা দিয়ে গেছে ষ্ট্যান্ডার্ড। অত্যন্ত উঁচু মানের ষ্ট্যান্ডার্ড। আল্লাহ সকল শিক্ষককে বেহেশত নসীব করুন। (সম্পাদিত)
বিবেক হলো অ্যানালগ ঘড়ি, খালি টিক টিক করে। জীবন হলো পেন্ডুলাম, খালি দুলতেই থাকে, সময় হলে থেমে যায়।
ধন্যবাদ রেজা। নুরুল ইসলাম স্যার আমার সারাজীবন এর দেখা শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। আমাদের সময়কার শিক্ষকরা আসলেই এক একজন রত্ন ছিলেন, কিন্তু উনি ছিলেন অনেক উঁচু স্থানের....সবার প্রতি শ্রদ্ধা! আল্লাহ সবাইকে ভাল রাখুন...
ইউসুফ এর সাথে সহমত।
Nurul Islam Sir was one of the most reverend Masons who built us out of hardy stones.
-- #ShuvoGrontho