শোন শোন ভাইসব, শোন দিয়া মন,
জনৈক ক্যাডেট কথা শোন সর্বজন,
সকালে উঠিয়া সে যে মনে মনে কয়-
সারাদিন যেন সে গা বাঁচিয়েই রয়,
আরে – প্যারেড গ্রাউণ্ডে যখন ড্রেস চেকিং হয়,
শেভ-পালিশ নাই বলে পেছনে লুকায়,
প্যারেড ব্রেডের মত গজবের শেষে,
ফর্মক্লাসে এসে সে ঘুমায় নিমেষে ।
স্যারেদের বকা খেয়ে যদি ভাঙ্গে ঘুম,
মুখ ধুতে চলে যায় সোজা বাথরুম,
ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আড্ডাতে হায়,
মুখর এ ক্যাডেটের যেন জুড়ি নাই ।
আরে – হঠাৎ যদি ভি.পি. স্যার ঘুরতে আসে চলে,
সহসা ভালো ছেলে হয়ে যায় সকলে,
স্যার চলে গেলে পরে দেখে কে আর ভাই-
শত পানি যোগেও কয়লা সাদা নাহি হয় ।
স্যারের পড়া ধরা শুরু হয় যবে,
“ওসব তো পারি, স্যার”- বলে সে নীরবে,
মনে আছে একদিন পড়া পারেনি-
স্যারের বেতেতে সে দেখলো শনি ।
আরে – সেই ঘটনা মনে আছে যে তার,
বেদম পিটিয়ে ছিল রাগী সেই স্যার,
সেই রাগী স্যারের বদলীর দিনে,
মিলাদ দিলো সে যে ডর্ম নং তিনে ।
লাঞ্চ টাইমে বলে, “মানিক ভাই, ওয়াটার…”,
জবাব আসে, “পানি নাই, পানি চাও আবার!”
কোনমতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিয়ে,
রেস্টটাইম বলে বেডে শুয়ে পড়ে গিয়ে ।
আরে – গেমস টাইমে সব সাদার মাঝেতে,
ফল ইন হয়েছে সে যে ই.ডি.–র ড্রেসেতে,
ই.ডি.-র কারণটা মনে পড়ে তার,
স্মৃতির গভীরে হারিয়ে যায় সে আবার ।
রবিবারে পি.টি.-র মোজা ছিল না সাদা,
সোমবারে পি.টি.-সু-তে ছিল যে কাঁদা,
মঙ্গলবারে শার্ট জোড়া বোতামহীন,
বৃহস্পতিবারে প্যান্ট ছিল না যে ক্লীন ।
আরে – এত কসুর নিয়েও যদি স্টাফ ছেড়ে দেয়,
অ্যাডজুটেণ্ট স্যার নাম নোট করে নেয়,
শনিবারে পেয়ে গেল শাস্তিনামা,
তাইতো গায়েতে আজ খাকি রঙজামা ।
ক্লান্তিকর ই.ডি. শেষে গেমস শেষ হয়,
ভেজা ডাঙ্গরি দিয়ে ঘাম নেমে যায়,
গোসল ও “টি” করে নামাযের শেষে,
ইভিনিং প্রেপে সে ওঠে আবার হেসে,
আরে – ছোটখাটো কষ্ট বুকে নাহি রয়,
মেঘ সরে গেলে পরে সূর্যই রয় ।
প্রেপেও মুখর সে যে, থামে না একবারও,
কথার ঝর্না চলে গতি নিয়ে আরও ।
মোদের ক্যাডেট বড় গায়ক সে এক,
প্রেপে বসে বসে বানায় গানের রিমেক ।
কেঁপে কেঁপে ওঠে ফর্ম গানের সুরেতে,
পরীক্ষার চিন্তা নাই, মন ফুরফুরে,
আরে – পরীক্ষার হলে এসে তার মাথায় হাত,
না পড়ে শুধু ঘুমিয়ে কাটিয়েছে রাত,
প্রেপের শেষেতে টি.ভি.-রুমে দেখে এসে,
গানের সুরেতে টি.ভি.-রুম গেছে ভেসে ।
“লাইটস অফ” বেলের পর শুয়ে বেডে ভাবে,
কালকের দিনটা কিভাবে যাবে ?
এই ভেবে ভেবে নামে রাজ্যের ঘুম,
নীরব রাত হয়ে যায় আরও নিঝঝুম ।
………………………………………………………………………………………………………………
অনেক দিনের পরে, পাস আউটের কালে,
মনে পড়ে কত কিছু ঘটেছে ছ’সালে,
দেবার খাতায় নেই লেখার কিছু আর,
পাওয়ার বোঝা-টা লাগে বড় বেশি ভার ।
আরে – ছ’বছরের ক্যাডেট জীবন শেষ হবার পথে,
নিয়ে যাচ্ছি কত অভিজ্ঞতা করে সাথে,
ভুলে যাওয়া কঠিন এ ক্যাডেট জীবন,
গীতরচয়িতা কহে শুন সর্বজন ।
[ পুঁথিটা “হাজার বছর ধরে” উপন্যাস থেকে আনুপ্রাণিত হয়ে ক্লাস ইলেভেনে লেখা, এরপর কত কাহিনী…
আনিস হাসিনা ম্যাডাম House Cultural Show-র জন্য এরকম কিছুই খুঁজছিলেন, তো ম্যাডামের মনমত হলো, কিন্ত ম্যাডাম অন্য হাউসে চলে গেলেন, সাথে কবিতা-টাও নিয়ে গেলেন, ওই হাউসের কালচারাল শো-তে পাঠ হলো, কিন্ত রচয়িতার নামে একটু পরিবর্তন এলো…
থাক ওসব কথা… 😀 ]
খুব ভাল লেগেছে, একটা টিপিক্যাল ক্যাডেট ডে! :clap: :clap:
অসাধারণ :clap: :clap:
Life is Mad.
:boss:
মজা পেলাম । ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম। :clap:
অনেক দিন পর কলেজের কথা মনে পড়ে গেল দোস্ত। অসাধারণ।
🙂 :boss: :clap:
"মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,
জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"
ধন্যবাদ, ভাইয়েরা এবং দোস্ত 🙂 :dreamy: :goragori: :tuski:
:clap: :clap: :clap:
:shy:
::salute:: ::salute::
:clap: :clap:
আনিস হাসিনা ম্যাডাম কি বাংলার?
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
হু, বাংলার।
আমার ডায়েরি থেকে হুবহু তুলে দিচ্ছি
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯
ভ্যালেন্টাইন্স ডে। রাতে বদর হাউসের কালচারাল ফাংশন ছিল। মোজাহারের অসাধারণ পুঁথিটা এমন পচানি পচাইলো ওরা ! আনিস হাসিনার মাথায় ঠাডা
পড়ুক।
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
:hug: তুই-ই বুঝলি ব্যাপারটা...