নাহ, মেয়েটা তো বিরক্ত করে মারল। কত আর সহ্য করা যায়। বেশী বাড়াবাড়ি করলে………………
– এই মেয়ে, তোমার ধানাইপানাই থামাইবা? নাইলে কিন্তু এক্কেবারে পেটের মধ্যে ঢুকাইয়া দিলাম।
আমার হাতের চকচকে, ধারাল ছুরিটা দেখে মেয়েটা একটু থামল। কিন্তু তার চোখে-মুখে অবর্ণনীয় এক আতঙ্ক যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে। ভয়ের শীতল স্পর্শে তার মুখ ফ্যাকাশে। গতকাল পর্যন্তও সে আমার প্রেমে মশগুল ছিল। তার বিন্দু মাত্র ধারনা ছিলনা আমার সম্পর্কে। তাকে নিয়ে একটু পর যা করা হবে তা শুধুই আমার জানা।
– প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দিন। আমাকে যেতে দিন। কথা দিচ্ছি আমি কাউকে কিছু বলব না। প্লিজ…………
মেয়েটার কান্না বাঁধ ভাঙ্গা নদীর মত আমার হৃদয়ের উপকুলে আছড়ে পরার চেষ্টা করছে। কিন্তু ও তো জানেনা আমার হৃদয় কতটা কঠিন। ঠিক এভাবেই আমার কাছে কত মেয়েই যে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে। কোন লাভই হয়নি। খুন করা আমার একটা নেশা। আমার রক্তে বয়ে চলেছে খুনীর জীবানু। কিন্তু কোন দরকার নেই, প্রয়োজন নেই। এমনি এমনি খুন করার ভেতরেও একটা আলাদা মজা আছে। হিংস্র প্রাণি যেমন শিকার নিয়ে খেলতে ভালবাসে, আমিও খুব আনন্দ পাই এদের খেলিয়ে খেলিয়ে, তাদের মন জয় করে তারপর তাদের খুন করতে। যখন মেয়েগুলো জীবন বাঁচানোর জন্য আকুতি মিনতি করতে থাকে, আমার এত আনন্দ লাগে। নিজেকে ঈশ্বর ভাবতে ইচ্ছা করে। হা হা হা………………
আমাকে হঠাৎ এমন বিকট ভাবে হাসতে দেখে মেয়েটা আরো ভয় পেয়ে গেল। সবাই পায়। ভয় পাওয়ানোটাই তো আমার খেলা।
কাজল নামের মেয়েটাকে যখন আমার প্রেমের ফাঁদে ফেললাম, ও ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করেনি ওকে নিয়ে আমি কি করতে যাচ্ছি। আমার মন্ত্রনায় প্রলুব্ধ হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এল এক কাপড়ে। যখন বুঝতে পারল কি ভুল সে করেছে তখন তার সে কি কান্নাকাটি আর চিৎকার। আহ্, প্রাণটাই জুড়িয়ে যাচ্ছিল। একসময় তাকে বিছানায় চার হাত পা বেঁধে, তার হাত পায়ের রগ গুলো ধারাল ছুরি দিয়ে কেটে দিলাম। ভাগ্যিস বাড়িটার এ অংশ সাউন্ড প্রুফ করেছিলাম। রক্তে পুরো বিছানা একাকার। উহ্, কি আনন্দ। রক্ত দেখলেই আমার রক্ত নেচে ওঠে।
এই মেয়েটাকে কিভাবে মারব তা এখনো ঠিক করিনি। মেয়েটা নিজে থেকেই আমার হাতে এসে ধরা দিয়েছে। একদিন ধানমন্ডির পাশ দিয়ে জিপ নিয়ে আসছি। হঠাৎ দেখি একটা ছোকরা এক তরুনী মেয়ের ব্যাগ ছিনতাই করার চেষ্টা করছে। আমি তাদের সামনে জিপ থামিয়ে নেমে এলাম। ছেলেটা আমার গায়ে পুলিশের ইউনিফর্ম দেখে ভয়েই ব্যাগ রেখে পালিয়ে গেল। আমি তাকে ধাওয়া করার বিন্দু মাত্র চেষ্টা না করে মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
– আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব। আপনি না থাকলে……………(বাংলা ফিল্মের কমন ডায়লগ)
– না, না, ও কিছু না। তা আপনি কোথায় যাবেন?
– এইতো, কাছেই।
– যদি আপত্তি না থাকে তবে আমি আপনাকে নামিয়ে দিতে পারি।
– আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সাথে সাথেই বুঝতে পারলাম এর মৃত্যুও আমার হাতেই আছে। কষ্ট লাগল মেয়েটার জন্য। বেচারা………………
– আপনার নামটাই তো জানা হল না।
– আমার নাম অপর্ণা।
– আমি সুমন। এস. আই., বাড্ডা থানা…………
এভাবেই চলাটা শুরু হল। সবার ক্ষেত্রেই একইরকম। শুধু পরিস্থিতি ভিন্ন। যথারীতি চলল মোবাইলে আলাপ, প্রেম, তারপর আমার এই আস্তানা। পুলিশের লোকদের জন্য আমার বাসার নিচ তলা পর্যন্ত বরাদ্দ। কিন্তু আমার এইসব ময়না পাখিদের জন্য basement টা অসাধারন।
– আপনি আমাকে কি করবেন?
– কাল পর্যন্তও তো আমারে তুমি কইরা বলতাছিলা। আজ আবার আপনি আপনি করতাছ যে। পিরিত শেষ?
অপর্ণা কিছুই বললনা। যাকে আমি খুন করি তার সাথে আমি খাঁটি গ্রাম্য ভাষায় কথা বলি। নিজের ভেতর এক আদীম বন্যতা অনুভব করি। চর এলাকার মানুষরা যে কেন এত নিষ্ঠুর হয়!!!!!
আর দেরী করা ঠিক হবেনা। শেষে শিকারের প্রতি মায়া জন্মে যাবে। আমি আবার বেশী মায়াবান কিনা!!!!
– আমাকে ছেড়ে দাও। তুমি যা বলবে আমি তাই করব।
– চল, বাথরুমে চল।
– কেন, বাথরুমে কেন?
– না, না, ওসব কিছুনা। আমি অতটা খারাপ না। ছিঃ কি যে বল।
জোর করে উঠিয়ে বাথরুমে নিয়ে এলাম। এত পাতলা শরীর। কে জানে রক্ত বেশী হবে কি না। রক্ত বেশী না হলে তো আমার সব প্ল্যান ই বৃথা। দেখা যাক।
বাথটাবে পানি ভর্তি করে মেয়েটাকে শুইয়ে দিলাম। তারপর উপুড় করে ধরে হাত পা শক্ত নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধলাম। মেয়েটা নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য ছটফট করতে লাগল। বহু কষ্টে বাঁধার পর ধীরে ধীরে তার সুন্দর-নিটোল হাত আর পায়ের রগ গুলো ধারাল হান্টিং নাইফ দিয়ে কাটতে লাগলাম। অপর্ণা যন্ত্রণায় হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগল। বাথটাবের পানি লাল রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠল। ইস্, কি সুখ! কি তৃপ্তি! এবার ওকে সোজা করে দিলাম। বাতাস নেয়ার জন্য ওর শরীরের কোষগুলো হাসঁফাঁস করছে। আমি যেন অনুভব করতে পারছি। আস্তে, আস্তে, ওর চিৎকার ক্ষীণ, নিস্তেজ হয়ে আসছে। কি মজা! আহ্, মানুষ খুন করায় এত আনন্দ কেন? আচ্ছা, আমি কি sadist? আবার জিগায়। কোন দরকার ছিল? ধ্যাত, আমি যে কি না!…………………………………
পরিশিষ্ট………
“ ঢাকার কোন এক অখ্যাত এলাকা থেকে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রথম সিরিয়াল কিলার রশু খাঁ আটক হয়েছে। গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কৃতিমান সন্তান এস. আই. সুমন মাহমুদ। জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে, রশু খাঁ এ পর্যন্ত প্রায় ১২০ টি খুন করেছে।………………”
কেউ লক্ষ করেনি রশু খাঁ কে থানায় আনার সময় সুমন মাহমুদের মুখে একটা ক্রূঢ় হাসি লেগে ছিল…………………………
থ্রিলার হিসেবে ভালো ছিল।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
:thumbup:
thanx......
🙂
"মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,
জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"