আমার এক বন্ধু খালিদের লেখাটাকে কিছুটা modify করে নিজের নামে চালিয়ে দিলাম। 😛
পূর্বকথা…………………
১৪ ই ফেব্রুয়ারি,২০০৯। বিশ্ব ভালবাসা দিবস। আজকের এই দিনে পৃথিবীর সকল তরুণ-তরুণী তাদের প্রিয়জন কে ভালবাসার রাখিতে আবদ্ধ করেছে। কিন্তু একটি তরুণের ভাগ্যে সেই সৌভাগ্য ছিল না। দুপুর এগারটায় রমনা পার্কের কাছে এক ট্রাক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরন করে সে। তার সারা দেহ পিষ্ট হলেও আশ্চর্যজনক ভাবে তার ডান হাত টা ছিল অক্ষত। আর সেই হাতে অক্ষত ছিল হয়ত তার প্রিয়জনের জন্য একটি লাল গোলাপ…………….
অয়নের আত্নকথা…………
গহীন এক শূন্যতায় ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছি। কোন তল নেই। যেন এক অসীম শূন্যতা। আর কোনদিনই এ থেকে বের হতে পারবনা। আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। যাক বাঁচা গেল এই শূন্যতার হাত থেকে। এবার ঘুম ভাঙ্গার কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমার হার্ট দু’টো বিট মিস করল। শান্তার ফোন এসেছে। মোবাইলে বাজছে ওর প্রিয় গান-
মন ভাল নেই, বলনা কিছুতেই………
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে নয়টা বাজে। ওহ্ মাই গড!!!!!!!! শান্তাকে রমনা পার্কে আসতে বলেছিলাম নয়টার সময়। ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করলাম।
– হ্যালো, শান্তা। আমি সত্যি দুঃখিত। আসলে ঘুম ভাঙতে দেরী হয়ে গেছে।
– তুমি জান আমি নয়টা থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি?
আমি জানি ও আমার জন্য আরো আগে থেকেই বসে আছে। কিন্তু প্রকাশ করছে না।
– I am extremely sorry. আর কক্ষনো………………
ফোন কেটে দিয়েছে। নিশ্চয়ই খুব রাগ করেছে। তাড়াতাড়ি ওর পছন্দের একটা mms পাঠালাম। একটা ছেলে তার হার্ট বের করে একটা মেয়েকে দিচ্ছে। মাঝে লেখা “I Love You”. সত্যি খুব উপকারি একটা ঔষধ। ও রাগ করলেই আমি পাঠাই। সাথে সাথে ওর রাগ পানি।
উঠে মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর ড্রেস চেঞ্জ করলাম। কালো শর্ট শার্ট আর নীল জিন্স। ওর খুবই প্রিয় একটা কম্বিনেশন। এতে নাকি আমাকে খুব ভাল লাগে। আমাকে ও অন্য চোখে দেখে বলেই হয়ত ওর কাছে আমাকে এত সুন্দর লাগে। জলদি বেরিয়ে পরলাম। ভাগ্যিস, মা দেখতে পায়নি। দেখলেই খাওয়ার জন্য পিড়াপীড়ি করত। আর এখন খেতে গেলে নিশ্চিত এক ঘন্টা লেট।
একটা ফুলের দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শান্তার জন্য একটা টুকটুকে লাল গোলাপ নিলাম। ও খুব খুশি হবে। শান্তার সাথে আমার পরিচয় পর্ব খুবই হাস্যকর। একটা দোকানে ফুচকার অর্ডার দিয়ে ঘুরতে গিয়ে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলাম। ফলস্বরূপ মেয়েটার গায়ে গিয়ে লাগল তার খাবার। আমি প্রমাদ গুনলাম এই বুঝি চড় থাপ্পড় কিছু একটা খাওয়া লাগে। উল্টো দেখি মেয়েটাই আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে। আমি হতবাক হয়ে তার চোখ দুটো দেখতে লাগলাম। তারপর কথা হল, পরিচয় হল, বন্ধুত্ব হল, আর কিভাবে জানি প্রেম ও হয়ে গেল। তারপর থেকে এই চলছে…………
রমনা পার্কের কাছে চলে এসেছি। ইচ্ছা করেই রিকশা ওয়ালা কে রাস্তার এই পাশে রাখতে বললাম। হেঁটে রাস্তা পার হয়ে ঘুরে শান্তার পিছনে চলে যাব। পিছন থেকে ওর চোখ দুটো ধরব। না, না, এত সুন্দর মায়াবি চোখ দুটো বন্ধ করার আমার কোন অধিকার নেই। ঐ তো ওকে দেখা যাচ্ছে। একটা বেঞ্চে বসে আছে। আমি কোনদিকে না তাকিয়েই হাঁটা শুরু করলাম।
হঠাৎ একটা কর্কশ শব্দে ডানদিকে ঘুরে গেলাম। আমার হৃদপিন্ড অসাড় হয়ে এল। একটা প্রকান্ড ট্রাক আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে আছি ওটার দিকে। নড়ার শক্তি পাচ্ছিনা। ঠিক সেই স্বপ্ন টার মত অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ, আমার ফুলটা যেন নষ্ট না হয়। শান্তা…………………
জয়নাল মিয়ার আত্নকথা……………
ম্যালাদিন দিন পর আইজকা একখান খাসা মাল পাইছি। ভারত থেইকা আইছে, একবার খাইলে এক্কেবারে দিলের ভিতরে যাইয়া গুঁতা মারে। জব্বর জিনিস। কইলজাডা ফুরফুর করতাছে। মনেই হইতাছে না একটু আগে বউয়ের লগে কাইজ্জা কইরা আইছি। ক্যাসেটে কি সোন্দর গান হইতাছে-
ছাইয়া দিল মে আনারে, আকে ফির না যানা রে……………
বউরে আইজ ইচ্ছা মত মারছি। খালি হেঁচড় পেঁচড়। এইটা লাগব, ঐ টা লাগব। আমি কি ট্যাহার গাছ নাহি? তয় হ, কয়দিন ধইরা মালপানি ভালই পাইতাছি। কিন্তুক বেবাক ক্ষয় যাইতাছে ঐ মজিদ ব্যাপারীর মাইয়া ছখিনার পিছে। মাঝে মইদ্ধেই শাড়ি গয়না কিনা লইয়া পড়াইয়া দেই। আর আমারে দেখলেই কি সোন্দর হাসি দেয়। এক্কেবারে পরীর লাহান। দিলডা জুরাইয়া যায়। আইজ ও যামু। ওরে আমার খুব পছন্দ হইছে। শাদীও কইরা ফালাইবার পারি।
রমনা পার্কের কাছে আইহা পরছি। আর একডু গেলেই ফ্যাক্টরিত পৌছাইয়া যামু। তারপর আমার ছুটি। উড়তে উড়তে যামু ছখিনার কাছে। কি সুখ ই না লাগতাসে। হায়, হায়, ঐ ব্যাটা রাস্তার মইধ্যে খাড়াইয়া রইছে ক্যা? মরব তো। ঐ ব্যাটা সর, সর। আরে মরলি রে। ব্রেক চাপার টাইম নাইক্কা। এই লাগল ধাক্কা। মনে হয় এক্কেবারে ভর্তা হইয়া গেছে। আর থামানের দরকার নাই। তাড়াতাড়ি এনথনে ভাগি। হেষে পাব্লিকের মাইর খাইয়া আমিও ভর্তা হইয়া যামু। জলদি ভাগি। মালডার ই শ্যাষ হইয়া গেছে। আবার একটু খাওন লাগব।
ছাইয়া দিল মে আনারে, আকে ফির না যানা রে……………
শান্তার আত্নকথা……………
ওহ, সেই কখন থেকে বসে আছি। রাজকুমারের আসার নামই নেই। আমি আরো ভেবেছি ও হয়ত আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে পারে, তাই সেই সাড়ে আটটা থেকেই বসে আছি। অথচ ওর আসার খবর নেই। ইতিমধ্যে তিনবার কল দেয়া হয়েছে, সে ধরছেই না। আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে সে হয়ত ঘুমাচ্ছে। আবার ফোন দিলাম। তিন চার বার রিং হবার পর ও রিসিভ করল।
– হ্যালো, শান্তা। আমি সত্যি দুঃখিত। আসলে ঘুম ভাঙতে দেরী হয়ে গেছে।
আমার খুব রাগ লাগল। আমি বসে আছি তার জন্য, আর সে আরাম করে ঘুমাচ্ছে।
– তুমি জান আমি নয়টা থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি?
– I am extremely sorry. আর কক্ষনো………………
কেটে দিলাম। ছেলেরা এত স্বার্থপর কেন? মেয়েদের কষ্ট দিয়ে খুব মজা পায় তাইনা? ইচ্ছা হচ্ছে মোবাইল টা অফ করে রাখি। আবার মত পাল্টালাম। ও নিশ্চিত আমার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করবে। কি করে তাই দেখার ইচ্ছা হচ্ছে। হঠাৎই একটা mms এল। অয়ন পাঠিয়েছে। সেই একই জিনিস, কিন্তু কেন যেন খুব ভাল লাগে। দেখলেই আর রাগ করে থাকতে পারিনা। পাগল কোথাকার!
আমি কখনই ওর উপর রাগ করে থাকতে পারিনা। সেবার ভারসিটির বন্ধুরা ঠিক করলাম কক্সবাজার যাব। সব ঠিক, হঠাৎ মহারাজ ঘোষনা দিলেন উনি যাবেন না। কারন কি, উনার নাকি ভাল লাগছে না। শেষে আর কি, আমিও গেলাম না। তিন দিন ওর সাথে কথা বলিনি। ভারসিটিতেও ওকে এড়িয়ে গেলাম। তারপর সেকি কান্ড! হাত টাত কেটে, জ্বর বাঁধিয়ে একাকার অবস্থা। আমাকেই শেষ পর্যন্ত ওর সেবার ভার নিতে হল। ওর মা অবশ্য কিছু মনে করেন নি। খুবই প্রগতিশীল মহিলা। আমি আসলেই ভাগ্যবতী।
কি ব্যাপার এখনো আসছে না কেন? এতক্ষনে তো চলে আসার কথা। পথে আবার কোন বিপদ………। ছি! আমি এসব কি ভাবছি। ধ্যাত, আমার মনটাই যত নষ্টের গোড়া। নিশ্চয়ই কোন জ্যামে আটকা পড়ে গেছে। আসার পর অবশ্য প্রথমে ভাব দেখাব যে আমি খুব রাগ করেছি। ও নিশ্চয়ই এমন কিছু করবে যে আমি হাসিই থামাতে পারব না।
ওহ, এখনো আসছে না। নাহ, আজ যে করেই হোক রাগ করে থাকবই। আচ্ছা, এত মানুষ ছোটাছুটি করে রাস্তার দিকে যাচ্ছে কেন? আমিও যাব নাকি? নাহ, আমি ওখানে গেলে আবার ও এসে আমাকে না পেয়ে ভাববে আমি রাগ করে বাড়িতে চলে গেছি। শেষে আরেক কান্ড বাঁধাবে। থাক বাবা, আমি এখানেই বসে থাকি। যা হয় হোক, আমার কি। আচ্ছা, আমার বুক টা ব্যাথা করছে কেন? কেউ কি আমার নাম ধরে ডাকছে? মনে হল যেন অয়নের গলা……………………
দু’ বছর পর……………
জাহিদ চৌধুরী নামের একজন প্রকৌশলীর সাথে শান্তার বিয়ে হয়েছে। জাহিদ শান্তার সব কিছু জেনেই তাকে বিয়ে করেছে। এ ক’দিন শান্তা মানসিক ভাবে খুবই বিপর্যস্ত ছিল। জাহিদ তাকে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তুলেছে।
মাঝ রাতে হঠাৎ জাহিদের ঘুম ভেঙ্গে গেল। পাশ ফিরে দেখে শান্তা নেই। উঠে বারান্দায় এসে দেখে শান্তা অন্ধকার আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জাহিদ শান্তার কাঁধে হাত রাখল।
– চল, ঘুমাবে।
– আচ্ছা, আজ কত তারিখ?
– রাত ১২ টা যেহেতু বেজে গেছে, তাহলে ১৪ ই ফেব্রুয়ারী।
শান্তা জাহিদের সাথে ঘরে আসার সময় টেবিলের উপর থেকে একটা ডায়রী নিয়ে তার মাঝ থেকে একটা গোলাপ বের করে। দেখলেই বোঝা যায় অনেক পুরনো…………………