গৌস্টিং: নতুন অনলাইন উৎপাত-২

প্রথম পর্ব: গৌস্টিং: নতুন অনলাইন উৎপাত-১

চার: ইন্ডিকেশনস
যিনি গৌস্টিং এর শিকার হন, বেশিরভাগ সময়েই তাঁর কাছে মনেহয় সেটা ঘটেছে হঠাৎ করেই। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই উনি বুঝতে পারতেন, কিছু কিছু ইন্ডিকেশন আসলে আগে থেকেই আসছিল। এই যেমন:
১) প্রথম টেক্সট বা আলাপটা ঐপক্ষ থেকে আসা কমে যাওয়া বা এক্কেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়া।
২) পাঠানো টেক্সটের দায়সারা, ছোট্টো, বিলম্বিত উত্তর দেয়া বা একেবারেই না দিয়ে পরে বলা, “ওহ সরি, মিস করেছিলাম।
৩) সাক্ষাৎ হলেও যাই যাই ভাব করা বা ব্যস্ততার অজুহাতে দেখা সাক্ষাত কমিয়ে আনা।
৪) কোনো কোনো কমুনিকেশন সিস্টেম বা এপ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া বা বলা, “ওটায় আজকাল বেশী লোড দিচ্ছে”। সেটা যদি নিজেদের বেশী ব্যবহৃত এপ হয়, তাহলে ইন্ডিকেশন আরও প্রকট।
৫) যেকোনো আলাপেই সাধারন ভাবে একটা ব্যস্ত ব্যস্ত ভাব করা, ব্যস্ততাকে একটা অজুহাত হিসাবে প্রায় সময়েই সামনে নিয়ে আসা।
৬) আলাপচারিতার সময় উঠে আসা অনেক বিষয়ে মনযোগ না দেয়া, স্কিপ বা এভয়েড করা, নিরুৎসাহ দেখানো।
৭) নিজে থেকে কোনো টেক্সট পাঠালেও সেটা খুবই গতানুগতিক হওয়া ও আগের মত আন্তরিকতাপূর্ন না থাকা।
৮) যেকোনো বিচ্যুতির জন্য একগাদা রেডি অজুহাত দেয়া যেগুলো একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে রিপিটেটিভ। এবং কোনো কোনোটা রেসপন্সিবিলিটি হস্তান্তরের সমতুল্য…

কথা হলো, এত এত ইন্ডিকেশন দেখেও একজন সম্ভাব্য গৌস্টই তা বুঝতে পারেন না কেন? সেগুলো ধর্তব্যে নেন না কেন? গৌস্টেড হবার পর, কেন তাঁর মনেহয় – হঠাৎ করে হলাম?
এটা হয়, কারন তাঁরা সম্পর্কটার উপর আস্থা স্থাপন করেছিলেন।
আর তাই ঐসব ঠুনকো অজুহাতগুলোকেও শক্ত কারন হিসাবে বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলেন।
তাঁরা এইটুকু আস্থা নিজের বা সঙ্গির উপরে রাখতে চান যে তাঁরা একসাথে থাকার উপযুক্ত না হলেও অন্ততঃ ব্রেক আপ-র জন্য উপযুক্ত।
সঙ্গি বা সঙ্গিনির সাথে এতটাই কমুনিকেশনে তাঁরা আছেন, যে সেরকম কোনো ব্রেক আপ পরিস্থিতির উদ্রেক হলে ব্যাপারটা তাঁদেরকেই প্রথমে জানানো হবে।
তাই এসন ইন্ডিকেশশনকে তাঁরা ধর্তব্যে নেন না। ধরে নেন, “যে নির্দ্বিধায় ব্রেক আপের কথাই বলতে পারে, সে কেন ইন্ডিকেশন দিতে যাবে। এগুলো আসলে সত্যি কারন, মিথ্যা অজুহাত না…”

কিন্তু গৌস্টেড হলে পরে সবচেয়ে বড় যে আঘাতটা তাঁরা পান, তা এই ভেবে : “আমি কি আসলে এতটাই অপাংক্তেয় ছিলাম তাঁর কাছে যে, সে আমাকে ব্রেক আপের উপযুক্ত বলেও ভাবলো না!!!”
এই অনুভুতিটা বড়ই কষ্টের, স্নায়ুক্ষয়কারী, হৃদয় বিদারক…

পাঁচ: গৌস্টারের মনঃস্তত্ব
বিচ্ছেদের কথাটা একজন বিচ্ছেদ-প্রত্যাশীকেই বলতে হয়। অথচ এই বলার মধ্যে একটা ডিসকমফোর্টও থাকে।
যাঁরা গৌস্টিং করে, তাঁদের মূল ফোকাসটাই থাকে তাঁদের নিজেদেরকে এই ডিসকমফোর্ট থেকে রক্ষা করা। সেই অর্থে এটা একটা স্বার্থপর আচরন। কারন এর মধ্য দিয়ে অপর পক্ষকে কি কি ঝড়-ঝাপ্টার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, সেটা বিবেচনায় নেয়া হয় না। অবশ্য অনেকক্ষেত্রেই নিজে নিজে এই সান্ত্বনা নেয়ার সুযোগ থাকে যে, “মুখে বললে বা জানালে সে হয়তো আরও বেশী দুঃখ পেতো, এইভাবে না বলার কারনে ব্যাপারটা ধীরে ধীরে জানা হচ্ছে। এর ফলে তা আরও সহনীয় হয়ে যাবে”। কিন্তু বাস্তবে ঘটনা তা হয় না।
কেন হয় না, তা পরের পর্বে বলছি।
তবে গৌস্টিং-এর এই মূল কারন ছাড়া আরও অনেক কারনেই এটা ঘটতে পারে। যেমন:
– গৌস্টারের কমুনিকেশন এবিলিটিতে ঘাটতি থাকার কারনে। এই ভেবে যে, “ঠিক মত যদি বলে বুঝাতে না পারি, সম্পর্কটা তো ভাঙ্গবে না, তারচেয়ে চুপিচুপি হারিয়ে যাওয়াই ভাল”।
– এমপ্যাথির অভাব থাকার কারনে।
– বেশী আত্মকেন্দ্রিক হবার কারনে। এই ভেবে যে, “আমার দরকার তো ফুরিয়েছে, তাহলে কেন বলতে হবে?”
– অসততার কারনে। এই ভেবে যে, “মুখে তো আর বলি নাই, তাই পরে আবার কখনো দরকার হলে একটা কিছু বলে মানিয়ে নেবো”।
– অভ্যাসবসতঃ। আগেও এভাবে গৌস্টিং করে সেটায় সাফল্য পাওয়ার জন্য ইচ্ছামত নতুন নতুন সম্পর্কে ঢোকা ও তা ছেড়ে ইচ্ছা মত বেরিয়ে যাবার নেশায় পেয়ে বসার কারনেও কেউ কেউ গৌস্টিং করে থাকে।

নিজে যারা গৌস্টেড হয় নাই, তাঁরা ততদিন নির্বিঘ্নে এটা করে যায়, যতদিন না নিজেরা গৌস্টেড হয়।
যেদিন নিজেরা গৌস্টেড হয়, সেদিন তাঁরা বোঝে “কি যতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে……”। এবং এরপর থেকে তাঁদের লাভ লাইফটা এমনই বড় ধরনের একটা ঝাকুনি খায় যা তাঁদের জন্যেও এংজাইটি বা ডিপ্রেশনের কারন হতে পারে।
আর যারা আগে গৌস্টেড হবার পর নিজেরাই গৌস্টার রূপে অবতির্ন হয়, তাঁরা তো আগে থেকেই সম্পর্কের মধুর দিকগুলি হারিয়ে বসে থাকে। নতুন করে তাঁদের আর কি হবে!!!

একজন চেনা গৌস্টারের সাথে শুধু প্রেমের না, যেকোনো সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রেই আসলে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। কারন আপনি তো জানবেন না, তাঁর এই চরিত্রের পিছনে আসল কারন কি?
সেটা যদি আত্মকেন্দ্রিকতা বা এমপ্যাথির অভাব বা অসততা বা অভ্যাসের কারনে হয়, তা ভবিষ্যতের অন্য যেকোনো ইন্টার একশনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে…

তৃতীয় পর্ব: গৌস্টিং: নতুন অনলাইন উৎপাত-৩

৪,৪৭০ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।