উফফ!! মশাগুলা এত্তো জ্বালায় ক্যান? কামড়াবি কামড়া- কিন্তু কানের কাছে গান গাওয়ার দরকারটা কি? বিরক্তিতে নিজের পায়ে আশিমন ওজনের একটা থাপ্পড় কষালো তানভির।
সে এখন বসে আছে রসুলগঞ্জ বাজার থেকে দুই মাইল দূরে একটা ধানক্ষেতে…একটু আগে তারেক ভাই বললেন তাদের আরও একঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। একঘন্টা অনেক দীর্ঘ সময়। তানভির একটা সিগেরেট ধরিয়ে মাটিতে মাথা এলিয়ে দিলো। আজকের আকাশটা অনেক পরিষ্কার…কতো তারা জ্বলজ্বল করছে। মুহাম্মদ কাছে থাকলে ওর কাছে থেকে কয়েকটা তারার নাম জেনে নেয়া যেত। কিন্তু মুহাম্মদ নাই। তানভির আকাশের দিকে তাকিয়ে তাই নিজেই তারার নামকরণ করতে থাকলো। তারাগুলোকে হয়তো আর কখনও দেখা হবে না…
অথচ আজ তার এখানে থাকার কথা ছিলনা। বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে খুব দ্রুত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে চাকরি পেয়ে যায় সে। প্রথম দিন অফিসে যাবার সময় তার সে কি উত্তেজনা। না জানি অফিসের মানুষগুলো কেমন হবে? তার সাথে কি খাইস্টামি করবে? সে তো খালি পড়ালেখা করেছে। ব্যবহারিক কাজ তেমন কিছুই জানে না এখনও। আচ্ছা সে যদি কাজ না পারে তাহলে কি তার বস তাকে বকা-ঝকা করবে? বকা খেলে তার আবার খুব মন খারাপ হয়ে যায়…
এইসব কথা ভাবতে ভাবতে হাসি পেয়ে গেল তানভিরের। না, অফিসের কেউ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। বরং সবাই এতো আপন করে নিয়েছিল যেন ও তাদের ছোট ভাই। মঞ্জুর ভাই কি কষ্ট করেই না তাকে সব কিছু দেখিয়ে দিতো। তারপর ধীরে ধীরে দুইটা বছর পার হয়ে গেল। ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করতে আমেরিকা যাবে। অফিসের কাজের চাপের মধ্যে থেকেও জিআরই তে ভালো নম্বর তুলে ফেললো। সে তখন হিসেব করছে কোন ভার্সিটিতে আবেদন করবে। ঠিক সেই সময়টাতেই জেনারেল আহ্মেদ সারাদেশে সামরিক শাসন জারীর হুকুম দিলেন…
তখন কোন পাত্তাই দিলো না সে। আখাইস্থা বাংগালীর জন্য এইটাই ঠিক আছে। খালি তো নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ি। এখন বুঝ ঠ্যালা। তার ঠিক দুই সপ্তাহ পর তাদের অফিসের বস পরিবর্তন হয়ে গেল। সাদাসিদা ভালো মানুষ কবির ভাইয়ের বদলে দায়িত্ব নিলেন অবসর প্রাপ্ত কর্ণেল হোসামী হায়দার। দায়িত্ব নেবার পরদিন তিনি অফিসের সবাইকে নিয়ে কনফারেন্স করলেন। একঘন্টার কনফারেন্সে তিনি দুইশ শব্দ দ্বারা গঠিত ইংরেজী বাক্যগুলো দিয়ে যা বোঝালেন সেটার মূল বক্তব্য হলো, বিআরবি দূর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। এখন থেকে সবাইকে নিজের কাজের জন্য তার কাছে সরাসরি জবাবদিহী করতে হবে। কাজে ফাঁকি দেওয়া চলবে না…লাব লাব লাব…
তানভির সৎ ছেলে। খুব প্রয়োজন না হলে অফিসও কামাই দেয় না সে। তাই কর্ণেল ব্যাটার কথাগুলার কোন গুরুত্ব নেই তার কাছে। কিন্তু সমস্যা হলো তার কয়েকদিন পর- তানভির তার ডেস্কে কাজ করছিল। হঠাৎ কর্ণেল সাহেবের আগমন…
: আরে তানভির সাহেব, হাউ আর য়ু?
: ফাইন…থ্যাঙ্কু স্যার।
: হোয়াই উর হেয়ার ইজ টু লং? ডোন্ট য়ু হ্যাব এনাফ মানি টু কাট উর হেয়ার।
বলেই খিক খিক করে হেসে উঠলেন তিনি। রাগে তানভিরের গা জ্বলে গেল। বুশরা বলেছিল বড় চুলে তাকে খুব সুন্দর লাগে- এখন কিনা এই ব্যাটার জন্য এতো সাধের চুল কেটে ফেলতে হবে…কখনোই না…
তানভির চুল কাটলো না। এর থেকে প্রায়ই তার বড় সাহেবের ঘরে ডাক পড়তে থাকলো। কাজে মন নেই কেনো? আজকে স্যান্ডেল পড়ে এসেছেন কেন? এইটা অফিস…আপনার ইয়ার বাসা না বুঝলেন…
এই যন্ত্রণা একমাসও সইতে পারলোনা তানভির। তীব্র ঘৃণায় চাকরী ছেড়ে দিল সে…সেনাশাসনের প্রতি ঘৃণা। কয়েকদিন পরেই তারেক ভাইয়ের সাথে দেখা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র। তারেক ভাইকে সে তার দুঃখের কথা শোনালো…
: বুঝাল মিয়া এইসব ঘৃণা ফৃণা করে কাজ হবেনা…ডাইরেক্ট একশনে নামতে হবে…দুই একটারে খতম করে মরতে পারলে তবেই না শান্তি…
: তারেক ভাই এমন যদি হয়, আমাকে সাথে পাবেন…
………………………………………..
ওই তানভির উঠ। তারা দেখতে দেখতে কখন যে তানভিরের দুই চোখ লেগে এসেছিল আল্লাই জানে। তানভির উঠে দাঁড়ালো। খুব ধীরে ধীরে রসুলগঞ্জ আর্মি ক্যাম্পের দিকে এগোতে শুরু করলো পাঁচ জন যুবক। তাদের কাছে অস্ত্র সস্ত্র তেমন নেই। দুইটা সিভি-৪৭, তার কাছে একটা পিস্তল আর মোট পাঁচটা গ্রেনেড…
ক্যাম্পে পনেরো থেকে বিশ জনের বেশী থাকার কথা না। তাদের প্ল্যান হলো গ্রেনেড চার্জ করে কেটে পড়া। তারেক ভাই তার রাইফেল দিয়ে ব্যাক-আপ দিবেন। খুব সহজ ১০ মিনিটের কাজ…
রাত তখন পৌনে একটা। সবাই জায়গা মতো পজিশন নিয়ে ফেলল। এখন শুধু তারেক ভাইয়ের সংকেতের জন্য অপেক্ষা। হঠাৎ করে দুই তলা বিল্ডিং থেকে তাদের দিকে আলো জ্বলে উঠলো…”ঐ কেরে”
শিশ দিয়ে তার মাথার উপর দিয়ে কয়েকটা গুলি উড়ে গেল। তানভিরের বুকে তখন হাতুড়ির বাড়ি পড়ছে। তারেক ভাইয়ের সংকেতের অপেক্ষা না করেই সে তার গ্রেনেড ছুড়ে দিল। ততক্ষণে ক্যাম্পে হই হই পড়ে গেছে…
তানভির জানে আর বাঁচার সুযোগ নেই…কিন্তু মরার আগে অনন্ত একটাকে খুন করবে সে…বুকে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে এগোতে শুরু করলো সে…
শেষ পর্যন্ত তানভির কাউকে মারতে পেরেছিল কি না তা জানা যায়নি…কিন্তু তারা সবাই মারা যাবার পর ক্যাম্পের সামনে যখন লাশগুলো সাজিয়ে রাখা হলো তখন ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন সাফকাত এক লাশের মুখে হাসি দেখে থমকে দাঁড়ান…খুব কাছে যাবার পর ছেলেটাকে তার পরিচিত মনে হতে থাকে…কোথায় যেন দেখেছেন…ক্যাপ্টেনের তখন মনে পড়ে যায় তার কলেজ জীবনের কথা…এই ছেলেকে তিনি চিনেন…এই হাসি তিনি চিনেন…তার ফলোয়ার তানভির…দুই জন একসাথে কতো সিগারেট খেয়েছেন চুরি করে…মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায় তার…কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলেন তিনি…উঠে দাঁড়িয়ে লাশগুলোকে একসাথে কবর দেওয়ার হুকুম দিলেন…
ব্লাডি সিভিলিয়ানদের জন্য আবেগ দেখানোর টাইম নাই তার…
খুব সুন্দর হইছে। প্রথম গল্প হিসাবে চমৎকার প্রচেষ্টা। ভাল লাগলো।
সুন্দর হইছে নাকি? আমি তো জংগী জংগী গন্ধ পাইছি লেখাটায়। ভালো লাগছে জেনে আমারো ভালো লাগলো...
রায়হান খুব সুন্দর হইসে।ভাইয়া চালায় যাও,এমন আরও গল্প চাই
বললাম না। আমি আসলে গল্প টল্প লিখিনা। সব কিছু নিজেকে নিয়ে লেখা। একদিন আমার হতেও পারে বউ বলল, জীবনে কোন কথাতো ব্লগে লিখতে বাদ রাখনো নাই। এই হলো আমার পরিস্থিতি।
মন্তব্যের জন্য থ্যাংকু।
পেপারে পড়া জ়েএমবি'র কোনো ঘটনার সাথে মিল পাইতেসি!! আচ্ছা যাও, দায়দায়িত্ব আমিই নিলাম। তোমার কোনো দোষ নাই।
ভাল লিখসো।
ব্যাপক দূরদর্শী একটা গল্প লেখার ট্রাই নিছিলাম মিয়া। কিন্তু শেষ মেষ এইটা হয়ে গেছে জংলী টাইপের গল্প। একনম্বর কারণ লেখক হিসেবে সীমাবদ্ধতা। দ্বিতীয়ত ব্লগে বড় লেখা কেউ পড়েনা। তাই ইচ্ছা করেই লেখাটা ছোট করে ফেলতে হয়েছে।
জেএমবির সাথে মিলাইলে তাই খবরাছে কইলাম। 🙂
প্রসংশার জন্য ধন্যবাদz...
প্রথমবার পড়েই ভাল লেগেছিল। সেবারের মতই বলছি, আরও গল্প লেখ। পাঠক হিসেবে তো আছিই।
বুক্ষান ফুইলা গেলো তো... 🙂
bhalo lagse....kintu Military gulare ken jani ektu beshi harsh dekhano hoise....amader army kintu eto harsh na....eita Pakistaner kono ghotona hoile golpota akkebare hundred percent "Jibon Theke Neoa" boila chalano jaito....LOL
গ্রেট লেখা। আপনি আমার ঐ পোস্টের লিঙ্ক পাইলেন কেমনে!
সবই সিশটেম বস, কুদ্রত কুদ্রত।
আপনার নামে ক্লিক করলে ওই পেইজে চলে যায়। 🙂
ঐটা তো এখন যায়! 😛
সচলে আইইউটি গ্রুপটার লেখা নিয়মিত পড়তাম। খালি আইলসামি করে কমেন্ট দেয়া হইতো না মডারেশনে চলে যায় বলে! 🙁
ঐদিন দেখি আমার একটা কমেন্ট খুব তাড়াতাড়ি পাব্লিশ করছে। তখন আমি গিয়ে আরেকটা কমেন্ট লেখলাম যে মডু ইন অ্যাকশন! আমার কমেন্ট এত তাড়াতাড়ি পাবলিশ করে দিছে! হা হা!
পরে দেখি ঐটা আর পাব্লিশ করে নাই! 😉 😀
comment likhte apnar abar ailshamio lage naki!!! 😮
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
লিখতে মানে আসলে লেখুম তারপর মডুরা দেখবে, পাবলিশ করবে, এইটা পছন্দ হয় নাই। তাই কমেন্ট দেই না। 🙁 কমেন্ট করার ৫ ঘন্টা পরে আইসা দেখা লাগে আমার কি রিপ্লাই আসছে কমেন্টের। এতো কষ্ট ভাল লাগে না। সচলের খেতা পুড়ি! 😉
জীবনের প্রথম গল্প হিসেবে দারুন। :clap: :clap:
তুই রেগুলার গল্প লিখিস না কেন? 🙁
আপনার মতো বস যেদিন হমু, সেদিন থেকে আলবত লিখুম... :boss: :boss:
রেলের চাক্কায় তেল দিয়া লাভ নাই। সিগারেট ছাড়া আর কিছু খাওয়াইতে পারুম না। 🙁 🙁
আকালের এইদিনে মানুষ তো বিনা পয়সায় আলকাতরাও খাওয়ায় না...