ডিপ্রেশন সম্পর্কিত যে ব্যাপারগুলো আমরা খুব একটা গুরুত্ব দেই না, তা হলো:
১) ডিপ্রেশন আমাদের ভাবনা-চিন্তার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, চিন্তা-ভাবনায় বিক্ষিপ্ততা নিয়ে আসে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দূরে ঠেলে রেখে অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কালক্ষেপণ করায়। ডিপ্রেশন কালে যে আত্মবিধ্বংসি ভাবনাগুলো আসে, সেটা এই বিক্ষিপ্ততার কারনেই।
২) ডিপ্রেশনের কারনে অন্যের প্রতি সহানুভুতি, এমপ্যাথি, ইত্যাদি হ্রাস পায়। আর তা হবেইবা না কেন? নিজেকে সারাক্ষণ দুঃখের চাদরে মুড়ে রাখলে অন্যকে দেয়ার মত সময় পাওয়া যাবে কিভাবে?
৩) ডিপ্রেশন যে শুধুই মন খারাপ হিসাবে অনুভুত হবে, তা না। ৬৫% কেসেই মনখারাপের চেয়ে উৎকণ্ঠাকারে (এংজাইটি) ডিপ্রেসড অবস্থাটা জানান দেয়। তাই মন তো ভালই মানে এই নয় যে আপনি ডিপ্রেসড নন। যদি এংজাইটি থাকে, বুঝতে হবে, ডিপ্রেশন আপনাকে ছেড়ে যায় নাই। সাথে সাথেই আছে।
৪) সারাক্ষণ বিরক্তিবোধ করা, চারপাশের সব কিছুতে গন্ডোগোল খুজে পেয়ে তা নিয়ে রাগে ফেটে পড়া – এসবই হতে পারে অন্তর্গত ডিপ্রেশনের ফলস্বরূপ। তাই এগুলো যদি ঘটতে থাকে, এগুলো সমাধানে অন্যকে দোষারোপ না করে নিজের মানসিক অবস্থা নিয়ে সচেতন হন।
৫) খুব একটা কারন ছাড়াই অসহনিয় ব্যাথ্যায় আক্রান্ত হওয়াটাও ডিপ্রেশন জনিত কারনেও ঘটে। তাছাড়া ব্যাথা থেকে যেমন ডিপ্রেশন হতে পারে, ডিপ্রেশন থেকেও ব্যাথার উদ্রেক হতে পারে। কোনটার জন্য কোনটা, আগে খোজাখুজি না করে, আগে ডিপ্রেশন নিয়ন্ত্রনে মনোযোগ দিন। দেখবেন ব্যাথাটা নিজে নিজেই সহনীয় হয়ে আসবে।
৬) বেশিরভাগ মদ্য ও মাদক জাতিয় সামগ্রিই ডিপ্রেশন উপশম নয় বরং ডিপ্রেশন উদ্রেককারী। কেউ কেউ কোনো কোনো মাদক নিয়ে ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকার বা ডিপ্রেশন মুক্ত থাকার দাবী করেন ঠিকই কিন্তু ওগুলো হয় সাময়িক। বরং ওসব মাদকের প্রভাব কেটে গেলে দেখা যায়, তাঁদের জন্য ডিপ্রেশন আরও বেশী জাঁকিয়ে বসে। তখন ওসবের পরিচিত মাত্রায় আর কোনো কাজ হয় না। ডিপ্রেশন নিয়ন্ত্রনে নিজে নিজে এরকম কোনো প্রচেষ্টা নেয়া বা সেলফ মেডিকেশনের চেষ্টা করাটা ভয়াবহ পরিনতি ডেকে পারে।
৭) ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়াটা আমাদের ইচ্ছাধীন নয়, কিন্তু আক্রান্ত হবার পর কিভাবে সেটা থেকে বেরুবো, আদৌও বেরুতে পারবো কিনা – সেই ব্যাপারগুলো কিন্তু আমাদের ইচ্ছাধীন। প্রতিবার একটি করে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। সেটা কাজ করলে সেটা চালু রেখে পরেরটা। আর কাজ না করলে, সেটা বাদ দিয়ে আরেকটা।
৮) ডিপ্রেশন হতে পারে পরিস্থিতিগত কারনে অথবা মস্তিষ্কের প্রান-রাসায়নিক পরিবর্তনের কারনে অথবা দুইয়ের সংমিশ্রনে। যদি পরিস্থিতি গত কারনে এটা হয়ে থাকে, তাহলে শুধু কাউন্সেনিং-এর মাধ্যমে অবস্থার উন্নতি ঘটতে পারে। কিন্তু তা মস্তিষ্কের প্রান-রাসায়নিক কারন বা দুইয়ের সংমিশ্রণ জনিত কারনে যদি হয়, তখন শুধু কাউন্সেলিং খুব একটা কাজ করবে না। এর পাশাপাশি মেডিকেশনেরও দরকার পড়বে। আর এজন্য এধরনের চিকিৎসা দেবার উপযুক্ত চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।
৯) আপনার ডিপ্রেশন আপনার জন্য যতটা যন্ত্রণার, আপনার প্রিয়জন ও কাছের মানুষদের জন্যেও তারচেয়ে কোনো অংশে কম যন্ত্রণার নয়। আপনার ডিপ্রেশনের সময়টাতে তাঁরা যে অবহেলা, দুর্ব্যবহার, ভালবাসাহীনতা পায় – তা তাঁদের ভেঙ্গেচুড়ে দিতে পারে। ডিপ্রেশন আনট্রিটেড রাখলে দিনে দিনে আপনি আরও একা হয়ে পড়বেন। আর আপনার বিরহ তাদেরকেও অনেক অনেক দূরে নিয়ে যাবে।
১০) দিনে মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে দেখবেন ডিপ্রেশন সম্পর্কিত অনেক অনেক সিম্পটম থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে পারছেন। ডিপ্রেশনে থেকে বের হবার শুরুটা তাই এই হাটা দিয়েই করছেন না কেন?
তথ্যসূত্র আছে এখানে…
বিষন্নতা নিয়ে আগের লেখা বিষন্নতা ও পিঠব্যাথা নিয়ে একটি অনুসন্ধান