চার
আন্তরিক ফ্ল্যার্টিং বনাম মতলবি ফ্ল্যার্টিং:
এগুলো পৃথক কোনো ফ্ল্যার্টিং নয়, বরং, আগে উল্লেখ করা ফ্ল্যার্টিংগুলিই অংশগ্রহনকারীদের উদ্দেশ্য ভেদে হতে পারে আন্তরিক অথবা মতলবি ফ্ল্যার্ট।
ফ্ল্যার্টিং-এ অংশ নেয়া উভয় পক্ষেরই যখন উদ্দেশ্য থাকে সৎ এবং মূলতঃ তা পরষ্পরকে কোয়ালিটি টাইম দেবার অথবা এ থেকে একটা স্থায়ী সম্পর্কে উত্তরনের জন্য এবং যা যা হচ্ছে তাঁর সবই চাপ ও ট্রিক মুক্তভাবে পুর্ণ সম্মতিতে হচ্ছে, সকল বেনিফিটের পুর্ন উপস্থিতি যেখানে আছে – সেটাই হলো “আন্তরিক ফ্ল্যার্ট”।
টিকে যাওয়া বেশীরভাগ ফ্ল্যার্টিংই আসলে আন্তরিক ফ্ল্যার্ট
কিন্তু যখনই কোনো এক পক্ষের মতলব থাকে ফ্ল্যার্টিংটা যেকোনো একভাবে শুরু করিয়ে তা থেকে নিজের বেনিফিটগুলো একে তুলে নেয়ার এবং সেজন্য প্রতিপক্ষ কি কি চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কি কি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে – তা নিয়ে খুব একটা আগ্রহ না দেখানোর প্রবনতা যেখানে থাকে, সেটাই হয়ে পড়ে একখানা “মতলবি ফ্ল্যার্ট”।
বেশীরভাগ মতলবি ফ্ল্যার্টই খুব বেশিদিন টেকে না। জোড়াতালি দিয়ে কিছুদিন তা চললেও দেখা যায় একটা সময়ে তা ভেঙ্গে পড়েই…
মতলবি ফ্ল্যার্টিংগুলা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছেলেরাই করে থাকে। কিন্তু মেয়েরাও যে করে না, তা কিন্তু না। এই অনলাইনের যুগে কম হলেও কোনো কোনো মেয়েকেও মতলবি ফ্ল্যার্টিং-এ জড়াতে দেখা যায়।
এই ধরনের ফ্যার্টিং-এ সমস্যা দুইটা।
১) শিকার ধরতে গিয়ে র্যাপো বিল্ড-আপ এটেম্পটে অকারণ হয়রানি থেকে কখনো কখনো ট্রমা সৃষ্টি করা হয় অন্যন্যদের জন্য।
২) শিকার ধরার পর তাঁকে ছিড়ে-ছিবড়ে খেয়ে যখন ফেলে দেয়া হয়, নিজেকে ব্যবহৃত জ্ঞান করে একটা ট্রমাটিক সিচুয়েশন অতিবাহিত করতে হয় শিকারকে…
কি কি ভাবে সাধারনতঃ এই মতলবি ফ্যার্টিংগুলোর সুত্রপাত হয়, এবার তা জানাই।
পুরুষরা এটা শুরু করে অবস্থা বুঝে, বিভিন্ন ভাবে। সেটা নিয়ে পরে বিস্তারিত লিখবো। এই অধ্যায়টা শেষ করবো নারীদের ব্যবহৃত পদ্ধতিটা লিখে।
ক) র্যাপো বিল্ড-আপ পর্বে তাঁরা নিজেদের ট্রমাটিক পাস্ট অথবা নারীসুলভ অসহয়াত্বের গল্প শুনিয়ে কিংবা তিনি কতটা বোল্ড এন্ড বিউটিফুল এন্ড ট্যালেন্টেড – সেকথা বলে শিকারকে নিজের প্রতিটা ডাকেই সাড়া দেয়া একজন আগ্রহী শ্রোতা বানিয়ে ফেলেন।
খ) শিকারকে একবার বশংবদ শ্রোতা হিসাবে নাগালে পেলে এরপর তিনি তাঁর প্রেজেন্ট বা ইমিডিয়েট পাস্ট রিলেশনে কি কি ডিফিকাল্টি ফেস করছেন/করেছেন , সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলাপ চারিতা শুরু করেন যা কখনো কখনো আবার অতি রগরগে ভাষায়, এক্সপ্লিসিট বর্ননাসহ। এর পাশাপাশি চলে, এমন নিবিষ্ট মন ও সহানুভুতিসম্পন্ন শ্রোতার সাথে একবারের জন্য হলেও কোথাও দেখা করার জন্য হাপিত্যেশ।
গ) শিকার এই টোপ গেলার পরেই, শিকারের খরচে শুরু হয় তাঁর আসল মতলব হাসিল করাটা। সেটা হতে পারে ঘনিষ্টতার বিনিময়ে:
– দামি হোটেলে খাওয়া দাওয়া, সময় কাটানো অথবা,
– নামিদামি বারে মদ্যপান, মাদক গ্রহন, অথবা,
– মোবাইল, ড্রেস, গহনা, ইত্যাদি উপহার সামগ্রি কেনানো, অথবা
– ধারের কথা বলে টেকাটুকা নিয়ে ফেরত না দেয়া, অথবা
– নিছকই শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো ও সেই সময়টা উপভোগ করা…
ঘ) এরপর যখনই সম্পর্কটা কোনো না কোনো চাপের মুখে পড়ে, কিচ্ছুটি না বলে অথবা একগাদা গালমন্দ ও দোষারোপ করে সম্পর্ক চুকিয়ে বুকিয়ে দেয়া। এবং নতুন করে আরেকখানা শিকার ধরতে নেমে পড়া……
পাঁচ
পুর্বপ্রতিজ্ঞানুযায়ি এই অধ্যায়ে পুরুষদের মতলবি ফ্ল্যার্ট নিয়ে আলাপ করবো।
এটা লিখার কারন, শুধু তাদের ফ্ল্যার্টিং-এর স্বরূপ জানতেই না, বরং সম্ভাব্য ভিক্টিমদেরকে এজাতীয় এটেম্পট সম্পর্কে পূর্বাভাষ দেবার জন্যেও।
পুরুষদের মতলবি ফ্ল্যার্টের প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে ভিক্টিমের সাথে ছলে-বলে-কলে-কৌশলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা।
এর বাইরে এদের অন্যকোনো উদ্দেশ্য কদাচিৎ থাকে।
তাই সেগুলো নিয়ে বিশেষ কিছু না বলে, এটাকে ধরেই আলাপ চালাচ্ছি।
যেহেতু শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনই হলো ওদের প্রধান উদ্দেশ্য, তাই এজন্য তাদের সবচেয়ে বাঞ্ছনীয় টার্গেট হলো শারীরিক সম্পর্কে পুর্ব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সিঙ্গেল নারী।
অর্থাৎ প্রধানতঃ ডিভোর্সড অথবা উইডো।
অবশ্য যদি তাঁরা এমন কাউকে পান, যিনি বিবাহিত কিন্তু ডিসটার্বড রিলেশনে আছেন, তাঁর দিকেও তাঁদেরকে হাত বাড়াতে দেখেছি।
এদের মধ্যে আবার যারা মধ্যবয়সি ও সন্তানের সাথে থাকছেন, তাদের পুনঃবিবাহের সম্ভবনা আরও কম ধরে নিয়ে তাদেরকে টার্গেট করার সম্ভবনা থাকে আরও বেশি।
বেশির ভাগ মতলবি ফ্ল্যাটারের জন্যই টার্গেটের বয়সটা খুব গুরুত্বপূর্ন কিছু না।
তবে কেউ কেউ আবার নিজেদের ব্যাচেলার হিসাবে পরিচয় দেন।
এদেরকে বিবাহের প্রত্যাশা তৈরী করে তরুনীদের পিছনে ছূটতেও দেখা যায়।
যারা তরুনী খোজেন আর যারা অন্য সিঙ্গেল নারী খোজেন, দুই পক্ষেরই উদ্দেশ্য অভিন্ন থাকলেও স্ট্যাটেজি থাকে ভিন্ন।
যদিও দুইপক্ষই নিজেদের এখন স্মার্ট, রিচ, পাওয়ারফুল হিসাবে উপস্থাপন করেন, কিন্তু তরুনী অনুসন্ধানকারীরা ভাব করেন যে তাঁরা বিবাহে ইচ্চুক, তাই তাঁর সব দায়িত্ব নেবারো ইচ্ছাও তাঁরা দেখান।
এরা প্রথমেই মোবাইল রিজার্জ করে বা বিকাশ করে টাকাটুকা দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেন যে তিনি দায়িত্ব নিতে কতটা আগ্রহী।
আর এসব করে একবার শারীরিক সম্পর্কের কাছাকাছি জায়গায় টেনে নিতে পারলে বাকিটাও দ্রুত সেরে ফেলেন।
মধ্যবয়সি নারীদের যারা টার্গেট করেন, এদের মূল লক্ষই থাকে কোনো না কোনোভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাক্মেইলিং করার।
এরা নিজেদের বিবাহিত স্ট্যাটাস লুকান না কিন্তু ভং ধরেন যে তাঁরা বিবাহিত জীবনে কতই না অসুখি কিন্তু সম্পর্ক থেকে বেরুতে পারছেন না কেবলই সামাজিক দায় রক্ষার্থে।
তাছাড়া টার্গেট করা নারীকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করার পাশাপাশি আরও যে কাজটা তাঁরা করেন, তা হলো, বিভিন্ন আর্থিক অথবা এমন সব প্রশাসনিক সহায়তা দেয়া, যেগুলো করতে একজন পুরুষ সঙ্গির অভাব তাঁরা সচরাচর বোধ করেন।
এইভাবে একটা ডিপেন্ডেন্সির সম্পর্ক তাঁরা তৈরী করতে পারলে বাকিটা অর্জন তাদের জন্য খুব একটা কঠিন কিছু থাকে না।
এই মতলবি ফ্ল্যার্টিং এর সমস্যা দুইটা।
১) লক্ষ্য অর্জনের পর এরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন এবং নতুন টার্গেটের সন্ধানে বের হন। তখন তাঁর উপরে এতটা নির্ভর করা নারীটির জন্য সেটা হয়ে দাঁড়ায় একখানা যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা।
২) একজন টার্গেট, বিশেষ করে সে যদি তরুনী হয়, এদের অনুসন্ধানে তাদেরকে অন্ততঃ ৮-১০ জনকে নক করতে হয়। ঐ ৮-১০ জন এই অযাচিত নকিংগুলার কারনে একধরনের হয়রানির মধ্য দিয়ে যায়।
আপনার ইনবক্সে কি ধরনের টেক্সট দেখলে আপনি বুঝবেন যে কোনো এক মতলবি ফ্ল্যাটারের প্রসপেক্টিং-এর লক্ষ্য হয়ে আপনি আছেন,তা নিয়ে আগামী কোনো এক পর্বে লিখবো………
(চলবে)
জানার আছে অনেক কিছু, ভাইয়া! জগৎ রহস্যময়!
পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
সবকিছু তো আর জানা সম্ভব না, তবে কেউ এক্সপ্লইয়েট করবে - এমন বিষয়গুলো জানা থাকা দরকার।
আমরা ছোট থাকতে কেউ কিন্তু সতর্ক করে নাই এক্সপ্লয়েটেশনের ব্যাপারে,
তার পরিনতিতে অনেককেই নানা হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
আজকাল যথেষ্ট সতর্ক করা হচ্ছে শিশু ও বাবা-মাদের।
পরিস্থিতির তাই উন্নতি হচ্ছে।
আমিও সেরকম একটা দায়িত্বের অবস্থান থেকেই এই কথাগুলা লিখছি।
একজনেরও যদি এতে সচেতনতা আসে, হয়রানি কমে - সেটাই হবে সার্থকতা.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আমি মনে করি ইনটুইশন এবং কমন সেন্সটাই অনভিপ্রেত ফ্লার্টিং এর বিরুদ্ধে একটা রক্ষাকবচ হতে পারে, উভয় জেন্ডারের ক্ষেত্রে।
"ইনটুইশন এবং কমন সেন্সটাই অনভিপ্রেত ফ্লার্টিং এর বিরুদ্ধে একটা রক্ষাকবচ হতে পারে" - এখানে অভিজ্ঞতা ও ম্যাচিওরিটি একটা গুরুত্বপুর্ণ ফ্যাক্টর।
অনভিজ্ঞরা এবং ইমম্যাচিওররা না বুঝেই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলার সম্ভবনা থাকে বলেই এই তথ্য শেয়ারিং প্রচেষ্টা।
এরকম যে হতে পারে, সেটা জানা থাকলে তাঁরা এই পরিস্থিতিগুলো মোকাবেলায় অনেক বেশি ইকুইপড থাকবে...
মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!!!
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.