যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – প্রথম পর্ব
চার
এই সিরিজটা লেখার মূল উদ্দেশ্য, এমন কিছু তথ্য জানানো যেন সাইজ, পারফর্মেন্স, ফ্রিকোয়েন্সি সম্পর্কিত অকারণ এংজাইটির সোর্স সম্পর্কে পাঠক সচেতন হন এবং সেই সচেতনতার মধ্য দিয়ে সমস্যা নিরসনে উপায় খুজে পান।
পাঠকের রিএকশন দেখে বুঝলাম, আমি যা যা লিখছি, তাঁর বাইরে এংজাইটির আরও কিছু সোর্স আছে। যেমন:
– গার্থ ম্যাটারস
– ডিউরেশন ম্যাটারস, ইত্যাদি…
গার্থ ম্যাটারস কিনা, তা নিয়ে দুইটা স্ট্যাডির রেজাল্ট পেলাম, যা ইওরোপে পরিচালিত হয়েছিল।
সেখানে রেসপন্ডেন্টদের চারটা অপশন দেয়া হয়:
১) লেন্থ ম্যাটারস মোর দ্যান গার্থ,
২) গার্থ ম্যাটারস মোর দ্যান লেন্থ,
৩) বোথ ম্যাটারস ইকুয়ালি,
৪) নাইদার লেন্থ নর গার্থ ম্যাটারস। সমথিং এলস ম্যাটারস…
দুইটা স্টাডিতেই দেখা গেছে বেশির ভাগ রেসপন্ডেট বেছে নিয়েছে অপশন # ৪, অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, বেশির ভাগ নারীর কাছেই লেন্থ বা গার্থ কোনোটাই আসলে ম্যাটার করে না।
যারা # ৪ বেছে নেন নাই, তাঁদের বেশিরভাগই অবশ্য # ২ বেছে নিয়েছেন।
এতে যা বোঝা যায়, তা হলো:
– বেশীরভাগ নারীর কাছেই লাভ মেকিং-এর জন্য সাইজ কোনো ব্যাপার না।
– কারো কারো জন্য সাইজ ম্যাটার করে।
– যাদের জন্য সাইজ ম্যাটার করে, তাঁদের জন্য লেন্থের চেয়ে গার্থ বেশী ইম্পর্টেন্ট।
গবেষকগন অবশ্য এই ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন যে, দৈর্ঘানুযায়ি সাধারন ভাবে নারী পুরুষের জননাঙ্গের মাপে ভ্যারিয়েশন খুব বেশী না বলেই যারা সাইজকে প্রাধান্য দেন, তাঁদের জন্য লেন্থ নিয়ে সাধারনত খুব একটা কোনো কনসার্ন থাকে না।
কারন ভ্যাজাইনার স্বাভাবিক ডেপথ আর পেনিসের যথেষ্ট খর্বাকৃতিও বেশ কাছাকাছ।
তবে গার্থের ব্যাপারে অপশন থাকলে সেটা পরখ করার একটা অবদমত ইচ্ছা থেকেই এই রেসপন্স আসা স্বাবাভিক, যেটাকে স্পন্টেনিয়াস প্রেফারেন্স হিসাবে গন্য না করে অপচুনিটি রেসপন্স হিসাবে গন্য করার সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে এই অপিনিয়নের উপর ভিত্তি করে করা জেনারালাইজেশনের ভ্যালু কমে যায়।
বিশেষ এক শ্রেনীর নারীদের কাছে সাইজ এর মূল্য যে থাকতেই পারে, সেকথা কিন্তু আগেও বলেছি। আসুন এস্টিমেট করা যাক, এদের হার কেমন হতে পারে।
পশ্চিমে পরিচালিত সাম্প্রতিক সমিক্ষার সবচেয়ে অপটিমিস্টিক এস্টিমেট বলে, সেখানে ৫৫% নারী অর্গাজম পেয়ে থাকেন।
ধরে নেয়া যায়, এদের বেশির ভাগই ভ্যাজাইনাল ও ক্লিটোরাল উভয় অর্গাজমই পান।
সেক্ষেত্রে এটা হবে মোট নারীর ৩০%। অর্থাৎ, বাকি ২৫% এর অর্ধেকের মত, অর্থাৎ মোট নারীর ১০-১৫% যদি কেবল ভ্যাজাইনাল অর্গাজমিক হতে পারেন। হারটা এ থেকে বেশী হবার সম্ভবনা খুবই কম।
আবার এদের প্রায় সবারই লেন্থ বিষয়ে তেমন কোনো অভিযোগ থাকার কথা না।
গার্থ নিয়ে যদি কোনো এক্সপেকটেশন থাকেও, সেটা এদের অর্ধেকের বেশির হবার কথা না।
সেইক্ষেত্রে বোঝা যাচ্ছে মাত্র ৫-৭% নারীর জন্য গার্থ কেবলই একটা প্রেফারড অপশন, কিন্তু তেমন সিরিয়াস কোনো কমপ্লেইন না, যে জন্য বিয়ে বা সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে পারে।
এরপরেও কি আমরা “গার্থ ম্যাটার্স” বলে এমন কোনো অকারণ উৎকণ্ঠা চালিয়ে যাবো, যেটাকে “পেনাইল এংজাইটি” বলে? এটার কোনোই অর্থ হয় না……
(ডিউরেশন নিয়ে পরে লিখছি। সাথে থাকুন…)
পাঁচ
বন্ধু বললো, “এই সিরিজে যেভাবে ফিমেল অর্গাজম হাইলাইটেড হচ্ছে, নারীরা যদি নিজেদের ডেপ্রাইভড ভাবা শুরু করে তাহলে তো বিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়ে যাবে…”
আমি বললাম, “না তা হবে না দুইটা কারনে: ১) অর্গাজম দেয়াটা যে সঙ্গির কাজ না, নেয়াটা নারীর কাজ – সে কথা খুব ভাল ভাবে বুঝিয়ে বলেছি। মূলতঃ সঙ্গির কাজ হলো চাহিদানুযায়ি কো-অপারেট করা। তাই শুধু কো-অপারেট করা না করার জন্য একজনকে অক্ষম বলে সম্পর্ক টার্মিনেট করার সুযোগ কম। ২) নীচের গল্পটা শুনুন…”
বেশ কিছুদিন ধরে বয়ফ্রেন্ডের সাথে স্টিডি যাচ্ছেন এমন এক ফেবু বন্ধু সেদিন জানালেন, তাঁর এই সম্পর্কটা তাঁর জন্য সেক্সুয়ালি এ যাবতকাল এক্সপেরিয়েন্স করা সব সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ফুলফিলিং, সবচেয়ে বেশী সাটিসফাইং বলে মনে হচ্ছে।
জিজ্ঞাসা করলাম, “মানেটা কি দাড়ালো? এই রিলেশনে, আর ইউ গেটিং অর্গাজম রেগুলারলি?”
– না তা না, শুধু ঐটা ছাড়া।
– ঐটা ছাড়াও সেক্সুয়ালিটি ফুলফিলিং, সাটিসফাইং হয় নাকি?
– হবার কথা না কিন্তু তারপরেও হচ্ছে, বিশেষ এক কারনে।
– কারনটা কি বলা যাবে?
– আমি যে তাঁর কাছে অর্গাজমের জন্য কো-অপারেশন চাই নাই, তা না, কিন্তু দেখলাম, চাহিদার ব্যাপারটা তাঁর জন্য এতটাই বাড়তি এংজাইটির সোর্স হিসাবে কাজ করছে যে তাঁর নরমাল পারফর্মেন্সও হ্যাম্পার্ড হয়ে যাচ্ছে। কাজের মধ্যে যা হচ্ছে, তা হলো – আমার ঘরতো শুন্য থাকছেই তাঁর ঘরেও কোনো ফসল উঠছে না। কয়েকদিন ট্রাই করে যখন বুঝলাম, তাঁকে দিয়ে এটা করানো সম্ভবই না, হাল ছেড়ে দিয়ে যতটা পাচ্ছি, তা নিয়েই সাটিস্ফাইড হওয়াটা রপ্ত করে নিলাম।
– সেটা কি রকম?
– তাঁর সমাপ্তির সাথে ফেইকিং করে যেন সে খুশি মনে উঠে যায়। আর এরপর সে ফিরে আসার আগেই নিজে নিজে বাকিটা শেষ করে।
– এরপরেও বলবা, সেক্সুয়ালি রিলেশনটা “সবচেয়ে বেশী ফুলফিলিং, সবচেয়ে বেশী সাটিসফাইং”?
– রিলেটিভলি, স্টিল ইয়েস। কারন অন্যগুলায় তো এটুকুও ছিলা না…
প্রসঙ্গটার অবতারণা করলাম এটা জানাতে যে এত এত নারী ইনঅর্গাজমিক লাইফ লীড করেও সাটিসফাইং ও ফুলফিলিং সেক্স-লাইফ কাটাচ্ছেন কিভাবে? সুখি জীবন যাপনও করছেন কি করে?
এটা তাঁরা করছেন নিরুপায় হয়েই। তবে জেনে রাখুন, আরেকটু উৎসাহ, আর একটু কো-অপারেশন এই পরিস্থিতির অনেক উন্নতি ঘটাতে পারে……
ছয়
এবার শোনাই ডিউরেশন কতটা ম্যাটার করে, সেটা…
এই ব্যাপারটা প্রসঙ্গতঃ আংশিক ভাবে আগেও এসেছিল।
তখন লিখেছিলাম, সমিক্ষা বলছে, আমেরিকার ৭০% পুরুষ পারফর্মেন্স এংজাইটিতে ভোগে যাদের মধ্যে আসলে ৩০% পুরুষ কোনো না কোনো প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশনের সংজ্ঞা পুরন করে।
তারমানে, বাকি ৪০% এর পর্যাপ্ত ডিউরেশন থাকার পরেও তাঁরা নিজেদের ইনএডিকুয়েট ভাবে।
এদের জন্য ডিউরেশন আসলে ম্যাটার করে না।
যেটা ম্যাটার করে, তা হলো, পার্টনারের সাথে ডিউরেশন সম্পর্কিত কমুনিকেশন।
বেশিরভাগ মানুষের জন্যই সেক্স নিজেই যথেষ্ট এংজাইটি পুর্ন একটা ব্যাপার। সেখানে যদি কমুনিকেশনের ব্যাপারটা খুব স্মুথ না হয়, তাহলে তা এই এংজাইটি আরও বাড়াতেই পারে।
এক্টিভিটির শুরু থেকেই যদি উভয়ে লাজ-লজ্জা-সংশয় দূরে রেখে কন্টিনিউয়াসলি কমুনিকেট করে যেতে পারে, কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে তা নিয়ে, তাহলে এই এডিকয়েসি থাকার পরেও পারফর্মেন্স এংজাইটিতে ভোগার সমস্যাটা অতিক্রম করা সম্ভব।
তবে যারা, মানে বাকি ৩০%, আসলেই প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কেসটা একটু ভিন্ন।
ভিন্ন হলেও হতাশার কিন্তু না।
হতাশার না, কারন, যেসব কারনে প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশনের ঘটনা ঘটে, সেগুলার বেশির ভাগই ডায়াগোনাইজেবল ও ট্রিটেবল। যেমন:
১) নতুন পার্টনারের সাথে প্রথম প্রথম এটা ঘটতেই পারে। সেক্ষেত্রে কিছুটা সময় দিলেই এ অবস্থার নিজে থেকেই উত্তরণ ঘটে।
২) পার্টনার নতুন হোক বা পুরাতন, পরিবেশটা যদি নতুন হয়, তখনও এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটাও একটু সময় নিয়ে সচেষ্ট হলে অতিক্রমন সম্ভব।
৩) ডিপ্রেশন, এংজাইটি, ইত্যাদি মানসিক সমস্যার কারনেও এটা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগে থেকেই সঙ্গি ডায়াগোনাইজড থেকে থাকলে ঔষধ সেবনোত্তর বেস্ট মুড টাইমটিকে সিলেক্ট করা উচিৎ লাভ মেকিং-এর জন্য। এক্ষেত্রে বেস্ট মুড টাইমটি বোঝা ও জানার জন্য চিকিৎসকের উপদেশও নেয়া বাঞ্চনীয়।
৪) মদ ও মাদক সেবন, এমনকি অধিক ধুমপান বা অধিক চা-কফি পানের কারনেও টেম্পরারি ইরেক্টাইল ডিফিকাল্টি ও প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশনের ঘটনা ঘটতে পারে। এরকম কিছু হয়ে থাকলে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫) যদি এর কোনোটাই না ঘটে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়া উচিৎ, যিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুঝতে পারবেন যে এ জন্য অন্য আর কোনো পরিস্থিতি বা শারীরিক বা মানসিক বা হরমোনাল কোনো অবস্থা দায়ি কিনা। এসব কারনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো আনডায়াগোনাইজড কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা, যৌনাঙ্গের অতি সংবেদনশিলতা, জন্মগত বা দুর্ঘটনাজনিত কোনো ত্রুটি, অন্য কোনো অসুস্থ্যতা বা অসুখ-বিসুখ ইত্যাদি (যেমন: উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, গাউট, এইসব…)।
এরপর সমস্যা অনুযায়ি চিকিৎসা নিয়ে ডিউরেশন বাড়ানো সম্ভব। এসব চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো, সমস্যা অনুযায়ী প্রেসক্রাইব করা পেইন কিলার বা এন্টি ইনফ্লেমাটরি ড্রাগ, এন্টি ডিপ্রেসেন্ট, অসুখ স্পেসিফিক অন্য কোনো চিকিৎসা বা সংবেদনশীলতা কমানোর স্প্রে, কনডমের ব্যবহার ইত্যাদি।
তবে খুব সিগনিফিকেন্ট সেরকম কোনো কিছু পাওয়া না গেলেও হতাশ হবার কিছু নাই।
সেইক্ষেত্রে, বিশেষ কিছু আসনে বিশেষ কিছু টেকনিক ব্যবহার করে ধৈর্য্য ধরে দুজনেরই কিছুদিন অনুশীলন চালিয়ে অবস্থার লক্ষ্যনীয় উন্নতি ঘটতে দেখা গেছে।
সার কথা হলো, ডিউরেশন ম্যাটার করে কিন্তু পর্যাপ্ত ডিউরেশন থাকা, বা না খাকলেও তা অর্জন করাটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব বড় কোনো সমস্যা নয়।
এ থেকে উত্তরনের জন্য দরকার পার্টনারের সাথে কমুনিকেশন, তাঁর সহযোগিতা ও দরকার মনে হলে চিকিৎসিকের সরনাপন্ন হওয়া………
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – তৃতীয় পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – চতুর্থ পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – পঞ্চম পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – ষষ্ঠ পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – সপ্তম (শেষ) পর্ব