এ জার্নি বাই হোন্ডাঃ-
কুইড়ার একশেষ হচ্ছি দিনে দিনে। ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ারে দিনে দুইবার আইইউটি যাওয়া আসা করতাম দুলদুল পরিবহনে করে। দুই, দুই চার ঘন্টা। এখন ভাবলেই ভয় লাগে। বাসায় আসার টাইম হলেই পার্কিং লটে অবস্থান নেওয়া গাড়িগুলোর দিকে তাকাই। পরিচিত কারও গাড়ি দেখা যায় কিনা, এই আশায়। তাহলে আরাম করে আধাঘণ্টায় বাসায় পৌঁছানো যাবে।
গত বুধবারও বেলা এগারোটায় ঘুম থেকে উঠে গাড়ির খোঁজ শুরু করলাম। কিন্তু না। তিন গাড়ি মালিকের একজন টাংকি মারতে যাবে চট্টগ্রাম, আরেকজনের ফুফা মারা গেছে- বাবা মা গাড়ি নিয়ে চলে গেছেন, আরেকজনের গাড়ি স্টার্ট হয় না। দুনিয়াজুরা পচুর …
বিষণ্ণ বদনে রুমে ফিরে আসলাম। উপায় নাই গোলাম হোসেন। আজকে দুলদুল ছাড়া গতি নাই। এমন সময় রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ব্যাচমেট নাজমুলের ফোন। উনি আমাকে ঢাকা চলে যেতে মানা করলেন। কারণ তিনি আইইউটি আসছেন। তারপর একসাথে ঢাকা যাওয়া হবে।
ভাই কাছাকাছি আসাতে আমি নীচে নেমে গেলাম ব্যাগ নিয়ে। তাকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। কয়েকদিন আগে ভেতরে ঢোকার সময় তার পরিচয় বলা সত্ত্বেও গেটের আনসার গার্ডরা উঠে দাঁড়ায়নি বলে তিনি তাদের “সাবধান” করিয়ে ঝাড়ি দিয়েছেন। এই যাত্রায় আমি আর আনসার ভাইদের বিপদে ফেলতে চাই না।
ভাইকে দেখে আমার আত্মা উড়ে গেলো। তিনি ভুজুং ভাজুং এক হোন্ডা নিয়ে উপস্থিত। নতুন কেনা। আমাকে বলে, উঠ। আমি সারাজীবনে হোন্ডা নামক জিনিসটায় চড়েছি হাতে গোনা কয়েকবার, তাও পিচ্চিকালে মামার সাথে। যন্ত্রটা দেখলেই আমার ভয় করে। মানুষ যখন রাস্তায় এই জিনিস দিয়ে যায় তখন খালি মনে হয়, এই গেল, এই গেল। আর এখন কিনা আমাকেই, তাও আবার ভাইয়ের পেছনে চড়ে পাড়ি দিতে হবে ঢাকা গাজিপুর হাইওয়ে …
উঠে বসলাম। ভাই টান দিলেন। পেছনে বসার পর আমি টের পেলাম বসে যুত পাচ্ছিনা। সবচেয়ে বিপদে পড়লাম হাত দুইটাকে নিয়ে। মাঝে মাঝে দেখেছি, মেয়েরা হোন্ডার পেছনে বসে সামনের জনকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে, আমি নিশ্চয়ই সেইভাবে ভাইকে আঁকড়ে ধরতে পারি না …
ভাই হোন্ডা চালায় আর একটু পর পর চিৎকার করে গালি। আমি নাকি চ্রম খ্যাত। শক্ত হয়ে বসে আছি, খালি নড়াচড়া করি। যেকোন মুহূর্তে অফ-ব্যালান্স কইরা ঝামেলা ঘটায়ে ফেলবো। তেল নেবার সময় একজনরে দ্রুত এসএমএস দিলাম- আগামী চল্লিশ মিনিট জাস্ট আমারে মনে করতে, যে কোন মুহূর্তে ঘটনা ঘটে যাবে। (দু’আ তো আর চাইতে পারি না 😀 )
যাই হোক, পুরা রাস্তা চোখ দিয়ে পানি বের করতে করতে অবশেষে বিনা আঁচড়ে ফিরে আসলাম বাসায়। ছোটবেলায় “জার্নি বাই ট্রেন” বা এই টাইপ রচনার পর উপসংহারে থাকে, যে ভ্রমণ খুব ভালো লাগছে, সুযোগ পেলে আমি আবারও নৌকা কিংবা ট্রেন ভ্রমণে যেতে চাই। আমি স্পষ্ট করে খালি একটা কথাই বলবো, সুযোগ কিংবা অসুযোগ কোনভাবেই আমি আর জীবনে হোন্ডায় উঠতাম না। সরি।
আমার বন্ধু রাশেদঃ-
আমার পিচকু ভাইডা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে। বাবা- মা সময় দিতে পারে না, আমি ওরে দিন দুনিয়ার শিক্ষা দেই মাঝে মাঝে। বই টই কিনে দেই।
“আমার বন্ধু রাশেদ” বইটা পড়েছিলাম খুব সম্ভবত ক্লাস ফাইভে থাকতে। ভর দুপুরে যখন বইটা শেষ করলাম তখন আমার সে কি কান্না। বাসায় কেউ ছিলনা, আমি কেঁদে কেঁদে সোফা ভিজিয়ে দিলাম। সেদিন বইয়ের দোকানে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ বইটা নজরে পড়লো। ভাবলাম জান্নাহ যেহেতু ক্লাস ফাইভে উঠলো, ওকে বইটা কিনে দেই। পড়ুক।
বইটা কিনে ওনার হাতে দিলাম। সে বলে, পরে পড়ব। এখন “কাকাবাবু” সমগ্র নিয়ে ব্যস্ত আছে। খুবি জোশ। এইটা শেষ হলে তারপর দেখা যাবে।
আমিও বিষণ্ণ বদনে অপেক্ষা করি। তারপর একদিন সে পড়া শুরু করলো। আমি তক্কে তক্কে থাকি। আজকে দুপুরে দেখলাম প্রায় শেষের দিকে চলে আসছে। জুমার নামাজ পড়ার পর সে এই বয়সেই পাড়ার ছেলেদের সাথে গুলতানী মেরে দেরী করে বাসায় ফিরে। আজকে নামাজ শেষ করেই দৌড়। তাড়াতাড়ি ভাত খেয়েই শেষ অংশ পড়তে বসে গেলো।
ও পড়ে, আর আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ওর পড়া দেখি। শেষের পৃষ্ঠার আগে সে হঠাৎ করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। আমি বুঝলাম ঘটনা খ্রাপ। ছোটবেলায় আমিও বিশ্বাস করতে পারিনাই, লেখক রাশেদকে মেরে ফেলবেন।
ও বিশ্বাস করতে পারলো না। ক্ষীণ আশা নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে শেষ পাতাটি পড়লো। বইটা রাখার সাথে সাথেই আমি ঘুরিয়ে আনলাম আমার দিকে। দেখি চোখে পানি। আমাকে বলে, ভাইয়া কাঁদি না। একটু মন খারাপ হইছে।
তারপর দৌড়ে বাথরুম। অনেকক্ষণ পর মুখ টুখ ফুলিয়ে পাশে এসে শুয়ে পড়লো। আমি আর কিছু বলি না। ভেবেছিলাম, ওর কান্না দেখে একটু হাসাহাসি করবো, একটু পচাঁবো, কিন্তু হঠাৎ করে আমারও রাশেদের জন্য খারাপ লাগা শুরু হলো …
রাশেদের মতো ছেলেরা, কিংবা নাম না জানা কত মানুষরা এইভাবে যুদ্ধে মারা গেলো রাজাকারদের হাতে। সেই রাজাকাররা আজও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়। রাশেদের মতো ছেলেরা রক্তের বিনিময়ে যে দেশ আমাদের দিয়ে গেলো রাজাকারের বাচ্চারা এখন সেই দেশ নিয়ে তাদের ভাবনা চিন্তার কথা বলে, সেগুলো আবার টিভিতেও দেখায় …
আমার কিছুই করার থাকে না। পাশে শুয়ে থাকা ছোট ভাইকে জড়িয়ে ধরে খালি বলি, ভাইয়া মন খারাপ করোনা। এইটা তো শুধুই একটা গল্প …
যারা আগেই পড়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই ... 🙂
ধন্যবাদ accepted 😀
hi
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
জিহাদ কে অভিনন্দন। চ্রম প্রতিদ্বন্দীতার ?! মধ্য দিয়ে ১ম হবার গৌরব অর্জন করায়। :))
ভালই.............. হঠাৎ ভালোবাসার গল্প বন্ধ করে মটর সাইকেলের গল্প? ওইটা তো MGCC'র পাঙ্গা!! কেম্নে কি?? :-B :-B :-B
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু ভাই তো সবি বুঝে গেলেন। আমি আর কী বলতাম 😛
আমার বন্ধু রাশেদ পড়ে আমারো একই অনুভূতি হয়েছিল, আরো একটা বই হুমায়ুন আহমেদের সূর্যের দিন, ওটাও কতগুলো কিশোরের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া নিয়ে... অসাধারন লেগেছিল...
এ লজ্জ্বা রাখি কোথায়...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:-B :gulli: :hatsoff:
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
নাজমুল ভাই তো বস 😀
হোন্ডা যারা চালায় তাদের দেখলে খুব হিংসা হয় 🙁
আমি জীবনেও হোন্ডা চালাইতে পারমুনা খুব ভয় পাই :((
রায়হান ভাই দারুণ :boss:
দোস,
দারুন একটা লেখা পড়লাম।
কত্ত কী... ...
কোনটার কথা বলব?
মটর সাইকেলচলার কথা? নাকি রোমান্টিক অংশটার কথা...
নাকি শেষের দিকে এসে দারুন মন খারাপ টাইপের কথাগুলোর কথা...
যার কথাই বলিনা কেন, উত্তরঃ হৃদয়ছোঁয়া 😀
:hatsoff:
অসাধারন ......... :clap: :clap: :clap: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
আমি লোকাল বাস ছাড়া শান্তিতে চলাফেরা করতে পারি না। তোর অবস্থাতো সেই হিসেবে বেশ খারাপ। তোদের নিয়া কি যে করি?
😕
😉 কিরে আব ঝাব দিয়া আর কতো দিন?
দুই গ্রহের দুইটি কাহিনি। দুটোয় :just: আসাধারণ হয়েছে। :salute:
পত্থমে একখান কুশ্চেন আচে :grr: :grr:
শিরোনাম দিচেন ইচ্ছে ঘুড়ি ১০ , আগে একবার পুষ্ট করচিলেন ইচ্ছে ঘুড়ি ৬ ।
আগেরগুলান কি সচল থেইক্যা আইনা এইখানে দেয়া যায় না 😡 😡 । নাইলে পাবলিকে কুনপিউঝড হইয়া যাইবার পারে।
সচলে আগেই দেখেছি এবং যথারীতি ভালো পাইছি :thumbup: । :salute:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
:thumbup: :thumbup: :thumbup: :thumbup:
আরে দূর, সচলের লেখা ঐখানে থাকুক, এইখানে পোষ্টায় জায়গা খাওয়ার দরকার নাই :thumbdown:
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
হা হা হা 😀
পোলাটা খালি সচলে লেখা দেয় । এখানে ট্রান্সফার করেনা ঠিকমত । এজন্য ওর ব্যান চাইতে মন চায় । কিন্তু লেখা এত ভাল হইসে এজন্য মাফ করে দিলাম ।
চমৎকার একটা লেখা। তোমার ইচ্ছেঘুড়িগুলো খুব ভালোলাগা নিয়ে পড়ি। দারুন!
ভালো থাক, সুখে থাক। 🙂 🙂
অফটপিকঃ মুহিব ছেলেটা কই? কাল সচলে যেই গল্পটা দিছে, ঐটা ওকে বল এইখানে পোস্ট করে দিতে। অসাধারণ!!
ঐ... মারাত্মক লাগছে গল্পটা। যদি ঘ্রাণ পাইতাম :dreamy:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমার বন্ধু রাশেদ যতোবার পড়ি সব বারই শেষে এসে চোখে পানি এসে যায়, বইটা নিয়ে সিনেমা নাকি বানানো হবে। মোরশেদুল ইসলাম বানাবে আশা করি ভালো হবে।
রায়হান তোমার ইচ্ছেঘুড়ি বরাবরের মতো এবারও ভালো লাগলো, কিন্তু মিয়া হোন্ডায় চড়তে তো খুব মজা।
কি ভবর দিলেন এইটা! চমৎকার হবে। মোরশেদুল ইসলামের উপর ভরসা আছে। অপেক্ষায় থাকলাম।
রায়হান , এইটা তো নতুন বোতলে পুরান মদ ভইরা চালায় দিলি । ৩ তারিখের জার্নি টার কথা তো কিছু লিখবি? :awesome: :awesome: :awesome:
হা হা হা। এখন তো আমি হোন্ডায় চড়া শিখে গেছি আপনার কল্যাণে ... 😀
৩ তারিখেরটা তুইইইই লিখ। ;;; আমার চেয়ে ভালো লিখবি তুই এইটা তো সিউর ...
উকে উকে । আমিও লেখপো । :thumbup: