প্রসঙ্গ : পরকীয়া – প্রথম পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – দ্বিতীয় পর্ব
ছয়
“এত সহজ কারণ (পরকীয়ার)? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমগুলো যে পরকীয়াই। মানসিক সঙ্গের জন্য কি (পরকীয়ায়) জড়ানো সম্ভব নয়?”
প্রশ্নটা একজন গুনি লেখক ও কবির।
তাঁর নিজেরও চমৎকার লেখালেখি আছে “সাহিত্যে পরকীয়া” নিয়ে।
আমার উত্তর:
সঠিক সময়ে দুজন সঠিক মানুষের মধ্যে যা ঘটে, তা হলো – প্রেম।
সঠিক সময়ে দুজন ভুল মানুষের মধ্যে যা ঘটে, তা হলো – অপ্রেম।
আর ভুল সময়ে দুজন সঠিক মানুষের মধ্যে যা ঘটে, তা হলো – বড়প্রেম।
বড়প্রেম কেন? কারন, তা যে একসময় দূরে ঠেলে দেয়…
সব না হলেও পরকীয়ার ক্ষুদ্র একটা অংশ কিন্তু আবার এই ধরনের বড় প্রেম।
তারমানে, সেখানকার পাত্র-পাত্রী সঠিক, তাঁদের মানসিক সঙ্গ সঠিক, তাঁদের ইন্টিম্যাসি-প্যাশন-কমিটমেন্ট সঠিক।
কিন্তু সময়টা ভুল।
ভুল, কারন এদের অন্ততঃ একজন, যেকোনো কারনেই হোক, আগে থেকে বিবাহিত।
আর তাই এসব প্রেমে বাঁধা আসে।
এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে গিয়ে এই প্রেমগুলি বড়প্রেমে পরিনত হয়।
আর তা নিয়ে দীর্ঘদিন চলে বন্দনা: সাহিত্যে, শিল্পে, লোকমুখে………
অবশ্য এর ব্যতিক্রমও ঘটে।
কখনো কখনো দুইজন সঠিক মানুষ ভুল সময়ে মুখোমুখি হয়েও কাছে আসা থেকে স্বেচ্ছায় বিরত থাকে।
সেই সাক্ষাৎগুলো বড়প্রেম তো দুরের কথা, প্রেমেও পরিনত হয় না কখনো।
যুদ্ধ, ব্যবসা এবং প্রেম পলায়নপর মানুষের জন্য নয়, বড়প্রেম তো আরও দুরের বিষয়!!!
সাত
পুরুষের পরকীয়ার সাথে নারীর পরকীয়ার প্রধান পার্থক্যই হলো উদ্দেশ্যে ও সম্পর্কে ঢোকার পদ্ধতিতে।
আগেই বলেছি, পুরুষের পরকীয়ায় ঢোকার প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে মূলতঃ সিস্টেম চেক যেটা কমুনিকেশনের অনীহায় স্ত্রীর সাথে করা যাচ্ছে না।
তাছাড়া, নিজের বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট রেখেই বেশির ভাগ পরকীয়াগুলো পরিকল্পিত হয় বলে এগুলোর স্থায়ীত্বের ব্যাপারেও তাঁদের খুব একটা আশাবাদ থাকে না। সম্পর্কগুলোকে পুরুষ অস্থায়ী হিসাবেই ধরে নেয়।
এসব কারনে পার্টনার নির্বাচনেও পুরুষ খুব একটা বাছ বিচার করে না।
কিন্তু নারীরা যখন পরকীয়ার জন্য পার্টনার বেছে নেই, এমন কাউকেই সিলেক্ট করতে চায়, যার সাথে বাকিটা জীবন কাটানো যাবে।
পুরুষের পরকিয়ায় ইমোশনের ব্যাপার থাকে কদাচিতই। কিন্তু নারীর পরকিয়া বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই হয় ইমোশনে ঠাসা!
তাছাড়া, বর্তমান সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে যাবার ব্যাপারে কোনো এক ধরনের মনস্থির করেই বেশীরভাগ নারী সঙ্গি নির্বাচনে প্রবৃত্ত হয়।
এসব কারনে তাঁদের পরকীয়ায় তাঁরা সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সময় নেয় পুরুষের চেয়ে অনেক বেশী।
বিবাহিত পুরুষদের পরকীয়াগুলো বেশিরিভাগ ক্ষেত্রেই যেখানে ফুলিং এরাউন্ড হিসাবে গন্য করার উপযুক্ত, বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে বেশিরিভাগ পরকীয়াই সেখানে স্থায়ী সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রসপেক্টিং হিসাবে গন্য করার উপযুক্ত।
এর বাইরে নারীরা যে ফুলিং এরাউন্ডের জন্য কখনোই পরকীয়া করে না, তা না, কিন্তু এই প্রসপেক্টিং-এর চেয়ে সেগুলা সংখ্যায় হয় অনেক কম।
তাই একজন নারীর পরকীয়ার আহ্ববানে সাড়া দেয়ার অর্থই হলো এই ব্যাপারে সম্মতি জানানো যে সম্পর্কটা স্থায়ী করার অপশনেও তাঁর সম্মতি আছে।
কিন্তু পুরুষদের পরকীয়ায় সাড়া দেয়াটা সেই বার্ডন থেকে মুক্ত।
নারী তার পরকীয়ার সঙ্গি সম্পর্কে একবার যদি বিরূপ হয়, তাঁকে আবার ফেরত নেবার সম্ভবনা অতিক্ষীণ। কিন্তু পুরুষের জন্য পরকীয়ার সঙ্গিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বারবার ফিরিয়ে নেয়ার ঘটনা বেশ কমনই…
আট
পরকীয়ার সম্ভবতঃ সবচেয়ে বাজে কম্বিনেশন হলো ডাবল-পরকীয়া।
অর্থাৎ দুইজন বিবাহিত ব্যক্তি যখন পরকীয়া সম্পর্কে আসেন।
সাদা চোখে এটাকে অনেকের কাছে বেস্ট কম্বিনেশন মনে হতে পারে কারন তাঁরা ইকুয়াল ফুটিং-এ আছেন। স্ট্যাটাস অনুযায়ী ঘটনাটা তা হলেও উদ্দেশ্যর দিক দিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু ঘটনা তা হয় না।
মূলতঃ ফানস সেক যে রিলেশনগুলি হয়, দেখা যায়, সেখানেও বিবাহিত পুরুষ সেটাকে তাঁর জন্য একটা প্রয়োজন হিসাবেই উপস্থাপন করে।
আর এটা জাস্টিফাই করতে স্ত্রীর বদনাম না করলেও অন্ততপক্ষে কিছু অপারগতা বা অক্ষমতার কথা তাঁরা উল্লেখ করে। আর কিছু না হলে মিসম্যাচের কথা তো বলেই।
এটা করার মূল কারন হলো এই যে এদেশের নারীরা এক্সপ্রেসড “ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট” ব্যাপারটাকে কালচারালি সহজ ভাবে নেয় না।
একটি ইমপ্লাইড ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট রিলেশনকেও তাঁরা তাই বর্ননার সময় হয় প্রেমের সম্পর্ক অথবা “মোর দ্যান এ ফ্রেন্ডশীপ” হিসাবে বর্ননা করে।
তাঁর মানে হলো এই যে, এর মধ্য দিয়ে পরকীয়ায় উদ্যত বিবাহিত নারীটির একটা এক্সপেকটেশন তৈরী হয় যে “শী ইজ ইন এ লাভিং রিলেশনশীপ……”
আবার আগেই বলে গেছি, পরকীয়ায় সম্মত বেশিরভাগ নারীই এটাকে নেয় একটা প্রসপেক্টিং অপশন হিসাবে ইমোশনে আপ্লুত হয়ে। কিন্তু পুরুষরা সাধারনতঃ এটাকে নেয় যথাসাধ্য ইমোশনবিহীন বা আবেগমুক্ত ভাবে এবং নিজের বিবাহিত সম্পর্ক অটুট রাখার উদ্দেশ্যে স্থির থেকেই।
ডবল-পরকীয়ায় একপক্ষ ভাবছে ও চেষ্টা করে যাচ্ছে – কি কিভাবে এটাকে আরও নৈকট্যপুর্ণ ও অর্থবহ করা যায় আর অন্যপক্ষ নিশ্চিন্ত থাকছে যে প্রতিপক্ষ তো বিবাহিত, তাই আমার এন্ডে আর কিছু করবার চাপ আসবে না। এটাই তাই শুরু থেকে হয়ে দাঁড়ায় টানাপোড়েনের সোর্স..
আর এই টানাপোড়েনটা পক্ষগুলোকে কখনো কখনো এতটাই বিপাকে ফেলে যে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কাঁদা ছোড়াছুড়িতেও রূপ নিতে পারে যেকোনো সময়ই।
অবশ্য আরেকধরনের ডবল পরকীয়া আছে যা প্রাথমিক অবস্থায় ততটা অনিরাপদ বলে মনেহয় না।
সেটা হলো প্রোষিতভর্তিকার সাথে স্থানীয় বিবাহিত কারো পরকীয়া সম্পর্ক।
এতে, যে নারীরা সম্মত হন, তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ থাকে হয় শারীরিক চাহিদা পুরন নয়তো দূরে থাকা স্বামীর স্বাভাবিক জীবনযাপনের কথা জেনে নিজে তাঁর সমকক্ষতা অর্জন বা প্রতিশোধ গ্রহনের স্পৃহা উদ্যত।
এধরনের সম্পর্কগুলো প্রাথমিক ভাবে নিরুপদ্রব থাকলেও একটা সময়, বিশেষ করে স্বামী যখন দেশে থাকেন, সেটা ভালই একটা জটিলতার মুখে পড়ে।
এসব ক্ষেত্রে সবসময় পাশে পাওয়া প্রেমিক নাকি লিগালি এগিয়ে থাকা স্বামী – কাকে বেশী গুরুত্ব দেয়া উচিৎ, সেই সমস্যা সামাল দিতে না পারায় চুড়ান্ত অঘটনও ঘটে যায় কখনো কখনো…
তাই ডবল-পরকীয়া থেকে সাবধান। খুবই সাবধান।
আর তা হলেও, অবাস্তব এক্সপেকটেশন থেকে দূরে থাকাটা মানসিক শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে খুবই জরুরী।
আগামী পর্বে পরকীয়ার কারনে যেসব শারীরিক ঝুঁকি থাক, তা নিয়ে কথা বলবো।
সাথে থাকুন…
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – চতুর্থ পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – পঞ্চম পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – ষষ্ঠ (শেষ) পর্ব