যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – প্রথম পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – দ্বিতীয় পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – তৃতীয় পর্ব
দশ
এই পর্বটা পূর্ববর্তি পর্বের একটা এক্সটেনশন।
গত পর্বে নারী-পুরুষের এসেক্সুয়ালিটির পার্থক্য নিয়ে বলেছিলাম।
আজ সেটার কিছু ব্যাখ্যাও দিতে চাচ্ছি।
পুরুষের যৌনতা খুবই সীমিত এবং তা মুলতঃ লিঙ্গ কেন্দ্রিক।
এটা এতটাই লিঙ্গ-কেন্দ্রিক যে সেটা ছাড়াও পুরুষের শরীরে আরও যে কোনো যৌন অনুভুতি সম্পন্ন অতি সংবেদনশীল স্থান আছে, সেটার কথাও অনেক পুরুষই জানে না।
এমন কি পেনিসের সব স্থান যে একই রকমের সংবেদনশীল নয়, সেটাও অনেকেই জানে না।
পুরুষের স্তনবৃন্ত যত ছোটই হোক তা যৌনসংবেদনশীল সেরকম একটি অযৌনাঙ্গ যা সঙ্গমকালে পরিবর্তিও হয়।
আবার শ্যাফটের নীচের অংশ যা ফ্রেনুলাম নামে পরিচিত, তা হলো যৌনাঙ্গের অতি সংবেদনশীল একটি অংশ যেটা সারাজীবনেও কারো কারো জানা হয়ে ওঠে না।
এই কথাগুলা বললাম, এটা জানাতে যে পুরুষের জন্য সেক্স এতটাই পুরুষাঙ্গ কেন্দ্রিক যে তাঁরা এর বাইরে অন্য আর কিছুই ভাবতে পারেন না।
আর ধরেই নেন যে নারীদের ক্ষেত্রেও সেরকম কিছু একটাই হবে।
অথচ নারীদের সেক্স ও অর্গাজম এর স্পেকট্রাম অনেক বেশী বিস্তৃত।
ভ্যাজাইনা কেন্দ্রিক ২-৩ রকমের শুধু ইন্টার কোর্সই না অর্গাজমও পেতেই শুধু তাঁরা সক্ষম না, ভ্যাজাইনা ব্যাতিত আরও বেশ কিছু ধরনের ইন্টার কোর্স ও তাঁর সবগুলোর মধ্য দিয়ে অর্গাজম পেতেও তাঁরা সক্ষম।
এসবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো: এনাল, ওরাল, ম্যামারি ইন্টারকোর্স যার সবগুলিতেই তাঁদের জন্য অর্গাজম অর্জন সম্ভব। আর কোনো কিছু ছাড়াও শুধু হাত ধরে থাকার মত কিছু একটা করেও যে তাঁরা “মাইন্ড অর্গাজম” পেতে পারেন, সেকথা আগেও বলেছি।
কথা হলো, এত ভার্সিটাইলিটির পরেও তাঁদের বিরাট একটি অংশের অতৃপ্ত থাকাটা কি দুঃখজনক না?
হ্যাঁ অবশ্যই দুঃখজনক আর সেজন্য মুলতঃ দায়ি পুরুষের নন-কোঅপরেশন (সজ্ঞানে বা অজ্ঞতাজনিত) এবং তা থেকে তাঁদের বিতশ্রোদ্ধ হয়ে পড়াটা।
একজন সঙ্গির সাথে থেকে, তাঁকে প্রতিনিয়ত অর্গাজম অর্জন করিয়েও নারী যখন নিজের অতৃপ্তি নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে সক্ষম, তখন সঙ্গির এবসেন্সে যে পরিস্থিতি সেটার সাথে খাপখাওয়াতে তো তাঁরা আরও সক্ষম হবেনই।
কি হয়, নারী যখন হঠাৎ করে যৌনতা বিবর্জিত জীবন যাপন শুরু করেন?
ক্ষুধামন্দা, অস্থিরতা, হটফ্ল্যাশ, খিচুনি, ইত্যাদি নানা শারীরিক উপসর্গে তাঁরা ভোগেন।
ভাল দিক হলো, এগুলোর প্রায় সবই যেহেতু শারীরিক, দেখা যায় সময় যাওয়ার সাথে সাথে তাঁরা এগুলোর সাথে মানিয়ে নেন।
পুরুষের কেসটা এথেকে অনেক ভিন্ন।
সক্ষম পুরুষ প্রতি দিন সকালে যে মর্নিং ইরেকশন ও কিছুদিন পরপর যে স্বপ্নদোষের মুখোমুখি হন, সেটা তাঁদের কিছুতেই ভুলতে দেয় না যে তাঁরা শুধু যৌনতা না, নারী সঙ্গ ছাড়া কতটা অপূর্ন।
এমনকি পুরুষের জন্য স্বমেহনও নারী ভাবনা ছাড়া প্রায় অসম্ভব।
কিন্তু নারীদের জন্য স্বমেহনের প্রক্রিয়াটাই এমন যে তাতে পুরুষ ভাবনার তেমন কোনোই দরকার পরে না…
যৌনতায় পুরুষের জন্য নারী যতটা অপরিহার্য্য, নারীর জন্য পুরুষ ততটা মোটেও না।
আর তাই আগে থেকে সম্মতি না নিয়ে নারীকে যৌনতার জন্য আহ্ববান করাটা তাঁর জন্য বিরক্তির কারন হওয়া মোটেও অস্বাভাবিক কিছু না………
এগারো
কঠিন প্রশিক্ষন দেয়া হয়, এরকম একটি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষনার্থিদের জন্য নানা কারনে কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজনিয়তা অনুভব করে একবার একজন প্রফেশনাল কাউন্সেলর নিয়োগ দেয়া হলো।
দেখা গেল, কাউন্সেলিং-এর জন্য আসাদের উনি বেশিরভাব ক্ষেত্রেই সমস্যা শোনার পরেই জানতে চান, “মাস্টারবেশন করো?”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বেশিরভাগই উত্তর দেয়, “না তো স্যার।”
– করবা। সপ্তাহে অন্ততঃ একবার হলেও করবা। চার সপ্তাহ পর এসে জানাবা, পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হলো কিনা।
দেখা যায়, অনেকেই তাঁর এই প্রেসক্রিপশন মানতে পারে না, নানা প্রশ্ন করে। যেমন: “এটা তো গুনার কাজ”, “চোখ নাকি খারাপ হয়ে যাবে”, “নানা যৌনরোগ হবে”, ইত্যাদি!!!
উনি সেগুলো ধৈর্য্য ধরে শোনেন এবং মিথ ব্লাস্টিং করে তাঁদের মনের সংশয় দূর করেন।
আমার একবার সুযোগ হয়েছিল, ওনার সাথে আলাপ করার, কেন খুব ডিটেইল এনালাইসিসে না গিয়েই এই উপদেশটা উনি দেন, তা জানার।
উনি বললেন, “এই প্রশিক্ষনার্থিরা যে সব সমস্যা নিয়ে আসে, সেগুলোর বেশিরভাগেরই পিছনের কারন হলো অবদমন জনিত এম্পটি ফিলিং। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, অবদমনটা বাধ্য হয়ে করতে হয় বলেই। আমি ওদের তা থেকে বের করার সাথে সাথেই তাই দেখা যায় বিরাট একটা পরিবর্তন এসে গেছে তাঁদের আচার আচরনে। অবশ্য যাদের তা আসে না, তাঁদের নিয়ে পরে ভিন্ন পদ্ধতি ট্রাই করি। আমার যেতেতু অনেককে একসাথে হেলপ করতে হয়, তাই প্রথমেই তাঁদের অবদমন থেকে বের করে সমস্যাটা সমাধানের চেষ্টা করি। আর এটা তে ভালই কাজ দেয়…”
স্বমেহন কারো কারো ক্ষেত্রে জরুরী নয়। তবে যাদের ক্ষেত্রে এটা প্রয়োজনিয়, তাঁরা যদি তা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়, সেটা নানা কম্পলিকেশন তৈরী করতে পারে।
একটা সময় বাধ্যতামূলক অবদমনের শিকার নারীদের বিরাট একটি অংশই হিস্টিরিয়া নামক একটা অসুস্থতায় আক্রান্ত হতেন। পরবর্তিকালে এটা চিকিয়সায় ক্লিটরাল স্টিমুলেশন কার্যকরি পদ্ধতি হিসাবে চিহ্নিত হবার পর অসুখটা ভোজবাজীর গায়েব হয়ে গেছে মাত্র কয়েক দশকেই।
নারীদের মাস্টারবেশন নিয়ে খুব একটা কোনো মিথ না থাকলেও চার্চের ব্লেসিং নিয়ে ১৭১৬ সালে এক ডাচ থিওলজিস্টের বের করা একটা প্যাম্পলেট পুরুষের স্বমেহন নিয়ে যে যে মিথ ছড়িয়েছিল, মানব সভ্যতা আজও তা থেকে খুব একটা বেরুতে পারে নাই।
বহু রিসার্চ করে সেসব মিথ বহু আগেই ঝাটিয়ে বিদায় করা হলেও এখনো কোটি কোটি পুরুষ সেগুলার কারনে স্বমেহনের মত নির্বিবাদ, নিরাপদ, ঝুকিহীন একটা যৌন প্র্যাক্টিস থেকে বাধ্যতামূলকভাবে বঞ্চিত থেকে নানা সাইকোসোমাটিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে থাকেন।
স্বমেহন নিয়ে থাকা ঐ মিথগুলো ভাঙ্গা এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশী দরকার……
বারো
ছবিটা দেখলেই বুঝবেন, যারা স্বমেহন একদমই ট্রাই করেন নাই, তাঁরাই বরং পপুলেশনের অতি ক্ষুদ্র একটা অংশ।
ট্রাই যে করতেই হবে, এমন না, কিন্তু কথা হলো সেই ট্রাই না করাটা কতটা স্বাধীন সিদ্ধান্ত প্রসুত, আর কতটা ভুল ধারনার বসবর্তি হয়ে, সেটাও জানা থাকা দরকার।
আরেকটা প্রশ্ন হলো, “কেনই বা এঁরা এই অতি স্বাভাবিক ও সহজ যৌন অভিজ্ঞতাটা লাভ করা থেকে বিরত থেকেছেন?”
সম্ভাব্য উত্তর:
– স্বমেহন হলো ওয়ান অব দ্যা লিস্ট মোস্ট ডিসকাসড সেক্সুয়ালিটি। আবার তা একা একা করা হয় বলে এতে অন্য কারো কথা শোনার বা জানার দরকারও পড়ে না। তাই অজ্ঞতা হেতু কেউ কেউ এটাকে ট্রাই করার উপযুক্ত কিছু বলেও ভাবে না।
– স্বমেহন নিয়ে প্রচুর ট্যাবু ও নেগেটিভ প্রচারণা না চাইতেই কানে আসে খুব ছোট থাকতেই। তাই কেউ কেউ খুব ছোট থাকতেই স্বমেহন নিয়ে একধরনের রিপালসিভ এটিচিউডে ভোগেন।
– কেউ কেউ যৌবনের শুরুতেই খুব সহজেই ফুলফিলিং ও এক্সসাইটিং কাপল সেক্সে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের জন্য স্বমেহন তাই খুব একটা কোনো এক্সপ্লোরেশনের সাবজেক্ট থাকে না।
– কেউ কেউ স্বমেহনকে পুরুষের জন্য কেবলই একটা ইজাকুলেশন ম্যাকানিজম এবং নারীর জন্য কেবলই একটা ফিঙ্গারিং এক্ট বলে ভুল করেন। নারী হোক বা পুরুষ, স্বমেহন মূলতঃ একটি কাঙ্খিত পুর্নাঙ্গ সেক্স সেশন। যারা স্বমেহনের এই ব্যাপারটা আবিষ্কার করতে পারেন, তাঁদের স্বাভাবিক যৌথ যৌনজীবনও বরং অনেক বেশী স্পাইসড আপ হয়ে ওঠে এতে করে।
আগের পর্বে এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেছিলাম, স্বমেহনের স্বাভাবিক ফ্রিকোয়েন্সি হলো সপ্তাহে ৩-৭ বার।
তাঁর মানে দৈনিক একবার থেকে শুরু করে এভরি অল্টারনেটিভ ডে-তেও যদি কেউ তা করেন, তা স্বাভাবিক যৌনজীবন হিসাবে গন্য করা যায়।
এর চেয়ে কম হলে তা, হয়ে যাবে অকেশনাল।
আর এ থেকে বেশী হলে তা আনম্যানেজেবল। কারন সেক্ষেত্রে তা দিনে একবারের চেয়েও বেশী, অর্থাৎ থিওরেটিকালি ১২ ঘন্টা বা তারও কম বিরতিতে ঘটা।
কথা হলো, রেগুলার সেক্স প্র্যাক্টিস এত কম বিরতিতে কালে ভদ্রে হতে পারে কিন্তু নিয়মিত হওয়া কি আসলেই খুব সম্ভব?
না সম্ভব না।
কারন, মনে রাখতে হবে স্বমেহন কেবলই কোনো ইজাকুলেশন বা ফিঙ্গারিং ম্যাকানিজম না। বরং তসলিমা নাসরিনের ভাষায় এটা হলো “নিজেই নিজের প্রেমিক (বা প্রেমিকা) হয়ে উঠবার একটা প্রক্রিয়া”। আর তা যখন ঘটে, এটা হুট করে শুরু ও শেষ করার মত কোনো ব্যাপার থাকে না।
এটা হয়ে পড়ে একখানা দীর্ঘমেয়াদি সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত কার্যক্রম।
মজার ব্যাপার হলো, বেশীরভাগ স্বমেহন আর কেবলি কোনো সেলফ প্লেজারিং-এ সীমাবদ্ধ ব্যাপার থাকে না।
এটা হয়ে দাঁড়ায় কোনো না কোনো রিয়েল এক্সপেরিয়েন্সের সিমুলেশন…
বিস্তারিত বলছি, পরের পর্বে।
সাথে থাকুন………
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – পঞ্চম পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – ষষ্ঠ পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – সপ্তম (শেষ) পর্ব