প্রসঙ্গ : পরকীয়া – প্রথম পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – দ্বিতীয় পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – তৃতীয় পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – চতুর্থ পর্ব
এগারো
গতপর্বটা পড়ে অনেকেই কনফিউজড, আমি কি পরকীয়ার পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করলাম?
না, তা না।
যেটা বলেছি, সেটা জানা কিছু ফ্যাক্ট থেকেই বলেছি।
আর হ্যাঁ, আমি মূলত পরকীয়ায় ঝোকা সেইসব পুরুষদের নিয়েই কথা বলে যাচ্ছি যারা – সংসার ছাড়বে না এবং সমাজের চোখে হ্যাপিলি ম্যারেড।
পরকীয়াটা তাঁদের কোনো এক বা একাধিক ডিফিকাল্টি কমুনিকেট করতে পারার অপারগত প্রসুত।
যারা লুইচ্চা টাইপের, মানে ঘাটে ঘাটে মধু খেয়ে বেড়ানোর স্বভাব যুক্ত, তাঁরা আসলে সিক। মেন্টালি হ্যান্ডিক্যাপড। এদের জন্য লেখালেখি না, চিকিৎসা দরকার।
ওদের নিয়ে তাই কিছু লিখছি না।
যাদের নিয়ে বলছি, তাঁরা কমুনিকেশন ডিজএবিলিটির জন্য পরকীয়াটা শুরু করলেও খুব শিঘ্রই বুঝে যায় কাজটা মোটেও সহজ না।
যার সাথে এটা হচ্ছে, সেও যেহেতু একজন মানুষ, তাঁর কাজ কেবলই প্রেম করা না মানুষ হিসাবে সেও নানা লিমিটেশনের মধ্য দিয়ে যায়।
তাঁর সাথে প্রেম করতে গেলে ঐসব লিমিটেশনগূলোও ভাগাভাগি করে নিতে হয়।
প্রেম মানে শুধুই মিষ্টি মিষ্টি কথা না, ঝগড়া-ঝাটি, মান-অভিমানও তাঁর অংশ।
আর সময় দেয়া, টাকাপয়সার স্রাদ্ধ – এসব তো আছেই।
এসব যখন শুরু হয়, একটা সময় বেশিরভাগ পুরুষই বোঝেন, স্ত্রীর যে ব্যাপারগুলোকে তিনি অপূর্নতা ভেবে অন্যত্র গিয়েছিলেন, সেখানেও অনেক কিছুই অপুর্ন থাকে। অনেক অপ্রাপ্তি থাকে।
তাই আগে স্ত্রীর বিরুদ্ধে যতটা অভিযোগ মনে মনে বোধ করতেন, তাঁর অনেক কিছুই তাঁরা অতিক্রম করতে পারেন।
প্রশ্ন হতে পারে, তাঁরা কি ফেরেন?
স্ট্যাডি বলছে, বেশিরভাগই ফেরেন, অন্তত ফিরতে চায়।
কিন্তু যে সম্মানের জায়গাটা খুইয়ে ফেলেছে, তা আর ফিরে পাবেন না ভেবে কেউ কেউ আবার সেভাবে ফেরেন না। আবার পুরোপুরি চলেও যান না।
এঁরা পড়ে না ঘরকা না ঘাটকা পরিস্থিতিতে। মাঝামাঝি থেকে যায় দমবন্ধ করা এক পরিস্থিতিতে।
আর এমন কেউ কেউ তো সব জায়গায় থাকে, যারা নিজের পায়ে কুড়াল দিয়ে অন্যের যাত্রা ভাঙ্গা টাইপের।
এরাও বোঝে ফিরলেই ভাল হতো কিন্তু মেল-ইগোর কাছে আত্মসমার্পন করে এরা।
সবগ্রুপের ফলাফল হয়তো এক না, কিন্তু তাঁদের একটা ব্যাপার নিয়ে অনুভুতি কিন্তু এক। স্ত্রীকে যতটা মূল্যহীন বা আনস্মার্ট বলে আগে তাঁরা গন্য করতেন, একটা পরকীয়া এবং সে সম্পর্কিত কঠিন অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্য দিয়ে যাবার পর তাঁদের সেই ধারনায় বড় ধরনের পরিবর্তন সাধারনতঃ ঘটে।
বারো
আপনি যাকে ভালবাসেন, তাঁর সাথে আর যাই করেন, সে বিব্রত হবে – এমন কিছু নিশ্চয়ই আপনি করবেন না।
আর যদি তা করেনই, আপনার শিক্ষাদিক্ষা যাই হোক, টাকাপয়সা যাই থাকুক – আমি ধরে নিতে বাধ্য হবো আপনি কালচারালি পিছিয়ে আছে।
ঘটনা হলো, আমি যতগুলা পরকীয়ার ঘটনা জানি, কোনোটারই আদ্যপ্রান্ত জানি না।
এটা জানা সম্ভবও না।
ক-এর শুরুটা জানলেও খ-এর জানি মাঝের ঘটনাবলি। আবার গ-এর হয়তো জানি শেষটা, মানে পরকীয়ার কারনে পারিবারিক সম্পর্কোন্নয়নের ঘটনাবলি।
তাই, গল্প লিখবার সময় কোনো একজনের ঘটনাই যে লিখেছি, এটা ভাবার কোনো কারন নাই।
অবশ্য একথাও সত্য যে পরকীয়ার ব্যাপারগুলাতে অনেকেরই মিল থাকে।
পর্যায়গুলো হয় প্রায়ই বেশ কাছাকাছি।
তাই ক-এর মাঝের অংশ খ-এর কাছাকাছি বা শেষাংশ গ-এর কাছাকাছি হয়ে যাওয়াটা খুবই সম্ভব।
আর তা হবেই বা না কেন?
প্রথমাংশে সচরাচর যেটা হয়, তাতো হলো সেই একই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল নয়তো বিয়ের ফলস প্রমিজ।
আবার দ্বিতীয় অংশে চলে লুকিয়ে চুরিয়ে অভিসার।
পরকীয়ায় প্রকাশ্যে যা করা আসলে বেশ অসম্ভব একটা ব্যাপার।
আর শেষাংশে বোরডমে আক্রান্ত অথবা ক্লান্ত ও স্ট্রেসড আউট হয়ে ঘরের ছেলের ঘরে প্রত্যাবর্তন, অবশ্য তাঁর আগে থেকেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কিছু মাতামাতির শুরুকরা।
এক ঢিলে দুই পাখি মারা আরকি…
প্রেমিকাকে বিচ্ছিন্নতার আর্লি ওয়ার্নিং দেয়াও হলো, আবার পরিবারের সাথেও আবার র্যাপো বিল্ডিং শুরু করা গেল যে, “তোমরাই আসলে সব!!!
এখন বলেন, কোন বিচারে আপনাকে আমি কালচারালি অগ্রসর বলে ভাববো?
যখন আপনি এমন একটা গল্প শুনলেন, যার পুরোটা তো নয়ই, খুব বেশী হলে আংশিক কাহিনী আপনার প্রেমিকার হতেও পারে অথচ সেই গল্পের পুরোটাই আপনি আপনার প্রেমিকার কাহিনী ধরে নিয়ে তাঁকে এমন ভাবে জেরা করলেন, যে সে ভয়ানক বিব্রত বোধ করলো?
যাকে এটা করলেন, একবার ভেবে দেখেছেন, সে কতটা আপনার প্রেমিকা আর কতটা অন্যকিছু?
যারা ভাবে প্রেমিকা তাঁর ক্রীতদাসী বা যৌনদাস এবং তাঁর কথায়ই তাঁকে উঠবস করতে হবে – তাঁদের উচিৎ না কোনো প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো।
আর সেই প্রেমটা যদি হয় একটা ডেস্টিনেশন বিহীন পরকীয়া প্রেম, তাহলে তো তাতে আরও জড়ানো উচিৎ না……
অবশ্য হ্যাঁ, এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তাঁর কিছু উপকারিতাও কিন্তু আছে।
নারীর জন্য এটা একটা সুযোগ করে দেয় প্রেমিকের মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ানো লোকটার স্বরূপ বুঝবার।
কিন্তু কথা হলো, সেই সুযোগ কি আর সে নেবে?
কিভাবে নেবে?
প্রেমে ডুবে থাকা নারীর চেয়ে বেশী “চোখ থাকিতে অন্ধ” তো জগতে খুব বেশী কেউ নাই।
হেই লেডিজ, পুরুষরা কিন্তু এটা জানে।
খুব ভাল করেই জানে।
আর জানে বলেই এটারর যথেচ্ছা স্বদ্যবহার তাঁরা করে যায়, যতদিন সম্ভব!!!
🙁 🙁 🙁
তেরো
আজ শুনাই ইনক্লুসিভ রিলেশনশিপের কথা।
যারা এটা করে, তাঁরা এটাকে পরকীয়া বলে মানতে রাজি নন।
তাঁদের ডেফিনেশন অনুযায়ী পরকীয়ার মধ্যে একটা গোপনিয়তা অথবা চিটিং-এর এলিমেন্ট থাকে।
ইনক্লুসিভ রিলেশনে সেটা থাকে না।
পার্টনার বা স্পাউসকে জানিয়েই এই রিলেশনশিপটি হয়।
তা হলেও, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এটা পরকীয়ার অন্যসব শর্ত কিন্তু পুরোন করে।
যেমন সম্পর্কের শুরুটা হয় লুকোচুরির মধ্য দিয়ে, এবং প্রায় সময়েই একজন বিবাহিত ব্যাক্তি দ্বারা বিপরীত লিঙ্গের একজনকে প্ল্যান করে আকৃষ্ট করে অথবা প্রেমের জালে ফেলে।
সম্পর্কটা যখন পুরোপুরি প্রেমের রূপ নেয়, তখন ব্যাপারটা স্পাইউসের সাথে শেয়ার করে তা চালিয়ে যেতে তাঁর অনুমতি নেয়া হয়।
এবং টাইম শেয়ারিং করে সেটা চালিয়েও যাওয়া হয়।
একটি পরকীয়া অনুমতি পাবার সাথে সাথেই ইনক্লুসিভ রিলেশন বলে গন্য হবার কোনো কারন দেখি না…
কারন দেখতে হবে, স্পাউস এই অনুমতিটা দিচ্ছেন ক্যানো?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা তাঁকে দিতে হয় পরিবারটা টিকিয়ে রাখতে, অর্থাৎ সামাজিক কারনে। তাই এটাকে যতটা ভলান্টারি মনে হয়, আসলে তা কিন্তু নয়। এর মধ্যে একধরনের কমপালশন যে কাজ করে, এতে যে বাধ্য হয়ে মেনে নেয়ার একটা ব্যাপার থাকে, সেটা না মেনে উপায় থাকে না।
কারন সাধারনতঃ এই সম্মতিটা দিতে হয়, বাধ্য হয়েই।
আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা করেন নারী এবং বিনিময়ে নিজের কোনো অধিকার থাকে না নিজের জন্য একটা ইনক্লুসিভ রিলেশনে ঢুকবার।
ইনক্লুসিভ রিলেশনগুলি তাই এক অর্থে নারীর জন্য নিপিড়নের আরেক হাতিয়ার।
তবে হ্যাঁ, কোনো কাপল যদি আগে ঐক্যমতে আসতে পারে যে তাঁদের মধ্যে উত্তাপ ফুরিয়ে গেছে কিন্তু ইন্টিম্যাসি, বন্ধুত্ব, নির্ভরতা এখনো আগের মতই আছে – তাই শুধু উত্তাপহীনতার জন্য বিচ্ছিন্ন হবার দরকার নাই।
বরং সম্পর্কে থেকেই তাঁরা নিজেদের জন্য, ফ্রি টু ফাইন্ড আউট ডিজায়ারেবল পার্টনার যে তাঁদের প্যাশনের চাহিদাটা পুরন করবে, হয়তো এরেঞ্জমেন্টটা ওয়ার্কেবল হতেও পারে।
এদেশে আমি এখনো এরকম কাউকে পাই নাই, তাই এদেশে এটা কতটা কাজ করবে জানি না। বিন্তু বিদেশে এরকম ইনক্লুসিভ রিলেশনে থাকাদের কারো কারো বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, ছোটখাটো কিছু ম্যানেজবল রুলস মেনে এটাকে কার্যক্ষম করাটা খুব একটা কঠিন কিছু না…
অবশ্য একজন পার্টনারের কিছু একটা শারীরিক অক্ষমতার কারনে এদেশেও যে এর কাছাকাছি একটা এরেঞ্জমেন্ট ছিল না, তা নয়।
কিন্তু সেগুলা পুরোপুরি ভলান্টারি ছিল না বলে তা পুরোপুরি ইনকলুসিভ রিলেশন বলে গন্য হবার উপযুক্ত না………
চৌদ্দ
আসুন এখন শুনি, একটি পরকীয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষটি কে?
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এটা হলো শিশুরা:
– তা তাঁরা যত ছোটই থাকুক না কেন!
– ঘটনা তাঁদের কাছে যত গোপন করেই রাখা হোক না কেন!!
স্ট্যাডি তে পাওয়া গিয়েছে, ৩-৪ বছরের শিশুও মা বা বাবার পরকীয়ার শুরুতেই তা ধরতে পারে, নিজেদের প্রতি থাকা আচরনের প্যাটার্নে পরিবর্তন, সময় পাওয়ায় হেরফের, এবং গন্ধের তারতম্য থেকে।
তাঁদের প্রাথমিক যে রিএকশনটা হয়, তা হলো, নিরাপত্তাহীনতা।
যত ছোট বয়সে তাঁরা এই নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত হয়, তত বেশী ডীপরুটেড হয় সেটার ইমপ্যাক্ট।
কেউ কেউ সারাজীবনও বয়ে বেড়ায় তা।
ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে ইফেক্টের তারতম্য হয়।
ছেলেরা অবিশ্বস্ততাকে স্বাভাবিক একটা আচরন গন্য করে বেড়ে ওঠে এবং এদের মধ্যে পরবর্তিতে পরকীয়ার চর্চ্চা বেশী দেখা যায়।
মেয়েরা সম্পর্ক ব্যাপারটা নিয়ে কনফিউশনে চলে যায়। অনেককেই দেখা যায়, সারাজীবনেও আর রিলেশনশিপ ব্যাপারটা নিয়ে স্বাভাবিক হতে পারে না।
সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁরা, যারা বাবা বা মায়ের পরকীয়ার ঘটনা জানার পর, আদিষ্ট হয়, অন্যদের কাছে ব্যাপারটা গোপন রাখতে।
এঁরা পরবর্তি জীবনে শুধু সম্পর্কই না, অন্য অনেক ব্যাপারেই কনফিউশন দূর করতে পারে না কখনোই আর।
সমাধান কি?
১) পরকীয়ায় না জড়ানো।
২) প্রসপেক্টিং-এর কারনে বিবাহের টার্মিনেশন স্টেজে একান্তই যদি কোনো সম্পর্কে ঢুকতে হয়, ব্যাপারটা সন্তানদের সাথে যতটা সম্ভব খোলাখুলি ভাবে আলাপ করে নেয়া উচিৎ।
যারা সেপারেটেড তাঁদের জন্য কাজটা খুব কঠিন হওয়ার কথা না……