ক্যাডেট কলেজের প্রথম দিন। বাবা-মা, খালা-খালু, নানা-নানি, মামা-চাচা সবাইকে নিয়ে ক্যাডেট কলেজে হাজির। কেমন যেন ভয় ভয় লাগছিল। আমার খালাতো ভাই আর চাচা ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবাদে ক্যাডেট কলেজের অনেক গল্প শুনেছি। আর আমরা সবাই যেমন একটু বাড়িয়ে বলতে ভালবাসি নিজের বীরত্ত দেখাতে, আমার চাচা বা ভাই ব্যতিক্রম ছিলেন না। তারাও নিজের বীরত্ত দেখাতে বা শোনাতে ক্যাডেট কলেজের সিনিয়র ভাইদের সম্পরকে এমন গল্প শুনিয়েছেন যে আমি ক্যাডেট কলেজে ঢোকার আগেই ভয়ে মরে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল সিনিয়র রা যেন আমাকে দেখলেই খেয়ে ফেলবেন। এমন একটা চিন্তা ধারা নিয়ে আমি যখন অপেক্ষা করছিলাম তখন হঠাত আমার সামনে আসলেন আমার এস্করট বা গাইড( যে ক্যাডেট দের নিয়ম কানুন শেখায়, সাধারনত এক বছরের সিনিয়র হয়ে থাকে )। লম্বা ও ফরসা করে এক দানব মনে হচ্ছিল তাকে।
আফশীন ভাই। আমার এস্করট। আমার দুটো ভারী ব্যাগ নিজে নিয়ে যাচ্ছেন শেড দিয়ে। আমি বার বার জিজ্ঞাসা করছি যে ভাইয়া, ব্যাগ দুটো আমি নেই? ঊনার বারংবার নিষেধাজ্ঞা, হবেনা। কি ভালোবাসাতেই না নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে। বড় ভাই যেমন ছোট ভাই কে আদর ভালোবাসা আর কষ্ট দিতে চাননা, আমার এস্করট ও যেন ঠিক তেমনি ভাবেই আমাকে আদর করে নিয়ে যাচ্ছেন।
আমি আরেকবার ভদ্রতা দেখাতে গেলাম, ‘ভাইয়া একটা ব্যাগ আমি নেই?”
আফশীন ভাই পেছনে তাকালেন, কোন দিকে কেন তাকালেন বুঝলাম না (এখন বুঝি, উনি নিশ্চিত হলেন যে আমার বাবা মার দৃষ্টির আড়াল হয়েছি কিনা।) তারপর চোখ দুটো একটু গরম করে বললেন, “আমি তোমার ভাইয়া না। আমি তোমার ভাই। বুঝছ?’’
আমি একটু থতমত খেয়ে বললাম, “জি ভাইয়া। বুঝতে পেরেছি।“
উনি আবার একটু চোখ গরম করলেন, “জি ভাইয়া না। বল জি ভাই।“
তারপর আবার হেটে যাচ্ছি। হাটতে হাটতে প্রশ্ন, তোমার নাম কি?
আমি বললাম, “রাফায়েত”
আফশীন ভাই বললেন “কাইন্ডলি বল।“
আমি গলার স্বর আরেকটু নিচু করে বললাম, “রাফায়েত।“
আবার বললেন, “কাইন্ডলি বল”
আরেকটু দরদ মিশিয়ে বললাম, “রাফায়েত’’
বুঝে উঠার আগেই দেখি তিনি কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা যে কি এমন ভুল করলাম। আর কতোই বা কর্কশ আমার গলার স্বর। এবার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে ধমক দিয়ে আমাকে বললেন, “ কি? তুমি কাইন্ডলি বলতে পারনা?”
আমি এবার প্রাণ পনে আকুতি দিয়ে ছলোছলো নয়নে বললাম, “রাআআআফাআআয়েত L”
এবার আর সইতে পারলেন না আমার এস্করট। বুঝলেন দুনিয়ার সব চাইতে গাব টাকে পাইছেন তার ফলোয়ার হিসেবে। বুঝিয়ে বললেন যে প্রতিটা বাক্যের আগে কাইন্ডলি বলতে হয়। যেমন – তোমার নাম কি? উত্তর হবে- কাইন্ডলি রাফায়েত, তোমার বাড়ি কই? – কাইন্ডলি জামালপুর”
বুঝলাম না কোন জগতে এসে পড়লাম। আর কি এক মানুষ পরল আমার এস্করট।
কাইন্ডলি ইফেক্ট টা যে কতোটা খেয়ে ফেলেছিল তা বুঝলাম আমার প্রথম পেরেন্টস ডে তে। আম্মুর সাথে আমার কথোপকথন-
-বাবা, কেমন আছ?
-কাইন্ডলি ভাল(আম্মু একটু বোঝার ট্রাই করলেন)
-অনেক কষ্ট?
-কাইন্ডলি জী না।
এবার আম্মু আরেকটু বিব্রত। বুঝতে পারছেন না সমস্যা টা কোথায়। তুমি এগুলা কি বলতেছ?
-কাইন্ডলি, কাইন্ডলি বলতেছি।
-মানে? এইটা আবার কি?
-সিনিয়রদের সাথে কথা বললে সম্মান করে কাইন্ডলি বলতে হয়। আমার এস্করট শিখাইছে।
বাবা মা দুজনেই হতভম্ব হয়ে শখ করে ক্যাডেট কলেজে পাঠানো ছেলের এক সপ্তাহের পরিবর্তন দেখছেন, আর হয়তো ভাবছেন “ছেলেকে দিয়ে গেলাম মির্জাপুরে আর নিয়ে না যেতে হয় পাবনা থেকে।”
কাইন্ডলি হাসতে হাসতে মরেই যাইতেসিলাম... :))
প্রথম ব্লগেও দাওনাই।
এখন কাইন্ডলি :frontroll: দিয়া ফালাও কয়েকটা।
কাইন্ডলি আমি প্রথম ব্লগেই দশটার যায়গায় একশ টা দিয়ে দিছি। এখন আর দিলে ব্যাকবোন ভেঙ্গেই যাবে কাইন্ডলি।
:frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:
জেসিসির জন্য শব্দটা "কাইন্ডলি" না হয়ে "ইয়েস প্লীজ" ছিল। আর বাক্যের শুরুতে না হয়ে শেষে বসত। তবে এফেক্ট একই রকম ছিল। মনে করায়ে দিলা।
“কাইন্ডলি” এফেক্ট কি এখনও আছে............ :gulli2:
কাইন্ডলি লেখাটা ভালো হইছে.........
কাইন্ডলি, কাইন্ডলির পরিবর্তে এখন আর্মিতে আসার পর হয়েছে স্যার স্যার ইফেক্ট
হা হা। এন্ডিং টা ভালো ছিলো :))
ব্লগে স্বাগতম , আলভী। প্রোফাইলে গিয়ে নিজের নাম আর সন টা বাংলা করে নাও। 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
হুম। বদল করে ফেললাম। ধন্যবাদ চাচ্চু :hatsoff:
Kindly, kupakupi oise 😀
MH
:clap:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
পড়ে ব্যাপক মজা পাইলাম কাইন্ডলি...
=)) =))
:)) :)) :)) :))
আমাদের এমন কোনো অভিজ্ঞতা যে কেন নাই! 🙁
খেয়া (২০০৬-২০১১)
ছোট ভাই টাই থাকলে মির্জাপুরে দিয়া ফার্স্ট পেরেন্টস ডেতে যাইয়ো। অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে 😀
কাইন্ডলি বা ইয়েস প্লিজ ধরনের কোন কিছু আমাদের কলেজে ছিল না, তবে বিএমএ থেকে প্রথম ছুটিতে তে বেরিয়ে রিকশা ঠিক করতে গিয়ে রিকশাওয়ালাকে স্টাফ বলে ডেকেছিলাম 😛
লেখা দারুন হয়েছে :thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:)) :))
ভাই আমি বাসায় এসে আমার বাবার সাথে কথা বলার সময় 'আসসালামু আলাইকুম স্যার " ব্যবহার করছি 😛
"মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,
জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"
আহসান স্যার সেম টু মি 😛
:)) :)) :))
ভাল লেখে তো! ছেলেটা কে দেখি ভেবে, প্রোফাইলের ছবিটা দেখতেই প্রথমে যা মনে আসলো- একটা কাইন্ডলি ভাব আছে 🙂
ধন্যবাদ আলীম ভাই
"আমি এবার প্রাণ পনে আকুতি দিয়ে ছলোছলো নয়নে বললাম, “রাআআআফাআআয়েত L”
ব্যাপক মজা পাইলাম ভাই। 😛
"মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,
জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"
এয়ারফোর্স একাডেমীতে এসে তোমার সিনিয়্ররও এই রকম ইফেক্ট দিছে।আশেককে(৯৯-০৫) রিসিভ করার সময় আমি আশে পাশে ছিলাম;দেখি একজন প্রশ্ন করল তোমার নাম কি?আশেক বল্লঃ কাইন্ডলি আশেক...
রাফায়েত......... :clap: :clap: :clap: :clap: