যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – পঞ্চম পর্ব

যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – প্রথম পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – দ্বিতীয় পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – তৃতীয় পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – চতুর্থ পর্ব

তেরো
আমাদের সংস্কৃতিতেই শুধু না, শিল্প-সাহিত্যেও স্বমেহন বিষয়টা অতি উপেক্ষিত, বর্জনিয়।
তসলিমা নাসরিনের এই দুইটা কবিতায় ছাড়া আর কোথাও স্বমেহনকে স্বাভাবিক একসেপ্টেবল একটা ব্যাপার হিসাবে বর্নিত হতে দেখেছি বলে মনেপড়ে না।

অথচ, এরাউজাল জনিত মানসিক স্ট্রেস মুক্ত হবার জন্য স্বমেহন হতে পারে সেকেন্ড বেস্ট অপশন।
আর বেস্ট অপশনটা যখন থাকে না, এটা নিঃসন্দেহে এভেলেবল বেস্ট অপশন।

গতপর্বে স্বমেহনকে সিমুলেশন হিসাবেও ব্যবহারের সম্ভবনা নিয়ে বলেছিলাম।
কিছুদিন আগে শোনা একটা গল্প শোনাই।
ভদ্রলোক তাঁর গার্লফ্রেন্ডের আগ্রহ জানবার পর অনেক যত্নে তাঁকে অনটপ পজিশন শেখাতে প্রবৃত্ত হন।
দেখা গেল, ভদ্রমহিলার শারীরিক পরিস্থিতি অনটপের জন্য সুবিধাজনক না।
এতে করে তাঁরা আরেকটা কাছাকাছি আসন “এশিয়ান কাউগার্ল” নিয়ে কাজ করেন।
তাঁর ভাষ্যমতে তাঁরা দুজনেই এটা সাফল্যের সাথে বাগে আনেন। এবং নিয়মিত এটার চর্চ্চা করতে থাকেন।
এরমধ্যে একটা সময় তাঁদের ব্রেক আপ হয়। আর তখন থেকে তিনি অন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি এই আসনটাতে সঙ্গিনিকে পাওয়াটা খুব মিস করা শুরু করেন।
একটা সময় তিনি আবিষ্কার করেন, তিনি স্বমেহন কালে সেই বান্ধবীকে এশিয়ান কাউগার্ল পজিশনে কল্পনা করে তাঁর বেস্ট সেক্স এক্সপেরিয়েন্সগুলো পাচ্ছেন।
এই ধরনের স্বমেহন অভিজ্ঞতাগুলোকেই সিমুলেশন হিসাবে আখ্যা দিয়েছি, যা যদি কেউ খুজে নিতে সক্ষম হন, দেখা যাবে তা তাঁর ব্রেক আপ বা পৃথক থাকা জনিত এগনি অতিক্রমনে সহায়ক হচ্ছে।

সঙ্গির উপস্থিতিতে দেহের বিশেষ কোনো স্থানে বিশেষ কোনো ধরনের স্পর্শ যদি কেউ উপভোগ করেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে সেটা নিজে নিজে নেয়ার মাধ্যমেও সেকেন্ড বেস্ট সাবস্টিটিউট অর্জন করা সম্ভব।
তবে হ্যাঁ, এসবই উপভোগ্য করা যায় যদি সেই এইজ-ওলড ভাবনা থেকে বেরুনো যায় যে স্বমেহন একটি অস্বাভাবিকতা। বরং মেনে নিতে হবে যে এটাও একটি খুবই স্বাভাবিক যৌন আচরন।
এবং এটা কেবলই ইজাকুলেশন বা ফিঙ্গারিং-এ সীমাবদ্ধ না।
এটার জন্যেও প্রস্তুতি দরকার, সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে একটা সেক্স-সেশন হিসাবে এটাকে গন্য করার দরকার আছে।
কোনো রকম তাড়াহুড়া, পাপবোধ, হীনমন্যতা থাকলে স্বমেহন উপভোগের পরিবর্তে সেটাকে বাড়তি উৎকন্ঠার সোর্সে পরিনত করার ঝুঁকি কিন্তু থাকবেই…

চৌদ্দ
পুরুষের জন্য পেনাইল সেক্স কে একমাত্র সেক্স এক্ট হিসাবে ধরে নেয়াটা লংরানে অবাস্তব এবং শর্টরানে স্ট্রেসফুল। বিশেষ করে, পুরুষের যৌন সামর্থকে যখন পৌরষ হিসাবে প্রায়ই ইকুয়েট করা হয়।
নারীর জন্য ভ্যাজাইনাল সেক্সের বাইরেও ইন্টারকোর্স অপশন থাকে, আর তা তাঁদের নারীত্বের কোনো অবমাননা না করেই ব্যবহৃত হওয়া সম্ভব সঙ্গির শীর্ষসুখ অর্জনে।
কিন্তু দেখা যায়, পুরুষের জন্য লিঙ্গ ব্যবহার ছাড়া নিজের পৌরুষ প্রমানের আর কোনো অপশন থাকে না।
অন্যান্য প্রাইমেটদের মত মানব-পুরুষদের এই লিঙ্গ নির্ভর সেক্সে সহায়তা করতে ব্যাকুলাম নামক কোনো হাড়ের উপস্থিতিও কিন্তু পেনিসে নাই। তাঁর মানে হলো, সঙ্গমের জন্য যে পর্যাপ্ত উত্থান দরকার, তা অর্জনে পুরপুরি নির্ভর করতে হয় রক্ত চলাচল, রক্তের সাপ্লাই, ধমনি-শিরার কন্ডিশন ও পেনাইল মাসল সমুহের দৃঢ়তার উপরে।
এছাড়াও সঙ্গমের ইনিসিয়েশন ও কন্টিনিউয়েশনে কালচারালি পুরুষের যে একটিভ রোল উভয়েই কামনা করেন, সেজন্য পুরুষটিকে শারিরীকভাবেও যথেষ্ট ফিট থাকতে হয়।
কথা হলো, এই সবগুলোই যে একই ভাবে একজন পুরুষের সবসময়েই থাকবেন, এটা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যায় না। বয়স জনিত ওয়ার এন্ড টিয়ারের কারনে পেনাইল মাসল-শিরা-ধমনি একই সক্ষমতা বজার রাখাটা বাস্তব না। আবার যথেষ্ট বয়স না হবার পরেও নানা জেনেটিক বা নন-জেনেটিক কিন্তু লাইফটাইম অসুস্থতায় এসব শারীরিক সক্ষমতা কমে যাওয়াটা ত্বরান্বিত হতে পারে। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, গাউটসহ নানা ধরনের বাত ও আর্থারাইটিস, নার্ভের ও মেরুদন্ডের ইঞ্জুরি বা রোগ হতে পারে এসবের অন্তর্ভুক্ত।
ধরা যাক, অন্য কোনো সমস্যা না থাকার পরেও, গাউট বা সারভাইকাল স্পন্ডিলাইসিস থাকার কারনে একজন পুরুষ মিশনারী পজিশনে আর সেভাবে যেতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে অন্য কোনো সুবিধাজনক ফিমেল অন-টপ পজিশন বেছে নেয়াটা ও নারীর একটিভ হওয়াটা হতে পারে সহজ সমাধান। কিন্তু তা না করে, “ও তো এখন আর আগের মত পারে না”, ভেবে বিরত থাকা, কিংবা, “আমি তো আর আগের মত পৌরুষসম্পন্ন নই” ভেবে ভেঙ্গে পড়াটা হবে দুঃখজনক।
এতো গেল পেনাইল সক্ষমতা থাকার পরেও ঘটা জটিলতা সম্পর্কিত আলাপ।
কি হয়, যখন: ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, মেরুদন্ডের সমস্যা , ইত্যাদির কারনে দীর্ঘক্ষন ইরেকশন ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ে?
বলা হয়, একটি সেক্স সেশনের ২০% সময় যদি কেউ ইরেকশন ধরে রাখতে পারেন, তাঁকে ইরেকটাইল ডিসফাংশনে আক্রান্ত বলা ঠিক হবে না। সে ক্ষেত্রে বাকি ৮০% সময় তাঁর অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অর্থাৎ হাত, মুখ এমনকি সম্মতি সাপেক্ষে সেক্স-টয় ইন্ট্রোডিউস করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে, এসবের কোনোটাই কোনো অস্বাভাবিকতা নয়। বরং পরিস্থিতি অনুযায়ী তা মোকাবেলার বেস্ট এভেলেবল অপশন। এগুলোর সাথে পৌরুষকে ইকুয়েট করার কিছু নাই, কারন একজন পুরুষ সারাজীবন একই রকমের সক্ষম থাকবেন, তা আশাকরা উচিৎ না।
আবার সে কারনে বঞ্চিত জীবনযাপন করতে হবে, সেটাও কোনো কাজের কথা না।
ছেড়ে চলে তো যাওয়াই যায়, কিন্তু নতুন যাকে খুজে নেয়া হবে, সেও যে চিরটাকাল একই রকম সক্ষম থাকবেন, তা তো না। আর ছেড়ে যে যাবেন, “সব কিছু একই থাকবে তো?” – সেটাও একটা ভাবনার কথা……

পনেরো
আসুন আজ ডিউরেশন সম্পর্কিত ভুল ধারনাগুলো দূর করা যাক।
ডিউরেশন নিয়ে পশ্চিমা লোকজনেরও ভয়াবহ ভুল ধারণা থাকার কারনেই সেখানে ৭০% পুরুষ যে পারফর্ম্যান্স এংজাইটিতে ভোগেন, সে কথা কিন্তু আগেও বলেছি।
২০০০ জোড়া যৌনগতভাবে সুপরিচিত ভলেন্টিয়ার হেটেরোসেক্সুয়াল কাপলের ডিউরেশন পর্যবেক্ষন ও পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে গবেষকরা নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তে উপনিত হন:
১) পেনিট্রেশন থেকে শুরুকরে ইজাকুলেশনের ডিউরেশন হতে পারে, সর্বনিম্ন ৩৮ সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চো ১৪ মিনিট পর্যন্ত।
২) দুই মিনিটের নীচে থাকা যেকোনো ডিউরেশনকেই প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন হিসাবে গন্য করা উচিৎ।
৩) ৩-৭ মিনিট স্থায়ী ডিউরেশন হলো স্বাভাবিক। এটা স্বাভাবিকক, কারন, এই ডিউরেশনের মধ্যে কাপলের উভয়েই কোনো ডিফিকাল্টি ছাড়াই তৃপ্তিদায়ক অর্গাজম লাভ করতে পারেন।
৪) ২-৩ মিনিটের মধ্যে থাকা ডিউরেশন হলো কনফিউজিং কারন এই ডিউরেশন নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রেডিকশন করা যায় না।
৫) ডিউরেশনটি সাত মিনিট অতিক্রম করলেই এটা “ডিফিকাল্টি ইন এচিভিং ইজাকুলেশন” এই শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকে। আর ১২ মিনিট অতিক্রম করলে তা “ভেরী ডিফিকাল্ট…” গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। এটা এইজন্য আর স্বাভাবিক থাকে না, যে তা দুইজন না হলেও অন্ততঃ একজনরে জন্য আর তৃপ্তিদায়ক বা আনন্দঘন না হয়ে বরং স্ট্রাগলিং হয়ে পড়ে।
৬) প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন হলেই যে নারী অর্গাজম বঞ্চিত হবেন, এমন না। অভ্যস্ত পার্টনারের সাথে একচুয়াল ইন্টারকোর্সের আগে থেকেই মাস্টারবেশনের সংমিশ্রন ঘটিয়ে দুই মিনিট ডিউরেশনেও অর্গাজম অর্জন করা সম্ভব।
৭) এই গবেষনায় অপরিচিত পার্টনারদের ক্ষেত্রে বা সেম সেক্স পার্টনারদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ডিউরেশন কি, তা বলা সম্ভব হয় নাই। কারন এই গবেষণায় তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে,
ক) সঠিক ডিউরেশন নির্ধারনের জন্য সময়ের একটা ভূমিকা থাকলেও ঐ সময়ের মধ্যে উভয়েরই জন্য সেশনটা উপভোগ্য ছিল কিনা, সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
খ) সাধারন ভাবে ৩-৭ মিনিটের একচুয়াল ইন্টারকোর্সে যদি উপয়েই তৃপ্তি পান, আসল ডিউরেশন যাই হোক না কেন, তা স্বাভাবিক হিসাবে ধরে নিতে হবে।
“পারফর্মেন্স ঠিক ছিল কিনা?” – এই উৎকণ্ঠার আর কোনোই দরকার নাই।
গ) ২-৩ মিনিটের মধ্যে যারা থাকেন, তাঁদের চেষ্টা করা উচিৎ আসন বদলে বা সঠিক ক্ষন বের করে বা অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া। এতে করে খুব সহজেই তাঁরা স্বাভাবিকের লোয়েস্ট থ্রেসহোল্ড, অর্থাৎ ৩ মিনিটে পৌছুতে পারবেন।
একবার সেটা অর্জন করা গেলে পরে, তা উভয়ের জন্যই ফুলফিলিং করাটা আর কঠিন কিছু থাকবে না।
ঘ) ডিউরেশন ১-২ মিনিটের মধ্যে হলেও নারীর জন্য অর্গাজম অর্জন সম্ভব কিন্তু সেজন্য নারীর ইচ্ছা ও পার্টনারের সহযোগিতার পাশাপাশি ইন্টারকোর্সের আগে থেকে, ইন্টারকোর্সের সময়, এমন কি ইজাকুলেশনের পরেও মাস্টারবেশনের সংমিশ্রন (এক্সটারনাল ক্লিটোরাল স্টিমুলেশন হিসাবে) ঘটাতে হতে পারে।
ঙ) যারা ৭ মিনিট অতিক্রমের পরেও ইজাকুলেশনের দেখা পান না, এবং এজন্য কমপক্ষে একজন কোনো না কোনো সমস্যা, যন্ত্রনা, বোরডম, ইত্যাদির সম্মুখিন হন – তাঁদের উচিৎ হবে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়া।
চ) যারা ১২ মিনিটেরও পরে ইজাকুলেশনের দেখা পান না, তাঁদের সরাসরি চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ।

আগামী পর্বে সঙ্গমের সঠিক ক্ষন নিয়ে আলাপ করবো।
সাথে থাকুন…

যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – ষষ্ঠ পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – সপ্তম (শেষ) পর্ব

৬,২১৭ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।