একজন আশরাফের কথা…

কিরে কি খবর? কেমন কাটলো ফার্স্ট টার্ম…
আর কইসনা…পাঙ্গা খাইতে খাইতে শেষ।
আরে মামু, বিএমএ তে গ্যাছো, পাঙ্গা খাবানা…এইটা কেমন কথা। তা খাইলি কেমন? 😉

আশরাফ এক্কেবারে প্রথমদিন থেকে বর্ণনা শুরু করে।

দোস্ত জানস, প্রথম ছয়দিনের কথা আমার একদম মনে নাই।
ফাইজলামি করস? মনে থাকবো না ক্যান? মন কি মাথা থেকে হাঁটুতে তে রিপ্লেস করছোস নাকি?
আরে না। রাত নয়টার মধ্যে রিপোর্টিং ছিল। আমি সাতটার মধ্যেই ঢুকে গেলাম। সাথে সাথেই ব্যাগ মাথার উপর তুলে দিয়ে উঠবস করানো শুরু করলো। আমি ভাবছি মজাক করে। কিন্তু তারা যে মোটেই মজাক করছেনা সেইটা বুঝলাম দুই ঘন্টা পর। উঠবস করছি তো করছি…শেষ দিকে আর কোন ফিলিংস ছিলনা…যন্ত্রের মতো খালি উঠো আর বসো, উঠো আর বসো…

ছয়দিন পর বোধ উদয় হলো…খুব সম্ভবত জুমার সময় ১ ঘন্টা মসজিদে ঘুমানোর সুযোগ পেয়ে। নামাজের পর বাইরে বের হলাম। সিনিয়র ভাইয়ারা সবাইকে পাঞ্জাবী খুলে ফেলতে বললেন।
ক্যান?
ভাজি করার জন্য…
এইটা আবার কি?
আরে খালি গা করে বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে শোয়ায় রাখে। তারপর পরোটার মতো উলট পালট করে…দোস্ত সূর্য যে একটা আগুনের গোলা সেইটা বিএমএ তে যেয়ে টের পাইছি…ধুর!! পানিশমেন্ট এর কথা বাদ দে…অন্য কিছু বল। তোদের ওখানে মজার কিছু ঘটেনা?আশরাফ তারপর মজার ঘটনা বলা শুরু করে। সেই ঘটনাও কিভাবে কিভাবে যেন পানিসশমেন্টে গিয়ে শেষ হয়…

এরপর ছুটি ছাটায় ওর সাথে দেখা করতাম…ওর বিএমএ এর কাহিনী শুনতাম…অফিসার হয়ে ঢাকায় এসে আশরাফ ফোন দেয়…সাথে মাসুদ, ফিরোজ, আমিন, নাজমুল সবাই…অফিসার বন্ধুদের সাথে আমরা নন অফিসার (ব্লাডি সিভিলিয়ান) রাও যোগ দেই…রাতে বুয়েটে শাক-পাতা পার্টি হয়…সেই পার্টিতে আমি এক কোনায় ঝিম মেরে পড়ে থাকা আশরাফকে জিজ্ঞেস করি,

দোস্ত, তুই এখনও কবিতা লিখিস…
নারে!! আর্মির সাথে আসলে কবিতা যায়না…
কিন্তু এরশাদ তো লিখছে…
আরে ধুর!!!

আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে পুরোনো আশরাফকে খুঁজে বেড়াই…কি দুর্দান্ত কবিতাই না ও লিখতো…আমার নিজের ডাইরীতে ওর অনেক কবিতা লিখে রাখা আছে…প্রিয় কবি সুনীলের তো বই আছে…কিন্তু দ্বিতীয় প্রিয় কবি সেই আশরাফের তো কোন বই নাই…তাই লিখে রাখা…সময়ে অসময়ে সেগুলো পড়া…শুধুই কি কবিতা…ওর সবচে বেস্ট ছিল ঈশপের গপ্পগুলা…রাতে একাডেমিতে আমরা যখন টাই- প্যান্ট পড়ে পড়া-লেখার চেষ্টা চালাতাম তখন ও শুরু করতো উপস্থিত ঈশপের গল্প…পাশের সেকশন থেকে পর্যন্ত পোলাপাইন চলে আসতো সেই গল্প শুনতে……

সেই সাহিত্যিক শয়তানটা গত দুইটা বছর কিছুই লিখে নাই… 🙁

আমার খালি চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে…ওই ব্যাটা মাইনুদ্দিন…আমাগো আশরাফ রে ফিরাই দে…

(ডুয়াল পোস্টিং…সচল ঘুরে এখানে এলো)

১,২২৫ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “একজন আশরাফের কথা…”

  1. বইন্য তোর জইন্য

    আমার খালি চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে…ওই ব্যাটা মাইনুদ্দিন…আমাগো আশরাফ রে ফিরাই দে…দরকার হইলে লিংকনরে নিয়া নে.... 😆 😆

    জবাব দিন
  2. বইন্য তোর জইন্য

    ''পাশের সেকশন থেকে পর্যন্ত পোলাপাইন চলে আসতো সেই গল্প শুনতে''---বুঝাই যাইতেসে কি মালামাল গল্প!!...আমারো শুনতে ইচ্ছা করতেসে...শুনতাম চাই.. 😥

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।