ক্ষমা করে দিয়েছি শিক্ষকদের, ভেবেছিলাম যাদের কোনদিন ক্ষমা করবোনা, ক্ষমা করেছি বাবা-মাকে, ছোটবেলায় ভিডিও গেমস খেলার জন্য দেওয়া সীমাহীন শাস্তির জন্য, ভেবেছিলাম কোনোদিন ক্ষমা করবোনা তাদেরও। বড় হয়ে গেছি হয়তো, শৈশবের করা শাসনের কথা ভেবে এখন মাঝে রাতে আবেগ অনুভব করি কেবল, রাগ নয়, ঘৃণা নয়। কিন্তু এতোকিছুর পরেও ক্ষমা করতে পারিনা, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে পাওয়া এডজুটেন্টকে। যিনি আদৌ সুস্থ মানুষ ছিলেন কিনা এখনও আমি নিশ্চিত নই, কিংবা মনে পড়ে বহুকাল আগে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় যখন আমি যাচ্ছিলাম ইউনিক বাসে করে আমার গ্রামের বাড়িতে- ঢাকা ছাড়ার আগে দুইজন সৈনিকের বাসের হেলপারের বুট দিয়ে লাথি মেরে নিমেশেই দুইটি পা ভেঙ্গে দেওয়ার দৃশ্য।
সেনাবাহিনী আমি সইতে পারিনা। একধরণের অযৌক্তিক ক্রোধ আমার কাজ করে সেনাবাহিনীর কথা মনে পড়লে। অথচ আমি আমাদের আশরাফ কিংবা মাসুদকে হাতের কাছে পেলে এখনও বুকে জড়িয়ে ধরি, মেয়ে নিয়ে গল্প করি, কলেজে দীপালী পত্রিকা পড়ার স্মৃতিচারণ করি। পৃথিবীব্যপি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো এরপর আমাদের আবার আলাদা করে দেয়। আমরা রক্ত মাংসের মানুষ থেকে কেউ হয়ে যাই সার্টিফাইড দেশপ্রেমিক, কেউ শিক্ষক, কেউ সেনাকর্মকর্তা, কেউ কর্পোরেট। আমাদের প্রতিষ্ঠানরা আমাদের জীবনের মানে শেখায়। আমরা আমাদেরই সেইসব জীবনের সোপান বেয়ে উঠে যেতে থাকি নিজেদের মতো করে, নিজের প্রতিষ্ঠানের সম্মান সমুন্নত রাখতে আমরা আমাদের রক্ত মাংসের জীবনটাকে উৎসর্গ করে দিতে থাকি, আমরা লাথি খেতে থাকি, কখনও লাথি ফেরত দিতে থাকি।
প্রতিষ্ঠানরা আমাদের নিয়ে রাজনীতি করে, তারা আমাদের গণায় ধরে কিংবা গণায় ধরেনা, বৃহত্তর স্বার্থে কখনও আমাদের কোরবানী দেয়, কখনও দেয় না। আমরা মরে যাই, বেঁচে যাই, প্রতিষ্ঠানের গর্বে উজ্জীবিত হই, আমরা রক্তমাংসের মানুষ থাকিনা, আমরা থাকতে চাইলেও প্রতিষ্ঠান আমাদের থাকতে দেয়না।
এভাবেই আমাদের দিন কেটে যায়। পঁচিশে ফেব্রুয়ারি এলে আমাদের তানভীর ভাই, হায়দার ভাইয়ের কথা মনে হয়, তাদের লাশের কথা মনে হয়, তাদের জমে যাওয়া রক্তের কথা মনে হয়, তাদের জীবিত চোখের মাঝে উঁকি দেওয়া স্বপ্নের কথা মনে হয়। আমাদের ভেতরের মানুষটা ডুকরে কেঁদে উঠে- আমাদের মানুষটা বলে পৃথিবী কী অন্য কোনোভাবে এগিয়ে যেতে পারেনা? আমরা সবাই কি মিলেমিশে এই চরমতম প্রাপ্তি একটা মাত্র জীবনকে একটু আনন্দ-ভালোবাসাবাসিতে কাটিয়ে দিয়ে পারতামনা?
আমরা পারিনা। ভাইয়ের কিংবা বাবার রক্তকে পাশ কাটিয়ে আমরা এগিয়ে যাই, পঁচিশে ফেব্রুয়ারি এলে আমরা অস্থির হয়ে উঠি কিন্তু আমরা এগিয়ে যাই, পৃথিবী এগিয়ে যায়।
সবাই এগিয়ে যায় না, কারো কারো জীবন থেমে থাকে, একদম বদ্ধ জলার পানির মত......
এই একটা ইতিহাস আমার হাতের আঙ্গুল, কন্ঠস্বর, আমার চিন্তা-চতনা, বোধ-বিচার সবকিছুকে শোকে পাথর করে দেয়।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
এর একটা সুষ্ঠু বিচার একদিন হবেই হবে
that is Raihan Abir for you.Take my bow
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
এভাবেই আমাদের দিন কেটে যায়। পঁচিশে ফেব্রুয়ারি এলে আমাদের তানভীর ভাই, হায়দার ভাইয়ের কথা মনে হয়, তাদের লাশের কথা মনে হয়, তাদের জমে যাওয়া রক্তের কথা মনে হয়, তাদের জীবিত চোখের মাঝে উঁকি দেওয়া স্বপ্নের কথা মনে হয় :boss:
ভাল লাগল তোর লেখাটা পড়ে ...
বাংলাদেশ কে নিয়ে গর্ব করার পাশাপাশি কিছু বিষয় নিয়ে লজ্জিত, বিব্রত, দুঃখিত হই এবং নিজের প্রতি, নিজের দেশের প্রতি ঘৃনা অনুভব করি, খুব কষ্ট লাগে।
"ভাইয়ের কিংবা বাবার রক্তকে পাশ কাটিয়ে আমরা এগিয়ে যাই"
ঠিক। আমরা রক্ত ভুলে এগিয়ে যাই, শিক্ষা না নিয়ে এগিয়ে যাই, দ্রুতগতিতে, রীতিমতো অন্ধের মত।
আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।
আরেকটা ফেব্রুয়ারী চলে যাচ্ছে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
এই ঘটনার জন্য দায়ী জওয়ানদের বিচার হয়ে গেছে, হচ্ছে, হবে। জিজ্ঞাসাবাদের বিভিন্ন পর্যায়ে ৫০-এর উপরে বিজিবি সদস্য মৃত্যুবরন করেছে। তথাপি,এঘটনার পিছনের নায়কদের কেউ খুঁজে পেলনা? ওই সময়ে দায়িত্ব পালন কারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের ব্যার্থতার দায় বা বিচার কে করবে? যে ব্যবস্থা এমন করুন পরিণতির জন্ম দেয় সে-ও কী নির্বিঘ্নে বংশবিস্তার করে যাবে? এক স্মৃতি ভুলতে না ভুলতে ঘটবে আরেকটি দুর্ঘটনা?? এভাবে আর কতদিন অক্ষম কান্না??
এত গুরুতর একটা বিষয়কে শুধু আবেগ দিয়ে দেখলে আমরা সত্য থেকে বহুদুরে সরে যাব। ভাবতে খুব অবাক লাগে, আবেগের উর্ধ্বে উঠে এই ঘটনাটার বিভিন্ন দিক নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ কোন তদন্ত হয়নি, কেউ কেউ করতে চাইলেও তা কঠোর ভাবে দমন করা হয়েছে। এই গোপনীয়তায় কার লাভ? স্পর্শকাতর বিষয়ের তকমা এঁটে একে এড়িয়ে গেলে কার স্বার্থ সিদ্ধি হয়? আখেরে পুরো ঘটনায় লাভবান কে বা কারা? এত বড় একটা ঘটনা কী স্রেফ দুর্ঘটনা? ওই দিন মুখে মুখে ফেরা অনেক প্রশ্নের উত্তরগুলো শেষ পর্যন্ত কী ছিল??
মাঝে মাঝে ভাবি পঁচিশে হারানো মানুষেরা এখন হয়তো কোন এক দূরের তারার দেশে উল্কা ফুল। আর কিছু না।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আমি যে দেখেছি, প্রতিকারহীন শক্তির অপরাধে,
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।
🙁