১.
ধরা যাক, আমার থাকার রুমটি একটি চারতলা বাড়ির তিন তলায়। একরুমে বন্দি হয়ে জীবনের পুরো সময় আমরা কাটিয়ে দিতে পারিনা, ইহলৌকিক কাজের জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রত্যেকেরই নেমে আসতে হয় মাটিতে। মাটিতে নেমে আসার কাজটি আমরা কিভাবে করি?
জানালা দিয়ে সরাসরি লাফিয়ে পড়ে?
নাকি, সিড়ি বেয়ে?
অবশ্যই সিড়ি বেয়ে। কিন্তু সিড়ি বেয়ে কেন নামি? নিউটনের মাথাতে আপেল পড়ারও বহুকাল আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা উপর থেকে মাটিতে সরাসরি লাফিয়ে পড়ে পা ভেঙ্গে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আর যাই হোক, এমন ভাবে নেমে পড়া যাবেনা। ধীরে- সুস্থে, ধাপে, ধাপে নামতে হবে। এটি পর্যবেক্ষণলব্দ একটি বিশেষ জ্ঞান যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের মাঝে সঞ্চারিত হয়েছে। এই বিশেষ জ্ঞান ‘ইয়ো’ যুগে বিজ্ঞান নামে প্রচলিত। সবচেয়ে বড় কথা, বিজ্ঞান কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য সত্যি না। মুসা নবী তার জাদুর লাঠি ছুয়ে নদীর বুকে পথ তৈরী করে নিজের লোকজনকে পার করার ব্যবস্থা করেছিলেন, কিন্তু সে ব্যবস্থা কাজ করেনি তার প্রতিপক্ষের জন্য। বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট কারও জন্য কাজ করেনা। বিজ্ঞান নদী পার হবার জন্য সেতু তৈরী করেছে। সেই সেতু দিয়ে ধনী বিল গেটস যেমন পার হতে পারেন, তেমনি পার হতে পারেন, আমাদের বাস্তুহারা নেত্রী!
ঈশ্বরের নাম দিয়ে তিন তলা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া কিংবা সেতু ব্যবহার না করে পথের আশায় নদীর উপর দিয়ে হাঁটার মানুষ একজনও নেই, কিন্তু বিজ্ঞানের এই অবদান অস্বীকারকারীদের সংখ্যা অসীম। বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল সুতরাং এটি সত্য নয়, বিজ্ঞানের এই তত্ত্ব আজ আছে তো কাল নেই, সুতরাং বিজ্ঞান পাশের বাড়ির চোখট্যারা মফিজের মতোই যার কথার কোনো পাত্তা আমরা দেই না।
আমাদের সকল জীবনযাত্রা আজ বিজ্ঞানের আর্শীবাদ পুষ্ট। আমরা বিজ্ঞান নিয়ে পড়ি, সে পড়া দিয়ে চাকরি করি, চাকরি করার পর এসি গাড়িতে চড়ে বিয়ে করতে যাই, জন্মনিরোধ করার জন্য কনডম ব্যবহার করি। বিজ্ঞান দিয়ে আমরা সকল সমস্যার উত্তর বের করি, শুধু ধর্মীয় গালগল্প নিয়ে কিছু বলতে গেলেই আমরা বিজ্ঞানের হাতে একটা স্কেল ধরিয়ে দিয়ে বলি, রাস্তা মাপ!
ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা বিজ্ঞান ত্যাগ করার পরামর্শ দেই সবাইকে, আমরা বলি যুক্তি- তর্ক- দর্শনের কোনো স্থান মানব সভ্যতায় নেই। এটা একদলের কথা। আরেকদল আছেন, যারা মডারেট ধার্মিক। এরা এসে একবাক্যে বলে দেন, ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের কোনো সংঘাত নেই। মডারেট হলেও বিশ্বাসের ভাইরাস আক্রান্ত ধার্মিকদের মতোই তারা যা মনে আসে তাই বলে দেন অনায়াসে, কেন সংঘাত নেই, উদাহরণ, রেফারেন্স কোনোকিছুর ধার ধারার প্রয়োজন তারা মনে করেন না। দুই নৌকায় পা দিয়ে রাখা এই মডারেটররা বিজ্ঞানের সকল সুবিধা গ্রহণ করতে সিদ্ধহস্ত হলেও চেতনা গ্রহণে একেবারেই নারাজ।
বিজ্ঞান এবং ধর্মের সংঘাত নিয়ে এ লেখা। কাদের জন্য? যেকোনো মানুষ, যে ইতিমধ্যে একটি বই পড়ে যাবতীয় সকল জ্ঞান লাভ করে বসে নেই, আরও জানতে আগ্রহী, বিপরীত মত গ্রহণে আগ্রহী, তাদের জন্য। যারা ভিন্নমতের লেখা না পড়েই, ‘চোখওয়ালা অন্ধ’, ‘জেগে জেগে ঘুমানো’ টাইপ সপ্তম শ্রেনীর স্ট্যাণ্ডার্ডের বিতর্কের ডায়লগ ছুড়ে দিয়ে বেহেশতে একটি হুর বরাদ্দ পাবার আশায় ব্লগে আসেন তাদের বহুদূরে চলে যাবার অনুরোধ রইলো!
এ লেখায় মুক্তমনা সম্পাদক এবং জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট আছে। তাঁর প্রতি অপরীসীম কৃতজ্ঞতা।
বি-জ্ঞান এর গান
মহাবিশ্বের উৎপত্তি আর বিকাশ নিয়ে বিজ্ঞানমনস্ক আলোচনার সূত্রপাত ঘটানোর প্রয়াসে ২০০৫ সালে অভিজিৎ রায় লিখেছিলেন, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ শিরোনামের বই [১]। বইটির ‘লেখকের কথা’ অংশে বিজ্ঞান সম্পর্কে দু চার কথা বলতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন,
‘বিজ্ঞানের অবদান কি কেবল বড় বড় যন্ত্রপাতি বানিয়ে মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বয়ে আনা? আমাদের স্কুল কলেজে যেভাবে বিজ্ঞান পড়ানো হয় তাতে এমনটিই মনে হওয়া স্বাভাবিক। ব্যপারটা কিন্তু আসলে ঠিক তেমনটি নয়। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে মানুষ বড় বড় যন্ত্রপাতি বানায় বটে; তবে সেগুলো স্রেফ প্রযুক্তিবিদ্যা আর প্রকৌশলবিদ্যার আওতাধীন; বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞানের অভিযোজন মাত্র। আসলে বিজ্ঞানের একটি মহান কাজ হচ্ছে প্রকৃতিকে বোঝা, প্রকৃতিতে ঘটনলীর ব্যাখ্যা খুঁজে বের করা। বিজ্ঞানের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য্য এখানেই। হ্যাঁ, জ্যোৎস্না রাত কিংবা পাখীর কুজনের মত বিজ্ঞানেরও একটি নান্দনিক সৌন্দর্য্য আছে, সৌকর্য্য আছে- যার রসাস্বাদন কেবল বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। বিজ্ঞানসনস্ক বা বিজ্ঞানের অন্তর্নির্হিত মর্মকথা বুঝতে হলে বিজ্ঞানীই হতে হবে এমন কোন কথা নেই, তবে বিজ্ঞান-প্রেমিক হতে হবে বলাই বাহুল্য। বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ কার্ল স্যাগান তাঁর বিখ্যাত ‘The Demon-Haunted World’ বইয়ের ভূমিকায় এ কারণেই হয়তো বলেছিলেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছে বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা না করাকে এক ধরণের বিকৃত মনোভাব বলেই আমার মনে হয়। যখন মানুষ প্রেমে পড়ে, তখন সারা পৃথিবীর কাছে সে তার প্রেমের কথা প্রচার করতে চায়। এ বইটি আমার প্রেমের একটি ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি, বিজ্ঞানের সাথে আমার সারা জীবনের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ইতিকথা’।
‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটি বেরুনোর পরে অনেকেই একে বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসারের একটি মাইলফলক হিসেবে দেখেছিলেন। এক বছরেই বইটির প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিলো। ড. শাব্বির আহমেদ, ড. বিপ্লব পাল, ড. হিরন্ময় সেনগুপ্ত, ড. শহিদুল ইসলাম, ড.বিনয় মজুমদারের মত বরেন্য লেখক এবং শিক্ষাবিদেরা বইটির রিভিউ করেছিলেন । সে সব রিভিউ প্রকাশিত হয়েছে এনএফবি, অবজারভার, হলিডে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ডেইলি স্টার, মৃদুভাষণ, ভোরের কাগজ সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল কালি ও কলমের একটি সংখ্যায় গ্যালিলিওকে নিয়ে লিখতে গিয়ে বই থেকে রেফারেন্স দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেশ বড়সড় করে আয়োজিত প্রকাশনা উৎসবে বইটির ঢালাও প্রশংসা করেছিলেন জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাহিত্যিক বশীর আল হেলাল, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত, লেখক ও সংকলক মীজানুর রহমান (মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা খ্যাত) সহ অনেকেই।
কিন্তু যে ব্যাপারটি বলার জন্য এখানে এতো আয়োজন তা হল, আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী বইটিতে পদার্থবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক ধ্যান-ধারনাগুলোর পাশাপাশি, শেষ অধ্যায়টিতে আধুনিক বিজ্ঞানের সর্বশেষ তত্ত্ব ও তথ্যের আলোকে ‘ঈশ্বর অনুকল্প’টি নিয়েও নিরপেক্ষ আলোচনা ছিলো । আর এখানেই দেখা দিয়েছিলো একটি মজার সমস্যা। ‘আলো হাতে চলিয়ায়ছে আঁধারের যাত্রী’ বইটির ভুমিকা লিখেছিলেন বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত পদার্থবিদ অধ্যাপক এ এম হারুন অর রশীদ। তিনি বইটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসাবাক্য প্রক্ষেপণের পরেও ভুমিকার শেষ দিকে একটি বাক্য জুড়ে দেন –
ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব বিজ্ঞানের বিষয় নয় এটা বুঝতে তরুণ মনের সময় লাগে অনেক, তবে সে পথে আলো হাতে চলা আঁধারের যাত্রীকে নিরুৎসাহিত করা মোটেও উচিৎ নয় বলেই আমার মনে হয়।
উপরে এ এম হারুন অর রশীদ ‘ ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব বিজ্ঞানের বিষয় নয়’ বলে যে উক্তিটি বইয়ের ভূমিকায় করেছিলেন তা খুব পরিচিত এবং জনপ্রিয় ধারণার প্রতিফলন। এ এম হারুন অর রশীদ থেকে শুরু করে অধ্যাপক জাফর ইকবালের মত জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখকেরা প্রায়ই আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, বিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে পার্থিব জ্ঞানের চর্চা করা, ঈশ্বর কিংবা এ ধরণের অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে কখনোই কোন অভিমত দিতে পারে না বিজ্ঞান। তাই ও নিয়ে টু-শব্দ করা বিজ্ঞান লেখকদের অনুচিত। কিন্তু সত্যই কি তাই?
বিজ্ঞান সত্যই কি অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে অভিমত দিতে অক্ষম?
আগের দিনে মানুষেরা বাড়ি থেকে একটু দূরে থাকা পুকুরের অপর পাড়ে রাতের অন্ধকারে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখে ভাবতো সেটা বুঝি কোনো ভুত-জ্বিন-পরীর কাজ। এরপর মঞ্চে হাজির হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান এসে আমাদের জানালো মিথেন গ্যাসের কথা। আমাদের মনে থাকা জ্বিন পরীর গল্পকে শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষে সেখানে বসিয়ে দিলো আসল সত্য। এখন আর কেউ পুকুর পাড়ে আগুন জ্বলতে দেখলে ভয় পায়না, তারা জানে এটা সম্পূর্ন প্রাকৃতিক ব্যাপার।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় – এভাবেই মানুষের মনে জমে থাকে থাকা অসংখ্য কুসংস্কারের কালো নিকষ আঁধার দূর করে আশার প্রদীপ জ্বালিয়েছে বিজ্ঞান।। বিজ্ঞানের এই গুনের কারণে এই ধারণাটিকে আমরা আশীর্বাদ মনে করি। কিন্তু যেই বিজ্ঞান আমাদের মনের সবচেয়ে বড় কুসংস্কার সম্পর্কে কিছু বলতে যায়, ওমনি শুরু হয়ে যায় তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য। আমাদের মনের কুসংস্কারটিকে সমূলে উৎপাটিত করে দিবে বিজ্ঞান, আমাদের মৃত্যু পরবর্তী সুখের জীবনকে তছনছ করে বিজ্ঞান, অবচেতন মনের এই ভাবনায় আমরা কখনই বিজ্ঞানের সেই কুসংস্কার নিয়ে কথা বলা মেনে নিতে পারিনা।
ইণ্টারনেটে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে গিয়ে আমরা প্রায়শই এমন মানুষের মুখোমুখি হই। তাদের মাঝে অনেকেই বলেন, বিজ্ঞান হলো যুক্তি এবং কারিগরী জ্ঞানের প্রয়োগ আর ধর্ম হলো বিশ্বাস। এ দুয়ের অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা বলয়ে। বিজ্ঞান দিয়ে কোনভাবেই ঈশ্বর নামক বিষয়ে কথা বলা যাবেনা। তারা বিজ্ঞান ভালোবাসেন কিন্তু একই সাথে মনে করেন যে, ঈশ্বরের অনস্তিত্ব প্রমানে বিজ্ঞানকে টেনে আনাটা খুবই হাস্যকর। যদিও তারা ভুতে “বিশ্বাসের” মতো বিষয়ে বিজ্ঞানকে টেনে নিয়ে এসে এই বিশ্বাসকে কচুকাটা করাটাকে হাস্যকর মনে করেন না, কোনভাবেই। হাস্যকর মনে করেন না অসুখ বিসুখ হলে সাপের মন্ত্র না জপে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াকে , তারা শুধু হা রে রে রে রে করে ওঠেন যখন ধর্ম, ঈশ্বর আর অতিপ্রাকৃত বিষয়ে কথা চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু সৌভাগ্যের ব্যাপার হল, পশ্চিমা বিশ্বের প্রথিতযশা বিজ্ঞানীরা আজ ‘ ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব বিজ্ঞানের বিষয় নয়’ ধরণের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিয়ে সঠিক অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। যেমন, বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার অতি সাম্প্রতিক বই ‘গ্রান্ড ডিজাইন’ -এ সরাসরি বলেছেন [২] – মহাবিশ্ব ‘সৃষ্টি’র পেছনে ঈশ্বরের কোন ভূমিকা নেই। মহাবিশ্ব পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম নীতি অনুসরণ করে স্বতস্ফুর্তভাবে তৈরি হয়েছে। মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং অস্তিত্বের ব্যাখ্যায় ঈশ্বরের আমদানি একেবারেই অযথা। তার নতুন বই ‘গ্রাণ্ড ডিজাইন’ –এ খুব চাঁচাছোলা ভাবেই বলেন (গ্র্যান্ড ডিজাইন, পৃষ্ঠা ১৮০)–
‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সূত্রের মতো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র কার্যকর রয়েছে, তাই একদম শূন্যতা থেকেও মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্ভব এবং সেটি অবশ্যম্ভাবী। ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি’ হওয়ার কারণেই ‘দেয়ার ইজ সামথিং, র্যাদার দ্যান নাথিং’, সে কারণেই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে, অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় বাতি জ্বালানোর জন্য ঈশ্বরের কোন প্রয়োজন নেই ।’
আসলে ঈশ্বর সহ বেশ কিছু তথাকথিত অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারে আধুনিক বিজ্ঞান যে সুস্পষ্ট অভিমত দিতে পারে তা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুব ভালো করে বোঝা যাচ্ছিলো। বিশেষতঃ ২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে পশ্চিমা বিশ্বে পাঁচজন বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকদের দ্বারা ছয়টি ‘বেস্ট সেলিং’ পুস্তক প্রকাশিত হয়। সেই স্বনামক্যাত লেখকেরা হচ্ছেন – স্যাম হ্যারিস, ডেনিয়েল ডেনেট, রিচার্ড ডকিন্স, ভিক্টর স্টেঙ্গর এবং ক্রিস্টোফার হিচেন্স। তারা খুব সুস্পষ্টভাবে অভিমত দিয়েছেন যে, আধুনিক বিজ্ঞান আজ যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে,সে অবস্থান থেকে সে ঈশ্বর সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুকল্পগুলো পরীক্ষা করে উপসংহারে পৌঁছুতে সক্ষম। তাদের এই নতুন আন্দোলনকে বিশ্বব্যাপী ‘নব্য নাস্তিকতা’র আন্দোলন (New Atheism Movement) হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে [৩]।
বিগত কয়েক দশকে বিজ্ঞান এবং দর্শনশাস্ত্রের নানা দিকে বিবর্তন ঘটেছে। ঈশ্বর সংজ্ঞায়িত নন, ঈশ্বর বিজ্ঞানের বিষয় নন, কিংবা ঈশ্বরকে প্রমাণ বা অপ্রমাণ কোনটাই করা যায় না – এমন বক্তব্যগুলোকে এখন আর ঢালাওভাবে পতাকার মত বহন করা হয় না। যেমন জুডিও-খ্রিস্টান-ইসলামিক ইশ্বরের অনেক বৈশিষ্ট্য যে সুসংজ্ঞায়িত তা ধর্মগ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়। যেমন, সেই ঈশ্বর একজন ব্যক্তি ঈশ্বর – তিনি রাগ ক্ষোভ ঘৃণা প্রকাশ করেন, অবিশ্বাসীদের শাস্তি দেন, তার জন্য আরশ বা সিংহাসন রয়েছে, ইত্যাদি। এখন এধরণের ঈশ্বর যদি মহাবিশ্ব তৈরি করে থাকেন, জীবন তৈরির পরিকল্পনা এবং নকশা প্রণয়ন করে থাকেন, প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে থাকেন তবে কিন্তু সেসব দাবীগুলো আমাদের পরীক্ষা করে যাচাই করতে পারার কথা। আমরা আজ জানি, যাচাইয়ের পর বেশ অনেক দাবীই ইতিমধ্যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরাই তা করেছেন। বিবর্তন তত্ত্বই প্রমাণ করেছে জেমস আশারের ৪০০৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ঈশ্বরের বিশ্বসৃষ্টির কেচ্ছা কাহিনী কিংবা ২৩৪৮ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে নূহের প্লাবনের কেচ্ছা মিথ্যা। এধরণের অনেক কিছুই ভবিষ্যতেও যে বিজ্ঞান ভুল প্রমাণ করবে না তা কে বলতে পারে? যেমন, নব্যনাস্তিকতাবাদী বিজ্ঞানীরা মনেই করেন, যীশুর ভার্জিন বার্থ, যীশুর পুনরুত্থান, আত্মার অস্তিত্ব এবং মৃত্যুর পরে তার বেঁচে থাকা -ধার্মিকদের কাছ থেকে আসা এই দাবীগুলো আসলে প্রকারন্তরে বৈজ্ঞানিক দাবীই, বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এর সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করা যাবে। রিচার্ড ডকিন্স তার শীর্ষ বিক্রিত বই গড ডিলুশনে পরিস্কার করেই বলেন,’বিনা পিতায় যীশু জন্মাতে পারেন কিনা তা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের অংশ, কোন নৈতিকতা বা মূল্যবোধের প্রশ্ন নয় [৪]।
বিজ্ঞানীরা এখন বলেন, ঈশ্বরের প্রার্থনায় সাড়া দেওয়া কিংবা সত্যিকার ঈশ্বর কে – এই হাইপোথিসিসগুলো কিন্তু সহজেই পরীক্ষা করে নির্ণয় করা যায়। যেমন, ধরা যাক একটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হল যেখানে মৃত্যুপথযাত্রী হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ বা খ্রীষ্টান রোগীর জন্য আলাদা করে প্রার্থনার ব্যবস্থা করা হবে। দেখা গেল ইসলামী প্রার্থনাতেই রোগী কেবল ভাল হচ্ছে – কিংবা মুসলিম রোগী পটাপট সেরে উঠছে, আর বাকিরা পটল তুলছে, তাহলে সাথে সাথে আমরা বুঝে নিতাম ইসলামী আল্লাহই সত্যিকার ঈশ্বর, কারণ তিনিই প্রার্থনায় সাড়া দিচ্ছেন। কিন্তু এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। বরং মায়ো ক্লিনিক, ডিউক ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো প্রার্থনার সাথে রোগির ভাল হওয়ার কোন সম্পর্কই খুঁজে পায়নি [৫]।
আব্রাহামিক ধর্মগুতে বর্ণিত ঈশ্বর পরষ্পররবিরোধী একটি সত্ত্বা। যেমন বাইবেলের ধারনা অনুযায়ী ঈশ্বর অদৃশ্য (Col. 1:15, ITi 1:17, 6:16), এমন একটি সত্ত্বা যকে কখনও দেখা যয় নি (John 1:18, IJo 4:12)। অথচ বাইবেলেরই বেশ কিছু চরিত্র যেমন মুসা (Ex 33:11, 23), আব্রাহাম, জেকব (Ge. 12:7,26:2, Ex 6:3) ঈশ্বরকে দেখতে পেয়েছিলেন বলে বর্ণিত হয়েছে। ঈশ্বর পরিস্কার করেই বাইবেলে বলেছেন – ‘তোমরা আমার মুখ দেখতে পাবে না, আমাকে দেখার পর কেউ বাঁচতে পারবে না’ (Ex 33:20)। অথচ, জেকব ঈশ্বরকে জীবন্ত দেখেছেন (Ge 32:30)। এগুলো তো পরিস্কার স্ব-বিরোধীতা। ঠিক একই কথা বলা যায় হজরত মুহম্মদের ‘মিরাজে’র ক্ষেত্রেও। আরজ আলী মাতুব্বর তার ‘সত্যের সন্ধান’ গ্রন্থে লিখেছেন,
‘এ কথায় প্রায় সকল ধর্মই একমত যে, ‘সৃষ্টিকর্তা সর্বত্র বিরাজিত’। তাহাই যদি হয়, তবে তাঁহার সান্নিধ্যলাভের জন্য দূরে যাইতে হইবে কেন? আল্লাহতা’লা কি ঐ সময় হযরত (দ.) – এর অন্তরে বা তাঁহার গৃহে, মক্কা শহরে অথবা পৃথিবীতেই ছিলেন না? পবিত্র কোরানে আল্লাহ বলিয়াছেন – ‘তোমরা যেখানে থাক, তিনি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন’ (সুরা হাদিদ – ৪)। মেরাজ সত্য হইলে এই আয়াতের সহিত তাহার কোন সঙ্গতি থাকে কি?’
আসলে আব্রাহামিক গড হিসবে চিত্রিত অনেক এট্রিবিউটকেই যুক্তির নিরিখে পরীক্ষা করে ভুল প্রমাণ করা যায় তা পদার্থবিজ্ঞানী ভিক্টর স্টেংগর দেখিয়েছেন তার গড – দ্য ফেইল্ড হাইপোথিসিস বইয়ে। তিনি বলেন,
আমি আমার বইয়ে ধার্মিকদের দেওয়া ঈশ্বরের অনুকল্প নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবেই আলোচনা করেছি, এবং আমার উপসংহার হচ্ছে আব্রাহামিক ঈশ্বর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
আবার, ঈশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করতে যে ধরণের গুনাবলী আরোপ করা হয় পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে সেগুলো পরষ্পর বিরোধী কিনা। যেমন, কেউ যদি চারকোনা বৃত্তের অস্তিত্ব দাবী করে, সেটা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা যাবে এই ধারনাটি পরষ্পর বিরোধী। ধর্ম-দর্শন নির্বিশেষে যে বেশিষ্ট্যগুলো দিয়ে ঈশ্বরকে সচরাচর মহিমান্নিত করা হয় সেগুলো সবই দেখা গেছে যুক্তির কষ্ঠিপাথরে খুবই ভঙ্গুর। যেমন, ঈশ্বরকে বলা হয় ‘পরম দয়াময়’ (all-loving) এবং সর্ব শক্তিমান (all-powerful or omnipotent), নিখুঁত (perfect), সর্বজ্ঞ (omniscient) ইত্যাদি। কিন্তু সর্বশক্তিমত্তা (omnipotence) এবং সর্বজ্ঞতা (omniscience) যে একসাথে প্রযোজ্য হতে পারে না তা যুক্তিবাদীদের দৃষ্টি এড়ায়নি। যেমন, ক্যারেন ওয়েন্স তা সুন্দরভাবে নিম্নোক্ত পংক্তিতে তুলে ধরেন [৬]–
Can Omniscient God, who
Knows the future, find
The omnipotence to
Change His future mind?
কথা হচ্ছে, ঈশ্বর যদি সর্বজ্ঞ বা ‘অমনিসায়েণ্ট’ হন, তবে তিনি আগে থেকেই জানেন যে তিনি ভবিষ্যতের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে সেটি পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন। ভবিষ্যৎ ঘটনা তিনি শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন করতেই পারেন – কারণ তিনি সর্বশক্তিমান, আফটার অল! কিন্তু মুশকিল হল, তিনি কি করবেন তা অনেক আগে থেকেই জানার মানে হল শেষ সময়ে আকস্মিকভাবে মত পরিবর্তন করা তার পক্ষে অসম্ভব। আর তার পক্ষে কোন কিছু অসম্ভব মানেই হচ্ছে তিনি সর্বশক্তিমান নন ।
ঈশ্বর যে সর্বশক্তিমান নন, তা নিচের প্রশ্নটির সাহায্যে সহজেই দেখানো যেতে পারে –
যদি প্রশ্ন করা হয় –
‘ঈশ্বর কি এমন কোন ভারী পাথরখন্ড তৈরি করতে পারবেন, যা তিনি নিজেই উত্তোলন করতে পারবেন না?’
এ প্রশ্নটির উত্তর যদি হ্যা হয় – তার মানে হচ্ছে ঈশ্বরের নিজের তৈরি পাথর নিজেই তুলতে পারবেন না, এর মানে তিনি সর্বশক্তিমান নন। আবার প্রশ্নটির উত্তর যদি না হয়, তার মানে হল, সেরকম কোন পাথর তিনি বানাতে পারবেন না, এটাও প্রকারান্তরে তার অক্ষমতাই প্রকাশ করছে। এ থেকে বোঝা যায়, অসীম ক্ষমতাবান বা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বলতে কিছু নেই। দেখা গেছে, মানুষের কাছে যা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব, তা ঈশ্বরও তৈরি করতে পারছেন না। ঈশ্বর পারবেন না চারকোনা বৃত্ত আঁকতে, ঈশ্বর পারবেন না কোন ‘বিবাহিত ব্যাচেলর’ দেখাতে কারণ এগুলো যৌক্তিকভাবে অসম্ভব।
ঈশ্বর যে পরম করুণাময় বা ‘অল লাভিং’ নন, তা বুঝতে রকেট সায়ন্টিস্ট হতে হয় না। আরজ আলী মাতুব্বর তার ‘সত্যের সন্ধানে’ গ্রন্থে বলেছেন,
‘কোন ব্যক্তি যদি একজন ক্ষুধার্তকে অন্নদান ও একজন পথিকের মাল লুণ্ঠণ করে, একজন জলমগ্নকে উদ্ধার করে ও অন্য কাউকে হত্যা করে অথবা একজন গৃহহীনকে গৃহদান করে এবং অপরের গৃহ করে অগ্নিদাহ, তবে তাহাকে ‘দয়াময়’ বলা যায় কি? হয়ত তাহার উত্তর হইবে – ‘না’। কিন্তু উপরোক্ত কার্যকলাপ সত্ত্বেও ঈশ্বর আখ্যায়িত আছেন ‘দয়াময়’ নামে। … জীব জগতে খাদ্য-খাদক সম্পর্ক বিদ্যমান। যখন কোন সবল প্রাণী দুর্বল প্রাণীকে ধরিয়া ভক্ষণ করে, তখন ঈশ্বর খাদকের কাছে দয়াময় বটে, কিন্তু তখন কি তিনি খাদ্য-প্রাণীটির কাছেও দয়াময়? যখন একটি স্বর্প একটি ব্যাঙকে ধরিয়া আস্তে আস্তে গিলিতে থাকে, তখন তিনি স্বর্পটির কাছে দয়াময় বটে। কিন্তু ব্যাঙটির কাছে তিনি নির্দয় নহেন কি? পক্ষান্তরে তিনি যদি ব্যাঙটির প্রতি সদয় হন, তবে সর্পটি অনাহারে মারা যায় না কি? … কাহারো জীবন রক্ষা করা যদি দয়ার কাজ হয় এবং হত্যা করা হয় নির্দয়তার কাজ, তাহা হইলে খাদ্য-খাদকের ব্যাপারে ঈশ্বর সদয়ের চেয়ে নির্দয়ই বেশী। তবে কতগুন বেশী তাহা তিনি ভিন্ন অন্য কেউ জানে না, কেননা তিনি এক একটি জীবের জীবন রক্ষা করার উদ্দেশে অসংখ্য জীবকে হত্যা করিয়া থাকেন। কে জানে একটি মানুষের জীবন রক্ষর জন তিন কয়টি মাছ, মোরগ, ছাগল ইত্যাদি হত্যা করেন?… কেহ কেহ মনে করেন ঈশ্বর সদয়ও নহেন এবং নির্দয়ও নহেন। তিনি নিরাকার নির্বিকার ও অনির্বচনীয় এক সত্তা। যদি তাহা নাই হয়, তবে পৃথিবীতে শিশুমৃত্যু, অপমৃত্যু, এবং ঝড়, বন্যা, মহামারী, ভুমিকম্প ইত্যাদি প্রাণহানিকর ঘটনাগুলির জন্য তিনিই কি দায়ী নহেন?’
আরজ আলীর প্রশ্নমালা মানব মনের অন্তহীন সংশয়বাদী চিন্তাকেই তুলে ধরেছে সার্থকভাবে। গ্রীক দার্শনিক এপিকিউরাস (৩৪১-২৭০ বিসি) সর্বপ্রথম ‘আর্গুমেন্ট অব এভিল’ (Argument of Evil)-এর সাহায্যে ‘ঈশ্বরের অস্তিত্বের’ অসারতা তুলে ধরেন এভাবে :
ঈশ্বর কি অন্যায়-অবিচার-অরাজগতা নিরোধে ইচ্ছুক, কিন্তু অক্ষম?
তাহলে তিনি সর্বশক্তিমান নন।তিনি কি সক্ষম, কিন্তু অনিচ্ছুক?
তাহলে তিনি পরম দয়াময় নন, বরং অপকারী সত্ত্বা।তিনি কি সক্ষম এবং ইচ্ছুক -দুটোই?
তাহলে অন্যায়-অবিচার-অরাজগতা পৃথিবীতে বিরাজ করে কিভাবে?তিনি কি সক্ষমও নন, ইচ্ছুকও নন?
তাহলে কেন তাঁকে অযথা ‘ঈশ্বর’ নামে ডাকা?
অকাট্য এই যুক্তি।‘The Oxford Companion to Philosophy’ স্বীকার করেছে যে, সনাতন আস্তিকতার বিরুদ্ধে আর্গুমেন্ট অব এভিল বা ‘মন্দের যুক্তি’ সবচেয়ে শক্তিশালী মরণাস্ত্র, যা কেউই এখন পর্যন্ত ঠিকমত খন্ডন করতে পারেনি [৭]। এ তো নিঃসন্দেহে বোঝা যায় যে, প্লেগ, মহামারী, খড়া, বন্যা, সুনামীর মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে লক্ষ কোটি নিরপরাধ নর-নারী এবং শিশুর মৃত্যুর ব্যাপারে মানুষকে কোনভাবেই দায়ী করা চলে না। এ সমস্ত অরাজগতার অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে ঈশ্বর একটি অপকারী সত্ত্বা। কারণ ‘সর্বজ্ঞ’ ঈশ্বর আগে থেকেই জানতেন যে, সুনামীর ঢেঊ আছড়ে পরে তার নিজের সন্তানদের হত্যা করবে, তাদের স্বজন হারা করবে, গৃহচ্যুত করবে, ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, ঘর বাড়ি ধ্বংস করে এক অশুভ তান্ডব সৃষ্টি করবে। অথচ আগে থেকে জানা থাকা সত্ত্বেও সেসব প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থাই তিনি নিতে পারেন নি। এ থেকে প্রমাণিত হয় ঈশ্বর এক অক্ষম, নপুংশক সত্ত্বা বই কিছু নয়। দার্শনিক পল কার্জ তার ‘ধর্মীয় দাবী সম্বন্ধে যে কারণে আমি সংশয়বাদী’ প্রবন্ধের একটি অংশে ‘আর্গুমেন্ট অব এভিল’ নিয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় আলোচনা করেছেন [৮]। এ ছাড়া, মুক্তমনা ব্লগে বহু লেখক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা এবং ঈশ্বরের সর্বজ্ঞতা আসলে পরষ্পরবিরোধী [৯]।
ভিক্টর স্টেঙ্গর পেশায় হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান’ বিভাগের ইমিরিটাস অধ্যাপক এবং কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের সংযুক্ত অধ্যাপক (Adjunct Professor)। তিনি একবিংশ হতাব্দীর এই নব্যনাস্তিকতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত। ভিক্টর স্টেঙ্গর তার ‘গড – দ্য ফেইল্ড হাইপোথিসিস’বইয়ে সর্বজ্ঞ (Omniscient), পরম করুণাময় (Omnibenevolent) এবং সর্বশক্তিমান (Omnipotent) ঈশ্বর (3O God) থাকাটা যে যৌক্তিকভাবে অসম্ভব তা দেখিয়েছেন [১০]। একই ধরণের উপসংহারে পৌঁছিয়েছেন মাইকেল মার্টিন এবং রিকি মনিয়ার তাদের The impossibility of God বইয়ে [১১]। কাজেই ঈশ্বরের কোন বৈশিষ্ট যৌক্তিকভাবে পরীক্ষা করে বাতিল করে দেয়া যাবে না, কিংবা বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কোন অভিমত দিতে পারে না – তা কিন্তু এখন আর ঠিক নয়। বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানের দার্শনিক রিচার্ড ডকিন্সও মনে করেন ধার্মিকদের দেয়া ঈশ্বরের অনেক সংজ্ঞাই টেস্টেবল হাইপোথিসিস, এবং তিনি তার সাম্প্রতিক ‘গড ডিলুশন’ বইয়ে এর অনেকগুলোই খন্ডন করেছেন। এরকম অনেক অনুকল্পের বেশ কিছু পরীক্ষা এখনই করা যায়, বাকিগুলো হয়তো প্রযুক্তি উন্নত হলে করা যাবে। অন্তত আব্রাহামিক ধর্মগুলোর ঈশ্বরের যে সংজ্ঞায়ন ধর্মগ্রন্থগুলোতে পাওয়া যায়, তা যে অবৈজ্ঞানিক এবং ভ্রান্ত, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সেজন্যই ভিক্টর স্টেঙ্গর তার নিউ এথিজম বইয়ে বলেন –
The new atheists firmly assert that the personal, abrahamic God is a scientific hypothesis that can be tested by the standard method of science. And we have seen that it has failed the test.
এবারে নব্য নাস্তিকতাবিরোধী কিছু উদাহরণের সাথে পাঠকদের পরিচিত করিয়ে দেয়া যাক। নব্য নাস্তিকদের বিজ্ঞানের তথ্য-উপাত্ত, জ্ঞান দিয়ে ঈশ্বর আলোচনার একজন কড়া সমালোচক খ্রিষ্টান ধর্মবেত্তা ডেভিড মার্শাল। The Truth behind the New Atheism বইয়ে তিনি বলেন [১২],
এই নব্য নাস্তিকরা বাস্তবতার বিভিন্ন দিক একেবারেই বুঝতে পারেনা। প্রথমত, বোকা নাস্তিকদের বিজ্ঞানের সীমারেখা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। দ্বিতীয়ত, তাদের তত্ত্বগুলো অসংখ্য বাস্তবতাকে সরাসরি উপেক্ষা করে। তৃতীয়ত, গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা থেকে তারা সবসময় নিজেদের বিরত রাখে। চতুর্থত, তাদের তত্ত্বকে ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচাতে তারা চমৎকার এক ছলনার আশ্রয় নেয়, সেই ছলনা হলো- “মনে করি”” ।
বিজ্ঞানের সীমারেখা বুঝতে অপারগ একজন বোকা কিংবা চালাক নাস্তিকের নাম উল্লেখ করেননি, মার্শাল। নব্য নাস্তিকদের বই, তাদের বিভিন্ন প্রবন্ধ, ইয়ুটিউবে থাকা শতশত ভিডিও লেকচারে আমরা কখনওই তাদের বলতে শুনিনি, যে বিজ্ঞানের সীমারেখা অসীম। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এদের লেখা বইগুলোতেই বরঞ্চ সংগীত, ছবি, কবিতা, নারীপুরুষের ভালোবাসার সম্পর্ক সহ আরও অসংখ্য প্রকৃতিপ্রদত্ত অ-বৈজ্ঞানিক বিষয় নিয়ে চমৎকার মনমুগ্ধকর আলোচনা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছেআমাদের [১৩]। আমরাও গান ভালোবাসি, ভালোবাসি ব্লগালোচনা, কবিতা, ফুল, ভালোবাসি ভালোবাসতে, কিংবা ভালবাসা পেতে। কিন্তু একই সাথে অন্যান্য অনেকের মতো মনে করিনা যে, এই অবৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া চমৎকারভাবে উপভোগ করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, মহাকবি কীট্স্ একবার নিউটনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছিলেন যে আলোকের সূত্রের দ্বারা রংধনুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি রংধনুর সৌন্দর্যকেই ক্ষুন্ন করে দিয়েছেন। অথচ কীট্স্ই আবার অন্য এক প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে, সত্যই সুন্দর! আরেকবার, পদার্থবিদ ফাইনম্যানকে তাঁর এক শিল্পী বন্ধু হাতে একটা ফুল হাতে নিয়ে বলেছিলেন, “একজন শিল্পী হিসেবে আমি এই ফুলের সৌন্দর্য হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম, আর তোমরা বিজ্ঞানীরা এটাকে ভেঙ্গে চুরে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এর সৌন্দর্যকেই নষ্ট করে দাও”। এর উত্তরে ফাইনম্যান বলেছিলেন যে একজন শিল্পী ফুলে যে সৌন্দর্য দেখতে পান, তিনিও সেই একই সৌন্দর্য দেখতে পান, কিন্তু উপরন্তু তিনি ফুলের ভেতরকার সৌন্দর্যকেও দেখতে পান, যেমন কি ভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ দ্বারা ফুলের পাপড়ি গঠিত হয়, কিভাবে বৈবর্তনিক উপযোজনের কারণে কীটপতঙ্গকে আকর্ষণ করার জন্য ফুলের সুন্দর রঙের সৃষ্টি হয়েছে, এই সব, যা থেকে তাঁর শিল্পী বন্ধু বঞ্চিত [১৪]।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কথাই ধরি। গানের ফিজিক্স বোঝার মাধ্যমে একে আরও ভালোভাবে উপভোগ, উপস্থাপন করার সুক্ষ্মতা উদ্ভাবনের পাশাপাশি , আবিষ্কৃত হয়েছে নানা যন্ত্রপাতি। রেকর্ডিং করার উপায় আবিষ্কারের মাধ্যমে যেকোনো পরিস্থিতিতে গান যে কাউকে সংগ দিতে পারে। বিজ্ঞানের কারণে আমরা নিজেরাও এখন ছবি তুলে/ এঁকে সেগুলো ফ্লিকারে আপলোড করার মাধ্যমে সবার সাথে শেয়ার করতে পারি। দুনিয়ার প্রায় সকল কবিতা, গল্প খুব কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসবে ইন্টারনেটে। স্টিফেন হকিং এর নতুন বই পড়ার জন্য মানুষের এখন আর বছর খানেক অপেক্ষা করতে হয়না, তারা আমাজনে চট করে অর্ডার দিয়ে পরের দিন হাতের কাছে পেয়ে যায়।
কোন ধরণের উদাহরণ না দিয়ে মার্শাল তার তৃতীয় ও চতুর্থ দাবী, বাস্তবতাকে পাশ কাটানো, এবং “মনে করি” ব্যাপারটাকে কটাক্ষ করে কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা বোধগম্য হলোনা কোনোভাবেই।
বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পণা (Intelligent Design) নামক ছদ্মবিজ্ঞানের এক মুখোপাত্র ডেভিড বারলিনস্কি (David Berlinski) বিজ্ঞানীদের চরিত্র নিয়ে গবেষনার পর প্রবন্ধে লিখেন, অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা গোঁয়ার, অন্তসারশূন্য, রাজনীতিতে অপরিপক্ক, অলস এবং অহংকারী [১৫]। রেফারেন্স ছাড়াই বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের লাইন তুলে ধরে তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা সবকিছু বিশ্বাস করতে প্রস্তুত [১৬]। অবশ্যই বিজ্ঞানীরা যে কোন কিছু বিশ্বাস করতে প্রস্তুত যদি সেটা বিশ্বাস করার মতো পর্যাপ্ত প্রমান থাকে। হ্যাঁ! মাঝে মাঝেই বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ধারণা পড়ে আমাদের সেটা অর্থহীন, অসম্ভব বলে মনে হয়, কিন্তু সেটার দোষ তো বিজ্ঞানীদের না। ব্যাপারগুলো আমাদের দৃষ্টিভংগিতে অর্থহীন বলে মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। কারণ প্রতিটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্পন্ন হয় বস্তুনিষ্ঠ নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। প্রতিটি আবিষ্কার বা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আরও অসংখ্য তত্ত্বের সমন্বয়ে গঠিত হয়। প্রতিটি বৈজ্ঞানিক ধারণা যিনি আবিষ্কার করেছেন শুধু তার জন্য সত্য না, বরঞ্চ সেটা পৃথিবীর যে কোন ল্যাবরেটরিতে, যে কোন মানুষ দ্বারা স্বাধীনভাবে পরীক্ষা যোগ্য।
গ্রুপ মেইলে হঠাৎ করেই একবার ধর্ম- নির্ধর্ম আলোচনায় একজন বিশাল এক মেইল করে বসলেন। আস্তিকতা- নাস্তিকতা বিষয়ে অনেক বই তিনি পড়েছেন, এই দাবীসম্বলিত বিশাল মেইলে নাস্তিকদের উদ্দেশ্য করে বলা কথাটির সারমর্মঃ “ঈশ্বরের মতো একজন যিনি স্থান,কালের উর্দ্ধে, তার অস্তিত্ব মাপার জন্য পার্থিব পরিমাপ, ওজন, গনিত ব্যবহারের মতো হাস্যকর কিছুই আর হতে পারেনা”। নাস্তিকতার বিপক্ষে প্রচলিত এই কথাটি অযৌক্তিক হলেও অসংখ্য বিজ্ঞানী দুঃখজনকভাবে এটি সমর্থন করে থাকেন। রক্ষণশীল লেখক এবং বক্তা দিনেশ ডি’সুজা জীববিজ্ঞানী ডগলাস এরউইনকে উদ্ধৃত করে বলেন, বিজ্ঞানের অন্যতম একটি নিয়ম বা ধারা হচ্ছে, সকল ধরণের মিরাকলের অস্তিত্ব অস্বীকার করা [১৭]। তার মানে কি এই দাঁড়ালো যে, সত্যিকার অর্থেই ব্যাখ্যাতীত মিরাকলের সন্ধান পাওয়া গেলে বিজ্ঞান সেটা অস্বীকার করবে? কোন সুস্থ মস্তিষ্কের যুক্তিমনস্ক মানুষই দিনেশ ডি’সুজার বক্তব্যকে সমর্থন করার কথা না।
দিনেজ সু’জা জীববিজ্ঞানী ব্যারি পালেভিটয কে উদ্ধৃত করে আরও বলেন, “প্রাকৃতিক মহাবিশ্বকে জানান জন্য অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যা এমনিতেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়” [১৮]। এখন, যদি অতিপ্রাকৃত কোন ব্যাখ্যা সত্যই চমৎকারভাবে কাজ করতে থাকে তখন সেটাও কি বাদ দিয়ে দেওয়া হবে? কেন?
শুধু দিনেশ ডি’সুজার মতো ব্যক্তিরাই কেবল নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্স বিজ্ঞান এবং অতিপ্রাকৃত ঘটনা সম্বন্ধে একই ধরণের অযৌক্তিক ধারণা পোষণ করে [১৯]-
“প্রাকৃতিক মহাবিশ্বকে জানার জন্য বিজ্ঞান ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক কারণের আলোকে প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব ব্যাখ্যা করা পর্যন্তই বিজ্ঞানের সীমারেখা। অতিপ্রাকৃত ব্যাপার নিয়ে বিজ্ঞানের বলার কিছু নেই। সুতরাং ঈশ্বর আছে কি নেই, এমন প্রশ্ন বিজ্ঞানে অবান্তর, যতক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞান তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখে”।
অথচ খোদ ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সের সদস্যদের মধ্যে মাত্র সাত শতাংশ ঈশ্বরে বিশ্বাসী [২০], সুতরাং বাকিরা হয় নাস্তিক কিংবা অজ্ঞেয়বাদী, যদিও এদের কারোরই অধিকাংশ ধার্মিক আমেরিকানদের সাথে দার্শনিক ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হবার বাসনা নেই।
বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক (এবং নাস্তিক) স্টিফেন জে গুল্ড তাঁর শেষ বইয়ে ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে একটি সমঝোতা আনার চেষ্টা করেছেন। বিজ্ঞান ও ধর্মকে তিনি চিহ্নিত করেছেন দুইটি স্বতন্ত্র বলয় [non-overlapping magisteria (NOMA)] হিসেবে, যেখানে বিজ্ঞান তার নিজস্ব বলয়ে কাজ করে প্রাকৃতিক মহাবিশ্বকে বুঝতে, আর ধর্ম অন্য বলয়ে কাজ করে নৈতিকতা বজায় রাখতে [২১]।
অসংখ্য সমালোচক গুল্ডের বক্তব্য পর্যালোচনা করে বলেছেন, তিনি ধর্মকে নৈতিকতার দর্শন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করছেন। যদিও বাস্তবতায় আমরা দেখতে পাই, কেবল মাত্র নৈতিকতার দর্শনেই ধর্মের কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ নয়। ধর্ম প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব সম্বন্ধেও নানা ধরণের মতামত প্রদান করে। ধর্ম মতামত করে জীবনের উৎপত্তি নিয়ে, মতামত প্রদান করে মহাবিশ্বের সূচনা নিয়ে- যেই দাবীগুলো সত্যতা কোন নৈতিক ধর্ম দিয়ে নয়, বরং বৈজ্ঞানিক পক্রিয়ায় জানা সম্ভব। রিচার্ড ডকিন্স তার গড ডিলুশন বইয়ে এবং অন্যত্র গুল্ড প্রস্তাবিত স্বতন্ত্র বলয় তত্ত্বের বিরুদ্ধে জোরালো যুক্তি দিয়েছেন একাধিকবার [২২]। ডকিন্স ধর্মীয় বিশ্বাস প্রসূত কল্পকাহিনীগুলোকে বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে যাচাইয়ের বাইরে রাখার চেষ্টাকে অসৎ মনোবৃত্তির পরিচায়ক মনে করেন। তাঁর ভাষায়, ধর্মে যে সমস্ত অলৌকিক গল্প-কাহিনী দিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো হয়, সেই গল্পগুলির মধ্যে ব্যবহার করা হয় বিজ্ঞানের উপকরণ; আর বিজ্ঞান যখন এই সব গাঁজাখুরি গল্প-কাহিনীর সত্যতা এবং সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তখনই বলা হয়, বিজ্ঞান ধর্মে নাক গলাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে স্বতন্ত্র বলয়ের প্রবক্তাদের মনে হয় শান্তিকামী, কিন্তু মিথ্যাকে মেনে নিয়ে যে শান্তি, তা কাম্য হওয়া উচিৎ নয়। দূর্ভাগ্যের ব্যাপার, এমনকি বাংলাদেশেও হারুন অর রশিদ কিংবা জাফর ইকবালের মত বিজ্ঞানীও শুধুমাত্র সমন্বয়ের খাতিরে ধর্মবাদীদের সাথে আপোষ করতে প্রস্তুত। স্বতন্ত্র বলয় বা Nonoverlapping Magisteria হচ্ছে তাঁদের এই ধরনের মানসিকতারই ফলশ্রুতি। এঁরা বিজ্ঞান পেশার সাথে জড়িত হলেও বিভ্রান্তির শিকার এবং অবচেতনভাবেই বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছেন।
এবার আসা যাক নৈতিকতা প্রসংগে। মানব সভ্যতার পথপরিক্রমায় ধর্ম এই একটি ক্ষেত্রেও যে খুব অবদান রেখেছে বা রেখে চলছে তাও নয়। এটি সমর্থন করেছে দাস প্রথা, সমর্থন করেছে রাজার একচ্ছত্র অধিকার, সমর্থন করেছে মৃত্যুদণ্ড, অংগচ্ছেদন, হরণ করেছে নারীর স্বাধীনতা। ইরান সহ আরও কিছু মুসলিম দেশে এখনও ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী মেয়েদের পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়। প্রতিবেশি দেশ ভারতে সতীদাহ প্রথা অনুসারে স্বামীর সাথে জীবন্ত পোড়ানো হতো স্ত্রীকে। নানা সময়ে নানা জায়গায় ধর্ম ওষুধ গ্রহন করতে বাধা দিয়েছে, বাধা দিয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি ব্যবহারের। সর্বাধিক এইডস আক্রান্ত আফ্রিকায় এইডসের সংক্রামক থেকে নিজেকে রক্ষা করার অন্যতম উপায় যৌনমিলনের আগে কনডম ব্যবহার, সেটাকেও একসময় বাধা দিয়েছিলো চার্চ।
মানুষকে মিথ্যা বলা থেকে বিরত রাখা, সৎ রাখা কিংবা খুনাখুনি থেকে বিরত রাখার জন্য উপরওয়ালার ভয়ের প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু সেটাও ভাববার বিষয়। বইয়ের পরবর্তী একটি অধ্যায়ে এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা আমরা করবো। কিন্তু একটি কথা এখানেই বলে নেবার প্রয়োজনিয়তাবোধ করছি। বাস্তবতা হলো, সাধারণ নৈতিক ব্যাপারগুলো (সত্য কথা বলা, সৎ থাকা, হত্যা না করা) বড় বড় ধর্ম শুরু হবার বহু আগে থেকেই মানব সমাজে প্রচলিত ছিলো। সুতরাং ধর্মের যদি কোন উপকারীতা থেকেও থাকে, সেগুলো ধর্ম ছাড়াও সমানভাবে থাকবে, এমন আশা করাটা অযৌক্তিক নয় [২৩]।
ন্যাশনাল একাডেমি এর সদস্যদের মধ্যে যারা মনে করে থাকেন, বিজ্ঞানের ঈশ্বর সম্পর্কে বলার কিছু নেই, তারা আসলে চোখের সামনে থাকা বাস্তবতাকে উপেক্ষা করছেন। হার্ভাড ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটি এবং মেয়ো ক্লিনিকের মতো পৃথিবী বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা প্রার্থনার কোনো উপকারিতা আছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা করছেন [২৪]। এই গবেষণাগুলোতে প্রাপ্ত ফলাফল যদি ধনাত্মক হয় এবং এগুলো যদি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরণের মানুষের উপর একই ধরণের ফলাফল প্রদান করে তাহলে আমরা নব্য নাস্তিকরা অবশ্যই ঈশ্বর বলে একজন থাকতে পারে, এমন ধনাত্মক ধারণা নিয়ে আরও সুক্ষ্ম গবেষণায় আগ্রহী হবো।
হ্যাঁ! উপরের গবেষণাগুলোয় প্রার্থনা কাজ করে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সেটা ব্যাপার না, ব্যাপার হলো পাওয়া যেতে পারতো। তখন ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সের সদস্যদের মতামত কি হতো? আমরা কি সেই গবেষণা বাতিল ঘোষণা করতাম? করতাম না। ঈশ্বরের মতো একজন, যিনি মানুষের প্রার্থনা শুনেন এবং সেটা কবুল করেন তাকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব। কারণ প্রার্থনা কবুলের ফলাফল অনেকসময় পৃথিবীতেই পাওয়া যায়। পৃথিবীতে যখন পাওয়া যায় তখন সেটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।
তবে ধর্মবেত্তা এবং হুজুরেরা এখন অতিপ্রাকৃত বিষয় পরীক্ষায় বিজ্ঞানকে যতই তাচ্ছিল্য করে থাকুক না কেন, আজকে যদি প্রার্থনার সরাসরি উপকারিতা (প্ল্যাসিবো নয়) বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হতো তাহলে আমরা অসংখ্য টিভি- চ্যানেল, পত্র- পত্রিকায় বড় করে খবর দেখতাম, “মাওলানা অমুক আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণকে স্বাগত জানিয়েছেন!”
চলবে…
তথ্যসূত্রঃ
তো, তোমার মত করে ভাবতে হবে আমাকে নাকি?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আরেকটু এগুলেই দেখতে পেতেন, আমার মতো করে ভাবার অনুরোধ তো দূরের কথা, আমি এ লেখা পড়তেই নিরুৎসাহিত করেছি।
ডিসক্লেইমার দিয়া দাও। পয়লাই, ভিতরে রাখার দরকার কি?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
অর্ধেক পড়ছি।বাকিটুকু পড়ে পড়ব।
মনে হল লিংকটা প্রাসঙ্গিক। তাই দিয়ে দিচ্ছি-
http://news.bbc.co.uk/earth/hi/earth_news/newsid_9139000/9139971.stm
ভালো ছিলো।
অন্য আরও একটা লিংক-
http://opinion.bdnews24.com/bangla/2010/11/07/thought-on-god-goldfish-reality-and-hawkings-grand-design/
মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।
কিরে এইগুলা কি কস?ভূতের মুখে রাম নাম?!!!
রামের মুখে ভুতের নাম।
আগেই বলে নিচ্ছি যে আমি একজন পুরা মাত্রায় আস্তিক. পুরা পোস্ট নিয়ে আমি কোনো সামগ্রিক মন্তব্য করব না কারণ এইসব আলোচনায় যাবার মত জ্ঞান আমার একদম-ই নাই. তবে একটা জিনিস নিয়ে শুধু মন্তব্য করব.
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান-এ বলে যে এইটা ইশ্বরের প্রার্থনায় সাড়া দেওয়া কিংবা সত্যিকার ঈশ্বর কে – এই হাইপোথিসিস পরীক্ষা করার খুব একটা উত্তম পদ্ধতি নয়. কারণ এখানে at least নিচের দুইটা assumption করা হচ্ছে যেটার ভিত্তি অন্তত ইসলাম-এ আমি খুঁজে পাই নাই:
১. প্রার্থনা করলেই সেইটা গৃহীত হবে.
.-- আমি যতটুকু বুঝি আমাদের ধর্মের doctrine হচ্ছে নিজের চেষ্টা করে যাব এবং আল্লাহ-এর কাছে প্রাথর্না করব. ফলাফল কি হবে একমাত্র উনি-ই বলতে পারবেন.
২. আল্লাহ/ ইশ্বর নন-মুসলিম-দের কোনো প্রাথর্না শুনেন না ব়া ইহজাগতিক ব্যাপারে শুধু মাত্র মুসলিম-দেরকে prefer করেন. আমার মন হয় একমাত্র ধর্ম যুদ্ধ হলে eventually মুসলিম-দের জয়যুক্ত করা হবে এমন বলা আছে...এছাড়া অন্য কোনো কিছুতে মুসলিম-রা এমনি এমনি শুধু মুসলিম ধর্মালম্বী দেখে preference পাবে সেটা জানা নাই. তবে প্রথম assumption টা invalid হলে দ্বিতীয়টা নিয়ে কথা বলাটা অবান্তর.
মজার ব্যপার হচ্ছে আমি এর উল্টা একটা ঘটনার কথা কথাও পরেছিলাম. রেফারেন্স দিতে পারছিনা দেখে আগেই ক্ষমা চাচ্ছি. ওই পরীক্ষায় মনে হই আস্তিক বনাম নাস্তিক রোগীদের মধ্যে পরীক্ষা হয়েছিল. দেখা গিয়েছিল যে আস্তিকদের survival rate অপেক্ষাকৃত ভালো ছিল. মজার বেপার হচ্ছে যে ঐটার সাথে ইশ্বর থাকা না থাকা প্রমানের কোনো ব্যাপার ছিল না. বরং এইটাই conclusion ছিল যে আস্তিক রোগীরা বেশি আশাবাদী থাকেন অনেক সময়..তাদের positive frame of mind তাদের কে কিছুটা হলেও সাহায্য করে. নাস্তিক হলে যে positive হয় না এরকম না ..কিন্তু শতকরা হার মনে হয় একটু হলেও কম. আমার এই ঘটনা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে এই ধরনের experiment -এর ফলাফল positive হলেই সেইটা যেমন ইশ্বর থাকার প্রমান না..তেমনি negative হলেই সেইটা ইশ্বর না থাকার-ও প্রমান না. (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
ধন্যবাদ মেহেদী ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।
১) প্রার্থনার ব্যাপারটা একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই-
ইন্টার পাশের পর যখন আইইউটিতে এপ্লাই করলাম, তখন আব্বু- আম্মু খালি বলতেন সকালে উঠে নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে যেন ভর্তি হবার সুযোগ পাই। আমি যদি তাদের কথা মতো চলে-
ক) ভর্তির সুযোগ পেতাম- তাহলে তারা বলতেন, দোয়া কবুল হয়েছে।
খ) যদি ভর্তি সুযোগ না পেতাম- তাহলে তারা বলতেন, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন/ নিশ্চয়ই আল্লাহ পরকালের জন্য উত্তর প্রতিদান রেখেছেন/ কপালে আইইউটি ছিলোনা ইত্যাদি ইত্যাদি...
যাই হোক, ব্যাপার হলো আমি প্রার্থনা করি আর নাই করি, আল্লাহ এসে আমার ইন্টারের গ্রেড পয়েন্ট বাড়িয়ে দিবেন না, আল্লাহ নোটিশ বোর্ডে আমার নাম উপরে নিয়ে আসবেন না। আমার ভর্তি হতে পারা এবং না পারা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আমার ইহলৌকিক পারফরম্যান্সের উপর, প্রার্থনার উপর নয়।
এই কথাটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে প্রার্থনা করে প্রাকৃতিক নিয়মের গতিরোধ করার কোনো উদাহরণ পৃথিবীতে নেই, তারপরও সবাই প্রার্থনা করে। এবং মনে মনে ভাবে আল্লাহ তাদের জন্য স্পেশাল কনসিডারেশন করবেন, যদিও করেন না।
সবকিছু আল্লাহ ইচ্ছাতেই হবে এটা মেনে নিলে প্রার্থনা করা কেন? যা হবার তা তো আগেই লিখিত? আমার কোনো প্রার্থনা তার গতিরোধ করতে পারবেনা।
২) পৃথিবীর প্রতিটা ধর্মালম্বী মনে করে থাকে তাদের প্রতি ঈশ্বরের কৃপা আছে। ঈশ্বর তাদের শত্রুদের বিপক্ষে জয়যুক্ত করবেন। প্রত্যেকেই মনে করে থাকে তারাই ইউনিক, বাকিরা ভুল। আপনি যেভাবে ইসলামিক ঈশ্বরকে সেরা ভাবেন, সত্য ভাবেন, একবারও কি ভেবে দেখেছেন ইহুদি- খ্রিস্টানরাও একই কথা ভাবে তাদের ঈশ্বরের ক্ষেত্রে?
প্রার্থনা কাজ করে কি করেনা, এইটা কমন সেন্স। করেনা। তারপরও এইসব পরীক্ষা চালানো হয়েছে কারণ ভলতেয়ারের মতো করে বললে, common sense is not so common এই কারণে!
এইবার শেষপয়েন্টে আসি। যেখানে আপনি আস্তিক- নাস্তিকের কথা বললেন। আপনি বললেন, আস্তিকদের positive frame of mind তাদের হিলিং এ সহায়তা করে, নাস্তিকরা নেগেটিভ থাকে। আসলেই কি তাই?
ভেবে দেখুন একজন আস্তিকের জন্য এই দুনিয়াতে বেঁচে থাকার কিন্তু কোনো প্রয়োজন নেই। তারা অপেক্ষা করে কবে বেহেশতে যাবে, কবে দুনিয়াতে নিষিদ্ধ কিন্তু বেহেশতে নিয়ামত বিভিন্ন জিনিস নিয়ে ভোগে মেতে উঠবে। সুতরাং বেঁচে থাকার জন্য তাদের পজিটিভিটি কোথা থেকে আসবে? তারা তো ভাগতে পারলে বাঁচে। আস্তিকরা সুইসাইড বোম্বিং করে, কোনোদিন শুনেছেন নাস্তিকরা প্রদর্শনের জন্য, প্রতিষ্ঠান জন্য নাস্তিকরা সুইসাইড করেছে?
নাস্তিকদের একটাই জীবন। জাস্ট একটাই। তারা জানে মৃত্যুর পরে কিছু অপেক্ষা করার সম্ভাবনা .00000১ ভাগ। তারাই বেশি করে ভালো হতে চাবে, দিন দুনিয়া কয়েকদিন বেশি উপভোগ করতে চাবে। তাদের মেন্টাল ফ্রেমওয়ার্কই তো পজিটিভ হবার কথা। তাই না?
ভাই রায়হান, আমার লেখালেখির অভ্যাস একদম-ই নাই. জীবনে একটা লাইন ব্লগ-এ লেখার সামর্থ্য অর্জন করতে পারি নাই. এখন মনে হচ্ছে না লেখে ঠিকই করেছি. কারণ আমি আমার কথাটা একদম-ই বুঝতে পারি নাই.
আমি কিন্তু এই ব্যাপারে কিছুই বলি না। আমি শুধু বলতে চেয়েছি ওই experiment -এর assumption -এর ব্যাপার-এ। ঐখানে assume করা হচ্ছে যে: ধর্ম দাবি করে যে প্রার্থনা করলেই সেইটা answered হবেই। তাই যদি দেখানো যায় যে প্রার্থনা করা হলো কিন্তু ফল মিলল না তাহলেই ধর্ম ভুল প্রমানিত হলো। আমি বলতে চাইসি যে এই premise টা শুধু ভুল। আমার জানামতে কোনো ধর্মেই ওরকম দাবি করা হই নাই। সামগ্রিক ভাবে প্রার্থনার utility নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করি নাই ব়া এখনো করছি না। আমার বক্তব্য শুধুই ওই experiment টা নিয়ে। বুঝাতে না পারাটা আমার অক্ষমতা বলে ধরে নিচ্ছি।
আমি কোন কথায় মনে হলো যে এইটা আমি কোনো দিন ভাবি নাই? আমি কি আমার ঈশ্বরের শ্রেষ্টত্ব দাবি করে কিছু বলেছি? আমার জানামতে তো আমি ওই প্রসঙ্গে কোনো কথায় বলি নাই। আমার মন্তব্য শুধুই ছিল ওই experiment ঘিরে। ওই experiment -er কথা শুনে মনে হলো যে ধর্মগুলার একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে ইশ্বর শুধুই ওই ধর্মের অনুসারীদের দেখভাল করেন। যেমন হিন্দুদের দেবতা যদি সত্যি হয় তাহলে শুধু উনি হিন্দুদেরই রোগ সারাবেন...মুসলিম-দের নয়।. আমার জানামতে হিন্দু ব়া কোনো ধর্মেই এরকম কথা দাবি করা হই নাই। সেইটাই বুঝাতে চেয়েছি। কোনো বিশেষ ধর্মের ঈশ্বরের শ্রেষ্টত্ব নিয়ে কিছু বলি নাই ব়া বলতে চাই-ও না।
এইবার কিন্তু ভাই তুমি আমার মুখে কথা ভরে দিচ্ছ . আমি কই বললাম নাস্তিকরা negative থাকে? আমি বলেছি শুধু ধার্মিকরা হয়ত একটু বেশি positive থাকে. আর positive বলতে আমি কি বুঝাচ্ছি সেইটাও আমার মনে হয় ক্লিয়ার করা উচিত ছিল। আমি বাচার ইচ্ছার কথা বলি নাই এইখানে। নাস্তিক-দের বাচার ইচ্ছা হয়ত বেশি..তোমার এই বক্তব্যের সাথেও আমার কোনো দ্বিমত নাই। আমি positive বলতে বুঝিয়েছি বেচে থাকার সম্ভাবনার ব্যাপার-এ দৃষ্টি ভঙ্গি। একজন নাস্তিক হয়ত শুধু ডাক্তার-এর উপর depend করছে, কিন্তু একজন আস্তিক হয়ত প্রার্থনা সহ আরো অন্যান্য জিনিস-এর উপর নির্ভর করছে।.তাই হয়ত সে একটু বেশি আশাবাদী। ..যেমন...অনেক সময় দেখা যায় রোগী এমন অবস্থায় পৌছেছে যে statistically survive করার সম্ভাবনা খুব কম। একজন নাস্তিক হয়ত ওই probability তাকেই বেশি গুরুত্ব দিবে। কিন্তু একজন আস্তিক হয়ত আশা ধরে রাখবে যে ইশ্বর চাইলে কি না হয়। এখন...আমি খুব স্পষ্ট করে একটা জিনিস বলতে চাই..এইটার মাধ্যমে আমি ধর্মের জয়গান গাচ্ছি না।. এইটা বরং আমি ধর্মের একটা artifcat বলব ..একটা unintended consequence এবং এই phenomenon কোনো বিশেষ ধর্মের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধ না।
(সম্পাদিত)
মেহেদী ভাই, আপনার কথা আমি পরিষ্কার বুঝেছি। কিন্তু সেগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য প্রাসংগিক আরও কিছু কথা এড্রেস করায় আপনার হয়তো মনে হচ্ছে আমি আপনার কথা বুঝিনি।
যেমন ধরুন প্রার্থনা পরীক্ষার ব্যাপারে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নির্নয়ের ব্যাপারে আপনি বলতে চান-
ভাইয়া লক্ষ্য করে দেখবেন, আমার লেখার শেষ দিকে আমি বলেছি,
কেন বলেছি? কারণ ধার্মিকদের প্রার্থনা "ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে" সেটা মেনে নিয়েই হয়। সুতরাং এটা একটা জায়গা যেখানে ঈশ্বরকে খুঁজে দেখা যেতে পারে। পাওয়া গেলে ফারদার ইনভেজটিগেশন। কিন্তু না পাওয়া গেলেই যে ঈশ্বর নেই এটা প্রমান হলো সেটা কিন্তু আমার পয়েন্ট না। ঐ পরীক্ষার পয়েন্টও না। আশাকরি বোঝাতে পারলাম।
প্রথম মন্তব্যে আপনি বলেছিলেন-
আপনি মন্তব্যের শুরুতে আরও বলেছেন, আপনি পুরোপুরি আস্তিক। এবং আপনার নাম দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি একজন মুসলিম। মুসলিমের ধর্ম গ্রন্থে যদি ইভেনচুয়ালি ধর্মযুদ্ধের মুসলিমদের জয় হবে একথাও লেখা থাকে তাহলে আপনি সেটায় বিশ্বাসী। অর্থাৎ সবকিছু বাদ দিলেও ধর্মযুদ্ধে ঠিকই নির্ধারিত হবে কোন ঈশ্বর সেরা এবং সেটা মুসলিম ঈশ্বর।
আপনি বলেছেন সে এজামশন মিথ্যাও হতে পারে। কিন্তু মিথ্যা নয়, আপনি একটু গুগল করলেই জানতে পারবেন, ধর্মযুদ্ধ করতে করতে একদিন পুরো পৃথিবীকেই মুসলিমরা দখল করে নিতে পারবে আল্লাহর কৃপায়, যেমন করে ইহুদীরা তাদের ঈশ্বরের কৃপায় শত্রুদের বিতারণ করে পাবে প্রমিজড ল্যান্ড "ইসরায়েল"।
এ ব্যাপারে আপনি আমি একমত হতে পারছিনা এই কারণে যে এই বিশেষ পরিস্থিতিতে নাস্তিকরা কি মনোভাব পোষণ করতে পারে আপনি তার সাথে পরিচিত না।
নীচের সাক্ষাৎকারটি দেখুন। ক্রিস্টোফার হিচেন্স সম্পর্কে একটু গুগল করেই জানতে পারবেন, তিনি বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নাস্তিক লেখক এবং দার্শনিক। কয়েকমাস আগেই তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে এবং অতিদ্রুত তিনি মারা যেতে যাচ্ছেন। দেখুন তার মনোভাব-
প্রার্থনা তো একটা সান্তনা মাত্র। এজন্যই তো কার্ল মার্কস ধর্মকে আফিমের সাথে তুলনা করেছেন। কারণ আফিম মানুষের যন্ত্রণাকে ভুলিয়ে রাখে, রোগ সারায় না।
আমার একদম প্রথম কমেন্ট-টা কোন বিশেষ ধর্মের পক্ষ নিয়ে করি নাই| ঐখানে ধর্মযুদ্ধর কথা বলার একমাত্র কারণ এইটা বুঝানো যে আমি আমার ধর্মের কথাও পাই নাই যে ইহজাগতিক কোনো ব্যাপার-এ মুসলিমরা শুধুই মুসলিম হবার কারণে কোনো special advantage পাবে| এতটুকু বলেই আমি থেমে যেতে পারতাম| তাও আমি ধর্ম যুদ্ধ-এর উল্লেখ করেছি যাতে আমার কথায় ফাকফোকর না থাকে| এইটা বলার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এইটা বুঝানো যে অন্তত রোগীর আরোগ্যের ক্ষেত্রে একজন মুসলিম রোগী বেশি সুবিধা পাবে এইটা আমি মনে করি না| সেইখান থেকে টেনে কিভাবে তুমি ইশ্বরের শ্রেষ্টত্বের ব্যাপার আনলা আমি বুঝি নাই এখনো| আমার কাছে যাপারটা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েচে| যেইখানে আমি কোনো ধরনের মুসলিম-অমুসলিম...আস্তিক নাস্তিক ...নিয়ে বিতর্কের ধরে কাছ দিয়েও না গিয়ে শুধু মাত্র একটা experiment -এর validity -এর ব্যাপারে doubt পোষণ করেছি, (তোমার পোস্ট অনেক বড়..আমি কিন্তু আর কোনো কিছু নিয়েই কিছু বলি নাই), কিন্তু তুমি প্রাসগিকতার কথা বলে আরো অনেক বিষয় টেনে আনছ তখন বুঝতেই হবে আমাদের দুজনের দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পার্থক্য কোনটা প্রাসঙ্গিক আর কোনটা প্রাসঙ্গিক নয় এই ব্যপার-এ| আমার ধারণা অন্য জায়গায় লিখে এইখান paste করার সময় কিছু indentation উধাও হয়ে গিয়ে কিছু সমস্যার তৈরী থাকতে পারে| তাই নিচে আবার লিখছি :
এখানে ওই experiment-e ধর্ম সম্পর্কে Assumption -এর কথা বলেছি দুইটি :
১. প্রার্থনা করলেই সেইটা গৃহীত হবে|
২. যে ধর্মের ইশ্বর সত্যি হবে তিনি শুধু ওই ধর্মের রোগীদের আরোগ্য করবেন | অর্থাৎ যদি মুসলিম ধর্মের ইশ্বর সত্যি হয় তাহলে আল্লাহ/ ইশ্বর নন-মুসলিম-দের কোনো প্রাথর্না শুনবেন না ব়া ইহজাগতিক ব্যাপারে শুধু মাত্র মুসলিম-দেরকে prefer করবেন |
১ এর ব্যাখায় বলেছি: আমি যতটুকু বুঝি আমাদের ধর্মের doctrine হচ্ছে নিজে চেষ্টা করে যাব এবং আল্লাহ-এর কাছে প্রাথর্না করব. ফলাফল কি হবে একমাত্র উনি-ই বলতে পারবেন. প্রার্থনা করলেই পাব এই ধরনের কথা কোথাও বলা নাই|
২ এরব্যাখায় বলেছি: আমার মন হয় একমাত্র ধর্ম যুদ্ধ হলে eventually মুসলিম-দের জয়যুক্ত করা হবে এমন বলা আছে| এছাড়া অন্য কোনো কিছুতে মুসলিম-রা এমনি এমনি শুধু মুসলিম ধর্মালম্বী দেখে preference পাবে সেটা জানা নাই| তবে প্রথম assumption টা invalid হলে দ্বিতীয়টা নিয়ে কথা বলাটা অবান্তর. (এখানে প্রথম বলতে assumption ১ অর্থাৎ প্রার্থনা করলেই সেইটা গৃহীত হবে সেইটার কথা বলেছি|) (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
মেহেদী ভাই কলেজে আপনার বিতর্কের পাংখা ছিলাম... 🙂 (সম্পাদিত)
বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব-গঠনের (Theorizing) নিয়মাবলী নিয়ে এই প্রথম কিছু পড়াশোনা করছি।
বিবর্তনের উপর ভিত্তি করে আস্তিকতা/নাস্তিকতা'র বিতর্কগুলোতে এখন নতুন মজা পাওয়া শুরু করেছি। মনে হচ্ছে, এইবার সিসিবি বেশ ভালো মজাই দিবে ;;;
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই আপনার নিজের বিস্তারিত মতামত চাই ...
বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের এইধারার আলোচনায় ইদানীং নতুন কয়রে উৎসাহ পাচ্ছি এক প্রফেসরের সাথে আলাপের প্রেক্ষিতে। এই বিষয়ে বাংলায় প্রকাশিত বইগুলো পড়ে দেখতে চাই।
রায়হানের এই বইটা কি অন লাইনে কেনার উপায় কেউ বলতে পারবেন?
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx