আত্মকেন্দ্রিকতা ও আত্মপ্রেম সম্পর্কিত জটিলতা – ১
চার
গতপর্বে আলোচনা করেছিলাম, আত্মকেন্দ্রিক আচরন থেকে আত্মপ্রেমের আচরনে উত্তরনের প্রক্রিয়াটি।
এই পর্বে আরও একটু অগ্রসর হবো।
একবার কেউ আত্মপ্রেমের আচরনে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে এ থেকে আত্মপ্রেমময় ব্যক্তিত্ব অর্জনটা তাঁর জন্য আর খুব বেশি দুরত্বে থাকে না।
দেখা যায় কোনো বাঁধা না পেলে তাঁরা আপনা আপনিই এমন সব কাজ করতে শুরু করেন যে কারনে অন্যরা যেন তাদেরকে সবসময় আলোচনার মধ্যমনি করে রাখে।
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার কোনো কিছুর মধ্যমনি হওয়াটা খারাপ কিছু না কিন্তু গোল বাধে তখনই যখন কেউ সেটা করে আত্মপ্রেমী আচরন গুলো দিয়ে খুব সচেতনভাবে।
এরকম করতে করতে একসময় তারা এতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে বুঝতেও পারে না কখন তাঁরা আত্মপ্রেমি ব্যক্তিত্ব ধারন করে বসে আছে।
সাধারন ভাবে ব্যাপারটা তাদের কাছে উপভোগ্যই মনেহয় কিন্তু একটা সময় তাঁরা এটা বুঝতে পারে যে তাদের এই আত্মপ্রেমি ব্যক্তিত্ব তাদের সম্পর্কগুলোর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলা শুরু করছে।
এটা তাদের সাথে সম্পর্কে থাকা মানুষগূলোর জীবনও তখন অতিষ্ট করে ছাড়ে।
একটা কথা বলে রাখি।
আমার এই লেখাটার উদ্দেশ্য কিন্তু NPD আক্রান্তদের কাঠগড়ায় দাড় করানো বা বদনাম করার জন্য না।
আমি সম্পুর্ন কনভিন্সড যে NPD-তে আক্রান্ত হবার ব্যাপারটা মোটেও তাদের স্বেচ্ছাধীন বা নিয়ন্ত্রনাধীন না।
তাঁরা মূলত পরিস্থিতির শিকার। সেই অর্থে তারাও কিন্তু ভিক্টিমই।
আর আমি এখানে কোনো ভিক্টিম-ব্লেমিং সেশন নিতে বসি নাই।
আমি যে কারনে এটা লিখছি, তা হলো: একজন NPD আক্রান্ত হয়তো এই লেখা পড়ে নিজের অবস্থা বুঝবেন। নিরাময় নিয়ে ভাববেন। আবার একজন NPD আক্রান্তের সঙ্গি হয়তো তাঁর প্রিয় মানুষটার তাঁর দেখা উদ্ভট আচরনের কিছু ব্যাখ্যা পাবেন, তাঁকে ছেড়ে না গিয়ে বরং তাঁকে সাহায্য করার কিছু উপকরন পাবেন।
যদিও NPD একটি স্বীকৃত মনোরোগ, তারপরেও শুধু এতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার আওতায় আসাগনের সংখ্যা অতি বিরল। দেখা যায়, যারা অন্যান্য বেশি পরিচিত মনঃবৈকল্য যেমন: বাই পোলার ডিজ-অর্ডার, এংজাইটি ডিজ-অর্ডার, ডিপ্রেসিভ ডিজ-অর্ডার, ইত্যাদি নিয়ে চিকিৎসার আওতায় আসেন, তখন তাদের আগে থেকেই NPD থাকাটা ধরা পড়ে।
হয়তো যথাসময়ে NPD-র চিকিৎসা হলে পরবর্তিতে ঐসব কঠিনতর মনঃবৈকল্যে তাদের পড়তে হতো না।
পরবর্তি অধ্যায়গুলোতে সম্পর্কের ক্ষেত্রে NPD আক্রান্তরা কি কি জটিলতায় পড়ে তা নিয়ে আলোকপাত করছি।
পাঁচ
কথা ছিল সম্পর্ক টেনে নেয়ায় আত্মপ্রেমীরা কি ধরনের জটিলতায় থাকে, তা নিয়ে আলাপ করার।
মনে রাখতে হবে, সম্পর্ক স্থাপন করাটা কিন্তু ওদের জন্য মোটেও কঠিন কিছু না।
চোখের পলকে তাঁরা যে কাউকে সম্পর্কে আবদ্ধ করার বিরল গুন বহন করে চলেন। আর যারা তাদের সাথে সম্পর্কে জড়ায়, তাঁদের কাছে প্রথম ক’টা দিন মনেহয় জগতের সবচেয়ে কাঙ্খিত মানুষটির সাথে হওয়া এক স্বপ্নভ্রমনের মতই। এটা হয়, কারন, আত্মপ্রেমীরা সাধারনতঃ খুবই আকর্ষনিয়, কারিশমাটিক, গভীরতা সম্পন্ন এবং নাটকিয়তায় পরিপুর্ন হয়ে থাকে। অবলিলায় তাঁরা পুরো পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রন নিজের হাতের মুঠোয় এনে ফেলে এবং তা দিয়ে সঙ্গিকে এমনই এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ঘুরিয়ে আনেন, যা হয় একটা লাইফ-টাইম এক্সপেরিয়েন্স!!!
আলাপের প্রাথমিক পর্যায়েই নিজের অর্জনগুলি তাঁরা এমন প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করেন যে শ্রোতার মনে তা উচ্চমার্গিয় দাগ ফেলে। এমন একজনের দাক্ষিন্যপ্রাপ্তিতে শ্রোতা নিজেকে ভাগ্যবান জ্ঞান করা শুরু করে। যদিও এসব করার জন্য এরা দরকার মত মিথ্যা কথাও বলে কিন্তু সেই সময় সেগুলো সত্যি না মিথ্যা তা তেমন কোনো গুরুত্ব পায় না।
এইভাবে সম্পর্কটা সহজে হয়ে যায় ঠিকই কিন্তু তাদের অন্যান্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট ও এত সব অবাস্তবতার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা সম্পর্কটা শীঘ্রই হুমকির মুখে পড়ে।
কি সেসব চমকৃতকর চারিত্রিক বৈশিষ্টসমুহ?
১) তাঁরা সারাক্ষন প্রশংসা পেতে চান, ২) তাঁরা খুবই কর্তৃত্বপূর্ণ হয়ে থাকেন, ৩) তাঁরা কোনো রকমের সমালোচনা শুনতে আগ্রহী নন, ৪) তাঁরা ক্ষমতা পেতে ও তা ব্যবহার করতে আগ্রহী থাকেন, ৫) তাঁরা নিয়ন্ত্রন নিজের হাতে রাখতে চান, ৬) তাঁরা সকল আগ্রহের কেন্দ্রে থাকতে চান, ৭) তাঁরা খুব অল্পেই আহত হন, এবং একবার তা হলে পুর্ন শক্তিতে ঝাপিয়ে পড়েন প্রতি-আক্রমনের জন্য, ৮) তাঁদের সহমর্মিতা থাকে খুব নিম্নমানের আবার ঈর্ষা থাকে খুব উচ্চহারে, এছাড়াও ৯) অন্যের অবেগ অনুভুতিকে তাঁরা পাত্তা দেয়ার মত কোনো কিছু বলে মনেই করে না।
ঘটনা হলো, একটি সম্পর্ক যতই স্বপ্নময় ভাবে শুরু হোক না কেন, তা যে সারাক্ষনই একইভাবে কাটবে – তা তো নয়। অন্য কারন ছাড়াও, ভুলভ্রান্তির কারনেও তো সেখানে ছোটখাটো ব্যত্যয় ঘটতে পারে।
কিন্তু আত্মপ্রেমীরা কোনোরকম কোনো ব্যত্যয় সহ্য করে না, তাঁরা যেকোনো ব্যত্যয় দেখলেই এতটা কঠিনভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখায় যে সঙ্গি আকাশ থেকে পড়ে আর ভাবে – এই কি সেই মানুষ, যে কিছুক্ষন আগেও ছিল “প্রিন্স চার্মিং” অথবা “স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা”?
দু’চারবার এরকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবার পর প্রতিপক্ষও গভীর সন্দিহান হয়ে ওঠে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
আর আত্মপ্রেমী তো একাধিকবার সোজাসাপটা জানিয়েই দেয় কতটা বিরক্ত সে এরকম এক অর্বাচিনকে নিয়ে সম্পর্কটা চালিয়ে যাবার জন্য।
এই যখন দাঁড়ায় একটি সম্পর্কের ভবিষ্যৎ, সেটা আর খুব একটা দীর্ঘাইত হয় কিভাবে???
(চলবে………)
আত্মকেন্দ্রিকতা ও আত্মপ্রেম সম্পর্কিত জটিলতা – ৩
ভাইয়া তোমার লেখাটি পড়তে পড়তে কত মানুষের মুখ মনের আয়নায় ভেসে উঠলো! প্রতিটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পড়ছি আর এক একজন ড্রামা কুইন সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। ছেলেদের মাঝে কি ড্রামা করবার প্রবণতা খানিকটা কম নাকি? তবে আমার একটি ছেলে বন্ধুর কথা হলফ করে বলতে পারি, যার মাঝে তোমার দেয়া নয় বৈশিষ্ট্যই বিরাজমান।
কেউ পড়ুক কিংবা নাইবা পড়ুক তোমার লেখা চলতে থাকুক, ভাইয়া।
"কেউ পড়ুক কিংবা নাইবা পড়ুক তোমার লেখা চলতে থাকুক, ভাইয়া" - কে পড়বে আর কে পড়বে না, আজকাল লেখালেখির সময় সেটা আর ভাবি না।
"এটা এমন কিছু যা আমার লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে" - এই ভাবনাটাই এখন লেখালেখির পিছনে মূল চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করে...
তোমার উৎসাহ পেয়ে ভাল লাগলো।
"ছেলেদের মাঝে কি ড্রামা করবার প্রবণতা খানিকটা কম নাকি?" - হা হা হা, না কম না।
তবে ওরা বোধ হয় সেটা করে নারীদের লুকিয়ে, সন্তপর্নে।
তাই তোমার চোখে পড়েছে কম......
"লেখাটি পড়তে পড়তে কত মানুষের মুখ মনের আয়নায় ভেসে উঠলো!" - খুব উপভোগ করলাম এই কথাটা।
এখন তো তাহলে ভাবতেই পারি লেখার উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও সফল...
😀 😀 😀 😀 😀
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.