নির্ধর্মকথা- এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল, মিঠা নদীর পানি (২/৩)

আগের পর্ব

অসম্ভব্যতাঃ

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইসলামী পণ্ডিত জাকির নায়েকের বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে সাত মিনিটের লেকচারটি আমার খুবই প্রিয় 1। সাত মিনিটে প্রায় ২৮ টি মিথ্যা বা ভুল কথার মাধ্যমে জাকির নায়েক ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব ভুল প্রমান করতে না পারলেও সৃষ্টিবাদীরা কতটা অজ্ঞ তা ঠিকই প্রমান করেছেন 2। এই সাতমিনিটের মধ্যে মাত্র পাঁচ সেকেণ্ড সময় জাকির নায়েক বিবর্তন ঘটার “সম্ভাবনা” নিয়ে আলোচনা করেছেন হাসতে হাসতে, কারণ তার মতে, এটা সবাই বুঝতে পারে এইপ থেকে বিবর্তিত হয়ে মানুষ হবার সম্ভাবনা কী পরিমান ক্ষুদ্র। প্রায় সকল সৃষ্টিবাদীরা এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে রুপান্তরিত হবার সম্ভাবনাকে “শূন্যের কাছাকাছি” রায় দিয়ে বিবর্তন তত্ত্বকে বাতিল করে দেন।

অনেকে অনেক ভাবে বললেও সবচেয়ে যথাযথ যুক্তিটা এমন, এক প্রানী থেকে অন্য প্রানীতে পরিবর্তনের জন্য আলাদা- আলাদা অসংখ্য মিউটেশন হতে হবে। প্রতিটি মিউটেশন হবার সম্ভাবনাই যেখানে প্রায় শুণ্যের কাছাকাছি, সেখানে সবগুলো একসাথে হয়ে আলাদা একটি প্রাণী সৃষ্টি হওয়া অকল্পনীয় ব্যপার। ধরা যাক, একটি ছক্কার গুটি পাঁচবার নিক্ষেপ করা হবে। পাঁচবার নিক্ষেপে যদি পর্যায়ক্রমে ৩, ২, ৬, ২, ৫ উঠে আসে তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে একটি প্রাণী থেকে আরেকটি প্রাণী বিবর্তিত হলো। এখন পাঁচবার ছক্কা নিক্ষেপ করে ৩, ২, ৬, ২, ৫ পাবার সম্ভাবনা (১/৬* ১/৬* ১/৬* ১/৬* ১/৬* ১/৬= ১/৭৭৭৬) – ৭৭৭৬ বারে একবার। একটি নতুন প্রজাতির বিবর্তন কিংবা একটি নতুন অঙ্গের বিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা এরচেয়ে অনেক অনেক কম, সুতরাং বিবর্তন একটি অসম্ভব ব্যাপার।

কার্ডের উদাহরণে সম্ভাবনার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তাতে আপত্তি না থাকলে বিবর্তনের সাথে একে মেলানো মর্মান্তিক ত্রুটিপূর্ণ এবং অপ্রাসংগিক। চোখের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, বিবর্তন হবার জন্য অসংখ্য পথ খোলা থাকে। এখন একটি পথ গ্রহণ করে ফেলার পর আমরা যদি সেই পথটি গ্রহণ করার সম্ভাবনা হিসেব করি তাহলে সেটা যুক্তিসংগত হবেনা। উদাহরনের মাধ্যমে কথাটা পরিষ্কার করা যাক।

একটি তাসের প্যাকেটে বাহান্নটি তাস থাকে। এখন দোকান থেকে প্যাকেট কিনে, আমরা টেবিলের উপর সেগুলো সাজালাম। ধরি আমাদের সামনে ১০^৬৮ (১ এর পর ৬৮ শূন্য) টি তাস আছে। এখন তাসগুলোকে বস্তায় ভরে ঝাঁকাতে শুরু করি। ঝাঁকানো শেষে আমরা বস্তা থেকে ছয়টি কার্ড বের করবো। ধরা যাক, আমরা প্রথমে পেলাম স্পেড এর টেক্কা। এরপর যথাক্রমে ডাইসের সাত, ক্লাবসের দশ, ক্লাবসের বিবি, ডাইসের দুই, হার্টসের রাজা। এখন হাতের মধ্যে প্রাপ্ত অনুক্রমের পাঁচটি তাস ধরে আমরা যদি ১০^৬৮ টি তাসের মধ্য থেকে এদের পাবার সম্ভাবনা বের করে বলি যে, প্রাপ্ত অনুক্রমটি পাবার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষুদ্র, সুতরাং এই পাঁচটি তাস পাওয়া অসম্ভব, তাহলে কী হবে? হবেনা। বস্তায় ঝাঁকি দিয়ে পাঁচটা হোক, দশটা হোক যে কয়টি তাসই আমরা বের করিনা কেন, সবসময়ই একটি অনুক্রম পাবো এবং সবসময়ই সেই নির্দিষ্ট অনুক্রম পাবার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি হবে। তারমানে এই না যে, আমাদের সম্ভাবনা হিসেব শেষ করার পর হাত থেকে তাসগুলো উধাও হয়ে যাবে।

বিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে, ড়্যাণ্ডম মিউটেশনের কারণে অসংখ্য ভ্যারিয়েশন সৃষ্টি হয়। ব্যাপারটাকে তুলনা করা যায় স্পেড ট্রাম খেলার সাথে। চারজন খেলোয়াড়, দৈববন্টনে সবাই ১৩ টি করে তাস পাবেন। এখন এই চারজনের মধ্যে একজনের হাতে বাকি তিনজন অপেক্ষা ভালো তাস থাকবে, সুতরাং তিনি জিতবেন। প্রকৃতিতেও নন ড়্যাণ্ডম প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণে সবচেয়ে উপযোগীরা টিকে থাকে, বাকীরা ঝরে পড়ে। স্পেড ট্রামে জয়ী মানুষটির হাতের কার্ড দেখে কেউ যদি মন্তব্য করে এমন কম্বিনেশন পাওয়া অসম্ভব তাহলে তাকে কী বলা যাবে? একইভাবে প্রকৃতিতে টিকে থাকা একজনকে ধরে কেউ যদি সম্ভবনা হিসেব করে এবং বলে যে সম্ভাবনা খুব কম, সুতরাং এই প্রক্রিয়া সত্য নয় তাহলে তাকে কী গালি দেওয়া যেতে পারে? বোধহয়, সৃষ্টিবাদী।

বিহে’র হ্রাস অযোগ্য জটিলতাঃ

প্যালের মতো আরেকজন বিখ্যাত সৃষ্টিবাদের প্রবক্তা মাইকেল বিহে। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত তার জনপ্রিয় বই, “Darwin’s Black Box: The Biochemical Challenge to Evolution” এ তিনি “irreducible complexity” বা হ্রাস অযোগ্য জটিলতার নতুন এক অর্থ পাঠকের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্টি যন্ত্রে বেশ কয়েকটি অংশ থাকে এবং এদের মধ্য থেকে যেকোন একটি অকেজো হলে, বা না থাকলে সেটি আর কাজ করেনা।

যে সমস্ত জৈব তন্ত্র (Biological System) নানা ধরনের, পর্যায়ক্রমিক কিংবা সামান্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কোনোভাবেই গঠিত হতে পারেনা, তাদের আমি “হ্রাস অযোগ্য জটিল” (Irreducible Complex) নামে অভিহিত করি। “হ্রাস অযোগ্য জটিলতা” আমার দেওয়া এক বর্ন্যাঢ্য শব্দমালা যার মাধ্যমে আমি পারষ্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেওয়া একাধিক যন্ত্রাংশের একটি সিস্টেম বোঝাই- যার মধ্য থেকে একটি অংশ খুলে নিলেই সিস্টেমটি কাজ করবেনা।

ইঁদুর মারার যন্ত্রকে তিনি উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন। এ যন্ত্রটির মধ্যে কয়েকটি অংশ থাকে। ১) কাঠের পাটাতন, ২) ধাতব হাতুড়ি, যা ইঁদুর মারে, ৩) স্প্রিং, যার শেষ মাথা হাতুড়ির সাথে আটকানো থাকে, ৪) ফাঁদ যা স্প্রিংটিকে বিমুক্ত করে, ৬) ধাতব দণ্ড যা ফাঁদের সাথে যুক্ত থাকে এবং হাতুড়িটিকে ধরে রাখে 3। এখন যদি যন্ত্রটির একটি অংশ (সেটি স্প্রিং হতে পারে, হতে পারে ধাতব কাঠামো) না থাকে বা অকেজো থাকে, তাহলে সম্পূর্ণ যন্ত্রটিই অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায় এটি আর ইঁদুরকে মারা তো দুরের কথা ধরতেও পারবেনা। বিহের মতে, এটি হ্রাস অযোগ্য জটিল সিস্টেমের একটি ভালো উদাহরণ। এখানে প্রতিটি অংশের আলাদা কোনও মূল্য নেই। যখন তাদের একটি বুদ্ধিমান মানুষ দ্বারা প্রয়োজন মোতাবেক একত্রিত করা হয় তখনই এটি কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। ঠিক একইভাবে বিহে মনে করেন, প্রকৃতিতে ব্যাকটেরিয়ার ফ্ল্যাজেলামগুলো হ্রাস অযোগ্য জটিল। এ ফ্ল্যাজেলামগুলোর প্রান্তদেশে এক ধরণের জৈবমটর আছে যেগুলোকে ব্যাকটেরিয়ার কোষগুলো স্ব-প্রচারলনের কাজে ব্যবহার করে। তার সাথে চাবুকের মতো দেখতে এক ধরণের প্রপেলারও আছে, যেগুলো ঐ আনবিক মটরের সাথে ঘুরতে পারে। প্রোপেলারগুলো একটি ইউনিভার্সাল জয়েণ্টের মাধ্যমে মোটরের সাথে লাগানো থাকে। মোটরটি আবার একধরনের প্রোটিনের মাধ্যমে জায়গামতো রাখা থাকে, যেগুলো বিহের মতে স্ট্যাটারের ভূমিকা পালন করে। আরেক ধরণের প্রোটিন বুশিং পদার্থের ভূমিকা পালন করে যার ফলে চালক- স্তম্ভদণ্ডটি ব্যাকটেরিয়ার মেমব্রেনকে বিদ্ধ করতে পারে। বিহে বলেন, ব্যাকটেরিয়ার ফ্ল্যাজেলামকে ঠিকমতো কর্মক্ষম রাখতে ডজনখানে ভিন্নভিন্ন প্রোটিন সম্মিলিতভাবে কাজ করে। যে কোন একটি প্রোটিনের অভাবে ফ্ল্যাজেলাম কাজ করবে না।, এমনটি কোষগুলো ভেঙ্গে পড়বে 4।

বিহে বিবর্তনবিজ্ঞানী ছিলেন না, ছিলেন জৈবরসায়নবিদ। হ্রাস অযোগ্য জটিলতা নামক শব্দের ব্যঞ্জনায় বিবর্তনকে ভুল প্রমানে বই লেখার প্রায় ষাট বছর আগেই নোবেল বিজয়ী হারমান জোসেফ মুলার বিবর্তনের হ্রাস অযোগ্য জটিলতা ব্যাখ্যা করেছিলেন, তখন থেকেই সেটা বিহে ব্যতিত অন্যসকলের কাছে জীববিজ্ঞানের সাধারণ জ্ঞান হিসেবে জ্ঞাত 5। বিবর্তনের পথ ধরে বইয়ের, আমেরিকায় ইণ্টেলিজেন্ট ডিজাইনের নামে হচ্ছে কী প্রবন্ধে ডঃ অভিজিৎ রায় এবং বন্যা আহমেদ বিহের যুক্তির অযৌক্তিকতা খণ্ডন করেছেন। সেখান থেকেই পাঠকের জন্য উদ্ধৃত করা হলো,

“বিহের উদাহরণে বর্ণিত ঐ ইঁদুর মারার কলটির কথাই ধরুন। কলটি স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুলে এর ফাঁদ এবং ধাতব দণ্ডটি সরিয়ে নিন। এবার আপনার হাতে যেটি থাকবে সেটি আর ইঁদুরের কল নয়, বরং অবশিষ্ট তিনটি যন্ত্রাংশ দিয়ে গঠিত মেশিনটিকে আপনি সহজেই টাই ক্লিপ কিংবা পেপার ক্লিপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এবারে স্প্রিংটিকে সরিয়ে নিন। এবারে আপনার হাতে থাকবে দুই-যন্ত্রাংশের এর চাবির চেইন। আবার প্রথমে সরিয়ে নেওয়া ফাঁদটিকে মাছ ধরার ছিপ হিসেবেও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন, ঠিক যেমনিভাবে কাঠের পাটাতনটিকে ব্যবহার করতে পারবেন, ‘পেপার ওয়েট’ হিসেবে। অর্থাৎ যে সিস্টেমটিকে এতক্ষণ হ্রাস অযোগ্য জটিল বলে ভাবা হচ্ছিল, তাকে আরও ছোট ছোট ভাবে ভেঙ্গে ফেললে অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় কাজে লাগানো যায়”

মজার ব্যাপার হলো, বিবর্তনের পথে প্রানীদের ধর্ম বা গুনাবলীর পরিবর্তন হয়। চাবির চেইন থেকে পেপার ক্লিপ, পেপার ক্লিপ থেকে আবার ইঁদুর কল, গুনাবলীর এমন পরিবর্তন (আক্ষরিক ভাবে পেপার ক্লিপ বা চাবীর রিং বোঝানো হচ্ছেনা) যে প্রানীজগতেও হচ্ছে সেটা বিজ্ঞানীরা প্রমান করে দেখিয়েছেন 6। কীভাবে এমনটি ঘটে সেটির ব্যাখ্যা বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানে একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। নির্দিষ্ট একটি জৈবযন্ত্র শুরুতে একধরণের কাজ করলেও প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণে ক্রমান্বয়ে দেহের জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সেই নির্দিষ্ট যন্ত্র ভিন্ন ধরণের কাজ করার ক্ষমতা লাভ করে। মানুষের চোখের বিবর্তনের অংশে ঠিক এমন জিনিস আমরা দেখেছি। চোখ যেখান থেকে উদ্ভব হয়েছে সেটি ছিল মস্তিষ্কের বাইরের দিক, বাইরের পরিবেশ থেকে মস্তিষ্ক রক্ষাই ছিল যার কাজ।

এবার আসা ফ্লাজেলাম আর প্রোটিনের আলোচনায়। বিবর্তন পথ ধরে বই থেকে উদ্ধৃত-

“বিহে যেমন ভেবেছিলেন কোন প্রোটিন সরিয়ে ফেললে ফ্ল্যাজেলাম আর কাজ করবেনা, অর্থাৎ পুরো সিস্টেমটিই অকেজো হয়ে পড়বে, তা মোটেও সত্য নয়। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কেনেথ মিলার পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন সরিয়ে ফেলার পরো ফ্ল্যাজেলামগুলো কাজ করছে; বহু ব্যাকটেরিয়া এটিকে অন্য কোষের ভিতরে বিষ ঢেলে দেওয়ার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে। অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা প্রমান করতে পেরেছেন যে, ফ্ল্যাজেলামের বিভিন্ন অংশগুলো আলাদা আলাদা ভাবে ভিন্ন কাজ করলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণে এটি টিপে থাকার সুবিধা পেতে পারে। জীববিজ্ঞানে এমন অনেক উদাহরণ দেওয়া যায় যে বিভিন্ন অঙ্গ- প্রত্যঙ্গগুলো এক সময় এক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলেও পরবর্তীতে অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে সরীসৃপের চোয়ালের হাড় থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর কানের উৎপত্তি। আজকে আমাদের কানের দিকে তাকালে তাকালে সেটিকে হ্রাস অযোগ্য জটিল মনে হতে পারে, কিন্তু আদিতে তা ছিল না। এমন নয় যে, হঠাৎ করেই একদিন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের কব্জাবিহীন চোয়ালের হাড়গুলো ঠিক করলো তারা কানের হাড়ে পরিণত হয়ে যাবে; বরং বিবর্তনের পথ ধরে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়েই তারা আজকের রূপ ধারণ করেছে। সুতরাং উৎপত্তির সামগ্রিক ইতিহাস না জেনে শুধুমাত্র চোখ, কান কিংবা ফ্ল্যাজেলামের দিকে তাকালে এগুলোকে হ্রাস অযোগ্য জটিল বলে মনে হতে পারে বৈকি। ”

জীববিজ্ঞানের গবেষণা পত্রে স্তন্যপায়ীদের কানের মতো অসংখ্য উদাহরণ চোখে পড়বে। জীবাশ্মবিজ্ঞানী স্টিফেন যে গুল্ড পাণ্ডার বৃদ্ধাংগুলের মাধ্যমে এই জিনিসটি ব্যাখ্যা করছেন সবচেয়ে দারুন ভাবে 7। পাণ্ডার হাতে ছয়টি করে আঙ্গুল থাকে। এর মধ্যে বৃদ্ধাংগুলটি আদতে আংগুল নয়, কবজির হাড়। এটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পাণ্ডার একমাত্র খাবার বাঁশ ধরে রাখার সুবিধার্থে আঙুলে পরিনিত হয়েছে। যাই হোক, বিহে তার বইয়ে এমন আরও উদাহরণ হাজির করেছেন যার প্রায় সবগুলোই বিজ্ঞানীরা বিবর্তনের আলোকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করে গিয়েছিলেন। বিহের ইচ্ছা ছিল, শূন্যস্থান খুঁজে সেখানে ঈশ্বরকে বসিয়ে দেওয়া, কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে, শূন্যস্থানটাও তিনি ঠিকমতো খুঁজে বের করতে পারেন নি।

কানসাসে নিয়ম করে প্যালে, বিহেদের ছদ্ম বিজ্ঞান পড়ানো শুরু করায় বানর সমাজের দুঃখপ্রকাশ

কানসাসে নিয়ম করে প্যালে, বিহেদের ছদ্ম বিজ্ঞান পড়ানো শুরু করায় বানর সমাজের দুঃখপ্রকাশ

ডেম্বস্কির গানিতিক চালাকিঃ

সেদিন চারমাসের তাবলীগ থেকে ফেরত আসা আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ যে আছে এটা তুই কীভাবে জানিস? সে নির্দোষ জবাব দিলো, এই সব সৃষ্টি দেখলে তো বোঝা যায় যে আল্লাহ আছেন। আমি ততোধিক নির্দোষ ভঙ্গিতে জবাব দিলাম, এমন কী হতে পারেনা, আল্লাহ এদের সৃষ্টি করেন নি? তখন সে জানালো, তাহলে কি এমনে এমনে হয়েছে? এই নিবন্ধের টাইটেলও একটি বহুল প্রচারিত ইসলামীক গান যেখানে স্রষ্ঠার সুনিপুনতা বর্ননা করা হয়েছে। এছাড়া, সাধারণভাবে আমরা সবাই জগতের নানা ধরণের জটিল ব্যাপার দেখে এতোটাই বিমোহিত হই যে, এগুলো যে নিজে নিজে এমন হতে পারে কিংবা প্রাকৃতিক কারণে এমন হতে পারে তা মেনে নেওয়াটাকে পাগলামী বলে ঠাওর হয়। আর সেটাকেই ব্যবহার করে যুক্তি (!) উপস্থাপন করেন প্যালে, বিহের মতো ধর্মবেত্তারা।

ইণ্টেলিজেণ্ট ডিজাইনের খ্যাতনামা আরেকজন প্রবক্তা উইলিয়াম ডেম্বস্কি। এই সময় পর্যন্ত ইণ্টেলিজেণ্ট ডিজাইন সমর্থন করে বিহের বই সংখ্যা একটি হলেও তার ডিসকভারি ইন্সটিটিউটের (সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে যেখানে গবেষণা করা হয়) আরেকজন সহকর্মী ডেম্বস্কির বইয়ের সংখ্যা বেশ কয়েকটি এবং নিবন্ধের সংখ্যা অসংখ্য 8। প্যালে, বিহের থেকে দশগুন এগিয়ে থাকা ডেম্বস্কি প্রচার করে বেড়ান প্রকৃতির “ডিজাইনড” হবার বিষয়টি গানিতিক ভাবে প্রমানযোগ্য। তারমতে, প্রকৃতির বিভিন্ন জায়গায় “সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপিত তথ্য”-এর সন্ধান পাওয়া যায়। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত বই “ইণ্টেলিজেণ্ট ডিজাইন” এ ডেম্বস্কি একটি উদাহরণ প্রদান করার পর বলেন, যেহেতু কোনো বস্তুতে সাধারণ প্রাকৃতিক উপায়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য উৎপাদন হওয়া অসম্ভব সুতরাং এটা সহজেই বোধগম্য কোনো একজন পরিকল্পক বা ডিজাইনার এই কাজটি করেছেন তার অস্তিত্বের প্রমান মানুষকে অবহিত করতে 9। বক্তব্যকে যুক্তিসংগত করতে তিনি কার্ল সাগানের উপন্যাস “কনটাক্ট” অবলম্বনে তৈরী একই নামের চলচ্চিত্রের প্রসংগ টেনে আনেন (10)। এই চলচ্চিত্রে পৃথিবীর জ্যোতির্বিদরা একটি এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল বার্তার সন্ধান লাভ করেন, যেটি ভাষান্তর করে তারা দেখতে পান মহাশূন্যের অপরপ্রান্ত থেকে “কে বা কারা” তাদের কাছে ২ থেকে ১০১ পর্যন্ত প্রত্যেকটি প্রাইম সংখ্যা পাঠিয়েছেন। আর এই প্রাইম সংখ্যা পাবার পর চলচ্চিত্রের জ্যোতিবির্দরা বুঝতে পারেন, বার্তাটি যেই পাঠিয়ে থাকুকনা কেন, সে অবশ্যই বুদ্ধিমান। ডেম্বস্কি তারপর উপসংহার টানেন যে, প্রকৃতিতে প্রাপ্ত এমন সুনির্দিষ্ট গানিতিক তথ্যও নিশ্চিত করে যে, এই তথ্যগুলো জগতের বাইরের কারো কাজ এবং তিনিই মহাপরিকল্পক, ডিজাইনার ঈশ্বর।

কিন্তু একটি সুশৃংখল গানিতিক ক্রমের সন্ধান পাবার জন্য ডেম্বস্কির বহিবিশ্বের কারও সংকেতের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। তার বাসার পাশে ফুলের বাগান আছে কিনা আমার জানা নেই, যদি থাকে তাহলে সে বাগানে গিয়ে বিভিন্ন ফুলের পাঁপড়ির সংখ্যা গণনা করলেই তিনি “প্রাকৃতিকভাবে” উৎপাদিত চমৎকার গানিতিক ক্রমের সন্ধান পাবেন, যাকে গনিতে বলা হয় ফিবোনাচ্চি রাশিমালা। ফিবোনাচ্চি রাশিমালা অনেকগুলো সংখ্যার একটি সেট যেখানে প্রতিটি সংখ্যা তার পূর্ববর্তী দুইটি সংখ্যার যোগফলের সমানঃ ০, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, …। প্রকৃতির অসংখ্য ফুলের সর্বোমোট পাপড়ি সংখ্যা একটি ফিবোনাচ্চি রাশি। যেমনঃ বাটারকাপের পাপড়ি সংখ্যা ৫, গাঁদা ফুলের ১৩, এসটার্সের ২১।

তবে একটা বিষয় বোঝা যাচ্ছে প্যালে, বিহের তুলনায় ডেম্বস্কির দাবী অনেক বেশি ব্যবহারিক ও প্রযুক্তি নির্ভর। সুতরাং এগুলো ঠিকমতো উপলব্ধি করা এবং পরীক্ষা নিরিক্ষা করার জন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ মানুষ। সৌভ্যাগ্যক্রমে অনেক বিশেষজ্ঞই এই কষ্টটুকু গ্রহণ করেছেন এবং তাদের প্রত্যকেই দেখিয়েছেন ডেম্বস্কির উপস্থাপিত প্রতিটি দাবী এবং তা থেকে টেনে আনা উপসংহার মারাত্মক ক্রুটিযুক্ত 11।

স্বতঃ সংগঠন (Self- Organization):

ইন্টেলিজেণ্ট ডিজাইন বা আইডি প্রবক্তারা তাদের বই, ডকুমেণ্টারিতে সবসময় ৪০০ বিজ্ঞানীর একটি সম্মিলিত বিবৃতির উদাহরণ টানেন। তাদের মতে আইডিকে সমর্থন জানানোর জন্য বিজ্ঞানীরা এই বিবৃতি প্রদান করেছেন। এবার জানা যাক সত্যিকার অর্থেই এই বিজ্ঞানীরা তাঁদের সম্মিলিত বিবৃতিতে কী বলেছিলেন।

“ জীবনের জটিলতা ব্যাখ্যায়, আমরা ড়্যাণ্ডম মিউটেশন এবং প্রাকৃতিক নির্বচনের সামর্থের ব্যপারে সন্দিহান। আমরা মনে করি যে প্রমানগুলোর মাধ্যমে ডারউইন তত্ত্বের সঠিকতা নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো আরও সুক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করা উচিত ”12

লক্ষ্য করুন, এখানে একবারের জন্যও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন শব্দটা আসেনি। বিজ্ঞানীরা উপরে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা নিতান্তই স্কেপটিক আচরণের শান্ত, সুকুমার অভিব্যক্তি, যৌক্তিক বিজ্ঞানমনস্ক আচরণ। তবে ডারউইনের তত্ত্বকে আরও সুক্ষ্মভাবে পরীক্ষার নিরিক্ষার আহবান- অপ্রয়োজনীয়, কেননা ডারউইনের বিগল যাত্রা পরবর্তী যে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের সূচনা হয়েছিল তার একমাত্র কাজই বিবর্তনের প্রমান পরীক্ষা নিরিক্ষা করা। ডারউইন তত্ত্বের মতো প্রতিনিয়ত অসংখ্য পরীক্ষা নিরিক্ষার সন্মুখীন অন্য কোনও তত্ত্বকে হতে হয়নি। গত দেড়শ বছর ধরে পরীক্ষা চলছে, চলবে অনন্তকাল।

এবার ৪০০ বিজ্ঞানীর উদ্ধৃতিতে ফিরে আসা যাক এবার। একটা জিনিস উল্লেখ করা আবশ্যক, বিবর্তন কৌশলে ড়্যাণ্ডম মিউটেশন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন ছাড়া আরও বেশ কিছু অত্যাবশ্যকীয় ব্যপার ক্রিয়া করে। জীব, জড় দুই ধরনের জটিল বস্তু সংস্থান (Complex Material system) একটি প্রাকৃতিক ধর্ম প্রদর্শন করে যার নাম “স্বতঃ সংগঠন” বা সেলফ অর্গানাইযেশন। স্বতঃ সংগঠন বলতে বিভিন্ন বস্তুর নানা ধরণের নকশায় বিন্যস্ত হবার কথা বোঝানো হয়। আর চমৎকারিত্বপূর্ন ও গানিতিক এই নকশা তৈরী হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে, কোনও ধরণের মিরাকল ব্যতিত।

“Self- Made Tapestry ” নামের বইটিতে লেখক ফিলিপ বল বিভিন্ন জীব ও জড় বস্তুর প্রাকৃতিকভাবে নানা ধরণের নকশায় বিন্যস্ত হবার উদাহরণ দেখিয়েছেন অসংখ্য চিত্র সহকারে। আশেপাশের বিভিন্ন জটিলতা দেখে সেগুলো ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমান মনে করে তা নিয়ে পাগলামী করা সৃষ্টিবাদীদের পাগলামী রোধের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করতে পারে তার বইয়ে উল্লেখিত জটিলতাগুলো, যেগুলো একদমই নিজে নিজে প্রাকৃতিকভাবে এমন হয়েছে 13। সত্যি কথা হলো, বিভিন্ন জীবিত জৈব তন্ত্রে সন্ধান পাওয়া নকশা একই সাথে মৃত জড় সিসটেমেও দেখতে পাওয়া যায় এবং এগুলো পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়নের মৌলিক সূত্র দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায়। এদের কোনটাই বাইরের কারও নিজের অস্তিত্ব প্রমানের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র নয়। মনে রাখা দরকার, বিশ্বের প্রতিটি স্থানে কণাগুলো একে অপরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করছে। এ ধরণের বিশ্বে সরলতা খুব সহজেই জটিলতার জন্ম দিতে পারে। পূর্ণ একটি ব্যবস্থা তার বিভিন্ন অংশের সমষ্টি ছাড়া কিছুই নয় 14।

প্রকৃতির প্রায় সকল জায়গায় ডাবল স্পাইরাল বিন্যাসের উপস্থিতিকে বল উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন ১৫। প্রকৃতিতে শতকরা ৮০ ভাগ উদ্ভিদ প্রজাতির ক্ষেত্রেই দেখা যায় কাণ্ড বা মধ্যরেখা থেকে পাতাগুলো উপরের দিকে কুণ্ডলাকারে বিস্তার লাভ করে। প্রতিটি পাতা তার নিচেরটি থেকে একটি নির্দিষ্ট কোণে অবস্থান করে। উপর থেকে দেখলে, এ ধরণের কুণ্ডলাকার গড়নকে ডাবল-স্পাইরাল তথা দ্বি-কুণ্ডলাকার মনে হয়। একটি পাতার মোচড় অন্যটার বিপরীত দিকে বলেই এমন গড়নের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ফুলের অগ্রভাগ তথা পুষ্পিকার মধ্যেও এ ধরণের গড়ন দেখা যায়; যেমন সূর্যমুখী ফুল এবং পাইন ফলের পাতা।

সূর্যমূখী ফুলের ডাবল স্পাইরাল প্যাটার্ণ

সূর্যমূখী ফুলের ডাবল স্পাইরাল প্যাটার্ণ

সাধারণভাবে ধারণা করা যেতে পারে, ব্যাপারটি জীববিজ্ঞানেরই কোনো একটি প্রক্রিয়া যা ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু গবেষণার পর দেখা গেলো, এটি আসলে সাধারণ পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান- সবচেয়ে কম বিভব শক্তিতে বিন্যস্ত হওয়া। ১৯৯২ সালে বিজ্ঞানী Stephanie Douady এবং Yves Couder একটি পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেন। প্রথমে তারা চৌম্বকীয় তরলের অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা তেলের আবরণের উপর ফেলেন। এরপর তেলের আবরণের সাথে উলম্বভাবে চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করে ক্ষুদ্র চৌম্বকীয় কণাগুলোকে আহিত করেন। ফলস্বরূপ কণাগুলো সমধর্মে আহিত হবে এবং পরষ্পর পরষ্পরকে বিকর্ষণ করবে। গবেষকরা এবার তেলের আবরণের পরিধি বরাবর আরেকটি চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করে আহিত চৌম্বকীয় কণাগুলোকে কিনারা বরাবর টেনে আনা শুরু করলেন। দেখা গেলো ক্ষুদ্র কণাগুলো ডাবল স্পাইরাল প্যাটার্নে বিন্যস্ত হয়েছে 16। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ডাবল স্পাইরাল প্যাটার্ণ জীবের অদ্বিতীয় কোনও বৈশিষ্ট্য নয়, এটি জীব, জড় সবার ধর্ম।

এছাড়া ব্যাপারটি অন্যভাবেও পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। প্রথমে আমরা একটি ইলেক্ট্রন নেই (যেকোন আহিত কণা হতে পারে)। এবার একে একটা টেবিলে স্থাপন করি। ইলেক্ট্রনটিকে কেন্দ্র করে খুব ছোট ব্যাসার্ধের একটি বৃত্ত অংকন করি। এবার আরেকটি ইলেক্ট্রন নেই। আমাদের কাজ হবে নতুন আঁকা বৃত্তের পরিধির কোনো একটি জায়গায় দ্বিতীয় ইলেকট্রনটি স্থাপন করা। তবে শর্ত হলো, পরিধির যে অংশে আমরা ইলেক্ট্রন স্থাপন করবো সেখানে তার তড়িৎ বিভব শক্তির মান হতে হবে সর্বনিন্ম। এবার প্রথম ইলেকট্রনকে কেন্দ্র করে আরেকটু বেশি ব্যাসার্ধ নিয়ে আরেকটি বৃত্ত আঁকি, এবং সেই বৃত্তের পরিধিতেও সর্বনিম্ম বিভব শক্তি বজার রাখার শর্তপূরণ করে আরেকটি ইলেক্ট্রন স্থাপন করি। এভাবে ধীরে ধীরে ব্যাসার্ধ বাড়িয়ে, ছোট থেকে বড় অসংখ্য বৃত্ত অংকন করে, প্রতিটির সর্বনিন্ম বিভব শক্তির বিন্দুতে ইলেক্ট্রন স্থাপন করলে একটি প্যাটার্নের উদ্ভব হবে। হ্যাঁ! সেটি হবে ডাবল স্পাইরাল প্যাটার্ন। লক্ষ্য করুন এখানে আরোপিত কোনও এলগোরিদম কাজ করছেনা, শুধুমাত্র বিভব শক্তির সর্বনিন্ম ব্যবহার হচ্ছে।

ইলেক্ট্রনের ডাবল স্পাইরাল প্যাটার্ন

ইলেক্ট্রনের ডাবল স্পাইরাল প্যাটার্ন

শুধুমাত্র প্রাকৃতিক নির্বাচন সকল কিছু ব্যাখ্যা করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। এর পাশাপাশি স্বতঃ সংগঠন ধর্মটি বিবর্তনের একটি বড় প্রভাবক বলে মনে করেন জীববিজ্ঞানী স্টুয়ার্ট কুফম্যান 17। তিনি প্রস্তাব করেন, ক্যাটালাইটিক ক্লোসার (catalytic closure) নামক রাসায়নিক পক্রিয়ায় সেলফ সাসটেইনিং বিক্রিয়ার নেটওয়ার্ক উৎপন্ন হবার মাধ্যমে প্রথম প্রাণের উৎপত্তি ঘটেছিল। কুফম্যান আরও বলেন, স্বতঃ সংগঠন কে নব্য আবিষ্কৃত প্রাকৃতিক নিয়ম মনে করা হলেও বাস্তবিক অর্থে এখানে মৌলিক পদার্থ বিজ্ঞান আর রসায়ন ছাড়া নতুন ধারণা আরোপ করা হচ্ছেনা। যাই হোক, জীবনের সূচনা কীভাবে হয়েছিল সেটি বিবর্তনের আলোচ্য বিষয় নয়। এমনটা ধরে ধরে নেওয়াটা খুবই যুক্তিসংগত যে, উৎপত্তিতে স্বতঃ সংগঠনের মতো রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের অন্য কোনো প্রাকৃতিক নিয়মের হাত ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে প্রামানিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব হয়নি, তবে কুফম্যানের প্রস্তাবের মতো বিভিন্ন যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব ঈশ্বরকে সেই শূন্যস্থান থেকে দূরে সরিয়া রাখতে যথেষ্ট।

যারা এতোক্ষণ পর্যন্ত ঈশ্বরের জানাজায় শামিল হলেন, তাদের জন্য ধর্মকারী সাইটের সৌজন্য তবারক।

তথ্য সূত্রঃ

১। ১৯ শে মার্চ শুক্রুবার, চ্যানেল ওয়ানের বিশেষ ইসলামী আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির এক সাবেক মহাপরিচালক জাকির নায়েককে ঘোষণা করলেন এই সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ হিসেবে। ফেসবুকে তাকে রামছাগল ঘোষণা দিয়ে একটা গ্রুপ থাকলেও অনেক মুসলমান জাকির নায়েককে সময়ের সেরা ইসলামী স্কলার কিংবা কেউ কেউ আরও বিশ ধাপ এগিয়ে সময়ের সেরা স্কলারের ঘোষণা দিয়ে ফেলেন।

২। জাকির নায়েকের মিথ্যাচারঃ প্রসংগ বিবর্তন। খান মুহাম্মদ। http://www.sachalayatan.com/shikkhanobish/21894

৩। বিবর্তনের পথ ধরে। চ্যাপ্টারঃ আমেরিকায় ইন্টেলিজেণ্ট ডিজাইনের নামে হচ্ছে কী- বন্যা আহমেদ, অভিজিৎ রায়। অবসর প্রকাশনী।

৪। ঐ

৫। H. J. Muller, “Recersibility in Evolution Considered from the Standpoint of Genetics,” Biological Review 14 (1939): 261- 80. সৃষ্টিবাদীরা একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন, আজ অবদি কোন বিবর্তন বিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন নি, যা মিথ্যা।

৬। Doriit, review of Darwin’s Black Box; Miller, Finding Darwin’s Gor; Perakh, Unintelligent Design; Davis Ussery, “Darwin’s Transparent Box: The Biochemical Evidence for Evolution.” in Young and Edis, Why Intelligent Design Fails, chap 4.

৭। Stephen J. Gould, The Panda’s Thumb (New York: Norton, 1980, ১৯-৩৪ পৃষ্ঠা)

৮। Dembski, The Design Inference, Intelligent Design, “The Design Inference.”

৯। ঐ

১০। একই বই, পৃষ্ঠা ১২৮- ৩১

১১। এই বিষয়ে নতুন লেখার জন্য পড়ে দেখা যেতে পারে, Why Intelligent Design Fails বইয়ের Gishlack, Shanks এবং Karsai; Hurd, Shallit এবং Elsberry; Perakh in Young এবং Edis এর লিখিত চ্যাপ্টারগুলো।

১২। ডিসকভারি ইন্সটিটিউট এর ওয়েবসাইট।

১৩। Phillip Ball, The Self- Made Tapestry: Pattern Formation in Nature (New York, Oxford: Oxford University Press, 2001)

১৪। Jhon Gribbon, Deep Simplicity: Bringing Order to Chaos and Complexity (New York: Random House, 2004)

১৫। Ball, The Self-Made Tapestry, পৃষ্ঠা সংখ্যা ১০৫- ১০৭।

১৬। S. Douady and Y. Couder, “Phyllotaxis as a Physical Self- Organized Growth Process”, Physical Review Letters 68 (1992): 2098

১৭। Stuart Kauffman, At Home in The Universe: The Search for the Laws of Self- Organization and Complexity (New York and Oxford: Oxford University Press, 1995)