ফ্লার্ট সমগ্র – প্রথম পর্ব
ফ্লার্ট সমগ্র – দ্বিতীয় পর্ব
ছয়
ভেবে দেখলাম, এইভাবে “ফ্ল্যার্ট কতপ্রকার ও কি কি” জাতীয় লিখাটা বেশ লেকচার টাইপের ও বোরিং হয়ে যাচ্ছে।
তারচেয়ে বরং ফ্ল্যার্ট নিয়ে ভিন্ন কিছু প্রসঙ্গের অবতারনা করি আজ।
মতলবি ফ্ল্যাটারদের এপ্রোচ প্রসঙ্গটা আপাততঃ তোলা থাক, অন্য কোনো একদিনের জন্য…
ফ্ল্যার্ট নিয়ে থাকা কিছু কিছু ধোঁয়াশা দূর করার চেষ্টা করি প্রথমেই।
১) ফ্ল্যার্ট কি প্রেম?
এর সোজাসাপটা উত্তর হলো “না”। তবে হ্যা, প্রেমের একটা কম্পনেন্ট, “ঘনিষ্টতা” খুব ভাল ভাবে অর্জিত হতে পারে ফ্ল্যার্টিং চলা কালে। এটা হবার পর একজন যদি প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং অন্যজন যদি তা গ্রহন করে, তখন ফ্লার্টিং-এর সমাপ্তি ঘটে ও প্রেমের শুরু হয়। ফ্ল্যার্টিং ও প্রেম একসাথে চলতে পারে না। কেন পারে না, সেটাও বলি।
পারে না, কারন প্রেমে একটা কমিটমেন্ট থাকতেই হবে যেটা ফ্লার্টিং-এ থাকা মোটেও জরুরী না। আবার একই সময়ে প্রেম শুধু একজনের সাথেই করা সম্ভব কিন্তু ফ্লার্টিং ক’জনের সাথে করা যাবে, তার উপর কোনো বিধি-নিষেধ নাই।
প্রেমে জড়ালে দুজনের পরিচয় তৈরী হয় ওমুকের বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড হিসাবে। ফ্লার্টিং-এ থাকাকালে সেরকম কিছু হয় না।
ক, খ, গ – তিনজনের সাথেও একসাথে ফ্ল্যার্ট করা যায় এবং ক-এর কথা খ ও গ-কে খ-এর কথা গ-কে – বলাও যায়। এতে কোনো চিটিং হয় না।
কিন্তু ঘ-এর সাথে প্রেম করলে আর কারো সাথে প্রেম করা যায় না।
করলে সেটা ঘ-এর সাথে চিটিং করা হয়ে যায়।
ঘ-এর সাথে প্রেম করা কালে ক, খ, গ-এর সাথে ফ্ল্যার্ট চালিয়ে যেতে বাধা নাই কিন্তু সেখানে ঘ-কে অবশ্যই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
ক, খ, গ-এর সাথে কি কি হচ্ছে, ঘ সেটা জানতে চাইতে পারবে। এবং জানতে চাইলে সেটা জানানোটাই বাঞ্চনিয়।
না জানালে বা এ নিয়ে লুকোচুরি করলে বুঝতে হবে, ঘ-এর সাথে প্রেমে ঘাপলা আছে।
২) ফ্ল্যার্ট কি পরকিয়া, যদি তা বিবাহিত কেউ করে?
এর উত্তর উপরের প্রশ্নেই আংশিক দেয়া আছে।
স্পাউস থাকা অবস্থায় বিপরীত লিঙ্গের অন্য কারো সাথে প্রনয়ের সম্পর্ক হলে সেটা হয় পরকিয়া।
ফ্ল্যার্টিং যে কোনো প্রনয়ের সম্পর্ক না, সেটা এতক্ষনে বারবার ব্যাখ্যা করেছি। তাই সেই অর্থে বিবাহিত কেউ যদি এক কেন, একাধিকও মার্জিত আন্তরিক ফ্ল্যার্টে জড়ায়, সেটাকে কোনক্রমেই পরকিয়া বলা যাবে না। ফিজিকাল সেক্স অন্তর্ভুক্ত না থাকলে নীবিড় ফ্ল্যার্টিংকেও পরকিয়া বলা ঠিক হবে না।
অবশ্য নীবিড় ফ্লার্টিং-এ যদি ফিজিকাল সেক্স অন্তর্ভুক্ত হয়, সেটা একধরনের চিটিং হবে ঠিকই কিন্তু তখনো পুরোপুরি পরকিয়া হবে না, কারন সেটা তো তখনো কোনো প্রণয়ের সম্পর্ক না।
তবে ফ্ল্যার্টিং-এর যেকোনো পর্যায়ে বিবাহিত ব্যক্তি যদি প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে এবং প্রতিপক্ষ যদি সেটা গ্রহন করে, তাদের সম্পর্কের মধ্যে যৌনতা থাকুক বা না থাকুক, সেটা একটা পরকিয়া সম্পর্কে পরিনত হবে।
৩) ফ্ল্যার্টিং কি তরুনদের বিপথগামী হওয়াটা কে উৎসাহিত করবে?
একদমই না। বরং উল্টোটাই হবার কথা।
তরুণ বয়সে ফ্ল্যার্টিং না করে প্রেম করলেই বরং সেটা বিপথগামী হতে বেশি উৎসাহিত করবে। তাঁরা ঐ বয়সে, প্রেমের মত গুরুগম্ভীর ও দায়িত্বপুর্ন সম্পর্কের ভার বইবার মত শক্ত না হওয়ায় স্বাভাবিক। আর তাই প্রেমে জড়ালে বিপথগামীই শুধু না, নিপিড়িত হবার ঝুকিও থাকবে। অথচ ফ্ল্যার্ট তাদের তারুন্যের সময়টাতে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি থাকা ঔৎসুক্য তো মেটাবেই, বরং দেখা যাবে প্রেমের ব্যাপারে সঠিক সময় ও সঠিক সঙ্গি নির্বাচনেও এটা তাদের প্রস্তুত করবে।
তরুন-তরুনিদের ফ্ল্যার্টিং-এ উৎসাহিত করা গেলে বরং ঐ বয়সে ঘটা অজ্ঞতা ও অবদমনজনিত যৌন-হয়রানির ঘটনাগুলো অনেক কমে আসবে।
দেখা যাচ্ছে, তারুন্যকালের ফ্ল্যার্টিং তরুন-তরুনিদের অবদমন ও অজ্ঞতা জনিত মানসিক অবসাদ কমাতেও ভূমিকা রাখতে পারে। তবে হ্যাঁ, এসময়ে ফ্ল্যার্টিং-এর পিছনে বেশি সময় ব্যয় করাটা আবার লেখাপড়ার ক্ষতি ডেকে আনবে। তাই তাদের ফ্ল্যার্টিং-এ বাঁধা দেয়াটা ঠিক হবে না কিন্তু এই কাজে তাঁরা খুব বেশি সময় যেন ব্যবহার না করে, সেই বিষয়ে তাদের সতর্ক করাটা খুবই জরুরী……
সাত
একটি ফ্ল্যার্টে অংশ নেয়া দুজনের কাছেই এই ব্যাপারটা পরিষ্কার থাকা জরুরী যে তাঁরা প্রেম নয়, ফ্লার্ট করছেন।
এদের একজনও যদি কোনো কারনে মনে করেন, এটা প্রেম এবং যার সাথে তা করছেন, তিনি তাঁর প্রেমিক বা প্রেমিকা – এর ফলাফল দুইজনের কাছেই হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ!!!
সম্প্রতি জানা দুইটা ভয়াবহ পরিনতি আমার কাছে এরকম বলে মনে হয়েছে। আর সেই কারনেই এই প্রসঙ্গটার অবতারনা করলাম।
কোনো প্রেমিকা কি কখনো তাঁর প্রেমিকের কাছে বর্ননা দেয় যে, সে তাঁর প্রেজেন্ট সঙ্গির সাথে,
– কতটা অসাধারণ সঙ্গমে লিপ্ত হয়? কিংবা, সেই সঙ্গমান্তে ক্লান্ত হয়ে কিভাবে পাশ ফিরে শোয়?
– অথবা, সেই সঙ্গির সাথে কিভাবে আহ্লাদী বিড়ালের মতো শরীরে শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকে?
– কিংবা মোথিত চুম্বনে লিপ্ত হয়?
না, প্রেমিকা তাঁর সঙ্গির সাথে এগুলো করলেও প্রেমিকের কাছে এগুলো চেপে যায়। কিন্তু ফ্ল্যার্টিং-এর সময় একজন নারী এমন বর্ননা তাঁর ফ্ল্যার্টিং পার্টনারকে দিতেই পারে। দেয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক না।
একই ভাবে, এমন কোনো প্রেমিক খুজে পাওয়া দুষ্কর, যে কিনা তার প্রেমিকার কাছে বর্ননা দিয়েছে:
– অন্য কাউকে প্রবল আবেগে চুমু খাওয়ার?
– হাত ধরে “ভালবাসি” বলার?
– হুডতোলা রিকশায় সেই অন্যকাউকে নিয়ে পাশাপাশি বসে উত্তাপ বিনিময়ের, খুনসুটি করবার?
– অন্য কারো স্তনে মুখ গুজে এই প্রেমিকাকে বোন অথবা প্রাক্তন প্রেমিকা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার?
না, এগুলো কেউ প্রেমিকাকে বলে না। তবে এগুলোও ফ্ল্যার্টিং-এর সময় একজন পুরুষের জন্য তার ফ্লার্ট-সঙ্গিনিকে বলাটা মোটেও অস্বাভাবিক না।
আমি না বললেও বুঝতে পারছেন যে, ফ্ল্যার্ট-পার্টনারকে প্রেমিকা বা প্রেমিক ভাববার করনেই হয়তো এইগুলো জানবার পর কি পরিনতি বেছে নিতে হয়েছিল ঐ কবি ভদ্রলোক বা কবিতা লিখিয়ে নারীটিকে। আর কোনো অন্যয় বা অপরাধ না করেও হয়তো কি কি সব উথাল-পাতাল সময় কাটাতে হচ্ছে বেঁচে থাকা সংশ্লিষ্ট নারী বা পুরুষটিকে।
তাই বলছিলাম, যদি বুঝতে পারেন যে আপনার ফ্লার্ট-পার্টনার ফ্লার্টিংটিকে প্রেম মনে করছে বা আপনাকে তাঁর প্রেমিক বা প্রেমিকা ভাবছে, সতর্ক হোন। ধৈর্য্য ধরে তাঁকে বুঝান।
একান্তই যদি না বুঝতে চায়, বলে কয়ে তাঁর সাথে ফ্লার্টিং-এ বিরতি দিন অথবা ইতি টানুন।
মাথা গরম করবেন না। “টাইম ইজ দ্যা বেস্ট হিলার” ভেবে তাঁর জীবন থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যাবেন না। এতে নিজেকে সে অবহেলা পাওয়া প্রেমিকা/প্রেমিক ভাবতে পারে। আর জানেনই তো, অকস্মাৎ অবহেলিত মনে করা প্রেমিক বা প্রেমিকা কতটা হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে উঠতেতে পারে? কি কি অস্বাভাবিক আচরন করতে পারে?
আর সেইক্ষেত্রে সে নিজের বা আপনার বড় কোনো ক্ষতির কারনও কিন্তু হয়ে যেতে পারে।
বলতেই পারেন, “তাঁর ক্ষতি হলে আমার কি?” কিন্তু মনে রাখবেন, সেও কিন্তু ভাবতে পারে, “আপনার ক্ষতি হলে তাঁর কি?
বলা তো যায় না, এমন হস্টাইলিটি চালিয়ে যেতে থাকলে আপনার জন্য এমন দিনও আসতে পারে যখন আপনার কাম্য হয়ে দাঁড়াবে তাঁর মৃত্যু। “গাধাটা মরে না ক্যান!!!” – এইভাবে……
অথবা, হয়তো আপনাকেই বাধ্য হয়ে হুমকি দিতে হবে আত্মহত্যা করার। “আমি মরে গেলে কি তোমার শান্তি হবে?” – এইভাবে……
(চলবে…)
====================
কবিতা দুটিও এখানে থাকুক, পরিশিষ্ট আকারে:
====================
কবিতা – এক
কোন এক হেমন্ত রাতে অসাধারণ
সঙ্গম শেষে ক্লান্ত তুমি, পাশ ফিরে শুবে।
তৃপ্ত সময় অখন্ড যতিবিহীন ঘুম দিবে।
তার পাশে ঘুমাবে তুমি আহ্লাদী বিড়ালের মতো,
তার শরীরে শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে, মাঝরাতে।
তোমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে এক প্রগাঢ় দীর্ঘশ্বাস,
আরো একবার তোমাদের মোথিত চুম্বন দেখবে বলে।
মৃতদের কান্নার কোন শব্দ থাকে না, থাকতে নেই,
নেই কোন ভাষা, কবরের কোন ভাষা নেই।
হতভাগ্য সে মরে যায় অকস্মাৎ বুকে নিয়ে স্মৃতি,
তোমাদের উত্তপ্ত সৃষ্টিমুখর রাতে।
===========
কবিতা – দুই
যদি শারীরিক মৃত্যু শেষেও আবার ইচ্ছে হলে পৃথিবীতে
ফিরে আসা যেত,
আমি মরে যেতাম- কয়েক হাজার বার।
আমি মরে যেতাম,
যখন অন্য কাউকে তুমি প্রবল আবেগে চুমু খাও,
হাত ধরো, ভালবাসি বলো!
যখন, হুডতোলা রিকশায় বসে,
অন্যকারো চোখে পৃথিবী দেখো
তুমুল প্রেমে মাতাল হও,
যখন, অন্যকারো সমান্তরালে,
ফুটপাত ধরে হেটে যাও!
বিশ্বাস করো,আমি মরে যেতাম,
যখন অন্যকেউ তোমার জন্য শাড়ী পড়ে,
চোখে কাজল টানে, গুনগুনিয়ে গান গায়,
রাত-বিরাতে আয়না দেখে, মনের কোনায় স্বপ্ন সাজায়!
যখন তুমি অন্যকারো স্তনে মুখ গুজে আমাকে পরিচয় করিয়ে
দাও, বোন অথবা প্রাক্তন প্রেমিকা হিসাবে।
কোন কোন সময়,
আমার বেঁচে থাকতে কি যে অসহ্য লাগে!
আমি হন্যে হয়ে মুক্তি খুঁজি, মৃত্যুর কাছে।
চোখে-মুখে কপট শৈল্পিকতা এনে,
পৃথিবীর সমস্ত পিছুটান উপড়ে ফেলি,
সম্ভাবনাময় কচি বৃক্ষের মতন।
অবশেষে, মৃত্যুর দুয়ারে কড়া নাড়তেই,
আমার তোমাকে মনে পড়ে।
আমার মনে হয়, আজ বিকেলে খবর নেওয়া হয়নি, ঘুমিয়েছো
কিনা!
রাতের খাবার কি,
শরীরটা ভালো কিনা,
বলা হয়নি,
আজ সারাদিন কি কি করলাম,
কোথায় গেলাম,
কে ফোন দিলো,
নতুন কি দেখলাম
বলা হয়নি, আমার তোমাকেই চাই!
এখন আমি কি করবো বলো?
তোমাকে তো পেছনে ফেলতে পারি না!
অমন করে চোখে সেঁটে থাকলে
পেছনে ফেলবো কি করে বলো?
এই কথা দিচ্ছি,
একবার তোমাকে পেছনে ফেলতে পারলেই,
ভালবেসে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবো, বিনা সংশয়ে