যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – প্রথম পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – দ্বিতীয় পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – তৃতীয় পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – চতুর্থ পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – পঞ্চম পর্ব
ষোল
এই পর্বে টাইমিং ও ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ে বলবো।
যেকোনো কাপলের দুজনই যদি আগ্রহের সাথে অংশগ্রহন করে, তাহলে সেক্সের কোনো সঠিক সময় ও সঠিক ফ্রিকোয়েন্সি বলে কিছু থাকে না।
এনি টাইম ইজ গুড টাইম এন্ড এনি নাম্বার ইজ গুড নাম্বার।
কিন্তু দেখা যায় নানা ব্যস্ততা ও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে একজন যদি একটু ফাঁক বের করেও, তখন আবার অন্যজনের ফুরসৎ মেলে না।
এরকম ক্ষেত্রে একসাথে থাকা কাপলদের যে করেই হোক সপ্তাহে অন্ততঃ একবার সেক্সের জন্য সময় বের করে নিতেই হবে।
এটা জরুরী, কারন কাপল লাইফ যদি সেক্সবিহীন (যেকোনো কারনেই হোক না কেন) চলতে থাকে, দেখা যায়, তাঁদের মধ্যে মতৈক্যে আসা কঠিন হতে থাকে। তুচ্ছ ব্যাপার নিয়েও অকারণ রাগারাগী বেড়ে যায়। কটূক্তি করা সহজ, যেকোনো ইস্যু ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা কঠিন হয়ে পড়ে। অবিশ্বস্ততার কোনো সুযোগ এলে সেটা ট্রাই করার একটা অজুহাতও তখন পাওয়া যায়। এবং একটা সময় যদি সম্পর্কটা ভাঙ্গনের মুখেও পড়ে, তা নিয়ে খুব একটা কোনো অনুশোচনা বোধ হয় না কারোরই।
সেক্সকে তাই শুধু একটা ফিজিকাল প্লেজারের বস্তু ভাবা ঠিক না। এর মাধ্যমে একটি যুগল মানসিক ভাবেও কানেক্টেড হন। সেই কানেকশনটা চালু রাখার জন্য নিয়মিত সেক্সের চর্চ্চা করাটা খুবই জরুরী…
কথা হলো, সপ্তাহে একবার করাটা যখন জরুরীই, সে জন্য বেস্ট টাইম কোনোটা?
উইকলি সেক্স প্র্যাক্টিস করা কাপলরা বেশিরিভাগই উইকএন্ডের সেকেন্ড ডে-র সকালটাকেই শ্রেষ্ঠ সময় বলে গন্য করেন।
আরও স্পেসিফিকালি বললে, পশ্চিমে এটা হলো রবিবার ঘুম থেকে ওঠার ৪৫ মিনিট পর।
জেনে অবাক হবেন যে, উইকলি সেক্স প্র্যাক্টিস করা কাপলদের ৭০%-ই এই সময়টা বেছে নেন তাঁদের লাভ মেকিং আওয়ার হিসাবে, যদি অন্য কোনো সমস্যা না থাকে।
এবার বলি কেন এই সময়টা সবচেয়ে সুবিধা জনক।
১) আগের দিন রেস্ট নিয়ে, সারা সপ্তাহের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে, রাতে ভাল একটা ঘুম দিয়ে এই সময়টাতে সবচেয়ে এনার্জাইজড থাকেন বেশিরভাগ মানুষই। আর ভাল সেক্সে যে প্রচুর এনার্জি লাগে, এটা তো বলাই বাহুল্য!!!
২) আবার ঘুম থেকে উঠার পর যে ইমিডিয়েট ড্রাউজি ভাব, সেটাও এই কালক্ষেপনে কেটে যায়। ব্রেকফাস্ট করে একটা শাওয়ার নিলে তা আরও ভালভাবে কাটে।
৩) এ সময়ে পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরোন লেভেল সবচেয়ে বেশী থাকে যে জন্য উত্থান হওয়া ও তা দীর্ঘ্যক্ষন ধরে রাখা সহজ হয়।
৪) নারীরাও এসময়টাতে সবচেয়ে জঞ্ঝাটমুক্ত ভাবে অংশগ্রহন করতে পারেন।
৫) জঞ্ঝাট্মুক্ত থাকেন বলেই তাঁদের জন্যেও প্রয়োজনিয় লাভ হরমোন নিঃসরন ফ্যাসিলিটেড হয়।
দেখা গেছে, উইকলি লাভ মেকাররা, বিভিন্ন সময় ট্রাই করে যখন এই সময়টা একবার বেছে নেন, আর সেটা সহজে ছাড়েন না।
আর হ্যাঁ, এই উইকলি লাভ মেকারদের সংখ্যা কিন্তু খুব একটা কম কিছু না।
পশ্চিমে কমপক্ষে ৬০% কাপলই হলো মূলত এই উইকলি লাভ মেকিং-এর দলভুক্ত!!!
এদেশের সংখ্যাটাও এর থেকে খুব একটা ভিন্ন কিছু হবার কথা না।
তবে আমাদের জন্য দিনটা হবে শনিবার, ঘুম থেকে ওঠার ৪৫ মিনিট পর।
তবে, দ্যা আর্লিয়ার, দ্যা বেটার 🙂 🙂 🙂
[নোট: সেক্সবিহীন মানে একেবারে জিরো সেক্স হতেই হবে, এমন না। ফ্রিকোয়েন্সিটা মাসে একবার বা তারও কমে নেমে গেলে সেটাকে সেক্সবিহীন জীবনযাপন হিসাবে গন্য করতে হবে…]
সতেরো
বিরানব্বুই সালে বেইজিং যাবার পথে একরাতের জন্য যাত্রাবিরতি ছিল হংকং-এ।
পৌছে দুপুরে যখন চুংকিং ম্যানসন এলাকার হোটেলে উঠি, শহর তখন ব্যস্ত। সবাই ছোটাছুটিরত।
কিছুক্ষন জিরিয়ে বিকালে যখন নামলাম শহর দেখতে, কিছুক্ষনের মধ্যেই চক্ষু ছানাবড়া হতে শুরু করলো।
রাস্তার দু’ধারের ফুটপাথ-এ সান্ধ্যকালিন বিক্রেতারা এসে পসারা সাজাচ্ছে।
অন্য অনেক কিছুর মধ্যে যে জিনিষটা দেখে থমকে গেলাম, তা হলো বস্তা বস্তা ভাইব্রেটর, ডিলডোসহ হেন সেক্সটয় নাই যা মাটিতে বিছানো পাটির উপর স্তুপ করে রাখা।
এইভাবে প্রকাশ্যে রাখা হচ্ছে, তাহলে তো প্রকাশ্যেই বেচাকেনা হবে – ভাবলাম, দেখি তো, কারা কেনে? কিভাবে কেনে?
ঘোরাঘুরি করি আর আড় চোখে বোঝার চেষ্টা করি বেচাকেনা কিভাবে হয়।
দেখলাম, অতি স্বাভাবিক পদক্ষেপে মূলত মাঝ বয়সী নারীরা আসছেন, আয়েস করে মাটিতে বসে একটা একটা হাতে নিচ্ছেন। অনেক গুলো ধরেটরে পরখ করে পরে তিন-চারটা একবারে কিনছেন অন্য ক্রেতা ও বিক্রেতার সাথে আলাপ আলোচনা ও যথেষ্ট দামাদামি করে। এবং একদমই নৈর্ব্যক্তিক ভাবে। এ যেন কোনো ব্যাপারই না…
না, এজন্য অন্যকেউ তাঁদের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেন না, কোনো অর্থপূর্ন দৃষ্টি দিচ্ছেন না, কটূক্তি বা হয়রানি করার তো প্রশ্নই ওঠে না।
একজন ব্যক্তির যৌনতা তো এরকম নৈর্ব্যক্তিকই হবার কথা, তাই না?
অন্যে কেন সেখানে গায়ে পড়ে ঢুকতে যাবে?
এবার বলি এদেশে সিকি শতাব্দি পরে ঘটা একটা ঘটনা, যা সম্প্রতি শুনলাম।
নিজে সিঙ্গেল হলেও একক যৌনজীবন আছে এমন একজন এদেশের প্রায় মাঝবয়সি নারী অনুভব করলেন, তাঁর একটা ভাইব্রেটর বা ডিলডো দরকার। অনলাইন বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাঁর মনে হলো, এভাবে সংগ্রহ করাটা তাঁর জন্য নিরাপদ না। আর কোনো উপায় না দেখে তিনি খুবই সহানুভুতিশীল মনেহয় এরকম একজন অগ্রজসম বন্ধুকে অনুরোধ করলেন, তাঁর জন্য অনলাইন হোক বা অন্য কোনোভাবে একটা কাঙ্খিত বস্তু সংগ্রহ করে দেয়ার জন্য।
ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে আবিষ্কার করলেন, এই এক কথায় এতদিন ধরে মুরুব্বিয়ানা করে নিরাপত্তা নিয়ে নানা উপদেশ দেয়া বিবাহিত অগ্রজসম বন্ধুটা ভিন্নরূপে আবির্ভুত হলেন।
সরাসরি এভাবে “কুপ্রস্তাব” দিয়ে বসলেন: “আমার কাছে তো রিয়েল জিনিষই আছে যখন যেখানে দরকার তোমাকে ফ্রী ডেলিভারী দেবার জন্য। তাইলে খালি খালি পয়সা খরচ করে তোমার এসব নকল জিনিষ খোজা লাগছে কেন?
আমরা, এদেশের পুরুষরা, নারীদের যেকোনো কথায় তাঁদের কোনো সেক্সুয়াল ইনক্লাইনেশন আছে কিনা খুজে ফিরি। জাজমেন্টাল হই। বুঝতে হবে, নারী মাত্রই আপনার সাথে সেক্স করার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে না। তাঁদের নিজেস্ব পছন্দ অপছন্দ থাকে। আপনি একাই সেটার মধ্যে নাও থাকতে পারেন। আর যদি সেটার অন্তর্ভুক্ত থাকেনই, এসব ফালতু চটিবাজি ইঙ্গিত না, অন্য কোনোভাবে সে আমন্ত্রন আপনি যথা সময়ে পাবেন। সেজন্য অপেক্ষা করুন। আর না পেলে ভুলে যান।
আপনাকে সহানুভুতিশিল ভেবে আস্থায় নিয়ে কোনো নারী যদি খুব ব্যক্তিগত কোনো কাজ আপনাকে দেন, খুব ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্ন যদি আপনাকে করেন, সেগুলার ভুল ব্যাখ্যা করে দুইটা অন্যয় আপনি করবেন: ১) তাঁর আস্থা হারিয়ে তাঁকে অসহয় করে দেবেন, ২) তিনি ভবিষ্যতে আর কারো উপর আস্থা রাখতে ভয় পেয়ে সাফার করবেন।
কোনো নারীর সাফারিং কমাতে না পারেন, কমায়েন না। কিন্তু তাঁর ব্যাপারে যৌন-সম্পর্কিত অকারণ জাজমেন্টাল হয়ে তাঁর সাফারিং বাড়ানোর কোনো অধিকার আপনার নাই…………
আঠারো
এখন যেটা লিখবো, এটা ঠিক পুরোপুরি ভুল ধারনা না। তবে এক অর্থে তা ভুল ধারনা প্রসুত হয়ে নারীর যৌনতা নিয়ে অনধিকার চর্চ্চা।
প্রথমে একটা গল্প শুনুন।
অনুগল্প – ইররেস্পন্সিবল প্রেমিক
====================
মাঝরাতে ইলার ফোন পেয়ে অবাক হয় মিলু।
ভাবে, “এতরাতে তো সুমনের সাথে ইলার ফোনে বিজি থাকার কথা। আমাকে ফোন কেন? কোনো সমস্যা হলো নাকি?”
ভাবতে ভাবতে ফোনটা ধরে।
– তুই কি এখন একটু আসতে পারবি, জরুরী দরকার।
– পাগল? এত রাতে ক্যামনে বেরুবো? এইটা কোনো কথা হলো?
– দোস্তো, গাড়িতে গ্যাস ভরতে হবে, এ জাতিয় কিছু একটা ধুনফুন বুঝিয়ে এক্ষুনি বের হ। আমার খুবই জরুরী দরকার। সর্বনাশ হতে বেশী বাকি নাই…
– কি সর্বনাশ সর্বনাশ করতেছিস? ঘটনা কি, তাতো বলবি?
– পরশু গিয়েছিলাম সুমনের ফ্ল্যাটে। কোন প্রোটেকশন ছিল না, তাও হলো। ওর খুব বেশী দোষ না, সাইকেলের পিক টাইমে ছিলাম বলে আমারই খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো। ও বলেছিল, ইমার্জেন্সি পৌছে দেবে। গত দু দিন অফিসের কাজে ও খুব দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আছে, দিয়ে যেতে পারে নাই। আর তুই তো জানিসই, আমার জন্য কালেক্ট করা খুবই কঠিন। এখানে সবাই আমাকে চেনে। আমি দোকানে কিনতে গেলে “ভোর হইতে না হইতেই চারিদিকে রাষ্ট্র হয়ে যাবে…” বুঝিসই তো। যেমনে পারিস এখনি এসে দিয়ে যা। সকাল পর্যন্ত ওয়েট করলে সেভেনন্টিটু আওয়ার্স পেরিয়ে যাবে…
– বাহ, ভালই। আবার তার স্কীনটাও সেভ করতেছিস দেখতে পাচ্ছি। “ওর খুব বেশী দোষ নাই”। ন্যাকামি? প্রোটেকশন নাই, দুইদিন ধরে আইপিল পৌছানোর নামগন্ধ নাই, তারপরেও ডিফেন্ড করে যাবি? আচ্ছা , আমিই আসতেছি তোর আইপিল নিয়ে। আর কিছু লাগলে জানাইস। কিন্তু একটা কথা বলে দেই। তোর এই প্রেমিকটা হৈলো দুনিয়ার ইররেসপনসিবল, বুঝলি? এটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবি, ততই তোর মঙ্গল।
– হুম, নিজেই বুঝতে পারতেছিলাম। কিন্তু তুই যেন বেশী বকাঝকা না করিস, তাই ওভাবে বললাম। যাহোক, আসতেছিস যখন, একটা প্রেগন্যান্সি টেষ্ট কিটও নিয়ে আসিস। দেরী যখন হয়েই গেল, ইমার্জেন্সিটা যদি ফেইল করে, দ্রুত জেনে নেয়া যাবে তা……
=====================
একটি তরুনি বিবাহিত হোক বা না হোক, সে কন্ট্রাসেপটিভ কিনছে কেন? তাঁর ইমার্জেন্সি পিলের কি দরকার? তাঁর প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কেন দরকার? – এইসব প্রশ্ন করে, কানাঘুষা করে কে কবে বড়লোক হয়েছে?
তা যদি না হয়, এসব অনধিকার চর্চ্চা করে অন্যের জীবন ঝুকিপুর্ন করার মধ্য দিয়ে কার কি স্বার্থটা উদ্ধার হয়, বুঝি না……