আনট্রিটেড ডিপ্রেশন ও তা মোকাবেলা করা নিয়ে আরও কিছু কথা…

এক : “হাউ টু ডিল উইথ ডিপ্রেসিভ ডিজ-অর্ডার” – শুরু করা নিয়ে কিছু আশাবাদ
প্রথমেই একটা ব্যাড নিউজ : ডিপ্রেশন হলো ওয়ান অব দ্যা মোস্ট কমন মেন্টাল ডিজ-অর্ডার। প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে একজন এবং প্রতি ৫ জন নারীর মধ্যে একজন এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
তবে গুড নিউজ হলো – এটাই আবার ওয়ান অব দ্যা মোস্ট ট্রিটেবল মেন্টাল ডিজ-অর্ডার। যাদের ট্রিটমেন্টের আওতায় আনা যায়, তাঁদের ৯০%-এরই ডিপ্রেশন দূর বা প্রায় দূর হয়ে যায়। বাকিদেরটা পুরোপুরি না গেলেও অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়। অর্থাৎ, সিম্পটমগুলো পুরোপুরি না গেলেও সহনীয় বা প্রায় সহনীয় হয়ে আসে।
বুঝলাম ট্রিটমেন্টে উপকার হয়, কিংবা ডিপ্রেশন একেবারে দূরও হয়ে যায়, কিন্তু কতজন এই ট্রিটমেন্টের আওতায় আসেন?
এখানেই পরিসংখ্যনটা বেশ দুর্বল।
এক তৃতীয়াংশ থেকে এক চতুর্থাংশ আক্রান্ত ব্যক্তিই কেবল চিকিৎসার আওতায় আসেন।
আর বাকিরা এটাকে “সাময়িক অসুস্থতার সাইড ইফেক্ট” “স্ট্রেসফুল জীবন যাপনের ব্যাকল্যাশ” বা “ঘুমের অনিয়ম” এইসব-কে দায়ি ভেবে চিকিৎসায় অবহেলা করে।
আবার চিকিৎসা শুরুর পর ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ঘুম আসার ব্যাপারটাকে সহজভাবে নিতে না পারায় বা সেটার সাথে খাপ খাওয়াতে না পারায়, চিকিৎসা ছেড়ে দেন কেউ কেউ।
এগুলো করার সময় তাঁরা এটা ভাবেন না যে আনট্রিটেড থাকলে এ থেকে সিভিয়ার ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হতে পারে যে কারনে সেলফ হার্ম তো বটেই, কেউ কেউ আত্মহত্যার মত কাজও ঘটিয়ে ফেলতে পারেন…
ডিপ্রেশসিভ ডিজ-অর্ডারের সাফারিং দূর করতে প্রচলিত চিকিৎসা অর্থাৎ মেডিকেশন ও সাইকো-থ্যারাপি ছাড়াও মাঝারি মাত্রার ব্যায়ামকে বেশ কার্যকরি পন্থা হিসাবে সামপ্রতিক কিছু গবেষনায় পাওয়া গেছে।
এই মাঝারি মাত্রার ব্যায়ামের মধ্যে উল্লেখযোগ্যটি হলো হাটা।
আর এই হাঁটার পরিমান হলো সপ্তাহে ১৫০-২০০ মিনিট যা কমপক্ষে পাঁচদিন করতে হবে।
অর্থাৎ দিনে আধ ঘন্টা করে সপ্তাহের ৫-৭ দিন।
দেখা যাচ্ছে, ডিপ্রেশনে আক্রান্ত কেউ যদি এইভাবে ডিপ্রেশনের ট্রিটমেন্ট করে, তাঁর শুধু ডিপ্রেশনই না, ডিপ্রেশনের কারনে হতে যাওয়া আরও অনেক শারীরিক সমস্যা থেকেও দুরে থাকা যাবে।

দুই : আনট্রিটেড ডিপ্রেশন নিয়ে কিছু কথা
প্রশ্ন: ডিপ্রেশনের মত একটা জটিল সমস্যা এত বেশী আনট্রিটেড থাকে কেন?
উত্তর:
১) অনেকক্ষেত্রেই এটা যেহেতু ইভেন্ট ট্রিগারড, তাই আক্রান্তগন ধরে নেন, এটা ঐ ইভেন্টের একটা ইফেক্ট যা ইভেন্ট নিরাময়ের সাথে সাথে নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে। এই জন্য ট্রিটমেন্ট নেয়ার কথাটা মাথায়ই আসে না।
২) শুরুতে এটা খুব একটা অসহনীয় কিছু বলে অনেকেরই মনেহয় না। তাই এটাকে সাধারন স্যাডনেস ভেবে ট্রিটমেন্টের চিন্তা না করে নিজে নিজেই তা থেকে উত্তরনের চেষ্টা চালিয়ে যায় তাঁরা। কিন্তু এটা অনেকেরই জানা থাকে না যে ডিপ্রেশনের সাইকেল থাকে।
তাই নিজে নিজে তা থেকে বেরুতে চেষ্টা করার ফল হিসাবে আরও আষ্টেপৃষ্টে ঐ সাইকেলে আটকে গিয়ে সেটার জটিলতা বরং দিন দিন বেড়েই যায়।
৩) আনট্রিটেড ডিপ্রেশনের ফলাফল কতটা খারাপ হতে পারে, সিম্পটম গুলো যতদিন সহনীয় মনে হয়, ততদিন সে সম্পর্কে কোনো সচেতনতা আসে না।
পরে যখন সেই ব্যাপারগুলি বোঝা যায়, ততদিনে চিকিৎসার অপশন অনেক কঠিন হয়ে যায়।

Flow chart showing the depression cycle

এবার জেনে নেই আনট্রিটেড ডিপ্রেশন থেকে কি কি জটিলতার সৃষ্টি হয়:
ক) ইটিং ডিজ-অর্ডার: সবচেয়ে বেশী যেটা হয়, তা হলো, খ্যাদ্যাসক্তি।
অনেক খাবারেই এন্টি ডিপ্রেসেন্ট থাকে বলে ডিপ্রেশন কালে খেতে খুব ভাল লাগে। কিছু সময় ডিপ্রেশন মুক্ত থাকতে খাওয়াদাওয়াটা ওষুধের মত কাজ করে।
কিন্তু সমস্যা হলো এই খাদ্যাসক্তিটা ডিপ্রেশনের সিম্পটম কমিয়ে আরাম দিলেও তা হয়ে পড়ে ওবেসিটি বা স্থুলতার কারন। আর তখন স্থুলতা সম্পর্কিত সব সমস্যা একে একে হামলে পড়তে থাকে ঐ আনট্রিটেড ডিপ্রেশন আক্রান্তের উপরে। এই যেমন: ফ্যাটিলিভার, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হার্ট ডিজিজ, কিডনির সমস্যা, বাত বা গাউট, হাড়ের অত্যাধিক ক্ষয় জনিত মেরুদন্ডের সমস্যা, শরীরের বাড়তি ওজন টানা সম্পর্কিত জয়েন্ট পেইন, ইত্যাদির ঘটনা ঘটে একে একে।
খ) স্লীপ ডিজ-অর্ডার: সবচেয়ে বেশী যেটা হয়, তা হলো, ইমসোমনিয়া। আর একবার এতে আক্রান্ত হলে হাইপারটেনশন ও হার্ট ডিজিজের ঝুকিসহ এর যাবতিয় সমস্যা একে একে আসতে থাকে আক্রান্তের উপরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ক্লান্তি, এনার্জিহীনতা, অন্যসময়ে ঘুম ঘুম ভাব হওয়া, কন্সটিপেশন, ক্ষুধামন্দা, রুচিহীনতা, মদ বা মাদকগ্রহনের প্রবণতা, ইত্যাদি।
গ) সাবস্ট্যান্স এবিউজের প্রবণতা: মদ বা মাদক তো আছেই, এর বাইরেও আনট্রিটেড অবস্থায় বিভিন্ন ঔষধসহ নানা ক্ষতিকর বস্তু নিজে নিজে প্রয়োগ করে অবস্থার উন্নতি করার চেষ্টা থেকে একসময়ে সাবস্ট্যান্স এবিউজের খপ্পরে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে অতি উচ্চ। আর একবার এই এবিউজের ট্র্যাপে কেউ পড়লে পরিস্থিতি তখন এমনই জটিল আকার ধারণ করতে পারে, যা আক্রান্তকে সুইসাইডালও করে ফেলতে পারে।
ঘ) আত্মহত্যা প্রবণতা: আনট্রিটেড ডিপ্রেশনের সবচেয়ে বড় জটিলতাই হলো এই অবস্থায় পৌছে যাওয়া। আত্মহত্যা সম্পর্কিত কোনো কোনো স্টাডিতে পাওয়া গেছে যে ভিক্টিমদের ৯০% বা তারও বেশী কখনো না কখনো কোনো না কোনো ডিপ্রেশনে ভুগেছেন, যার বেশিরভাগই ছিল আনট্রিটেড। তারমানে হলো, যিনি তাঁর ডিপ্রেশনটা জেনে বুঝে আনট্রিটেড রাখছেন তিনি সাইক্লিকাল ইফেক্টের কারনে দিনে দিনে একটু একটু করে নিজের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে ফেলছেন।
ঙ) জটিলতা বাড়া: শুরুতে যে ডিপ্রেশনকে খুব জটিল কিছু না বলে মনে হচ্ছিল, আনট্রিটেড থাকার কারনে তা এংজাইটি ডিজ-অর্ডার থেকে শুরু করে বাইপোলার ডিজ-অর্ডার পর্যন্ত অনেক বেশী জটিল রূপ ধারণ করতে পারে। ডিপ্রেশন অনেক ক্ষেত্রেই সেসব রোগের একটা সিম্পটম। যেকোনো ডিপ্রেশনকেই তাই অবহেলা করার সুযোগ নাই। ডিপ্রেশনকে অবহেলা করা ও আনট্রিটেড রাখাটা হতে পারে ঐসব জটিল রোগ অবহেলা করা বা আনট্রিটেড রাখার সমতুল্য।

আপনি যদি ডিপ্রেশন আক্রান্ত হন, এবং আনট্রিটেড অবস্থায় থাকেন, ভেবে দেখুন, কাজটা কি ঠিক হচ্ছে???

তথ্যসুত্র:
১) https://www.scientificamerican.com/article/regular-walking-can-help-ease-depression/
২) https://hcpc.uth.edu/pages/wimi/depression.htm
৩) http://www.webmd.com/depression/guide/untreated-depression-effects

৫,৩৯৭ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।