আত্মকেন্দ্রিকতা ও আত্মপ্রেম সম্পর্কিত জটিলতা – ১
আত্মকেন্দ্রিকতা ও আত্মপ্রেম সম্পর্কিত জটিলতা – ২
ছয়
সম্পর্ক নিয়ে আত্মপ্রেমীদের জটিলতার অনেক ফ্যাক্ট শুনালাম।
এবার কিছু অপিনিয়ন শোনাই।
১) অন্যরা সম্পর্কে ঢোকে তা থেকে কিছু নৈকট্য জনিত যৌথ স্বস্তিকর অথবা আনন্দময় অভিজ্ঞতা পেতে। কিন্তু আত্মপ্রেমীরা সম্পর্কে ঢোকে, ইচ্ছামাফিক একটি সম্পর্কে ঢোকায় নিজের সামর্থ্য যাচাই করতে। এক অর্থে এটাও তাই তাদের কাছে আত্মপ্রেমের একটি এক্সটেন্ডেড রূপ।
২) অন্যরা সম্পর্ক থেকে বেরুনোর সময় সেটা করে ভগ্ন হৃদয়ে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একেবারেই না পারতে। কিন্তু এরা সেটা করে অবলিলায়, নিজের কঠোরতা পরখ করতে। স্বেচ্ছায় একটি সম্পর্ক ভেঙ্গে দেবার পরেও এরা যে তাদ্বারা এফেক্টেড হচ্ছে না বরং অবিচল থাকতে পারছে, এটা তাদেরকে পরবর্তি সম্পর্কে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রনের সাথে জড়ানোর জন্য আরও বেশি করে প্রস্তুত করে দেয়। সেই আর্থে এই সম্পর্ক ভাঙ্গাটাও তাই এদের জন্য আত্মপ্রেমেরই অংশ।
৩) অন্যরা কোনো কিছুর উত্তরে না বলে খুব ভেবে চিন্তে, এমনকি অনেক সময়ে বাধ্য হয়ে। কিন্তু এরা না বলাটা নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের উপকরন বলে মনে করে। না বলার পর অন্যদের অনেক সময়ই সেটা ভুলে যেতে বা লুকিয়ে রাখতে চেষ্টারত দেখা যায় অথচ এরা কোনো কিছুতে না বলাটা ফলাও করে প্রচার করে। নিজের এই না বলার সামর্থ্য নিয়ে এদের গর্বে পা পড়ে না। এটাও তাই এদের কাছে কেবলই না বলা না, এটা আসলে এদের আত্মপ্রেমেরই অনুষঙ্গ।
এখন কথা হলো, সবই যদি আত্মপ্রেমীরা নিজের পছন্দ মতই করবেন, এবং তা করে তাঁরা যখন নিজেকে এতটা এমপাওয়ারড বোধই করবেন, তাহলে তাঁরা ডিপ্রেশনেই বা ভোগেন কেন? অথবা, এংজাইটিতে বা আক্রান্তই হন কেন?
এর সুনিশ্চিত কোনো উত্তর আমি এখনো খুজে পাই নাই।
তবে যতটা বুঝেছে, আমার মনে হয়েছে, এর পিছনে যে কারনটা কাজ করে, তা হলো, একাকিত্ব বোধ করা।
যখন তাঁরা ইগো রক্ষায় তুচ্ছ কারনে কাউকে ত্যাগ করে নিজেকে এমপাওয়ারড বোধ করাতে চান, তাঁরা আসলে শুধু ঐ একজনকেই হারান না, তাদের সম্পর্কে জানা আরও অনেকের সহানুভুতিও হারান।
হারানোর সময়টাতে তাঁরা এমপাওয়ারড বোধ করায় সেটা দ্বারা এফেক্টেড হন না ঠিকই কিন্তু সময় যেতে থাকলে নিজের চলাফেরার পরিধি যে ছোট হয়ে আসছে, সেটা তাঁরা অনুধাবন করা শুরু করেন।
দিন দিন একদিকে তাঁরা এমপাওয়ার্ড বোধ করায় নিজেকে বৃহৎ গন্ডির জন্য উপযুক্ত মনে করেন, আবার অন্যদিকে নিজের গন্ডি ছোট হয়ে আসার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
এই দুইয়ের টানাপোড়েন তাদের জন্য শুধু ডিপ্রেশন বা এংজাইটি জাতীয় পিওর মানসিক সমস্যাই না অন্যান্য সাইকোসোমাটিক অসুস্থতার সুত্রপাতও করতে পারে।
সাত
কেমন হয় আত্মপ্রেমীদের সম্পর্কগুলো?
মনে রাখতে হবে যে আত্মপ্রেমেরও কিন্তু মাত্রা আছে। এক একজনের জন্য সেটা হতে পারে উচ্চ, মধ্যম অথবা নিম্ন মাত্রার আত্মপ্রেম। তাছাড়াও আত্মপ্রেম হতে পারে প্রকাশ্য (ওভার্ট) কিংবা অপ্রকাশ্য (কোভার্ট)।
যখন দুজন আত্মপ্রেমী সম্পর্কে জড়ান, শুরুর স্বপ্নময় সময়টা কাটার পরেই তাঁরা একটা কর্তৃত্ব স্থাপনের যুদ্ধে অবতির্ন হন। এইসময় তাদের আত্মপ্রেমের মাত্রা অথবা প্রকাশ ভিন্নতা দিয়ে একজন অন্যজনের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চেষ্টা করেন।
দেখা যায়, নানাকারনে অন্যপক্ষটি তাতক্ষনিকভাবে এই এরেঞ্জমেন্টটি মেনে নেন অথবা মানেন না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মেনে নিলেও সমস্যার সেট কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান না।
ধরাযাক, পুরুষটি হলো উচ্চমাত্রার প্রকাশ্য আত্মপ্রেমী আর নারীটি নিম্নমাত্রার অপ্রকাশ্য আত্মপ্রেমী। নারীটিকে শিঘ্রই সঙ্গির চাপে পড়তে হয় চুড়ান্ত কর্তৃত্ব মেনে নেবার। নারী হিসাবে গৃহশান্তির জন্য এটা সে মেনে নিতে সম্মত হতেই পারে। কিন্তু অনেক সময়ই সে তা করতে বাধ্য হয় নিজের আত্মপ্রেমকে পাথর চাপা দিয়ে এবং হয়তো অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বোধ থেকেও।
উপরে উপরে এই যুগলকে শান্তিপুর্ন মনে হলেও, নারীটি কিন্তু তাঁর আত্মপ্রেম নিয়ে ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি চালিয়ে যাবে। এবং যদি কখনো অনুকুল পরিবেশ তাঁর সামনে এসে পড়ে, সব সুবিধাজনক এরেঞ্জমেন্টের কপালে পদাঘাত করে সে কিন্তু তাঁর আসল রূপ ধারন করতেই পারে।
এতো গেল একধরনের এক্সট্রিম পরিস্থিতি।
কিন্তু কি হবে যদি অবস্থা হয় এর সম্পুর্ন বিপরীত কিছু?
তারমানে, নারীটি উচ্চমাত্রার প্রকাশ্য আর পুরুষটি নিম্নমাত্রার অপ্রকাশ্য আত্মপ্রেমী।
এইক্ষেত্রে কর্তৃত্বের প্রয়াস নারীর দিক থেকেই প্রবল হবে। কিন্তু যতকম মাত্রার আত্মপ্রেমই থাকুক না কেন, সামাজিক এক্সপেকটেশন পয়েন্ট অব ভিউতে সেটা মেনে নেয়া পুরুষটির জন্য মোটেও সহজ হবে না।
এই ক্ষেত্রে একটা প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব তাই অবসম্ভাবি হয়ে দাড়াবেই।
এই দ্বন্দ্বটা যতক্ষণ দুরত্ব বজায় রেখে চলছে, সম্পর্কটা কিছুটা দির্ঘায়িত হয়।
কিন্তু সমস্যা হলো, আত্মপ্রেমীদের ধৈর্য্য থাকে খুব কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাঁরা কর্তৃত্বস্থাপন প্রচেষ্টাটা শারীরিক করে ফেলে।
আর একবার মারামারি শুরু হয়ে গেলে সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়াটা কেবলই হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যাপার।
এখানে একটা মজার তথ্য শেয়ার না করে পারছি না।
আত্মপ্রেমীরা সাধারনত খুবই ইন্দ্রিয়পরায়ন হয়ে থাকে। আর একটি যুগলে দুজনই যদি আত্মপ্রেমী হন, তাঁদের কাছে এই ব্যাপারটা খুব ভাল ভাবেই জানা থাকে যে কত কতভাবে তাঁরা একজন অন্যজনকে শারীরিক সুখ দিতে পারেন বা শারীরিক সুখের সাগরে ভাসাতে ও ঢোবাতে পারেন। হোক না তা প্রেমবিহীন, কেবলই ক্রুড এনিম্যাল সেক্স, তাতে কি?
আর তাই কখনো কখনো দেখা যায় চুড়ান্ত মানসিক বিচ্ছিন্নতা ও শারীরিক দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করেও একটি যুগল পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না। শুধুমাত্র একটি নিশ্চিত ও নিরোপদ্রব ইন্দ্রিয় সুখের গ্যারান্ট থাকার কারনে কার্যতঃ ভেঙ্গে পড়া সম্পর্কটা টেনে যাচ্ছেন অনির্দিষ্ট কালের জন্য…
(চলবে……)
আত্মকেন্দ্রিকতা ও আত্মপ্রেম সম্পর্কিত জটিলতা – ৪
আত্মকেন্দ্রিকতা ও আত্মপ্রেম সম্পর্কিত জটিলতা – ৫ (শেষপর্ব)
পারভেজ ভাই, অসাধারণ। ফর্মুলার 'এক্স' 'ওয়াই' এর জায়গায় যখন আশেপাশের কিছু চরিত্র বা যুগলকে বসাচ্ছি তখন তাদের বিরক্তিকর বা হাস্যকর আচরনের চমৎকার চমৎকার ব্যাখ্যা বের হচ্ছে। চালিয়ে যান।
যাক, আরেকটা প্রকাশ্য ফিডব্যাক পেলাম বাস্তবের সাথে মিল পাবার।
ইনবক্সে আরও কিছু পেয়েছি তবে সেগুলা তো আর প্রকাশ্য না।
আমার এই অনুসন্ধানটা অনেক দিনের এবং তা কিছু ব্যাখ্যাতিত আচরন দেখা পর থেকে।
দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়ে যাবার পর ধীরে ধীরে ঐ পাজলের মিসিং ব্লকগুলো খুজে পেতে শুরু করি এই ভাবে ভাবতে ভাবতে...
অপেক্ষায় আছি, কেউ যদি এই এনালাইসিসগুলা চ্যালেঞ্জ করতো সেজন্য।
চ্যালেঞ্জ ছাড়া কোনো এনালাইসিসই রিফাইন্ড হয় না।
পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.