ক্যাফেইন একটি তিক্ত স্বাদযুক্ত পদার্থ। এটি আমরা কফি, চা, চকলেট, হাল্কা পানীয় যেমন কোকোকোলা, সেভেন-আপ, পেপসি এবং বিভিন্ন ওষুধে পেয়ে থাকি। আমাদের দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় এর অনেক প্রভাব আছে। বিশেষ করে এটি আমাদের দেহের স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করতে পারে। এটি আপনাকে আরও সজাগ করতে পারে এবং আপনাকে করতে পারে আরও শক্তিদীপ্ত।
বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দুই বা চার কাপ কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইনের মাত্রাটা ক্ষতিকর নয়। যদিও মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন,
— এটি আপনাকে দুর্বল এবং অস্থির করতে পারে
— আপনার নিদ্রাহীন অবস্থার জন্যে দায়ী হতে পারে
— কারণ হতে পারে মাথাব্যথার বা মাথা ঘোরার
— আপনার হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে অথবা অস্বাভাবিক হৃদকম্পনের কারণ হতে পারে
— দেহে জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে
— আপনাকে এর ওপর নির্ভরশীল করতে পারে। সুতরাং আপনি এটি আরও বেশি গ্রহণ করতে চাইবেন। আর যদি আপনি ক্যাফেইন সেবন করা বন্ধ করেন তবে তা বন্ধের জন্যে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেবে।
কিছু কিছু মানুষ অন্যান্যদের তুলনায় ক্যাফেইনের প্রভাবের প্রতি অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে। তাদের ক্যাফেইন ব্যবহারের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিত। আর গর্ভবতী ও শিশুকে দুগ্ধপান করানো মহিলাদের বিষয়টি লক্ষ্য রাখা উচিত। বেশ কিছু ওষুধ এবং সম্পূরক খাবার ক্যাফেইনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে।
ক্যাফেইন গ্রহণের ইতিবাচক প্রভাবসমূহঃ-
১। ক্যাফেইন দীর্ঘদিন ধরে খাবারের সাথে গ্রহণ করলে হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়।
২। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে অবধারণ বা বোধশক্তি ক্ষমতা কমে যাবার প্রবণতাকে ক্যাফেইন কমিয়ে দেয়। সাথে অ্যালঝিমার্স বা যে কোনো কিছু ভুলে যাওয়া রোগের ঝুঁকি কমায়।
৩। ক্যাফেইন আমাদের দেহে নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এদের মধ্যে রয়েছে নরএপিনেফরিন, অ্যাসিটাইলকোলিন, ডোপামিন, সেরোটোনিন, এপিনেফরিন এবং গ্লুটামেট।
৪। অ্যাসিটাইলকোলিন আমাদের মনোযোগ, একাগ্রতা, শিক্ষা, এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু আমাদের এই স্মরণশক্তি এবং বোধশক্তির ওপর ক্যাফেইনের প্রভাব আছে বলে এখনও পর্যন্ত কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
৫। নিম্নমাত্রার ক্যাফেইন আমাদের ব্রেনের সতর্কতা বৃদ্ধি করে এবং আমাদের ক্লান্তি দূর করে।
৬। ক্যাফেইন আমাদের দেহে বিপাকীয় হার বৃদ্ধি করে।
৭। খুব সম্ভবত ক্যাফেইন ক্যান্সার হবার ঝুঁকি কমিয়ে আনে এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার হারকে বিলম্বিত করে।
৮। পারকিনসন নামক রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে ক্যাফেইন সাহায্য করে। তাই ক্যাফেইন পারকিনসন রোগের জন্যে সৃষ্টি স্নায়বিক লক্ষণ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
৯। ক্যাফেইন খুবসম্ভবত টাইপ–২ ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
১০। ক্যাফেইন কয়েক ধরণের যকৃত ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
১১। ক্যাফেইন আমাদের দেহে উপস্থিত কিছু ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করবার জন্যে স্বাস্থ্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সক্রিয় উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে।
১২। কফিতে যে ক্যাফেইন থাকে তা আমাদের অন্ত্রে ব্যথা উপশমকারী (Pain Killers) ঔষধগুলির কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করে দেয়। বিশেষ করে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা রোগীর চিকিৎসার জন্য এটা অনেক উপকারী।
এখান থেকে বলা যায় যে, যারা দীর্ঘদিন ধরে কপি পান করেন তারা সারাজীবন অনেক বেশি সুবিধা পায়।
ক্যাফেইন গ্রহণের নেতিবাচক প্রভাবসমূহঃ-
১। যারা অনিয়মিত ভাবে ক্যাফেইন গ্রহণ করে, তাদের রক্তচাপ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আর রক্তচাপ বৃদ্ধি স্ট্রোক এবং মস্তিষ্কের রক্তনালীর রোগ হবার সম্ভাবনার সাথে সম্পর্কিত। যা কি না পরবর্তীতে মস্তিষ্কের ভেতরে ঠিকঠাক মতো রক্ত সরবরাহতে বাঁধা পড়বার ঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে।
২। ক্যাফেইন আমাদের মোটর স্নায়ুর আন্দোলিত হবার হারকে কমিয়ে দিতে পারে। যার ফলে হাত কাঁপতে পারে।
৩। ক্যাফেইন কর্টিসল নামক স্টেরয়েড হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি করে দেয়। যার ফলে আমাদের দেহে কিছু সহ্য ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং হরমোন ঘটিত সমস্যা দেখা দেয়।
৪। ক্যাফেইন আমাদের ঘুমে সমস্যা করে এবং শরীরকে কড়া করে দিয়ে অনিদ্রা সমস্যার সৃষ্টি করে।
৫। ক্যাফেইন আসক্তি সৃষ্টিকারী একটি উপাদান। যারা নিয়মিত ক্যাফেইন গ্রহণ করেন তারা কোনো কারণে এটি নেয়া বন্ধ করলে মাথাব্যথা, দেহে ক্লান্তি আসা সহ ব্রেনের সতর্কতা কমে যাবার মতো নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬। অতি উচ্চমাত্রায় ক্যাফেইন (৩০০ মিলিগ্রাম বা তার বেশি) গ্রহণ করলে উদ্বেগ বা উৎকন্ঠা সৃষ্টি হতে পারে।
৭। ক্যাফেইন অধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে শ্রবণ শক্তির সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
৮। বিশেষ করে বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে অধিক ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে যাবার হার বৃদ্ধি পায়।
খাদ্যে ক্যাফেইনঃ-
ক্যাফেইন একটি উপাদান যা কি না বেশকিছু উদ্ভিদে পাওয়া যায়। আবার এটি মানুষের দ্বারা তৈরি হতে পারে এবং খাবারে উপস্থিত থাকতে পারে। এটি একটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দীপক এবং একটি মূত্রবর্ধক, যা কি না আমাদের দেহে উপস্থিত পানিকে মুক্ত করে দেয়।
কার্যকারীতাঃ-
ক্যাফেইন আমাদের শরীরে শোষিত হয় এবং তা অতি দ্রুত মস্তিষ্কে সঞ্চালিত হয়। এটি আমাদের রক্তপ্রবাহে সঞ্চিত হয় না অথবা আমাদের দেহের ভেতরে জমা হয় না। ক্যাফেইন খাওয়ার বেশকয়েক ঘন্টা পরে এটি মূত্রের মাধ্যমে আমাদের দেহ থেকে বের হয়ে যায়।
ক্যাফেইনের কোনো পুষ্টিগত চাহিদা নেই। এটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণের ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা হয়।
ক্যাফেইন উদ্দীপত করে বা উত্তেজিত করে আমাদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রকে। এটি অ্যাকোহলের প্রভাবকে কমিয়ে দেয় না। যদিও অনেক মানুষ এখনও মনে করে যে, এককাপ কফি একজন ব্যক্তিকে প্রশান্তি দিতে পারে।
অল্প সময়ের জন্যে ক্লান্তি বা ঘুমঘুম ভাব থেকে মুক্তি পাবার ব্যাপারে ক্যাফেইন ব্যবহার করা যেতে পারে।
খাদ্যের উৎসঃ
ক্যাফেইন ব্যাপক আকারে খাওয়া হয়ে থাকে। এটি প্রাকৃতিকভাবে পাতা, বীজ এবং ফল সহ প্রায় ৬০ টিরও বেশি উদ্ভিদে পাওয়া যায়। তার মধ্যে রয়েছে – চা পাতা, কোলা বাদাম, কফি, কোকো বীজ।
ক্যাফেইন কিছু প্রক্রিয়াজাত করণ খাদ্যে পাওয়া যায়। যেমনঃ
– কফি – ১০০ মিলি গ্রাম প্রতি কাপে
– চা – ১৪ থেকে ৬০ মিলি গ্রাম প্রতি কাপে
– চকলেট – ৪৫ মিলি গ্রাম প্রতি ১.৫ আউন্সের কাঠিতে
– বেশির ভাগ কোলা জাতীয় পানীয়তে (যদিও তাদের লেবেলে লেখা থাকে যে ক্যাফেইন মুক্ত) – ৪৫ মিলি গ্রাম প্রতি ১২ আউন্স পানীয়তে
– ক্যান্ডি, অ্যানার্জি ড্রিংস, স্ন্যাক্স, চুইংগাম – ৪০ থেকে ১০০ মিলি গ্রাম প্রতি সার্ভিংসে বা নির্দিষ্ট অংশে
——–( সংক্ষিপ্ত তথ্য) ————-
তথ্যসূত্রঃ
১। http://en.wikipedia.org/wiki/Caffeine
২। http://www.mayoclinic.org/caffeine/expert-answers/FAQ-20058459?p=1
৩। http://www.marchofdimes.com/pregnancy/caffeine-in-pregnancy.aspx
৪। http://www.nlm.nih.gov/medlineplus/caffeine.html
৬। http://www.mayoclinic.org/caffeine/expert-answers/FAQ-20058459?p=1
নিয়ন্ত্রিত গ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে (দৈনিক ১ কাপ সকালে নাস্তার পরে, বড়জোর দ্বিতীয় কাপ দুপুরে খাবার পরে) ক্যাফিন, ট্যাফিন বেশ ভালই লাগে। একটা সময় শরীরের উপর ক্যাফিন নির্যাতন চালিয়েছি। সেটা বিদেশে এসে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে এনেছি গত দুই বছর ধরে। তবে এখনো একদিন সকালে পেটে ক্যাফিন না পড়লে মাদকাসক্ত রোগীর মত অস্থির হয়ে উঠি। 🙁
ভাল, তথ্যমূলক লেখা। :thumbup:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ধন্যবাদ ভাই। 🙂
ভালো থাকা অনেক সহজ।
ক্যাফেইন এর পাল্লায় সেভাবে পড়া হয়নি এখনো, সেটা ভাল হয়েছে না খারাপ হয়েছে বুঝতে পারছি না 😛
এরকম একটা তথ্যমূলক লেখার জন্য ধন্যবাদ, আরো চাই :thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
🙂 ধন্যবাদ ভাই ...
ভালো থাকা অনেক সহজ।
জীবনে থেকে নিকোটিন বিদায় করার পর আপাতত সব কিছু থেকেই দূরে আছি... 😀
গুড জব! :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
🙂 ধন্যবাদ ভাই ... ।
ভালো থাকা অনেক সহজ।
ভাল্লাগছে 🙂
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
🙂 ধন্যবাদ ভাই।
ভালো থাকা অনেক সহজ।