প্রসঙ্গ : পরকীয়া – প্রথম পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – দ্বিতীয় পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – তৃতীয় পর্ব
নয়
আজ লিখবো পরকীয়ায় থাকা পুরুষদের বাড়তি স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে।
পরকীয়ার কারনে মানসিক অস্থিরতা জনিত রোগ বা যৌনরোগের ঝুঁকি যে বাড়ে, সেটাতো সবারই জানা। কিন্তু হৃদরোগের ঝুকিও যে বাড়ে, সেটা কতজন জানি?
পুরনো রেকর্ড ঘাটতে গিয়ে গবেষকরা দেখতে পেলেন, প্রথমাবারেই আকস্মিক হার্ট এটাক হয়ে যারা মারা যান, তাঁদের চার ভাগের তিনভাগরই ঘটনা কালে বা নিকট অতিতে পরকীয়া চর্চ্চার ইতিহাস রয়েছে।
এরপর তারা এই হার্ট এটাকগুলির সাথে পরকীয়ার কোনো কারনিক সম্পর্ক আছে কিনা সেটা অনুসন্ধানে নামেন।
যে কারনগুলোকে তাঁরা পরকীয়ার ও আকস্মিক হার্ট এটাকের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করেছেন, তা হলো:
১) একত্রে থাকার সময়গুলো বিরতি দিয়ে আসে বলে তাঁরা এগুলোকে নানাভাবে সেলিব্রেট করে। দেখা যায়, এই সেলিব্রেশনের অংশ হিসাবে হার্টের জন্য অস্বাস্থ্যকর প্রচুর খাওয়া দাওয়া তো হয়ই, অনেক সময় অপরিমিত ড্রিংকস ও করা হয়। এর পাশাপাশি নিয়মিত সেবনিয় ঔষধ গ্রহনেও ছেঁদ পড়ে যায়।
এইভাবে হঠাৎ হঠাৎ লাগামহীন খানা ও পিনা সাডেন হার্ট এটাকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।
২) অন্তুত একজনকে হলেও পরকীয়ার সময় অপরিচিত স্থানে, অপরিচিত সেটাআপে ফিজিকাল হতে হয়।
অচেনা পরিবেশ, ধরা পরার আশঙ্কা, তাড়াহুড়া করার প্রবণতা – এসবই অতিরিক্ত উৎকন্ঠার সোর্স হিসাবে কাজ করে যা সেক্সকে কম উপভোগ্য তো করেই, উপরন্ত হার্টের উপরে বাড়তি চাপ তৈরী করে, বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা থাকে। আবার এত কাঠখড় পুড়িয়ে সেক্স করার পর সেটা তেমন উপভোগ্য না হওয়ায় পরবর্তিতে তা দীর্ঘ্য সময় ধরে এমন অবসাদেরও কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে যা হৃদযন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর না।
৩) এই দীর্ঘ্য সময়টাতে নিজের উপর নির্ভরশীল কাছের মানুষ ও প্রিয়জনদের মিথ্যা বলে দূরে রাখার কারনে অপরাধবোধেরও তৈরী হয়। এ থেকেও এংজাইটি তৈরি হয়ে হার্টের স্বাভাবিক কার্যকারীতায় ব্যাঘাত ঘটায়।
৪) দীর্ঘ্য দীর্ঘ্য বিরিতিতে সাক্ষাত হলে মেলামেশায় যে ঘাটতি পড়ে, দেখা যায় তা পুরনের জন্য অভ্যস্ত স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বাড়তি এফর্ট দেয়া লাগে। আর যদি তা করা হয় নিজে নিজে নেয়া এবিলিটি এনহানসিং ড্রাগ (ভায়াগ্রা, সিয়ালিস, এমফিটামিন ইত্যাদি) সহোযোগে – তখন তা হার্ট এটাকের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
অবিশ্বস্ত সম্পর্কগুলিতে যখন অল্পসময়ের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে আনকমফর্টেবল সেট আপে মিলিত হতে হয়, তা পেনিস ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি দ্বিগুনেরও বেশী বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া এসব সময় আনপ্রোটেকটেড সেক্সের ঘটনা তুলনামুলকভাবে অনেক বেশী হয় বলেই STD ও আনপ্ল্যান্ড প্রেগন্যান্সির ঘটনাও ঘটে অন্যসময় থেকে অনেক বেশী।
যেকোনো পরকীয়াই পুরুষের জন্য টাইম কনজিউমিং, ব্যায়বহুল, ও নার্ভ রেকিং। এতকিছুর পরেও এসব কারনে উপভোগটা যখন প্রায়ই অপর্যাপ্ত হয়ে পরে, দেখা যায় যে, একত্র থাকার সময়টাতে উপভোগের চেয়ে মনকষাকষিই হচ্ছে বেশী।
বিবাহিত জীবনেও মানুষ যৌনতার ব্যাপারে বোরডমে আক্রান্ত হয়। কিন্তু পরকীয়া সম্পর্কে থাকাকালে বেশিরিভাগ যুগলই যত দ্রুত এজাতীয় বোরডমে আক্রান্ত হন, তা ঐসব বোরডমের সাথে তুলনিয় নয়………
দশ
সিরিজটা ফলো করছে, এমন এক বন্ধুর প্রশ্ন:
“পরকীয়ায় যখন এত এত ক্ষতি, তারপরেও এটা টিকে আছে ক্যামনে?
তারপরেও প্রতিদিন এত এত মানুষ পরকীয়ায় ঢুকছে কিভাবে?
পরকীয়ায় কি কেবলই ক্ষতি?
কোনোই কি বেনিফিট নাই?”
বললাম, ” সেটাই তো কথা। নিশ্চয়ই আছে কিছু না বেনিফিট, নইলে আর এত মানুষ ছুটবে কেন এর পিছনে, সমাজ সংসার ফেলে?
কি কি বেনিফিট আছে, বিস্তারিত জানি না। তবে আমার জানা বুঝার মধ্য থেকে পুরুষদের অনেককেই একটা বেনিফিট গভীর মনযোগে নিতে দেখেছি।”
আর সেটা হলো: কিছুদিন পরকীয়া চালানোর পরেই দেখেছি, তাঁরা স্ত্রীর ভ্যালু হাড়ে হাড়ে টের পান। কেউ কেউ আবার এতটাই স্ত্রী ভক্ত হয়ে পড়েন যে সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
এই সেদিনও যে ব্যক্তি স্ত্রীর নামে প্রতি দশ মিনিটে একটা বিরূপ মন্তব্য করতো বা অসহিষ্ণুতা দেখাতো, সেও দেখি পরকীয়া শুরুর ক’দিন বাদেই উঠতে বসতে স্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমূখ।
ফেবু টাইম লাইন “সেলফি উইথ ওয়াইফি” জাতিয় পিক দিয়ে ভরপুর করে রাখে।
বড়ই তাজ্জব ব্যাপার!!!
বন্ধু বললো, “তা কেন?”
বললাম, সেটা বুঝতে হলে এই গল্পটা শোনো……
এই সিরিজের পঞ্চম পর্ব বেরুবার পর একবন্ধুর সাথে নিম্নলিখিত আলাপ হলো টেলিফোনে:
– পরকীয়া নিয়ে সিরিজটা কি আমাকে ইঙ্গিত করে দিচ্ছো নাকি?
– সেকি, তা কেন হবে? তুমিই কি আমার পরিচিত একমাত্র মানুষ যে একটি পরকীয়ায় আছো? আমার সাথে কমুনিকেশন আছে, এরকম আরও বেশ কয়েকজনই আছে যাদের রিলেশনগুলায় পরকীয়া ব্যাপারটা আছে।
– না, আমি তো আর অতশত জানি না। মনেহলো, তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
– আসলেই কি মনেহলো? নাকি তোমার প্রেমিক কিছু জানতে চেয়েছে, ঠিক করে বলো তো?
– আরে না, ও কিছু জানতে চায় নাই। আমি নিজে থেকেই জিজ্ঞাসা করলাম। ইন কেস……
– ইনকেস কি? সে যদি জানতে চায়, “পারভেজ ভাই এত কিছু জানলো ক্যামনে? তুমি কিছু বলেছো তাঁকে?” শোনো, পরকীয়ায় কিছু কিছু ব্যাপার সবার জন্যই এক। আমি যা যা লিখছি, সেগুলা ভিন্ন ভিন্ন মানুষের অভিজ্ঞতা। কিন্তু তোমার যেমন মনে হচ্ছে, এগুলা তোমার অভিজ্ঞতা, অন্যদেরও সেটাই মনে হচ্ছে: “এত কিছু জানলো ক্যামনে?”
– তা বুঝলাম। তারপরেও পড়তে গিয়ে এমন কিছু কিছু ব্যাপার চোখে পড়লো, যে মনে হচ্ছে, “তুমি জানলা ক্যামনে? এগুলা তো তোমারে কখনো বলি নাই…”। আসলে ওকে নিয়ে ভাবনা হচ্ছে, তোমার এসব লেখা দেখে সে না আবার ভেবে বসে, আমি তোমাকে এতসব গোপন কথা বলে দিলাম কিনা?
– তারমানে কি দাড়ালো, তুমি ভয় পাচ্ছো, কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হও কিনা, এটাই তো? আমি একটা কথা বুঝি না, এত প্রেম করো, তারপরেও কেন এত ভয়? কিসের এত ভয়? মানুষ কি বাঘ ভাল্লুক যে খেয়ে ফেলবে তোমাকে এজন্য?
– তা না, তবুও এই আর কি। ও যদি ভাবে আমাদের গোপন কথাবার্তা অন্যকেউ জানে, সেটা ক্যামন না?
– কেমন আবার, শুনি? আর তা যদি হতোও, কি এমন ক্ষতি তোমার যে এত ভয় পেতে হবে? তোমার কি মনেহয়, এজন্য সে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে? এতই সহজ? তুমি যে তাঁর কি উপকারটা করছো, সেটা কি জানো? আমি নিশ্চিত, সেও সেটা জানে। আর তাই এসব তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে অকারণ টেনশন নিও না। এরকম কিছুই হয় নাই…
– আমি উপকার করছি? কি উপকার করছি বলে তোমার মনেহয়?
– বোঝো না বুঝি, কি উপকার? তুমি কি লক্ষ্য করেছো, তোমাদের রিলেশনটা শুরুর পর থেকে দিনে দিনে তাঁর ফেবু টাইম লাইন স্ত্রী-সন্তানদের ছবিতে কিভাবে ভরে উঠেছে? আগে এটা ছিল না। এখন আছে, কারন এখন আর তাঁর স্ত্রীর সাথে কোনো ঝামেলা নাই। তাঁর জীবনে তোমার উপস্থিতি তাঁর সাথে তাঁর স্ত্রীর যাবতিয় সমস্যা দিনে দিনে দূর করে দিয়েছে। তুমি তাঁর জীবনটা ভরিয়ে তুলেছো বলেই কিছু না করেও তাঁর স্ত্রী এখন তাঁর কাছে মাথার মনি হয়ে উঠেছে। তাঁর বিয়েটা যে এখনো এত ভাবভাবে টিকে আছে, এর পুরো অবদানই হলো তোমার। তাঁর সন্তানরা যে এখনো একই সাথে বাবা-মায়ের সান্নিধ্য পাচ্ছে, সেই কৃতিত্বও হলো তোমার। এইভাবে নিঃস্বার্থ ভালবাসা বিলিয়ে তুমি শুধু তাকেই না, তাঁর পুরো পরিবারটাকেই কৃতজ্ঞতার শিকলে বেধে ফেলছো।
আবার জানতে চাইছো, কি উপকার করেছো তুমি? এরচেয়ে বেশী আর কি উপকার করার থাকে একজন মানুষের???
শুনে শুরুতে প্রশ্ন করা বন্ধুটি বললো, “এও কি সম্ভব!!!”
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – পঞ্চম পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – ষষ্ঠ (শেষ) পর্ব