কমিটেড বনাম ক্যাজুয়াল সম্পর্ক

আজকে রেডিওতে একটা মজার ডিসকাশান শুনছিলাম দুই তরুন-তরুনী আরজের মধ্যে। পুরাই “নদীর একুল কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস” – অবস্থা…
তারা উষ্মা প্রকাশ করছিল যে এখনকার ছেলে মেয়েদের প্রেমে আগের সেই কমিটমেন্ট নাই যা তাঁদের বাবা-মায়েদের সময় ছিল।
এরা নাকি অনেক সময়েই শুধু এই জন্য রিলেশনে জড়ায় যে একটা রিলেশন না থাকলে কেমন দেখায়। তাছাড়া রিলেশন তো রিলেশনই। বিয়ে কাকে করবো কখন করবো তার সাথে তো এর আর কোন সম্পর্ক নাই।
তাঁদের বাবা-মায়েরা যে সারা জীবন একসঙ্গে থাকার পরিকল্পনা নিয়ে, কমিটমেন্ট নিয়ে রিলেশনে ঢুকতো, ওদের কথায় সেটাকে ওদের কাছে অনেক বেশী কাঙ্খিত বলেই মনে হচ্ছিল।
কেবলই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য রিলেশনে ঢোকা, বা ফেসবুকে সিঙ্গেল লিখাটা রিলেশন স্কীল খারাপ বোধক তাই “In a relationship” স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেকে স্মার্ট দেখাতে রিলেশনে ঢোকাটাকে ওরা (আরজেরা) বেশ ভালই পচালো।
শুনে মনে হলো, এই জেনারেশন কমিটমেন্ট বিহীন রিলেশনে ক্লান্ত। ক্যাজুয়াল রিলেশনশিপের হানিমুন পিরিয়ড কি তাহলে শেষ হয়ে এলো?

অথচ কি অবাক কান্ড, রিলেশনে ঢোকার জন্য ক্রমাগত কমিটমেন্টের চাপে আক্রান্ত হয়ে আমার কবি বন্ধু একদা এই পংক্তি দুটো লিখেছিল –
“যদি শর্তহীন আনুগত্য চাও, আছি
যখন তখন উড়াল দেবে মৌমাছি”
এটা শুধু ওরই না, ঐ সময়কার অনেকেরই মনের কথাই ছিল কিন্তু সেই মনের কথায় সারা দেবার মত কাউকে কখনো কেউ পেয়েছিল বলে শুনি নাই। আর এখন দেখতে পাচ্ছি, চারিদিকে শর্তহীন সম্পর্কের এই যুগ তরুন-তরুনীদের ক্লান্তি এনে দিচ্ছে।
ভাবনার কথা।
আমার মত হলো, আমাদের সময়কার কমিটেড লাভ অথবা এখনকার ক্যাজুয়াল লাভ দুইটারই ভালো দিক খারাপ দিক দুই-ই আছে। সম্পর্কে জড়ানো পক্ষগুলোকে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পরিষ্কার করে নিতে হবে সম্পর্কটাকে কে কিভাবে নিচ্ছে। দুজনই যদি একই অর্থে সম্পর্কে জড়ায়, কোন সমস্যা দেখি না সেটা যত ক্যাজুয়ালই হোক বা যত সিরিয়াসই হোক। তাছাড়া শুরুটা ক্যাজুয়ালি হওয়াই তো বরং ভালো। কিছু দিন একসাথে চলার পর উভয়ের দোষ-গুন দেখে বুঝে যদি মেনে নেয়ার মত বলে ফুললি কনভিন্সড হওয়া যায়, তার পরেই না হয় সিরিয়াস ও কমিটেড রিলেশনের প্রসঙ্গটা আসুক?
ওরা বলছিল, রং বা দলের পছন্দে মিল না হওয়ায় কারো কারো সম্পর্ক নাকি ভেঙ্গে যেতে দেখেছে। আমি তো বলি ঐ সম্পর্কগুলা আসলে ছিলই না কখনো। শ্রেষ্ঠ সম্পর্কেও মতদ্বৈততা থাকবেই। আর তা হ্যান্ডেলে উভয়ের সমান অংশগ্রহনই হলো সম্পর্কের মূল কথা।
সম্পর্কের অর্থ এটা নয় যে দুজনের মধ্যে কত মিল তা দেখানো বরং এইটা যে দুজনে অমিলগুলো কতটা সহজভাবে হ্যান্ডেল করতে পারছে। আর এই জন্য আনকমিটেড সময়ে এই একোমোডেট করার এক্সসারসাইজটা হলেই ভাল হয়। তাই না?

নদীর দুই কুলেই ভাল-মন্দ সবই আছে। খুজে নিতে একটু এফর্ট দেয়া লাগবে……

১,৭৩৫ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “কমিটেড বনাম ক্যাজুয়াল সম্পর্ক”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    দুজনই যদি একই অর্থে সম্পর্কে জড়ায়, কোন সমস্যা দেখি না সেটা যত ক্যাজুয়ালই হোক বা যত সিরিয়াসই হোক। তাছাড়া শুরুটা ক্যাজুয়ালি হওয়াই তো বরং ভালো। কিছু দিন একসাথে চলার পর উভয়ের দোষ-গুন দেখে বুঝে যদি মেনে নেয়ার মত বলে ফুললি কনভিন্সড হওয়া যায়, তার পরেই না হয় সিরিয়াস ও কমিটেড রিলেশনের প্রসঙ্গটা আসুক

    দারুন বলেছেন ভাই। একমত পোষণ করলাম।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)
      দুজনই যদি একই অর্থে সম্পর্কে জড়ায়, কোন সমস্যা দেখি না সেটা যত ক্যাজুয়ালই হোক বা যত সিরিয়াসই হোক। তাছাড়া শুরুটা ক্যাজুয়ালি হওয়াই তো বরং ভালো। কিছু দিন একসাথে চলার পর উভয়ের দোষ-গুন দেখে বুঝে যদি মেনে নেয়ার মত বলে ফুললি কনভিন্সড হওয়া যায়, তার পরেই না হয় সিরিয়াস ও কমিটেড রিলেশনের প্রসঙ্গটা আসুক

      ফেইসবুকের নিউজফীডে প্রায় সময়ই সম্পর্ক নিয়ে অনেক শিশু দার্শনিককে অনেক কথা বলতে দেখি। এরা বিভিন্নজন বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করে। কেউ ধর্মীয়, কেউ সামাজিক, আবার কেউ হুমায়ুন আহমেদের মত মাসালাও দিয়ে থাকে। কিন্তু সকল কথার মূল কথাটা উপরে বলে দিলেন। :thumbup:


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    এখন মনে হয় অনেক কিছু আগাইয়া গেছে।
    আমাদের সময়ে একাধিক প্রেম মানে একটা শেষ হবার পর আরেকটিতে জড়ানো ও অন্যায় ছিলো।
    আরে বাবা মনে মনে না মিললে ক্যানো জোর করে টেনে নিয়ে যেতে হবে।

    সময়টা চেঞ্জ হচ্ছে।
    মেয়েরা আরো বেশি করে স্বাবলম্বী হোক।
    এতে অন্তত পুরুষরা তাদের সম্পত্তি, সম্পদ এসব ভাবা থেকে বের হয়ে আসবে।

    তবে অনেকের মাঝে একটা জিনিস দেখে খারাপ লাগে।
    সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে যা তা বলা, করা।
    ভালোবাসা শেষ হয় না। হয়তো নির্দিষ্ট কাউকে আর ভালোবাসা যায় না।
    কিন্তু এতে করে তো আর গতকালকের ভালোবাসা মিথ্যে হয়ে যায় না।
    সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সম্পর্ককে সম্মান দিতে জানা, শেখা।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    একসাথে সবার মন্তব্যের উপরে আমার রিএকশন দিচ্ছি।

    এইটা কোন উত্তর না। কারন কেউ কোন প্রশ্ন করে নাই।
    এটা বরং ভাল লাগাটা জানানোর একটা প্রচেষ্টা।
    গাড়ি চালাতে চালাতে ঐ আলাপচারিতাটা শুনছিলাম। শুনতে শুনতে যা যা মনে হচ্ছিল, সেগুলা লিখলাম। বিরাট কোন গবেষণা ধর্মি লিখা না, সাধারন বোধ বুদ্ধি থেকে লিখা।
    এই রকম একটা লিখা পড়ে তোমরা তিনজন যে উচ্ছাস দেখালে, আই এম সিম্পলি হাম্বলড!!
    অনেক অনেক কৃতজ্ঞ: আহসান, রাজীব এবং মোকাব্বির - তোমাদের কাছে।

    আর রাজীব, "ভালোবাসা শেষ হয় না। হয়তো নির্দিষ্ট কাউকে আর ভালোবাসা যায় না। কিন্তু এতে করে তো আর গতকালকের ভালোবাসা মিথ্যে হয়ে যায় না।" - এইটার সাথে সম্পুর্ন একমত।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      ভাই সত্যি কথা বলতে গবেষণাধর্মী লেখার পাশাপাশি এই ক্ষণিকের ভাবনায় আসা লেখাগুলোও অনেক জরুরী। খুব সহজ করে সম্পর্কের ব্যাপারে দুটো কথা বলে দিলেন। নিজের জীবনে এর প্রয়োগ পেয়েছি দেখেই আমার কথার উচ্ছ্বসিত সমর্থন দিলাম। দুইটি বছর প্রেমের জগতের অভিশপ্ত "লং ডিস্ট্যান্স রিলেশানশীপ" চালাচ্ছি। গত দুই বছরে কেউ তো কারো নাভিশ্বাসের কারণ হয়ে উঠিনি? কেন উঠিনি? হয়তো অনেক কারণ আছে কিন্তু মূল কারণটা যেটা বলেছেন সেটাঃ আমরা একই অর্থে একই উদ্দেশ্যে সম্পর্কে জড়িয়েছি। হয়তো সবসময় সেটা করা হয়ে উঠে না।

      তবে একই সাথে সেই দুই তরুণ-তরুণীর কথায় আসি, তাদের যেই অভিযোগ প্রেমটা পিয়ার প্রেসারে করা হচ্ছে সেটা কিন্তু একেবারে ফেলে দেবার নয়। ফেইসবুক কেন্দ্রীক জীবনধারায় cool ও uncool এর সংজ্ঞা পালটেছে বহু আগেই।


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        "প্রেমটা পিয়ার প্রেসারে করা হচ্ছে সেটা কিন্তু একেবারে ফেলে দেবার নয়।"
        খুবই ঠিক কথা।
        সম্পর্ক-প্রেম-বিয়ে-সংসার এই সবগুলোর উৎস হওয়া উচিৎ ভাল লাগাটা। দায়িত্ব-কর্তব্যের জন্য এইসবে ঢোকা যতটা খারাপ, পিয়ার প্রেশারের কারনে তা করা আরও বেশী বৈ কম খারাপ না।


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
  4. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    “যদি শর্তহীন আনুগত্য চাও, আছি
    যখন তখন উড়াল দেবে মৌমাছি”

    লাইনগুলো খুবই পছন্দ হয়েছে। অন্ততঃ আমাদের সেই সময়ে অতিমাত্রার কমিটেডের সময়কার জন্য উপযুক্ত।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  5. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলোর দাম্পত্য সম্পর্কের যে ছবি আমি দেখতে পাই তার অনেকটাই চাপিয়ে দেয়া। বিশ্বাস এবং আনুগত্যের সংজ্ঞা নিরূপণ হয় মোটাদাগে সমাজের দ্বারাই। এবং অভ্যস্ততার হাত ধরে আসে মায়া-মমতা, সন্তান এবং গোটা পরিবার -- এভাবে ভ্রান্ত পথ ধরে তৈরী হয় বিভ্রান্ত সমাজ।
    এটুকুই আমার পর্যবেক্ষণ।

    এর বিপরীতে আজকের তরুণদের অস্থির প্রবণতাকে আমার খুব স্বাভাবিক মনে হয়। প্রেম -- সকাম হোক কি নিষ্কাম, কিংবা স্রেফ আকাম --- ধারণ করুক ব্যক্তির স্বাধীন চেতনাকে --- সুস্থভাবে, যতটা পারা যায় -- রুচিকে উন্নত রেখে। ভালোবাসায় (নরনারীর হোক কি না হোক) নির্ভরতা খুব জরুরী বলে মনে হয় আমার। আমাদের বাবা-মায়েদের জীবন আর সম্পর্ক এমন চাপিয়ে দেয়া আর নিরুপায় ছিলো বলেই কি তাঁরা অনেক বেশী সহনশীলতার চর্চা করতে শিখেছিলেন, ত্যাগস্বীকার করতে পেরেছিলেন? কি জানি! আমাদের অনেকের বাবা-মা-ই যে নিজের মতো করে আর কিছু পাননি তো তো চরম সত্য।

    আলোচনা চলুক। আমার মনে হয় --- স্থির সত্য বা আদর্শ বলে কিছু নেই। আমি যেমন আজকের আনকোরা তরুণ-তরুণীদের খুব ঈর্ষা করি, কারণ নিজেকে প্রকাশ করতে তারা আমাদের যুগের ভণিতা এবং ভানকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারছে। একজন মানুষকে একবেলার ভালোলাগায় যদি হাত ধরতে কি চুমু খেতে ইচ্ছে হয় তার জন্য 'তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা' (যখন দু'জনেই জানে সেমুহূর্তে ভীষণ আর আরোপিত আর কৃত্রিম এ কথা) টাইপ অজুহাত আওড়ানো একটা ভণ্ডামি ছাড়া আর কি। আমাদের সময়ে (এখনো তীব্রভাবেই আছে এই মানসিকতা) একজনের সাথে ট্যাগড হয়ে গেলে সেই সম্পর্ক থেকে নিস্তার পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ ছিলো পিয়ার প্রেশারের কারণেই। তবে হাস্যকরভাবে -- এখন পিয়ার প্রেশারের গতিমুখ পাল্টে গেছে। নিজের চাওয়া-পাওয়া এবং অনুভূতির মর্ম উপলব্ধি করতে পারাটা খুব প্রয়োজন। সামাজিক চাপের কাছে নিজের বিচারবুদ্ধিকে হারতে দিলে হেরেই যেতে হবে -- কি প্রেমে, কি অপ্রেমে।

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      কথা গুলো ভালো লাগলো নূপুরদা। পিয়ার প্রেসারের গতি পাল্টেছে কথাটা এভাবে আপনি বলার আগে চিন্তা করে দেখা হয়নি। পিয়ার প্রেসারে বর্তমানের ছেলে মেয়েরা প্রেম করছে কিনা সেটা আসলে বলা মুশকিল তবে পিয়ার প্রেসারে তাদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি করেছে এটা আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই দেখেছি। সেই হতাশা বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়ানোর মত শক্তিশালী কিনা কে জানে।


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      "আমার মনে হয় --- স্থির সত্য বা আদর্শ বলে কিছু নেই।"
      নতুন একটা ডাইমেনশন পাওয়া গেল।
      দুটো ঘটনার উল্লেখ করছি। সত্য ঘটনা।
      (১)
      বাংলাদেশের এক অধ্যাপক গিয়েছেন ইওরোপে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পেপার প্রেজেন্ট করতে। পেপার প্রেজেন্ট শেষ। সন্ধ্যায় বারে বসে একাকি বিয়ারে চুমুক দিচ্ছেন। পুর্ব ইওরোপের দীর্ঘাঙ্গী ৪-৫ বছরের সিনিয়ার এক মহিলা গবেষনাটা নিয়ে আলাপ করতে চাইলেন।
      দুজনে জটিল একাডেমিক আলোচনা করছেন তো করছেনই। এক পর্যায়ে বার বন্ধ করার তাগাদা এলো। কিন্তু আলোচনাতো তখনো শেষ হয় নাই। ভদ্র মহিলা আমন্ত্রন জানালেন তার সাথে গিয়ে বাকি আলাপটা শেষ করার জন্য। গভীর রাতে দুজন যখন শেষ পর্যন্ত একটা ঐক্য মতে পৌছুলেন, দেখা গেল শুধু ভদকার বোতলই শেষ হয় নি, আরেকটা নতুন যৌথ পাবলিকেশনের খসড়াও দাঁড়িয়ে গিয়েছে।
      ভদ্রমহিলা এক সন্ধ্যার আলোচনায় এতটা অর্জনে আনন্দে এতই উদ্বেল হয়ে গেলেন যে কাল বিলম্ব না করে জানতে চাইলেন, "ডু ইউ হ্যাভ প্রোটেকশন?"
      এরপর প্রটেকশন খোঁজা নিয়ে কনফারেন্সে যাওয়া গড়পরতা মধ্যবৃত্ত বাংগালী মানসিকতার অধ্যাপককে সেই রাতে কি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল, সেটা ভিন্ন গল্প।
      (২)
      স্ত্রী ও নবোজাতককে দেশে রেখে ইউএন মিশনে গিয়েছেন একই রকমের গড়পড়তা মধ্যবৃত্ত বাংগালী মানসিকতার এক সেনা কর্মকর্তা। তার সহকর্মি পশ্চিমা এক শ্বেতাঙ্গিনী। পাশাপাশি ওয়ার্ক স্টেশনে বসে না চাইলেও দিনে দশবার তাকে স্বামীর সাথে মহিলার ফোনে চুমাচুমির শব্দ শুনতে হয়। আর কান গরম হয়। কিসসু করার নাই। মহিলা মাস ছয়েকের মধ্যে ছুটি পাবেন না। সুতরাং ফোনে ফোনেই দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষা করে চলেতে হচ্ছে।
      হঠাৎ একদিন ভদ্রমহিলা নিকটবর্তি সৈকতে যাবার জন্য দিন তিনেকের উইকএন্ড জোগাড় করে ফেললেন। সহকর্মিকে প্রস্তাব দিলেন সফর সঙ্গি হতে। অনুরোধের ঢেকি গিলে অর্ধচেনা বিদেশিনির সাথে অনিচ্ছাস্বত্তেও যেতে রাজি হলেন। মহিলা নেটে নেটেই সব ঠিক ঠাক করে ফেললেন শর্ত একটাই খরচ ভাগাভাগি হবে।
      হোটেলে পৌছে তো চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। দুজনের জন্য একটাই রুম বিদেশিনীর সাথে রুম শেয়ার কিভাবে হবে, কিছুই বুঝতে পারছেন না। আরও অবাক কান্ড, মহিলা অভিসারেও যে বের হন নাই, সেটাও নিশ্চিত। তার স্বামী সব কিছুই জানেন। বারবার কথাও হচ্ছে।
      যথারীতি রাতে ঘুমুতে যাবার আগে মহিলা বললেন প্রোটেকশন সহ প্রস্তুত হতে।
      কোন রকমের প্রোটেকশন স্টক বা প্রস্তুতি নাই শুনে তিনি খুবই সন্দিহান হয়ে উঠলেন সেক্সচুয়াল অরিয়েন্টেশনের ব্যাপারে!
      পরে নানা কশরত করে এক্সপ্লানেশন দিয়ে শেষ মেশ হাতে কলমে পরীক্ষা দিয়ে প্রমান করতে হল যে তিনি সমকামী নন।

      এই দুই ঘটনার নায়কই অত্যন্ত কেয়ারিং, সুখি ও সফল গৃহকর্তা। সাফল্যের সাথে দাম্পত্য জীবনযাপন করছেন। ঐ এক দুই রাতের ভিন্ন অভিজ্ঞতা তাঁদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে কোন প্রভাব ফেলেছে বলে আমার কখনো মনে হয় নাই। আবার এগুলোকে কেবলই ওয়ান নাইট এডভেঞ্চার বলে আখ্যায়িত করারও কোন কারন দেখি না। আমার মনে হয়েছে, তাঁদের পরিবার স্ত্রীর প্রতি সম্পুর্ন বিশ্বস্ত ও অনুগত থেকেও তাঁরা ঐ সময়টাতে অন্যধরনের একটা ভালোবাসার মধ্যেই এই ভুমিকাগুলো রেখেছেন। আর এইজন্যই তাঁদেরকে কোন রকমের অনুশোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হয় নাই। পুরো বিষয়টার কৌতুক অংশগুলো তাই অবলীলায় শেয়ার করতে পেরেছেন।
      এটাকে যে বিশ্বাস ভঙ্গ ভাবে ভাবুক, আমার কাছে এটা ভিন্ন ধরনের এক সকাম সম্পর্ক ছাড়া আর কিছু নয়।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  6. শাহরিয়ার (০৬-১২)

    এখনো শেখার বয়সে আছি 😛 তবে যতটুকু বুঝি আমার মনে হয় রিলেশনটা কোন ধরনের ক্যাজুয়াল নাকি কমিটেড সেটা নিয়ে দুইজনের সেইম ধারনা না থাকলে কপালে শনি আছে।
    আর হ্যা, এই প্রজন্মের ছেলে হিসেবে বলতেছি পিয়ার প্রেশারের যেই কথাটা বললো মোকাব্বির ভাইয়া এইটা খুবই সত্য। :))


    • জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      বুঝতে পারছি, আমাদের সময়ে পিয়ার প্রেসারটা যে ছিল না, সেটাকে একধরনের ব্লেসিং-ই বলতে হবে। যারা কোন ধরনের সম্পর্কের মধ্যে ছিল, তাঁদের ভাগ্যবান হিসাবে গন্য করা হলেও যাদের কপালে শিকে ছিড়তো না তাঁদের কাউকে কখনো হতভাগা জ্ঞান করতে দেখি নাই। কোন কিছু না থাকাটাকেই স্বাভাবিক জ্ঞান করা হতো আর তাঁরা নির্বিঘ্নে প্রচুর সময় পেত প্রোডাক্টিভ কাজ করার।
      যেকোন ধরনের সম্পর্কই, ক্যাজুয়াল বা কমিটেড, প্রচুর চাপ সৃষ্টি করতো এবং তা উভয়েরই জন্য। কোন কারনে ধরা পড়লে উত্তম-মধ্যম ছাড়াও উঠতে বসতে যে গঞ্জনা সইতে হতো, জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য তা ছিল অতুলনীয়।
      প্রেমেপড়াদের সম্পর্কে কেবল দুইটা পারসেপশনই ছিল: ১) প্লেটোনিক লাভার ২) লুইচ্চা।
      এই দুইটার মাঝে আর কোন স্বাভাবিক অবস্থা যে থাকতে পারে, সেটা বোঝার বা মানার জন্য কেউ রাজি ছিল না।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      ব্যাপারটা আন্দাজ করসিলাম কারণ নিজে যখন ব্র্যাকে পড়চি ২০০৫ এর দিকে তখন এরকম ঘটনা দেখেছি। ৯ বছর আগেই যদি এরকম দেখা যায় ইদানিং তো আরো বেশী হবার কথা! 🙂


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।