সে অনেকদিন আগের কথা। বঙ্গদেশে তখন নতুন নতুন মোবাইল এসেছে। বাপ চাচারা ফিলিপ্স ডিগার মতো বিশাল বিশাল সেট নিয়ে ভাঁজ নেন…পকেট থেকে মাঝে মাঝে যন্ত্রখান বের করে তার দিকে আবেগঘন চোখে তাকান আর মনে মনে উচ্চারণ করেন, “আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম…”
সেদিন গিয়াছে। বড় বড় সেটগুলো ছোট হতে হতে কখনও লিপ্সটিকের সমান হয়ছে। আআআবার বড় হয়েছে। সাথে যুক্ত হয়েছে ক্যামেরা, গান শোনার ব্যবস্থা, নীল দাঁত…কত কি…
এরিকসন, নোকিয়ার ভালো ভালো সেট গুলোর দাম অনেক। সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে না হলেও আঙ্গুরফল সমান উচ্চতায় তো বটেই। বাসড্রাইভার, রিক্সাওয়ালা কিংবা হেল্পার ভাইদের কথা না হয় বাদই দিলাম। তাই গুঁটিকয়েক মানুষের সৌভাগ্য হল সেগুলো নিয়ে ঘোরা এবং ভাঁজ মারা…বাকিরা শুধু দেখে। আর মনে মনে ভাবে, আরে বাপু মোবাইল তো কথা বলার জন্য। এতো কিছুর কি দরকার!!!
সে দিনও গিয়াছে। আপমর জনগণের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে চায়না। এই পর্যন্ত পৃথিবীতে মোবাইলে যতরকম সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে তার সবই আছে তাদের তৈরী করা সেটগুলাতে। ৩ মেগা পিক্সেল ক্যামেরা, ডিজিটাল মিউজিক প্লেয়ার, ভিডিও রেকর্ডার + ক্যামেরা, টাচ স্ক্রীণ, ২ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত এক্সটাররনাল সাউন্ডবক্স। দাম নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। ৩০০০ থেকে শুরু করে ৬০০০। আমাদের তো চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই। দেখা গেল তাও মানুষ দুঃখ করছে। আহারে!! নোকিয়ার এন সিরিজটা মনে হয় বেঁচে থাকতে আর ব্যবহার করা হলোনা। তাই চায়নার মোবাইলগুলোর নাম রাখা হলো NOKLA… (নোকিয়া দেখে তোরা পাসনে ভয়, আড়ালে তার নক্লা হাসে :D)
আর কি চাই!! কয়েকদিনেই সবার হাতে পৌঁছে গেছে এই আশীর্বাদ। এখন আর কাউকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকে ক্যাবলার মতো চেয়ে থাকতে হয় না। চট করে একটা স্ন্যাপ শট নিয়ে নিয়ে যায়। আশ পাশ দিয়ে সুন্দরী ললনা গেলে তো কথাই নেই। জাস্ট একটা ক্লিক। বাস আজীবনে জন্য সে রয়ে যাবে ২ গিগা মেমরি কার্ডের ছোট্ট ঘরে। যখন ইচ্ছা তাকে দেখা যাবে। কাত কিংবা উপর নীচ করে।
কিন্তু খালি ছবি তুলে তো আর সবাইকে জানান দেয়া যায়না এই মহামূল্যবান সম্পদের কথা। কতিপয় মানুষ তাই যেখানে যায় ধুম করে ছয় ছয়টা সাউন্ড বক্স দিয়ে গান বাঁজানো শুরু করে। ভাবখানা এমন, “গান ছাড়া কি আমার এক মুহূর্তও চলে?” তাও সে কি গানের বাহার। লেটেস্ট হিন্দী কালেকশন। দয়া করে কেউ যদি বাংলা গান চালায় সেটাও হবে হাবিব কিংবা বালামের বিখ্যাত কোন প্যানপ্যানানি…যিনি শুনছেন তিনি কেমন বোধ করেন জানা হয়নি কখনো। তবে আশে পাশের যাদের শুনতে বাধ্য করছেন তাদের কান যে সেই মধুময় সংগীতে ঝালাপালা হয়ে যায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা…
গত কয়েকদিন যতবার বাসে উঠেছি ততবারই এমন সংগীত সমঝদার পেয়েছি। পাশের সিটে, সামনে কিংবা পিছনে। প্রতিবাদী বংঙ্গসন্তানরা অনেক সময় নীরবে এই যাতনা সহ্য করে নেন। তবে অনেকের সহ্য ক্ষমতা কম। তারা ভ্রু কুঁচকে গায়ককে খোঁজার চেষ্টা চালান। একবার পেলে বেরসিকের মতো সেই সমঝদারের সংগীত শোনায় বিঘ্ন ঘটান।
আমি ভাই মানুষের সাথে ঠিক মতো কথা বলতে পারিনা। আজকে যখন আমার পাশে একজন ঢিচ্চুঁম ঢিচ্চুঁম শোনা শুরু করলেন, আমি আশায় আশে পাশে তাকালাম। কেউ যদি আমার হয়ে একটু থামতে বলেন। দিন খারাপ…তেমন কাউকে পাওয়া গেলনা। পুরা পথ তাই আমিও মনে মনে গাইতে শুরু করলাম…
দে পানা দে, ইয়া হাবিবি…
দে পানা…
ওই সচলের লিখা এখানে নিষিদ্ধ করা হলো।
নকলা ফোনের কাহিনী জানতাম না, মজা পাইলাম।
ঠিক ঠিক..লেখা জোস....কিন্তু নিষিদ্ধ!!!(তসলিমা নাসরিন টাইপ... 😆 )
ভাল হইছে।
দে পানা দে ............ কার গান রে????
আইউটি-তে আমার এক বাইরের ফ্রেন্ড ঐ nokla মার্কা সেট নিয়া হেভী পার্ট মারতেছিল।
পরে ধরা খাইয়া আর ঐ সেট জনসম্মুখে বের করে নাই.।।...... 😀
"যখন ইচ্ছা তাকে দেখা যাবে। কাত কিংবা উপর নীচ করে।"...চমতকার লিখসো। কিন্তু এটা ক্যাডেট কলেজ related ঘটনা হলো নাতো!!
হুম্ম... কাহিনী কি,চায়না সেট কিনার বায়না ধরসস নাকি বাপ মায়ের কাছে??
আলম ভাই, আপনি ঠিকই ধরসেন।এইটা ক্যাডেট কলেজ রিলেটেড কাহিনী না।বাট আপনি চাইলে যে কোন কিছুই নিয়ে লিখতে পারেন সমস্যা নাই।কিন্তু একটা জিনিস এর হেরফের হওয়া যাবেনা,সেটা হল যে কোন কিছু নিয়ে লেখার আগে আপনাকে অবশ্যই ক্যাডেট হতে হবে। 😀
@Zihad,
ami as0le ei kotha tai bolte cahchhilam. khali cadet college niya likhte hobe emon kotha nai
আমিও একমত......নাহলে ছোট হয়ে যায় পরিসরটা।
প্রেম কর্লে পরোকিয়া, সেট কিনলে নোকিয়া