লো-লিবিডো : একটি উপেক্ষিত ডিসফাংশানালিটি – প্রথম পর্ব
লো-লিবিডো : একটি উপেক্ষিত ডিসফাংশানালিটি – দ্বিতীয় পর্ব
পাঁচ
নারীদের যৌনাকাঙ্খার ঘাটিতির পিছনে যে সুনির্দিষ্ট কারনগুলি কাজ করে, তা নিম্নরূপ:
১) শারীরিক কারন সমুহ:
ক) যৌন জটিলতার কারনে: বেদনাদায়ক সঙ্গম অভিজ্ঞতা ও অর্গাজম অর্জনে সক্ষম না হওয়া, ইত্যাদি কারনে অনেক নারীই যৌনাকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করতে নিরুতসাহিত হন।
খ) অসুখ-বিসুখের কারনে: আর্থারাইটিস, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েডের সমস্যা, পিএমএস, পিএমডিডি, এন্ডোমেট্রিওসিস, ফাইব্রয়েডস ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা জনিত কারনে নারীদের যৌনাকাঙ্খায় ভাটা পড়তে পারে।
গ) ঔষধ সেবনের কারনে: কোনো কোনো এন্টি ডিপ্রেসেন্ট, এন্টি সিজিয়র সহ বিভিন্ন প্রেসক্রিপশন মেডিসিন ও কোনো কোনো কন্ট্রাসেপ্টিভ, এন্টিহিস্টামিনসহ বিভিন্ন ওটিসি মেডিসিন সেবনে সাময়িক লো-লিবিডো ঘটতে পারে।
ঘ) লাইফ-স্টাইল জনিত অভ্যাসাদির কারনে: দিনে একখানা মদ্যপান যৌনাকাঙ্ক্ষা চাঙ্গা করতে ভূমিকা রাখে কিন্তু এর পরিমান বাড়িয়ে ফেললে তা যৌনাকাঙ্ক্ষা মেরেও ফেলে। কাছাকাছি ঘটনা ঘটে গাজা-চরস-ফেন্সিডিল জাতিয় স্ট্রিট-ড্রাগে কারো অভ্যস্ততা জন্মালেও। এমনকি অধিক ধুমপানেও লো- লিবিডো ঘটতে পারে কারন এটা শরীরের রক্ত প্রবাহকে ধীরতর করে দেয়।
ঙ) অস্ত্রপ্রচার পরবর্তি প্রতিক্রিয়া হিসাবে: স্তন ও যোনিপথের কিছু কিছু অস্ত্রপ্রচারের কারনে যৌন-শিতলতা দেখা দিতে পারে। এটা হয়, কারন এর মাধ্যমে বডি-ইমেজ ও যৌন-অনুভুতিতে পরিবর্তন আসে যা যৌনাকাঙ্ক্ষার ক্ষতি ঘটাতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এসব চিকিৎসা সেলফ-এসটিমকেও নাড়িয়ে দেয়। আর তাঁর প্রভাব পড়ে আগে থেকে অভ্যস্ত যৌন-জীবনে।
চ) শারীরিক ক্লান্তিজনিত কারনে: শিশুর বা বয়স্ক স্বজনের সার্বক্ষনিক দেখভাল করা জনিত ক্লান্তি যৌনাকাঙ্ক্ষা কমায়। এছাড়াও অসুস্থ্যতা বা অস্ত্রপ্রচার পরবর্তি ক্লান্তিও যৌনাকাঙ্ক্ষা কমানোতে ভূমিকা রাখে।
২) হরমোন জনিত কারন সমুহ:
ক) মেনোপজ কালিন হরমোন পরিবর্তন: মেনোপজের কাছাকাছি সময়ে এস্ট্রোজেন সহ শরীরের বিভিন্ন হরমনের মাত্রায় বড় রকমের পরিবর্তন আসে। এ থেকে আগ্রহ হ্রাস পাওয়া ও যোনিপথের শুষ্কতা অনুভুত হয় অনেকেরই। আর সেজন্য সঙ্গম হয়ে পড়ে বেদনাদায়ক। যাদের এটা ঘটে, তাঁরা পরবর্তিতে লো-লিবিডো অনুভব করেন। তবে সবার এমন নাও ঘটতে পারে। মেনপজ কালিন পরিবর্তন সম্পর্কে জানা থাকলে ও তা মোকাবেলার প্রস্তুতি থাকলে সে প্রতিকুলতা অতিক্রম করাটা খুব কঠিন কিছু না।
খ) প্রেগন্যান্সি ও ল্যাক্টেশন কালিন হরমোন পরিবর্তন: সন্তান-ধারনের পুরো সময়টা এবং স্তন্যদান কালটাতে নানান হরমোনের মাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে যেতে থাকে নারীদেহে। সন্তান জন্মদান, প্রতিপালন জনিত ক্লান্তি ও স্ট্রেসের বাইরে এই হরমোনাল পরিবর্তনের গুলিও যৌনাকাঙ্ক্ষা হ্রাসে ভূমিকা রাখে।
৩) মানসিক কারন সমুহ:
ক) উৎকণ্ঠা বা বিষন্নতা জাতিয় ডায়াগোনাইজড মানসিক সমস্যা থাকলে লো-লিবিডো ঘটে থাকে।
খ) যেকোনো স্ট্রেস, বিশেষ করে তা যদি হয় অর্থনৈতিক বা কর্মস্থলজনিত স্ট্রেস – সেটা যৌনাকাঙ্ক্ষা কে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
গ) নিজের বডি-ইমেজ নিয়ে থাকা যেকোনো বিরূপ ধারনা, এবং এ থেকে জন্মানো হীনমন্যতা যৌনাকাঙ্ক্ষা জাগানোর ব্যাপারে বড় বাধা হিসাবে কাজ করে।
ঘ) অতিতে ঘটা শারীরিক নিগ্রহ বা যৌন নিপিড়নের স্মৃতি অনেক সময়ই যৌনাকাঙ্ক্ষা নষ্ট করে দেয়।
ঙ) নিকট অতিতে কারো দ্বারা সেক্সুয়ালি এক্সপ্লয়েটেড হবার অভিজ্ঞতা হলো এরকম আরেকখানা লো-লিবিডো উদ্রেককারি। এরমধ্যে পড়ে, কারো প্রেমের অভিনয়কে সত্যিকারের প্রেম ভেবে সব কিছু উজার করে দিয়ে একসময় আবিষ্কার করা, “সে কখনো ভালবাসে নাই। আমি ছিলাম তার জন্য জাস্ট এনাদার গার্ল, যাকে সিডিউস করাটাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য”।
৪) ইন্টার-পার্সোনাল রিলেশন উদ্ভুত লো-লিবিডো:
এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কে, কমুনিকেশনে, অভ্যাসে ঘটতে থাকা পরিবর্তন সমুহ। সম্পর্কে থাকা যুগল যখন এই পরিবর্তনগুলির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পারেন, তখন অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি তা লিবিডো হ্রাসেও ভূমিকা রাখে। যেমন –
– এদেশে দেখা যায়, কোনো শারীরিক বা মানসিক কারনে স্বামীর যৌন-বৈকল্য ঘটলে সেটার সাথে খাপ খাওয়াতে অনেক সময়ই নারীরাও যৌন-শীতল হয়ে পড়েন। এই ব্যাপারটি ঘটে কারন তা ঐ নারীদের জন্য এটাই সামাজিকভাবে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য করনিয় হয়ে দাঁড়ায় বলেই।
– পারিবারিক সামাজিক নানাবিধ বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে নারী যখন তাঁর স্বামীর সাথে মানসিক যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগটাই ঠিকমত পায় না বা পেলেও সেটার উপযুক্ত সদ্ব্যবহার করতে পারে না, দেখা যায় এর প্রভাব পড়ে তাঁর যৌনাকাঙ্খার উপরেও।
– একসাথে বসবাস করলে মতভেদ দেখা দেবেই। সেগুলো নিয়ে কথা বলে ও আলাপ আলোচনা করে ঐক্যমতে বা সমাধানে আসাটাই হলো উপায়। কিন্তু তা না করে ইগো ধরে রাখতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে সেটাও লিবিডোর উপরে প্রভাব ফেলে।
– যেসব ক্ষেত্রে নারীকে সঙ্গির সাথে তাঁর চাহিদার কথা প্রেফারেন্সের কথা বলা থেকে দিনের পর দিন বিরত থাকতে হয়, অথবা বললেও সঙ্গি সেটা সহজ ভাবে নেয় না বা সেসব প্রেফারেন্স পুরনে উদ্যোগী হয় না, সেসব ক্ষেত্রেও দেখা যায় নারী দিনে দিনে তাঁর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নারীর লো-লিবিডোর পিছনে এধরনের যোগাযোগহীনতা বা যোগাযোগে অনাগ্রহও ভূমিকা রাখে।
– সম্পর্কে স্বামী বা সঙ্গির অবিশ্বস্ততা হলো নারীর জন্য আরেকটা লিবিডো-বিধ্বংসি উপকরন। নারী যখন এটা আবিষ্কার করে, এটা তাঁকে মানসিকভাবে এতটাই আক্রান্ত করতে পারে যে সারাজীবনের জন্যেও আর ঐ সঙ্গির প্রতি সে কোনো শারীরিক আকর্ষন বোধ করবে না। কখনো কখনো এর প্রভাব এতটাই ডিপ রুটেড হয় যে প্রোফেশনাল হেলপ ছাড়া এ থেকে বের হওয়া সম্ভবপর হয় না।
এই পর্যন্ত এসে নারী-পুরুষ উভয়ের লো-লিবিডো সম্পর্কিত ডিসফাংশানালিটির কারনগুলি জানালাম।
আগামী পর্বে সমাধান নিয়ে আলোকপাত করার ইচ্ছা রইলো।
মনে রাখতে হবে, লো-লিবিডো চিহ্নিত করার পর প্রথম পদক্ষেপই হওয়া উচিৎ সেটার অন্তর্নিহিত কারনটা বুঝতে চেষ্টা করা। এটা বুঝতে পারলে সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে যাবে। বাকি অর্ধেকের জন্য তখন যা করনিয়, তা হলো একজন যথোপযুক্ত প্রফেশনাল খুজে বের করা এবং তাঁর নির্দেশ মত চলা।
সুখি জীবন-যাপন প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার। সুখি যৌন-জীবন ছাড়া সেটা মনেহয় খুব একটা সম্ভব না……