জীবনে প্রথম বারের মত কোন গল্প পোস্ট করলাম। দয়া করে ভুল গুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন…………………………………………
মহাবীর W
১। চোখ মেলতেই একটা আবদ্ধ কক্ষ দেখতে পেলাম। বুঝলাম না আমি কোথায়। বোঝার সময় ও পেলাম না। নিচে থেকে আমাকে ঠেলে ওপর দিকে পাঠানো হচ্ছে। হঠাৎ করেই পাশে নিজের মত একজনকে দেখে নিজের অজান্তেই হাতটা বাড়িয়ে দিলাম-
– হাই আমি রবিন। ( কোথ্থেকে জানলাম কে জানে !)
– আমি ইনু।
– আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
– আমি এখনো জানিনা। তবে শিঘ্রীই জেনে যাব।
কিছু বলার আগেই হুশ করে বড়সড় একটা জায়গায় বেরিয়ে এলাম। চারপাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। কোথা থেকে যেন ভেসে এল –
……………. WBC পরিবারে তোমাদের স্বাগতম……………..
২। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমার কাজ সম্পর্কে অবহিত হলাম। আমরা যে মানুষটির দেহে বাস করছি- আমাদের কাজ হচ্ছে তাকে সবসময় রোগমুক্ত রাখা। মাত্র আধঘণ্টায় অনেক কিছু শিখলাম। আমার মত দেখতে গোল আরো এক পরিবার আছে। ওরা RBC, রক্ত সাম্রাজ্যের সম্রাট। Rolls Royce, Cadillac, Mercedes, Limousine নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সবার ব্যাকপ্যাক এ থাকে অক্সিজেন। কাউকে দেখা যায় বড় ঐ পাহাড়ে যাচ্ছে, কেউ বা ওখান থেকে বের হচ্ছে। সারাদিনে দুইবার ডিউটি।
আমরা WBC রা মধ্যবিত্ত, তাই hero, pulsar, hunk এসব নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তবুও আমরা সুখি। অন্তত platelet দের মত ঘন্টা লাগানো সাইকেল তো আর চালাতে হয় না। আমরা হলাম বীর যোদ্ধা। নিজেদের তৈরী samurai নিয়ে আমরা রাত দিন ডিউটি দেই। কোন জীবানু ninja এসে ঢুকলেই সারা প্রাসাদে সোরগোল পরে যায়।
৩। হটাৎ করেই টিং টিং করে সাইকেল চালিয়ে একদল প্লাটিলেট সামনে দিয়ে চলে গেল। কোথায় যেন সাইরেন বাজছে। আমিও পিছু পিছু গেলাম আমার Xingfu টা নিয়ে। মাত্র একদিন বয়স তো তাই আপাততঃ এটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। আমার হিংসা লাগে কমান্ডারের Hunk টা দেখে। কি সুন্দর!!!
মোড় ঘুরতেই দেখতে পেলাম প্লাটিলেট গুলো সাইকেল থামিয়ে নেমে পড়ল। তারপর পকেট থেকে এক বোতল thromboplastin বের করে সামনে ছড়াতে লাগলো। বুঝতে পারলাম যে আমাদের সুরঙ্গে কোন ভাবে ফাটল ধরেছে। তাড়াতাড়ি সরে আসলাম সেখান থেকে। শেষে আবার আমাকেও জালে আটকে যেতে হবে। ঘুরে আসতে গিয়েই একটা Cadillac এর সাথে বাড়ি খেয়ে ছিটকে পড়ে গেলাম। কাপড় টা ঝেড়ে যেই ঘুরেছি দেখি গাড়ির দরজা খুলে একটা মেয়ে (আমার বয়সী) RBC বের হয়ে এল। অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম মেয়েটার সৌন্দর্য। মাথার চুল গুলো একপাশে সরিয়ে গম্ভির মুখে বলল-
– তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেন?
– বারে, আমার এই ছোট্টো Xingfu দিয়ে তোমাকে আমি কিভাবে ধাক্কা দেব? উল্টো তুমিই তো আমাকে ফেলে দিলে। কতখানি জায়গা কেটে গেছে দেখ ত।
– প্লাটিলেট গুলোকে বলো enzyme লাগিয়ে দেবে। এরপর থেকে দেখেশুনে রাস্তায় চলবে।
বলেই আবার গাড়িতে উঠে পাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেল। আমি অবাক দৃষ্টিতে তার যাওয়ার পথে চেয়ে রইলাম।
৪। চার দিন পার হয়ে গেল। নিজেকে আমার খুব বড় বড় লাগছে। ইতোমধ্যে কয়েকটা জীবানু ninja কে কুপকাত করেছি। সেই মেয়েটার সাথে আরো দুবার দেখা হয়েছে। যতবার ই দেখি, আমার nucleus টা একটু করে কেঁপে উঠে যেন। আকদিন আর থাকতে না পেরে ইনু কে বলেই ফেললাম-
– দোস্ত, ঐ মেয়েটার প্রেমে পরে গেছি মনে হয়।
– কি বলিস তুই এসব? ও হল RBC (রাজ বংশের কন্যা!)। তোকে তো পাত্তাই দেবে না। উলটো ওর বাবা জানলে তোকে AIDS ninja-র কাছে পাঠিয়ে দিতে পারে।
শুনেই আমার আত্নারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার অবস্থা হল। কি করে মেয়ে টাকে ভুলে যাব তাই ভাবতে লাগলাম। হটাৎ করেই কোথায় যেন invading alarm বেঁজে উঠল। ব্যাপার কি দেখার জন্য বাইরে আসতেই দেখি সব WBC যোদ্ধা সমর সজ্জায় সজ্জিত হয়ে পড়েছে। তারা দল বেধে কোথায় যেন যাচ্ছে। আমিও আমার ব্যাকপ্যাক টা কাঁধে চাপিয়ে, পকেটে samurai টা ভরে রওনা দিলাম আমার নতুন পাওয়া Pulsar টা নিয়ে।
কিছুদুর এগিয়ে যেতেই দেখি বিশাল বড় কয়েকটা SARS ninja আমাদের সুরঙ্গ পথ আক্রমন করেছে। আর আমাদের বীর যোদ্ধারা তাদের সাথে তুমুল যুদ্ধ করছে। SARS গুলো কি ভয়াবহ! আর কি বিশাল! দেখেই ভয় করছে। হটাৎ একটা ninja কে দেখি কয়েকটা WBC কে কুপকাত করে পাশের আরেকটা সুরঙ্গে যাচ্ছে। আমার ছোট্টো nucleus টা লাফিয়ে উঠল। কারন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি একটা Cadillac গাড়ির মধ্যে আমার রানী বসে আছে (মেয়েটার নাম আসলেই রানী)। আমার আর কোন ভয় ডর রইল না। বিদ্যুত বেগে Pulsar চালালাম ninja টার দিকে। কাছাকাছি হতেই লাফিয়ে উঠলাম। শুন্যে থাকা অবস্থাতেই ব্যাকপ্যাক থেকে samurai টা বের করে চিৎকার দিয়ে উঠলাম- “ইয়াহু”!!!!!!!!!!……………..
জানিনা আমার চিৎকার শুনেই কিনা ninja টা আমার দিকে ঘুরে গেল। এদিকে আমি লাফ দিয়ে body control হারিয়ে ‘থ্যাপ’ করে ninja টার গায়ে এসে পড়লাম। অম্নি সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল……………………
৫। এখন আমি WBC দের commander। আমার অনেকদিনের আশা hunk টা পেয়েছি (যদিও second hand)। মাঝে মাঝেই রানীর সাথে দেখা হয়। ও আমাকে খুব ভালবাসে। বিকেল বেলা আমরা heart এর পাশে বসে গল্প করি। খুব ভাল লাগে। বয়স হয়ে গেল। ৮ দিন পার হয়ে গেছে। এখনো আরো ২ দিন (!) বাঁচব। সত্যি জীবনটা অসাধারন।
এখন বলি সেদিন কি হয়েছিল। আমি তো পড়লাম ninja-র উপর থ্যাপ করে। তার বড়সড় হেলমেট এর বাড়ি খেয়ে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। কিন্তু আমার samurai টা গিয়ে পড়ল ninja টার গলায়। অমনি কুপকাত! আর এদিকে বাকি ninja গুলো আমার মত একটা বাচ্চাকে এতবড় একটা ninja কে কুপকাত করতে দেখে ভয়েই পালিয়ে গেল। আর আমিও রানীর কাছে hero হয়ে গেলাম। ভাগ্যিস সেদিন অজ্ঞান হয়েছিলাম!
– ও গো শুনছ? একটু এদিকে আস না। আমার গাড়িটা plasma তে আটকে গেছে।
ঐ যে রানী ডাকছে। আসি। টা টা……………
😛 😀 :clap:
খেয়া (২০০৬-২০১১)
অনেক মজা পাইলাম।আমার ছারপোকার কাহিনির চেয়েও অনেক সুন্দর হইছে 😀
😛
"মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,
জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"
দারুন হয়েছে :clap:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করছে............
🙂 :tuski:
"মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,
জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"
ডাক্তার নাকি?
ধন্যবাদ সবাইকে
;;)
আমি ডাক্তার নই। 🙂
"মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,
জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"