তখন আমরা বসে আছি ঢাকা মেডিকেলের লাশকাটা ঘরের সামনে। ভেতরে লাশ হয়ে পড়ে আছে আমার বন্ধু, আমাদের বন্ধু -আলম। ওর বুক আর করোটি ফুড়ে দিয়ে গেছে যে বুলেট দুটো, ডাক্তাররা তার খোঁজ করছেন ওর শরীরের ভেতর হাতড়ে হাতড়ে। আমি ভেতরে যাই না, বুকে জমে থাকা ভালো লাগা অজস্র স্নৃতির ভীড়েই থাকুক ও, লাশকাটা ঘরে শুয়ে থাকা চিরে ফেলা শরীরটাকে ওই স্নৃতিগুলোর সাথে নাই বা যোগ করলাম। কী এসে যায় এখন আর…
দূর থেকে আন্টি আংকেলের শোক দেখছিলাম, কাছে যাওয়ার সাহস হয়নি। থেমে থাকা সময়টা একসময় শেষ হয়, সাদা কাপড়ে মোড়ানো বন্ধু আমার ট্রলিতে করে বেরিয়ে আসে। সারাজীবন যেমন দেখেছি ওকে ঘুমাতে, প্রশান্ত আর নিষ্পাপ, তেমনি ঘুমিয়ে আছে ট্রলির উপর। এইঘুম আর ভাঙবে না, এ কথাটা মনে হতেই আমার সব বাধ ভেঙে যায়…এইভাবে চলে যায় কেউ? এম্বুলেন্সের জানলায় পড়া নিজের ছায়ার ভেতর দিয়ে দেখি আধো অন্ধকারে ওর মুখটাকে। না কামানো দাড়ি, কান পর্যন্ত জুলফির পরিচিত মুখটার কপালের পাশে বুলেটের ক্ষতটাকে বড় বেমানান লাগে। এম্বুলেন্সটা আর দেরি করে না, আস্তে আস্তে সামনে বাড়তে থাকে। পেছনে পড়ে থাকি আমরা, পাথরের মতো মুখ করে থাকা কিছু ছেলেপেলে। একটু পর কে যেন একজন বিষন্ন গলায় বলে, চল যাই…
আধাঘন্টা পর, আমি বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালের কোন একটা ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আলমের টুনি বউ হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছে। চোখের জল কখন শুকিয়ে গেছে, আর কাঁদতে পারছে না, শুধু ফোপাচ্ছে। ডাক্তার এসে কড়া সিডেটিভ দেন ওকে, ফোপাতে ফোপাতেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে ও।
সবকিছু শুনশান হয়ে এলে আমি গিয়ে দাড়াঁই বারান্দায়। আকাশ ভাসিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। অবোধ অনুভূতিহীনতায় বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিলাম, ঘোর ভাঙলো পায়ের শব্দে। পাশে এসে মাশরুর দাড়াঁয়, মোস্তফা দরজায় হেলান দেয়া। বাক্যহীন কেটে যায় কিছু মুহূর্ত, হঠাৎ মাশরুর এসে জড়িয়ে ধরে আমাকে। টের পাই কাদঁছে ও, আমি স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করি। মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয়না আমার। ডুবন্ত মানুষ যেমনি খড়কুটো ধরে, তেমনি আমাদের দুজনকে আকঁড়ে ধরে মোস্তফা। আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি না, কান্না জিনিসটা বড় সংক্রামক। আমরা তিনজন একে অন্যের কাঁধে মুখ লুকিয়ে কাদঁছি আর বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল আমাদের।
শোক বা বৃষ্টি কোনটাই সেদিন আমাদের বেশি ভেজায়নি, যেটাতে আমরা হাবুডুবু খেয়েছিলাম তার নাম- বন্ধুত্ব।
এক বছরেরও বেশি হয়ে গেলো সেই বিকেলের পরে......
কিভাবে মারা গেছে জানতে ইচ্ছা করতেছে। আরেকটু ডিটেইলস বললে খুশি হব।
@বাহলুল ভাই,
আমিন(১৯৯৬-২০০২)- এর "ক্যাডেট নম্বর ১৮৬২" এই সিরিজটা কষ্ট করে একটু ফলো করবেন। আসলে ওর লেখাটা পড়েই আমি এটা লিখেছি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
--------------------------------
আশিক, সময় সত্যি বড় তাড়াতাড়ি যায়।
Thank you vai.
ক্যাডেট নম্বর ১৮৬২তে তো আলমের ঘটনার ডিটেইলস পাইলাম না।
সরি বাহলুল ভাই, ওই সিরিজটাতে মনে হয় ডিটেইলস আসবে। তার আগে পর্যন্ত সংক্ষেপে বলে রাখি, আলমের পুরো নাম এইচ.এম. আরিফিন আলম রুশো। ২০০৭ সালের ২৩শে মে ধানমন্ডীতে ছিনতাইকারীদের গুলিতে মারা যায় ও, বয়স হয়েছিল মাত্র ২৪। বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। মরে না গেলে ওই সপ্তাহের শুক্রবার এনগেজমেন্ট হয়ে যেত হয়ত। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ছিল, উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ড যাবার পরিকল্পনা করছিল।
ধন্যবাদ।
তৌফিক, তুমি কি আই,ইউ,টি তে পড়তা নাকি। কেমন চিনা চিনা লাগতেছে তোমার চেহারা।
জ্বি বাহলুল ভাই, মেকানিক্যাল ০২।
আলম ভাই, আপনি সহ আপনাদের চারজনকে দেখসিলাম আই ইউ টি র স্পোর্টস ডে তে। আপনারা সিড়ি দিয়ে উঠতেসিলেন আর আমি নামতেসিলাম। এরপর আলম ভাইয়ের সাথে আবার দেখা রি ইউনিয়নে গিয়ে। কথাও হইসিল। আর লাস্ট দেখা পত্রিকার পাতায়......
আলম ভাই ভাল থাকুক....... লেখাটা হেভী টাচি হইসে।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ধন্যবাদ জিহাদ। কেমন চলে দিনকাল?
চালাইতেসি আর কি। ইকবাল তো শান্তিতে থাকতে দিতেসেনা। ঐ দিন আমারে ল্যাব এ ঢুকতে দেয়নাই :grr:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
এই ছেলেটারে আমি কোনদিন দেখি নাই ... ঘটনাটা পত্রিকায় পড়ছিলাম, আমাদের ব্যাচ, মির্জাপুরের এক্স-ক্যাডেট দেখে আশিকরে জিজ্ঞেস করে জানছিলাম কেমনে কি হইল ...
এর অনেক পরে, কানাডার দারূণ শীতের এক রাতে ডিপার্টমেন্টের ঘুপচি ঘরে বসে ফেসবুকে ঘুরাঘুরির সময় হঠাৎ তোর একটা ফটো এলবাম চোখে পড়ছিলো, রুশোকে নিয়ে ...
দেখে হঠাৎ মনে হইলো, লাইফ কত ছোট, কত অর্থহীন ... কত কত প্ল্যান করি, এই বছরের শেষে এই করবো, সামনের বছর ঐ করবো, হ্যান ত্যান ... কিন্তু মাত্র এক সেকেন্ডেই সবকিছু শেষ হয়ে যেতে পারে ... খুব কাছের কিছু মানুষ ছাড়া আর কেউ হয়তো মনেও রাখবে না ...
ভয় লাগে মাঝে মাঝে খুব ...
ধন্যবাদ দোস্ত। আমার জীবনের অভিজ্ঞানে এই একটা ঘটনা আমি এখনো মেনে নিতে পারি নাই, এখনো বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না।
hi toufik..tumi to monta kharap kore dila...valo chele ra keu beshidin thakena..alam er jonno doa kori Allah oke shantite rakhuk..tumi kothai aso akhon??update janao!!
হোসেন ভাই, ধন্যবাদ। আমি এখন কানাডায়, মাস্টার্স করি।
মেকা রিইউনিয়নে (২০০৭) আলম ভাইএর সাথে শেষ দেখা হয়েছিল আমার। কলেজের পাশে রাজাবাড়ী বাজারে আমাদের ব্যাচের কয়েকজন, আলম ভাই আর উনাদের ব্যাচের কয়েকজন মিলে অনেকক্ষণ গল্প করেছিলাম।
তার কয়েকদিন পরেই পেপারে ....
বিশ্বাস হয় নি প্রথমে।
আলম ভাই, যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন।
আল্লাহ উনার রুহের উপর শান্তি দিন।
লেখাটা পড়লাম।মন্তব্য হাতে আসে না।কী বলব আর।
হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ , অক্ষরের কী সাধ্যি তাকে বোঝায়?
লেখাটা ভালো হইছে তোফিক।
বাহলুল ভাই,আলমের ডিটেইলস কথা আমি আমার সিরিজটায় দিয়ে দেব।
ওকে বোঝানোর জন্য প্রথম দুইটা পর্ব লিখছি।পরের গুলোতে আরো ডিটেইলস পাবেন।
ধন্যবাদ ভাই। আমি আসলে ঘটনাটা জানতাম না। অনেক দুঃখ পাইলাম ঘটনাটা শুনে।
আল্লাহ্ যেন আমাদের ভাইটিকে বেহেশত নসীব করেন।
আমিন।
ক্যাডেট কলেজের বন্ধুর মৃত্যু যে কতটা অসহনীয়, কষ্টকর সেটা বলে বোঝানোর নয়।
আল্লাহ্ যেন আলমকে বেহেশত নসীব করেন।
ধন্যবাদ ফৌজিয়ান ভাই।
কিংকং আমার কথাগুলোই বলে দিয়েছে.........
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
গত দুদিন যাবত বারবার কেন যেন ঘুরেফিরে এই লেখাটায় ফিরে আসছি, জানি না। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..