এই মোটামুটি স্বল্প ট্রাফিকের ব্লগসাইটের (র্যাঙ্কিং ৭ লাখের আশেপাশে। হিট সংখা ১৩ শো-এর মত। দৈনিক আয়ের সামর্থ্য ৪ ডলার মাত্র) ডাকসাইটের একজন লেখক সাবিহা রহমান জিতু।
সাবিহাকে চিনি সেই ২০০৩ থেকে যখন সে এম আই এস টি-তে ছাত্রী হিসাবে এলো। তখনো আমি পিভটাল রিসোর্স পারসন হিসাবে ওখানকার এমবিএ প্রোগ্রামটা দু হাতে সামলাচ্ছি।
এর ভিতরে পদ্মা মেঘনায় অনেক জল গড়িয়েছে। সাবিহা অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে গিয়ে লিখালিখিটাও শুরু করেছে। চমৎকার সব গদ্য ও পদ্য লিখে ব্লগস্ফেয়ারে আন্দোলনও যে তুলেছে, একদমই জানতাম না।
আমার ব্লগস্ফেয়ারে আগমন ঢেঁড় ঢেঁড় পরে এবং অনেকটাই আকস্মিকভাবে।
সেই হিসাবে সাবিহার কাছে আমি শিশু-লেখক বই অন্য কিছু না।
ফেসবুকের নোটস ঘাটাঘাটি করতে বসে চার বছর আগে লিখা সাবিহার গল্প “ভালো মেয়ে” চোখে পড়লো।
সাবিহার ভাষ্য অনুযায়ী এটা নাকি তার প্রথম গল্প লিখার প্রচেষ্টা?
ও মাই গড!
প্রথম প্রচেষ্টার গল্পটাই যে এতটা ঝরঝরে, এতটা সাবলিল হতে পারে, ভাবাই যায় না!
মুগ্ধ হয়ে এক নিঃশ্বাসে পড়ে গেলাম।
পড়ে ভাবলাম, একটা প্রতিক্রিয়া লিখি। লিখতে বসে তার যে কলেবর দাড়ালো, তা দেখে মনে হলো, এই কমেন্টের বক্তব্য নিজেই একটা ব্লগ হতে পারে।
তাই এখানে ব্লগাকারে সন্নিবেশিত করে দিলাম।
মূলগল্পের বাইরে সচেতনতামূলক কিছু ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা এইখানে থাকাটাও এই পৃথক ব্লগ আকারে লিখার পিছনে কাজ করেছে।
তাই আশা করছি পাঠক হতাশ হবেন না।
একজন লেখক তার গল্পে কোন একটা সমস্যার চিত্র যদি খানিকটাও তুলে ধরেন, তাকেই আমি যথেষ্ট অর্জন বলে গন্য করবো। গল্পতো কেউ একশনে নামার জন্য পড়ে না, পড়ে রিক্রিয়েশনের জন্য। সেই রিক্রিয়েশনের সময়টাকে খুব ভারী না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি। সাবিহা তার এই গল্পে সচেতনতা জাগাতে যতটা বলেছে, এরচেয়ে বেশী বললে পাঠকের জন্য তা বার্ডেনসাম হয়ে যেত। এই পর্যন্ত বলাতেই তা শিল্পোত্তির্ন থেকেছে। এরচেয়ে বেশী হলে থাকতো কিনা, আমার সন্দেহ আছে।
আমার ধারনা, এই গল্পটা পড়ে পাঠক ভাববে। ভেবে তার নিজের কথাটা বলবে, নিজের সিদ্ধান্ত নেবে। আর সেটাই হবে লেখকের সার্থকতা।
আমিও ভাবলাম। বলা চলে ভাবতে বাধ্য হলাম। কি কি ভাবলাম, এইবার সেগুলো একটু বলি।
আমার মনে হলো, মালিহা মূলত “ভাল মেয়ে হবার” মরননেশায় আক্রান্ত ছিল। আর দশটা চেনা মরননেশার চেয়ে এটা কোন অংশেই কম ক্ষতিকর যে নয়, তা তার পরিনতি দেখেই বোঝা গেল। আমরা সাদা চোখে তার আশাভঙ্গ ও অত্যাচারিত হওয়া এবং সেইজন্য সন্তানসহ আত্মহনন – এই দুটো কে দেখে এই দুই এর মাঝে সেতুবন্ধ খুজছি। আর তা করতে গিয়ে যে জিনিশগুলো ওভার লুক করে ফেলছি, তা হলো – ১) তার এই ভাল মেয়ে হবার নেশাগ্রস্থ হওয়াটা কিন্তু এক-দু দিনে হয় নাই। এটা এক দীর্ঘ্য প্রক্রিয়ার ফল। ২) তার এই আত্মহননের পথে পা বাড়ানোটাও কিন্তু এক রাতের সিদ্ধান্ত না। সেটাও আরেক দীর্ঘ্য প্রক্রিয়ার ফসল।
একটু ব্যাখ্যা করি।
ছোট বেলা থেকেই এই যে আমরা শিশু কে ক্রমাগত চাপে রাখি ভাল ছেলে বা ভাল মেয়ে হবার জন্য, সেটা যে তার জন্য কিছু অপ্রয়োজনিয় বাড়তি স্ট্রেস তৈরী করে সে বিষয়ে আমরা কি সচেতন? মনেহয় না। আবার এই বাড়তি স্ট্রেস থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে সে যেটা খুজে পায় মানে ঐ ভালত্বটাকে ধরে রাখতে পারাটা, সেটা কি আমরা বুঝি? এটাও হয়তো বুঝি না।
কিন্তু এ থেকে যে ক্ষতিটা তার হয় তা হলো: ভাল হয়ে এই স্ট্রেস-মুক্তি ঘটাটা ক্রমেই তার মধ্যে ভালত্বের উপরে ডিপেন্ডেন্স তৈরী করে। এই ডিপেন্ডেন্স থেকে তার মধ্যে তৈরী হয় ভাল হবার নেশা। একবার কোন নেশা কাউকে ধলে তা থেকে কারো কারো মরননেশাও তৈরী হতে পারে। সম্ভবতঃ মালিহার ক্ষেত্রে সেরকম কিছুই ঘটে থাকবে।
অবশ্য লেখকের কমেন্টে আরেকটা সম্ভবনার ইঙ্গিতও আছে। পারিবারিক চাপ তাকে বাধ্য করেছে এই অসুস্থ্য জীবনটাকে টেনে নিতে। মালিহার জন্য সেটা যদি হয়ে থাকে তাহলে তা তো আরও আশংকার কথা।
পারিবারিক চাপে বাধ্য হয়েই হোক অথবা ভাল থাকার নেশাগ্রস্থতার কারনেই হোক, মালিহার সংকটে পড়া জীবনটা (শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনে জর্জরিত) থেকে বেরুনোর পথ সে পাচ্ছিল না।
এ টিপিকাল সোর্স অব ফ্রাস্ট্রেশন। কারন “ফ্রাসট্রেশন ইজ দ্যাট স্টেট অব মাইন্ড হোয়েন এচিভমেন্ট অব গোল ইজ ব্লকড”।
এরপর ফ্রাসট্রেশনের যে যে ধারাবাহিক পরিনতি তা একে একে নিশ্চয়ই ঘটা শুরু হয় তার মধ্যে। আর এর কোনো পর্যায়ে বাধা না পেলে তা পরের পর্যায়ে পৌছে যাচ্ছিলো নির্বিঘ্নে।
ফ্রাসট্রেশনের থেকে আসে ডিপ্রেশন / ইউথড্রল বা ভাইস ভার্সা।
ইউথড্রল / ডিপ্রেশন থেকে তা গড়ায় সেলফ এনিহিলেশন অর্থাৎ আত্মহত্যায়।
এখন কথা হলো, আমাদের কি কি করনিয়?
১) ভাল ছেলে বা ভাল মেয়ে হতেই হবে, এই রকম কোন চাপ না দেয়া। শিশু ভাল হতে চাক, ঠিক আছে। কিন্তু সে যেন কোন পর্যায়েই ভালত্বের নেশায় যেন না পড়ে সেটা লক্ষ রাখতে হবে সবার।
২) যে কারোরই যে কোন সমস্যার কথা, তা সে যে ধরনের সমস্যাই হোক না কেন – তা সে শেয়ার করতে পারার মত বিশ্বস্থ সঙ্গি সাথি যেন তার থাকে, সেটা ছোট বেলা থেকেই অনুশিলন করানো ও তাতে তাঁকে উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। তার নিজেকে ও তার কাছের মানুষদেরকে তার এইসব কমুনিকেশনের ব্যাপারেই গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। বুঝতে হবে কখন তার প্রোফেশনাল হেলপ দরকার। দরকার মনে করলে সেই প্রফেশনাল হেলপের ব্যবস্থাও করতে হবে অনতিবিলম্বে।
আশার কথা, বর্তমানে বেশ সহজেই এই ধরনের প্রোফেশনাল হেলপ পাওয়া সম্ভব। সম্প্রতি জানলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের পাঁচ তলায় সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের তত্ত্বাবধানে বেশ কিছুদিন ধরে এইরকম প্রোফেশনাল হেলপের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমরা যদি কেউ আমাদের পরিচিতদের মধ্যে কাউকে এই ধরনের বা অন্য কোন “ফ্রাস্ট্রেশন-উইথড্রেল-ডিপ্রেশন-এনিহিলেশন” লুপে পড়ে যেতে দেখি, আমাদের উচিৎ হবে অনতি বিলম্বে তাকে এই প্রফেশনাল হেলপ নিতে উৎসাহী করা। এতে মালিহার মত দুর্ঘটনা বন্ধ না হলেও কমে যে আসবে, সেটা নিশ্চিত। আর একান্তই যদি তা ঘটেও যায়, অন্তত এই বলে নিজেকে সান্তনা দিতে পারা যাবে যে “আমি তো আমার সর্বোচ্চটা করেছিলাম, বাকিটা আমার নিয়ন্ত্রনে ছিল না”।
সবার আরও আরও বেশী ছোট ছোট বিষয়ে সচেতনতা পারে এই রকম দুর্ঘটনাকে অনেক অনেক কমিয়ে আনতে।
আসুন বেশী বেশী জানি আর আরও বেশী বেশী সচেতন হই।
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
থ্যাংকস রাজিব।
পড়ার জন্য।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
এ লেখাটা কি পড়েছিলাম? মনে পড়ছেনা।
তবে জিতুর ভাবনা নিয়ে যা বলেছেন তা যথার্থ।
মেয়েটা মাঝে মাঝে সিসিবি থেকে পালায়।
আমরা মনেহয় ওর যোগ্য কদরটা করতে পারি না।
কি জানি?
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আমার তা মনে হয় না।
এইখানে কেউ কাউকে তো কদর করে ধরে রাখবে না। এটা সবার নিজের জায়গা। পাড়ার ফুটবল খেলার মাঠের মতো।
তবে হ্যা জিতু খেয়ালি। খেয়ালে চলে।
কি একটা কথা আছে না, উঠলো বাই তো কটক যাই।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
কথাটা মনেহয় ঠিক হতেও পারে।
যা হোক। বেশী কিছু না বলাই ভাল।
সত্যিই যদি তা, মানে খেয়ালি মানুষ হয়, দেখা যাবে আর আসবে না। আর দোষ পড়বে আমাদের।
চুপ করে গেলাম তাই...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
কি যে বলেন না ভাই ....
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আগে পড়িনি। পড়ে আসলাম।
আমাদের মধ্যে কাউন্সেলিং করানোর ব্যাপারে একটা অনীহা আছে। এটি কাটিয়ে ওঠা জরুরি।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
এইটা ভাল বলেছো। আমরা সবাই নিজেদের বড় বড় ওস্তাদ ভাবি, সব কিছুতেই।
এটা খুবই খারাপ
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.