বৃত্ত ভাঙ্গার গান গাই

(একান্ত নিজের ভাবনা, তথ্যগত ভুল থাকলে কেউ ধরিয়ে দিলে ঠিক করে নিব)

আমার ব্লগে সুশান্ত একটা কাজের কাজ করেছে। “হ্যাটস অফ” টু সুশান্ত। আর এক বুড়ো খোকা বলেছেন, তিনি সহজে হাল ছেড়ে দেবেন না। খুব আশা পাবার মত একটা খবর।

গত বেশ কয়েকমাস ধরে ভাবছি আমাদের মুল সমস্যাটা আসলে কোথায়। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাটা চলছে কিভাবে? প্রতিটি বেসরকারী কোম্পানীতে একটা “অরগ্যানোগ্র্যাম” (এটার বাংলা কি হবে) থাকে। অনেকটা প্রতিরক্ষা-বিভাগের “চেইন-অফ-কমান্ড” এর মত। বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থার অরগ্যানোগ্র্যামটা কেমন? একজন মন্ত্রী, এমপি যারা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত, আর একজন সচিব যিনি নির্বাচিত নন কিন্তু সরকারে কাছে দায়বদ্ধ, তাদের “জব ডেসক্রিপশন” (বাংলা?) আসে কোথা থেকে? তারা কার কাছে দায়বদ্ধ? যতটুকু জেনেছি, তাতে খুব একটা ভাল আশা পাচ্ছিনা।

ধরুন একটা পৌর শহর। ধরুন তার নাম রংপুর। এখানে সচিব বা তার কাছাকাছি একজন থাকবেন, পোষ্ট “ডিসি”, তিনি আসবেন নির্বাহী বিভাগ থেকে, সংস্থাপন মন্ত্রনালয়। তিনি রিপোর্ট করবেন সংস্থাপন সচিব এর কাছে, অর্থাত “রির্পোটিং বস” সংস্থাপন সচিব। তার কাছ, সহজ বাংলায় শহরে দেখভাল করা, এর মধ্যে রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, আইন শৃঙ্খলা, হাসপাতাল, সবই নাকি পড়ে। আইন শৃঙ্খলা আবার একক ভাবে পুলিশ সুপারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেই রকম সমস্ত বিভাগের একজন একজন আলাদা আলাদা বস আছেন। এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিক আছে। মজা হচ্ছে পুলিশ সুপার কিন্তু কোন ভাবেই “ডিসি” এর কাছে দায়বদ্ধ নন। অর্থাত শহরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে “ডিসি” এবং নির্বাহী বিভাগ খুশি না হলেও পুলিশ সুপারের উপর খবরদারি করার কোন অধিকার তার নেই। এটা করবে স্বরাষ্ট্র-সচিব। মানে রংপুর শহরে আইন শৃঙ্খলা নিয়ে “ডিসি” চিঠি (চিঠি ছাড়া আবার কোন কাজ হবে না, রেকর্ড লাগবে)লিখবেন তার বসকে, সংস্থাপন সচিব জানাবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয়কে আন্ত-মন্ত্রনালয় বৈঠক হবে, স্বরাষ্ট্র-মন্ত্রী ব্যাপারটা জানবেন, তিনি জানাবেন তার সচিব কে, তিনি চিঠি লিখে রংপুর এর পুলিশ সুপারকে তলব করবেন, পুলিশ সুপার হয়ত নিজেকে সর্মথন করবেন অথবা দোষী প্রমানিত হবেন। আমার ধারনা এই সময়ের মধ্যে রংপুর শহরে যা ক্ষতি হবার তা হয়ে যাবার যথেষ্ট সময় পাবে।
শুধু কি আইন, মনে করুন, হাসপাতাল দরকার, গ্যাস দরকার, বিদ্যুত দরকার, পানি দরকার, আর এইসব প্রতিশ্রুতি পেয়ে আপনি একজনকে ভোট দিয়ে পৌ্র মেয়র করলেন। কিন্তু আপনি কি জানেন এইগুলো আনার আক্ষরিক অর্থেই কোন ক্ষমতা এই লোকটির নেই। উনি যেটা পারবেন, বাচ্চাদের সময়মত টিকা দেয়া, এলাকার রাস্তা গুলো মেরামত করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনায়লে যাওয়া আসা করা (মানে সুকতলি ক্ষয় আরকি) আর কাজ পেলে টেন্ডার বাজি করা। ভাল পৌর-কর আদায় করতে পারলে কিছু মৌ্লিক কাজ করলেও করতে পারেন, এর বেশি কিছু নয়।

আরও একটা মজার ব্যাপার আছে রাস্তা নিয়ে। যোগাযোগ মন্ত্রনালয় বলে একটা দপ্তর আছে। রাস্তা-ঘাট দেখা শুনা করে। আর একটা আছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, আরও অনেক কাজের মাঝে তারও একটা কাজ রাস্তা ঘাট দেখাশুনা করা। যেসব রাস্তার মালিক আছে, মানে পৌরসভা আছে, চেয়ারম্যান আছে সেসব এলাকার রাস্তা এই মন্ত্রনালয় দেখবে। যদিও টাকা দিবে একজনই, আর তা অর্থ-মন্ত্রনালয়। এদের সবার বেতনও আসবে অর্থ-মন্ত্রনালয় থেকে, যদিও কাজের কোন তদারকী তারা করবে না। অর্থাত কাজ যদি ঠিক মত নাও হয়, মাস শেষে বেতন ঠিকই পাবেন। কাজ করলেও যা বেতন, কাজ না করলেও তাই।
বেতনের কথা যেহেতু আসলোই, একটা মজার ব্যাপার শেয়ার করি। বেশ কদিন আগে, RAB (বাংলায় লিখতে পারছিনা) এর বেতন স্কেলটা চোখে পড়েছিল। বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান (আর কেউ তো বিনা বিচারে মানুষ মারতে পারে না, সেই অর্থে) বিভাগে সবচেয়ে উচু পোষ্টে কর্মরত লোকটির চেয়ে, মোটামুটি মানের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত এই আমার বেতন বেশি, আমি হাসব না কাদব বুঝতেই পারি নি সেই সময়।

আপনি কোটি কোটি টাকার হীরা-জহরত পাহারায় রাখবেন আমাকে, অনেক নীতিকথা শুনাবেন, কিন্তু বেতন দেবেন ফুটা দুটো পয়সা, আমি আমার বউ-বাচ্চা আর নিজের পেট কি বাতাস দিয়ে ভরিয়ে রাখব, নাকি নীতিবাক্য দিয়ে? এই আশা আসে কিভাবে?

জিপিতে সদ্য পাশ করে যে ছেলেটা যোগ দেয় তার বেতনের কাছাকাছি আসতে একজন ক্ষমতাবান সরকারী চাকুরের কত বছর লাগে? আচ্ছা এখন, বাংলাদেশের যে মেধাবীগুলো আছে, যারা দেশ ছাড়বে না ঠিক করেছে, তারা কোনটা বেছে নেবে? এর মানে কি দাড়াচ্ছে, ক্ষমতাবান হিসেবে এমন একজন আসছে, যার মেধা হয়ত প্রথম শ্রেনীর নয়। প্রথম শ্রেনীর মেধাবীরা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে, প্রতিরক্ষা বাহিনীতে বা কর্পোরেট কোন কোম্পানীতে। এর পরের ধাপে আসছে বিসিএস। আর সবচেয়ে কম মেধাবী মাস্তানরা নামছে রাজনীতিতে। কিছু ব্যতিক্রম নিশ্চয় আছে, কিন্তু ব্যতিক্রম তো কখনই পাল্লা ভারী করে না।

সরকারী চাকুরীরত ক্ষমতাবানরা ফাইল আটকিয়ে রাখেন বছরের পর বছর, এটা জানা কথা। তবে এর একটা বড় অংশ ফাইল সই করেন না দায়িত্ব এড়ানোর জন্য এখানে টাকাটা মুখ্য নয়। কারন “যে কাজ করেনা তার এক দোষ, আর যে কাজ করে তার তো হাজার দোষ”।

উদাহরন দেই-

মনে করুন শংকর গ্রামে হাজার দুয়েক লোক বাস করেন। কিন্তু গ্রামে যাবার কোন ভাল রাস্তা নেই। চারদিকে ধানী জমি। বর্ষায় আবার তা ডুবে যায়। শুকনায় যাও জমির আইল দিয়ে চলাফেরা করা যায়, বর্ষায় হাটু পানিতে নৌকায় চলতে হয়, পানি কম হলে এক জোড়া কাপড় হাতে নিয়ে বের হতে হয়। গ্রামের মানুষের অনেক দিনের দাবী একটা রাস্তা, এক মাইলের মত দৈর্ঘে কাছের রায়বাজার পর্যন্ত টানলেই হবে। কিন্তু কোন ইউএনও, চেয়ারম্যান এইদিকে মন দেয় না। শংকর গ্রামের লোকের দুঃখের কথা শোনার কেউ নাই।
ধরুন বছর পাচেক দীর্ঘশ্বাস ফেলার পর তাদের রাস্তার কাজ এক ইউএনও শুরু করলেন। প্রথমে হবে জমি গ্রহন। নকশায় যাদের যাদের জমি পড়েছে তাদের জমি সরকার কিনে নেবে। বাদ সাধলো ধেরু প্রধান, তার কথা হচ্ছে সরকার ধানী জমির যে দাম ধরেছে তাকেও সেই দামে টাকা দিতে হবে, হোকনা তারটা ডোবা জমি, না হলে সে জমিই দিবে না। হারু মাতবরের দাবী রাস্তাটা তার বাসার পাশেই উঠুক। দুই জন বলে দিয়েছেন জীবন গেলেও জমি দিবেন না, যত লাখ টাকাই হোকনা কেন, বাপের ভিটে মাঠি বেচবে না, এরা লাঠি নিয়ে দিন রাত জমি পাহাড়া দেয়া শুরু করেছে। এইসব হাবি জাবি ঠিক করতে করতে ইউএনও হয়রান। এ খুশি তো ও বেজার। ইউএনও হটাও আন্দোলন শুরু হয়ে গেল, চিঠি চালাচালি। কি ব্যাপার, না, ইউএনও সাহেব রাস্তা বানানোর যত টাকা তার একটা বড় অংশ দিয়ে ঢাকায় একটা দোতলা বাড়ি করেছেন। সত্য মিথ্যা পড়ে দেখা যাবে, আগে ইউএনও হঠাও। ইউএনও তার সম্মান বাচাক।
আমি দেখেছি এই সম্মান বাচানোর জন্য অনেক ভালো অফিসার নতুন কোন কাজে হাত দিতে ভয় পান। “কি দরকার বাবা, মাস শেষে বেতনের তো কোন হেরফের নাই, প্রমোশন তো বছর ধরা” ধরনের মানসিকতা।

বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা হয়েছে বা হচ্ছে। সাধু সাধু। কিন্তু বিচারকের আসনে যে দলীয় বিবেচনায় লোক বসছে তার সমাধানটা কি? শুনলাম বিচার বিভাগে সচিব হিসেবে একজন এসেছেন ওই নির্বাহী বিভাগ থেকেই। লাউ আর কদু তো একই রকম হয়ে গেল।

নীচের প্যারাটা এক্সুসিভলি সানাউল্লাহ ভাইয়ের জন্য।

হলুদ সাংবাদিকতা জিনিসটা কি? যা ঘটেছে তার উলটো ব্যাখ্যা নাকি যা ঘটেছে তা চেপে যাওয়া, কোনটা? প্রথম আলো দিন বদলের গান শুরু করে দিয়েছে, খুব ভাল, সংগে আছে গ্রামীন ফোন, বেশ ভালো। আচ্ছা বলুনতো গ্রামীন ফোনের কিছু কিছু ব্যাপারে প্রথম আলো চুপচাপ কেন? তাদের ইঞ্জিনিয়ার মারা গেছে সিডররে সময় ডিউটিরত অবস্থায়, শিশু শ্রমের ব্যাপারটা নিয়ে দেশের বাইরে তুলকালাম, ভিওআইপি তো আছেই, প্রথম আলো এত চুপচাপ কেন এসবে? সব মোবাইল অপারেটরা মিলে বিটিআরসিকে একহাজার কোটি টাকা জরিমানার ব্যাপারটা পত্রিকায় অত বড় করে আসে না, যত বড় হয় মওদুদের বাসায় মদ পাবার ঘটনা। ব্যাপারটা কি অর্থনৈ্তিক, বিক্রি হয়ে গেছে বিঙ্গাপনের কাছে, যেমন নিজেকে বিক্রি করে ছিলেন নাঈম সাহেব, ষ্টাফদের বেতন দিতে না পেরে? মওদুদ সাহেব যদি প্রতি মাসে লক্ষ টাকা বিঙ্গাপন দিতেন, তাহলে কি হত? এটার নাম কি হলুদ সাংবাদিকতা, নাকি অন্য কোন নাম বের করেছে প্রথম আলো? নীতিমালা বা এই রকম কিছু?
আচ্ছা এগুলো পুরোটাই বাদ দিন। তারা কাগজ ছোট করে ফেলেছে কোন রকম ঘোষনা ছাড়াই, দাম কমেনি এতটুকু। এরা যখন এম পি দের দায়বদ্ধতা নিয়ে লম্বা কথা বলে মতিউর রহমান কিংবা আনিসুল হকের বিব্রত লাগে কিনা, খুব জানতে ইচ্ছে করে। কারন তারাই বলে বেড়ায়, “সবার আগে নিজেকে বদলাতে হবে”। আবু মুসা নামে একজন আছেন মনে হয় সমকালে, তিনি কি “খ্যাপ” মারেন মুখপাত্র হিসেবে, ল্যাব-এইডে? এক চাকুরীতে জীবন চলেনা?

এবার নিজের কথা বলি। একটা খুব শখ আমার CR-V কিংবা HR-V মডেলের জীপ গাড়ির। কিনেও হয়ত ফেলব দশ-বিশ বছরের মাথায়। কিন্তু মানুষের জীবনে মোটামুটি ভাবে চলার জন্য মাসে পচিশ-তিরিশ হাজার হলেই চলে। এর বাইরে সবই বিলাসিতা। কেউ হয়ত পাচ-ছয়েও জীবন চালিয়ে নিতে পারে। কারও হয়ত লাখের উপরে লাগে। কিন্তু রাজার হালে চলার পরও কোটি কোটি টাকা কেন সিংগাপুর আর সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয় এই হিসাব আমার মিলেই না। এইগুলা কি কবরে চাইনিজ ফুড পাঠানোর জন্য, পরকালে কি ভাল রেষ্টুরেন্ট আছে নাকি? নাকি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ইজারার এইগুলো?

অনেক লম্বা লম্বা কথা বললাম, এইবার বটম লাইনে আসি। ইসি বলেছে “না” ভোট ৫০% এর বেশি হলে ওই নির্দিষ্ট আসনে নতুন ইলেকশন হবে। ব্যাপারটা পুরা পছন্দ হয় নাই। না ভোট জিতে গেলেই নতুন প্রার্থী দিয়ে আবার ইলেকশন হলে ভালো হত। এবার হয় নি, আশা করি পরের বার তাই হবে।
আমার আসন চট্টগ্রাম-৯, নোমান- ধানের শীষ, আফসারউদ্দিন-নৌকা, মুরাদ-লাঙ্গল, আর মঞ্জু-আনারস, মুল প্রার্থী। আমি নব্য “বইংগা” হিসাবে যা শুনেছি, আফসার সাহেব লোক ভালো, কিন্তু তিনি মেয়র মহিউদ্দিনের চেলা। মহিউদ্দিন আর নোমান হচ্ছে মামা-ভাগিনা, যদিও দুই দলের কান্ডারী। মুরাদ ব্যাটা নাকি “আমার গল্পের যোবায়ের সংস্করন”, তাই ঠিক করেছি ভোটটা বোধহয় মঞ্জুকে দিব। মঞ্জু ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন, চেষ্টা করেছিলেন নৌকার টিকেট পেতে, মহিউদ্দিনের জন্য পাননি, কারন মঞ্জু মহিউদ্দিনকে “জী হুজুর” করেননি। আমির খসরু মাহমুদ তাকে বিএনপি থেকে নমিনেশন দিতে চেয়েছিলেন, নোমানের লবিং এর জন্য পারেননি, নোমান তার নিজের আসন ছেড়ে নতুন এই আসনে এসেছে। নোমান-মহিউদ্দিন পরিবার আসন টা রাখতে চায় মনে হয় তাদের পরিবারের ভিতর। তাই আমার বৃত্ত ভাংগার গান এবার মনেহয় আনারসে, কি জানি, হয়ত আরো একটু ভাববো। এরপর অফিসে একটা ছোট-খাট ক্যাম্পেইন করব, হয়ত দুটো ভোট বাড়বে। বউটাকে একটু বুঝাব, ও আবার জাদরেল লীগ, দেখি কি হয়।
পরিবারে ধর্মভীরু হিসাবে আমার একটা নাম আছে। হঠাত একদিন গ্রামে থাকে যে সেজ ভাই তার ফোন পেলাম, তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ইলেকশনের নমিনেশন পেপার জমা দিয়েছেন, দোয়া চান আমার কাছে, তাই ফোন দিয়েছেন। আমি কেন জানি কিছুতেই তার জন্য দোয়া করতে পারছিনা। মন থেকে সায় পাচ্ছিনা। কারন আমার এইভাইকে, আমি খুব ভালো করে চিনি, আর যাইহোক জনপ্রতিনিধি হবার যোগ্যতা যে তার মাঝে একদমই নেই। ধরলাম বড়ভাইকে, প্রতিরক্ষা বিভাগে কর্মরত, নাম বললে চিনবে অনেকেই, আমরা দেখা প্রথম শ্রেনীর নীতিবান একজন লোক, এইবার তিনি পারবেন না জানি, অবসরে গেলে রংপুর-৬ থেকে এম,পি ইলেকশন করবেন কিনা। রাজনীতি বীতশ্রদ্ধ বড়ভাই যেভাবে মুখভংগি করলেন, দমে গেলাম খুব।

এটা সাড়া দেশের ছবি, আমি বুঝি, অযোগ্যরা লাফায়, আর যোগ্যরা চুপ করে তামাশা দেখে।

আচ্ছা, কতজন লোক ব্লগিং এ জড়িত, সিসিবি, আমার ব্লগ, সচল, সামহোয়ার ইন, প্রথম আলো ব্লগ। আমার ব্লগ ডাক দিয়েছে, সিসিবিও, সচলে যাওয়া হয়নি ঈদের পরে, নিশ্চয় কোমর বেধে ডাকাডাকি শুরু করেছে ওরাও, দেশের কতজন লোকের কাছে বার্তা যাচ্ছে ব্লগ থেকে, খুব অল্প, কিন্তু যাচ্ছে, আশার কথা এরা সবাই শিক্ষিত।
এলাকার চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী আর দুর্নিতীবাজদের “না না না”। রাজাকারের দল, তুমি পাকিস্থানে চলে যাও, সেই দেশকে গড়ে তোলে, আমাদের তোমাকে দরকার নেই। তুমি যদি চোর হও, যতই দক্ষ হও না কেন, তুমি “না”। এই এবারের বৃত্ত ভাংগার গান।

সাদারাতো কালোদের মানুষ হিসেবেই ধরেনি একদিন, ভোটাধিকার ছিল অনেক দুরের পথ। কত কিছু হয়েছে, নিজেরা যুদ্ধ পর্যন্ত করেছে এ নিয়ে। সেই সাদারাই এ বছর ভোট দিয়ে এক কালোকে তাদের নেতা বানিয়েছে। কত বছর লেগেছে তাদের?

কত বছর লাগবে আমাদের?

৬,০৩৯ বার দেখা হয়েছে

৬৫ টি মন্তব্য : “বৃত্ত ভাঙ্গার গান গাই”

  1. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    একসময় আমি জেনে খুব চমকে গিয়েছিলাম যে একজন মেম্বারের বেতন মাত্র ৯০০ টাকা। এরা গম চুরি ছাড়া পোষাবে কেমনে????? তেমনি সাধারণ পুলিশেরও তো বউ বাচ্চা আছে..............................


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  2. শঙ্খচিল (১৯৯৯-২০০৫)

    ভাল লাগলো ভাই। সবাই যদি এভাবে চিন্তা করতো! আমার দেশের চেহারাটাই বদলে দিতে পারতাম। এটা খুবি সত্যি কথা, যারা যোগ্য তারা আসেন না, আর যারা অযোগ্য তারাই সবার মাথার উপর দিয়ে ছড়ি ঘুরিয়ে যায়।

    জবাব দিন
  3. সুশান্ত দা'র লেখাটা তো সেই রকম রিসোর্সফুল একটা লেখা। গ্রেট বস গ্রেট একটা লেখা দিলেন।
    এইরকম মুক্ত চিন্তা ধারা'র মানুষ আজকাল খুব কম ই দেখা যায় ।
    :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:

    জবাব দিন
  4. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    অসাধারন একটা লেখা। সরকারী পর্যায়ে সিস্টেমটাই ঠিক নেই। শুধু নীতিকথা দিয়ে সবাইকে নীতির পথে রাখা যায় না। স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানও দিতে হবে। তাদের পয়সা কম দিয়ে আলটিমেটলি সরকার পয়সা সেভ করতে পারছে না, কারণ যাকে কম দেওয়া হচ্ছে তিনি অবৈধ পথে তারচেয়ে দ্বিগুন অর্থ পকেটে ভরে রাখছেন।

    এছাড়াও অনেক বিষয় নিয়ে পোস্টে বললেন। সবগুলোর সাথেই একমত।

    জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা পালটানো খুব দরকার। সব সরকার বলে করবে কিন্তু কেউ করে না। দুটো কারন খুজে পেয়েছি

      ১। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে এমপি দের মাস্তানি কমে যাবে এলাকায়।
      ২। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা শুন্য হয়ে যাবে।

      তাই মন্ত্রি বল আর আমলা, কেউ চায়না তাদের ক্ষমতা কমে চেয়ারম্যান ক্ষমতাশালী হোক। নব্বই এর দশকে প্রকৃচি (প্রকৌশল, কৃ্ষিবিদ, চিকিৎসক) এর ব্যানারে অনেক আন্দোলন হয়েছিল, কাজ হয়নি তেমন।


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
  5. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    ব্লগার ফয়েজ ভাইরে এই উপলব্ধিটা তিলা ধরার জন্য :salute:
    ব্লগার সুশান্তকে দুর্দান্ত এই আর্কাইভটা বানানোর জন্য :salute:
    আর সমসাময়িক ধারায়,
    পাঠক ফৌজিয়ানরে এইগুলা পড়ার জন্য :salute: 😀


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  6. আপনি কোটি কোটি টাকার হীরা-জহরত পাহারায় রাখবেন আমাকে, অনেক নীতিকথা শুনাবেন, কিন্তু বেতন দেবেন ফুটা দুটো পয়সা, আমি আমার বউ-বাচ্চা আর নিজের পেট কি বাতাস দিয়ে ভরিয়ে রাখব, নাকি নীতিবাক্য দিয়ে? এই আশা আসে কিভাবে?

    বেতন স্কেলের বৈষম্য অনেকের অসৎ হবার জন্য প্রধান কারন কিন্তু সবার জন্য নয়। আমার কাছে মনে হয় কিছু কিছু মানুষের নৈতিকতা, মুল্যবোধেই ঘাটতি রয়েছে। অনেক স্বচ্ছল জীবনযাপন করা মানুষও অনৈতিক কাজ করছেন, তাই না? যে লোকটা সংসদ সদস্য হয়ে ত্রানের টিন আর গম চুরি করে তার জন্য বেতন স্কেল কি কোন অজুহাত?

    সরকারী চাকুরীতে মেধাবী লোকজনের অনাগ্রহের প্রধান কারন বেতন স্কেল, তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বড় বড় দুর্নীতিবাজ (যারা দেশের োয়া মারছে) তারা কেউ কিন্তু সাধারন সরকারী কর্মচারী নয়। তারা একেক জন রাঘব বোয়াল। কেরানী ও অফিসাররা জীবনে স্বচ্ছলতা আনার জন্য ঘুষ নিয়ে যা ক্ষতি করছে দেশের তার চেয়ে ঢের বেশি ক্ষতি হচ্ছে বিদ্যুৎ প্রকল্প, মিগ-২৯, কয়লাখনি চুক্তির দুর্নীতিগুলি। এগুলির সাথে কারা জড়িত? কোটি কোটি টাকা কিভাবে সিংগাপুর আর সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয় এই হিসাব এখান থেকেই পাবেন।

    জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      তোমার কথা আমার সংগে কনফ্লক্টি করে নাই। একি জিনিস তুমি একভাবে ব্যাখ্যা করছ, আমি একটু অন্য ভাবে।

      বাংলাদেশ সৎ রাজনীতিবিদ নেই কেন? একটা পার্টি চলার জন্য টাকা লাগে, যদিও পার্টির নিজস্ব আয়ের কোন রাস্তা নেই। সৎ লোক তো সৎ, তার নির্বাচন করার টাকা নেই। এইজন্য পার্টি গুলো নমিনেশন পেপার বিক্রি করে। ঐ টাকায় ইলেকশনের খরচ যোগায় তারা, কিছু হয়ত এদিক ওদিক হয়। যে ব্যবসায়ী নমিনেশন কেনেন তিনি এমপি হওয়াটাকে একটা বিনিয়োগ হিসেবে চিন্তা করেন। তাই তিনি এমপি হয়ে লাভের চিন্তা করেন। এই বৃত্ত ভাংগতে হবে।

      একটা হতে পারে, এমপিরা কোন লাভ জনক পদে থাকতে পারবেন না, কি বেসরকারী, কি ব্যবসায়ী। এক্ষেত্রে তাদের বেতন কাটামো বদলাতে হবে। বেতন করতে হবে ঈর্ষনীয়, স্পিকার প্রতিদিন এটেন্ডস খাতা চেক করবেন, কারন ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে বেতন কাটা যাবে। আর জবাবদিহিতা, এইটা করতে হবে।

      বর্তমানে ত্যাগী, পুরাতন নেতাদের মন্ত্রি করা হয়। এইটা কেন হবে? মন্ত্রি হবে মেধা দেখে। দলের হতে হবে এমন কোন কথা নেই, অন্য দল কিংবা এমপি দের বাইরে যোগ্যতা সম্পন ব্যক্তি নিয়োগ হবে। এটা হবে তাদের চাকুরী, অনেক বেতন হবে কিন্তু প্রতি মাসে রিভিউ হবে কি কাজ হল তার মন্ত্রনালয়ে। যেটা হয়নি তার বটলনেকটা কোথায়?

      এইগুলা আমার মত, আমি যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়িনি, তারা ভাল বলতে পারবেন।


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
      • একটা হতে পারে, এমপিরা কোন লাভ জনক পদে থাকতে পারবেন না, কি বেসরকারী, কি ব্যবসায়ী। এক্ষেত্রে তাদের বেতন কাটামো বদলাতে হবে। বেতন করতে হবে ঈর্ষনীয়, স্পিকার প্রতিদিন এটেন্ডস খাতা চেক করবেন, কারন ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে বেতন কাটা যাবে। আর জবাবদিহিতা, এইটা করতে হবে।

        ঈর্ষনীয় বেতন কাঠামোর আওতায় আনলেই শুওরের বাচ্চারা নীতিবান আর জবাবদিহি হয়ে যাবে আমি এই আশা করি না। প্রতিটা হারামজাদা এমপি হয় টাকা বানানোর জন্য। জবাবদিহিতা তো দুরের কথা।
        পাশের দেশে দেখেন, একটা বড়সড় রেল একসিডেন্ট হলে রেলমন্ত্রী দায়-দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করে। আমাদের এখানে টেনে নামানো যায় না।
        নামবে কিভাবে? নামলে কি আর বিমান বন্দরের চোরা কারবারী থেকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারবে?

        😡 😡 😡

        জবাব দিন
  7. রহমান (৯২-৯৮)

    ফয়েজ ভাই,
    খুব মনযোগ দিয়ে, অনেকটা সময় নিয়ে আপনার এই লেখাটা পড়লাম। আপনার সাথে এই সবগুলো বিষয়েই আমি একমভ। আফসোস লাগে, আমরা সবই বুঝি কিন্তু আমদের হাত পা বাঁধা, সীমাবদ্ধতা অনেক। দোয়া করি, আপনি ও আপনার মতো মানুষেরা যেন সুযোগ পায় আমাদের দেশ ও জাতির সেবা করার, এই বৃত্তকে ভাঙার...

    পরাণের গহীন থেকে আপনাকে :salute: ‍ ‌

    জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      রহমান, এখন বয়স কত তোমার, তোমার কি মনে হয়না, তুমি যদি এখন থেকেই খুব ছোট স্কেলে দেশের জন্য কোন কাজ শুরু কর, বিশ বছর পর সেটা অনেক কিছু হতে পারে।


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
      • রহমান (৯২-৯৮)

        ফয়েজ ভাই, বয়সে আমি আপনার চেয়ে ৫ বছরের ছোট হব। দেশের জন্য কাজ যে করছিনা তাতো না। প্রিয় মাতভূমি ও প্রিয়জনদের থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে এই আফ্রিকার জংগলে এসে জীবনের ঝুকি নিয়ে যেসব কাজ করে যাচ্ছি, আশা করি তা দেশের জন্য মংগলই বয়ে আনছে।
        আমি আসলে যেটা বলতে চেয়েছিলাম তা হলো আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা। আমরা অনেক কিছুই বুঝি, অনেক কিছুই করার ইচ্ছা থাকে কিন্তু আমরা করতে পারিনা পরিস্থিতির কারনে। আমরা সিস্টেমের কাছে জিম্মি। তাইফুরের মন্তব্য থেকে একটু সাহায্য নেইঃ

        আপনার মত করে যারা সমস্যাগুলির কথা ভাবে, উত্তোরনের উপায় খুজে, তাদের সংখ্যা অতি নগন্য। আশার কথা হচ্ছে, সে সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন

        আমিও তাই অনেক আশাবাদী। ধন্যবাদ

        জবাব দিন
  8. তাইফুর (৯২-৯৮)

    ফয়েজ ভাই, কোট করবার মত লাইন প্রচুর ... তাই আর কোট করা হল না। অসাধারণ লেখা।

    শুধু শেষের প্রশ্নটার উত্তরে কিছু বলি ...

    আপনার মত করে যারা সমস্যাগুলির কথা ভাবে, উত্তোরনের উপায় খুজে, তাদের সংখ্যা অতি নগন্য। আশার কথা হচ্ছে, সে সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। আর হতাশার কথা হল, ঠিক সমহারে বাড়ছে নিম্নশিক্ষিত, স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যা যাদের সমস্যা থেকে উত্তোরনে অব্দান রাখা দুরের কথা, ভাব্বারই অবকাশ নাই।

    আমরা কষ্ট পাই, কষ্ট প্রকাশ করি, চেষ্টা করি বৃত্ত ভাঙ্গতে, পরিবর্তন করতে ব্যার্থ হয়ে সিষ্টেমকে দোষারোপ করে নষ্ট সিষ্টেমের নষ্ট চরিত্র হয়ে যাই।

    কত বছর লাগবে আমাদের?

    প্রশ্নটার একক 'বছর' বদলে 'যুগ' বললে হয়ত সুবিধা হত।


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  9. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    প্রথম আলো যে দেশের সেরা পত্রিকা তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই পত্রিকা এবং তার সম্পাদককে নিয়ে কিছু কথা বলার ছিল, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। সানাউল্লাহ ভাই আশাকরি এর সত্যাসত্য নিশ্চিত করবেন এবং এ বিষয় তার অভিমত ব্যক্ত করবেন।
    ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে কয়েকবার "এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন"-এ যেতে হয়েছিল। তার কয়েকদিন আগে ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব নাসরীন পারভীন হক নিহত হয়েছেন। ফাউন্ডেশনের বনানী অফিসের উপরেই ছিল আবাসন। পুনর্বাসিত এসিডদগ্ধদের দেখার পর মনটা এমনিতেই বিরূপ হয়ে ছিল। এমন সময়েই সেখানকার এক ডাক্তারের কাছ থেকে মতিউর রহমান ও প্রথম আলোর নামে কুকথা শুনতে হলো।
    এসিড আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তিত্ব নিঃস্বন্দেহে নাসরিন হক। নাসরিন হকের নেতৃত্বে এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন যা করেছে প্রথম আলোর এসিড প্রোগ্রামের সাথে তার তুলনা চলে না। উনি বললেন, প্রথম আলো ক্ষুদ্র ব্যাপ্তীতে কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করে সেটাই ফলাও করে ছাপে। ফাউন্ডেশনের সুনাম হয়নি, এটা নিয়ে তিনি ক্ষুণ্ণ নন। কিন্তু নাসরিন হককে অবজ্ঞা করায় তারা খুবই দুঃখ পেয়েছেন। একটি ঘটনা এক্ষেত্রে খুব জোড় দিয়ে বলেছিলেন:

    ফাউন্ডেশনে একটি ছোট্ট মেয়ে (এই মুহূর্তে নাম মনে পড়ছে না) আছে। তার বাবা তার মুখে এসিড ঢেলে দিয়েছিল। এই মেয়েকে বড় করছে ফাউন্ডেশন। সে নাচ শিখেছে। এসিডদগ্ধদের নিয়ে প্রথম আলোর উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠান হবার কথা। সেই অনুষ্ঠানে নাচবে মেয়েটি। অনুষ্ঠান শেষে আবার দেশে এসিডবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিকে পুরষ্কৃত করা হবে। মজার ব্যাপার হলো, সেই অনুষ্ঠানে নাসরিন হককে আনুষ্ঠানিকভাবে দাওয়াতও দেয়া হয়নি। তারপরও নাসরিন হক গিয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফাউন্ডেশনের সবাই অনুষ্ঠানে গেলেন। মেয়েটি নাচের জন্য স্টেজে উঠলো। ঠিক সে সময়ই সবাই বুঝতে পারলো এসিড দগ্ধদের প্রতি প্রথম আলো আর ফাউন্ডেশনের মনোভাবের পার্থক্য কোথায়। মেয়েটিকে স্টেজে অসহায় এবং করুণার পাত্র মনে হচ্ছিল। ফাউন্ডেশনের কাউকে সে কাছে পায়নি। ঘরোয়া পরিবেশে সে কখনও এতোটা অসহায় বোধ করেনি। তার ঘরের মানুষেরা অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
    অনুষ্ঠান শেষে পুরস্কার দেবার পালা। সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে নাসরিন হকের বদলে পুরস্কার দেয়া হলো মতিউর রহমানকে- তিনি নাকি দেশের এসিডবিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে অগ্রগণ্য ব্যক্তি। ফাউন্ডেশনের সবাই আগেই বুঝতে পারছিলো, নাসরিন হককে তার যোগ্য সম্মান দেয়া হবে না। কারণ তাকে দাওয়াতই দেয়া হয়নি।

    তখন থেকেই ফাউন্ডেশনের সাথে প্রথম আলোর ক্ল্যাশ। এমনকি প্রথম আলো ফাউন্ডেশনের কোন খবর ভালো করে ছাপায় না। পারতপক্ষে না ছাপানোর চেষ্টা করে। অথচ দেশের এসিডদগ্ধদের সবচেয়ে ভালো সেবা দিতে পেরেছে এই সংস্থা, প্রথম আলো নয়।
    আজ দেশের সবাই প্রধম আলোর এসিডবিরোধী আন্দোলনের কথা জানে। এর শিকড় যে কোথায় তা কেউ জানে না। সবাই প্রথম আলোকে বাহ্বা দেয়, কিন্তু আড়ালে থেকে যায় প্রধান ফাউন্ডেশনটি।

    তাই ভাবতে বাধ্য হই, প্রথম আলোর অধিকাংশ উদ্যোগই এমন ফাঁকা নয়তো? মতিউর রহমান কি তবে সুনামের লোভে আক্রান্ত?

    গণিত অলিম্পিয়াডের ক্ষেত্রে অবশ্য আমি প্রথম আলোকে বাহ্বা দেই। কারণ অলিম্পিয়াডের অন্যতম সংগঠক মুনির হাসান উইকিপিডিয়াতে লেখায় তার সাথে পরিচয় আছে। এক্ষেত্রে সংগঠক ও পত্রিকার সাথে সংঘর্ষ চোখে পড়েনি। মুনির হাসান তো নিয়মিতই প্রথম আলোতে লিখেন।

    জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      সানউল্লাহ ভাই একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ব্যাখ্যাটা ভালো লেগেছে।

      বড় কাজে ছোট-খাট ভুল হতে পারে। এটা নিয়ে বেশি হাউকাউ করলে আসল কাজ লোকজন ভুলে যেতে পারে। তবে প্রথম আলো সৎ কিনা কিংবা সৎ থাকতে পারবে কিনা বুঝা যাবে কিছুদিনের মধ্যে।

      আমি আশা করব তারা ঠিক থাকুক, কাউকে না কাউকে তো হাল ধরতে হয়ই।


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      একটা অন্য প্রসংগে কথা বলি, তোমরা মানে আর্মির লোকজন যে ব্লগিং কর এই ব্যাপারে প্রতিরক্ষা দপ্তরের কি নির্দিষ্ট কোন গাইড লাইন কি আছে?

      একটা অনলাইন দৈনিকে দেখলাম, পৃথিবীতে যত জন সাংবাদিক এখন জেলে আছেন তার একটা বড় অংশ ব্লগার।


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
  10. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    ফয়েজ, তোমার ব্লগে বারবার এসে ফিরে যাচ্ছি, কারণ অফিসের কাজে ব্যস্ততা। অন্য পোস্টে ঢুকে একটু খোঁচাখুঁচি করে বের হয়ে এলেও তোমার এবং মুহাম্মদের উত্থাপিত বিষয়গুলোর উত্তর স্পষ্ট করে দিতে হবে বলে সময় নিচ্ছি। কিছু মনে করো না ভাই।
    তবে একটা বিষয় পরিস্কার। তোমার বক্তব্য নিয়ে কোনো ভিন্নমত আমার নেই। হয়তো দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য থাকতে পারে।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  11. আলম (৯৭--০৩)

    বড় সময়োপযোগী একটা লেখা। গঠনমূলক, চিন্তার খোরাকদায়ক।

    এখানে আমি একটা বেফাঁস কথা বলতে চাই। আমরা অবশ্যই 'বৃত্ত'টিকে ভাঙ্গতে চাই, কিন্তু বৃত্তের ভেতর কারা আছে, সেটা কেমনে বুঝবো। গায়ের জোরে যে-কাউকে 'চোর' বলা সম্ভব না, তেমনি প্রমাণ ছাড়া যে-কাউকে 'দুর্নীতিবাজ' বলা যাবেনা, তেমনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যে-কাউকে 'স্বাধীনতাবিরোধী'ও বলা ঠিক না। তাহলে আমরা এই বৃত্তের সীমানা কী করে বের করব? আমার মনে হয়, এইসব লোকদের একটা নিরপেক্ষভাবে তালিকা হওয়া দরকার।

    জবাব দিন
    • কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

      চোর এবং দূর্নীতিবাজদের ব্যাপারটা একটু ওভারলুক করি।
      কিন্তু আমার মনে হয় স্বাধীনতাবিরোধী কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের যথেষ্ট নিরপেক্ষ এবং পর্যাপ্ত প্রমাণাদি তালিকা সহ বৃত্তাবদ্ধ আছে অলরেডি।


      সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

      জবাব দিন
      • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

        ফৌজিয়ানের কথার সাথে পুরা একমত।

        চোর এবং দুর্নীতিবাজ একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। এক্ষেত্রে ইসির আর আদালতের ভুমিকা লাগবে।

        প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে চোর বলা যায় না। কিন্তু আদালতের রায়ে প্রমানিত হবার পর তার সদস্যপদ বাতিল করে সংশ্লিষ্ট আসনে নতুন নির্বাচন হওয়া উচিৎ। সিইসি বলেছেন তিনি এইবার সেটা করার চেষ্টা করবেন। উনি অবশ্য সুনির্দিষ্ট করে ব্যাংকের খেলাপিদের কথা বলেছেন। তবে আশা করি সব ব্যাপারেই তিনি তা করবেন। আর এইজন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ আর স্বাধীন নির্বাচন কমিশন খুব দরকার।

        দেখা যাক কি হয়।


        পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

        জবাব দিন
  12. আলম (৯৭--০৩)

    বড় দুঃখ, আমি এইবারও ভোট দিতে পারমুনা। 🙁
    আপনারা যারা দেবেন, তাদের জন্য ব্যক্তিগত মগজপ্রসূত একটা পরামর্শ হলো, আপনার এলাকার সবচেয়ে গুণী লোকটিকে ভোট দিন, সে যেই দলেরই হোক। আপনার ভোটের কারণে জাতীয়ভাবে কোন্‌ দল বা জোট ক্ষমতায় যাবে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন আপনার এলাকায় কোন্‌ প্রার্থী সবচেয়ে নির্ভেজাল, সৎ ও যোগ্য।

    জবাব দিন
  13. তৌফিক

    বৃত্ত আমাদের ভাঙতেই হবে। প্রচন্ডভাবে একমত।

    কানাডায় আসার পর থেকে আমার ভেতর সচেতনভাবেই একটা চেষ্টা ছিল বুঝতে চেষ্টা করা, কেন এরা পেরেছে এবং আমরা পারিনি। কিছু ব্যাপার আমার চোখে পড়েছে যা সময় সু্যোগমতো শেয়ার করার ইচ্ছা আছে।

    আমার লকারে আরো একটা প্রিয় পোস্ট যুক্ত হলো।

    ধন্যবাদ ফয়েজ ভাই।

    জবাব দিন
  14. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    ফয়েজ : যা ঘটেছে তা চেপে যাওয়ার পরিস্থিতিতে আমাদের প্রায় সবাইকে পরতে হয়। ধরো আমার ভাই চুরি করে ধরা পরলো যা আমাকে লজ্জায় ফেলেছে সেটা কি আমি ফলাও করে প্রকাশ করি? এই চেপে যাওয়াটার মধ্যে আত্মগ্লাণি আছে। কিন্তু মিথ্যাচার নেই। কিন্তু আমি যদি আমার চোর ভাইকে সৎ লোক প্রমাণ করার চেষ্টা করি সেটা ভয়ংকর, বিপজ্জনক। দ্বিতীয়টা কোনো পত্রিকা করলে সেটা হলুদ সাংবাদিকতা বলা যায়।

    এবার প্রথম আলোর প্রসঙ্গ, গ্রামীণ ফোনের ব্যাপারে যেসব তথ্য তুমি দিয়েছ আমি জানি না তা প্রথম আলো জানে কিনা। কারণ গত পৌণে দুবছর ধরে আমি সেখানে নেই। বড় কোম্পানি বা বড় বিজ্ঞাপনদাতাকে পুরো উপেক্ষা করে চলা এখনো মিডিয়ায় বেশ কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে আপস করতে হয়। আবার ক্ষমতাবানদের সঙ্গেও আপস করতে হয়।

    একটা ঘটনা বলি। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার অজুহাতে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। সে সময় ভোরের কাগজে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তৎকালীণ তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেন। সরকারি বিজ্ঞাপনের অভাবে ভোরের কাগজের সাংবাদিক-কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।

    আরেক ঘটনা। বছর আড়াই-তিন আগে বসুন্ধরা গ্রুপের দুনম্বরী নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তারা প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়। বসুন্ধরা তখন প্রথম আলোতে একক বৃহত্তম বিজ্ঞাপনদাতা। বসুন্ধরার মালিক বলেছিল, মতিউর রহমান গিয়ে তার সঙ্গে কথা বললে বিজ্ঞাপন চালু হবে।

    একইরকমভাবে ওয়ারিদের ঘুষ দেয়ার ঘটনা প্রকাশ করায় বছরখানেক আগে ওরা বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়। প্রথম আলো বা এর সম্পাদক ওদের কারো কাছে যাননি বা মাথা নত করেননি। এক পর্যায়ে বসুন্ধরা এবং ওয়ারিদ নিজেদের স্বার্থেই প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু করে।
    এসব ঘটনা নিজে জানি বলে ব্যাখ্যা দিতে পারলাম। গ্রামীণ ফোনের ভিওআইপি অপরাধ অবশ্যই বড়। আমি নিশ্চিত প্রথম আলো একদিন ওদের নিয়েও লিখতে পারবে। হয়তো কোনো কারণে এখন আপস করতে হচ্ছে।

    আরেকটি ঘটনা বলি। পিএসসির সর্বশেষ কেলেংকারি কে উম্মোচন করেছে? প্রথম আলো। কিন্তু মজার বিষয় সা'দত হোসেইন প্রথম আলো সম্পাদকের খুবই ঘণিষ্ট। তার বিরুদ্ধে প্রথম আলোতে কিছু ছাপা হবে এটা অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু পিএসসি চেয়ারম্যানের কেলেংকারি এমন পর্যায়ে যায় যে মতিউর রহমানকে বন্ধুত্ব উপেক্ষা করতে হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিতে তাঁকে ভীষণ যন্ত্রণা পেতে হয়েছে বলে আমার ধারণা।

    আর এরসঙ্গে মওদুদের ঘটনা মিলিয়ে আমি মনে করি তুমি ঠিক করোনি। মওদুদ কি জিনিষ তা আমিও ভালো করে জানি। তার প্রকৃত দুর্নীতি প্রকাশ হয়নি, এটা ঠিক। কিন্তু আইনমন্ত্রী থাকাকালে তার দুর্নীতির প্রতিবেদন আমি করেছিলাম মনে আছে। হুমকি দিয়েছিল, দেখে নেবে। এদের মতো লোকেরা দুর্নীতির গোড়া। তার মদের কাহিনী ফলাও প্রচার করেছে সরকার। সরকারের যতো লোকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে সবাইকে বলেছি কাজটা ঠিক হয়নি। তবে বিদেশে তার কেনা বাড়ির ঘটনা সঠিকভাবেই প্রকাশিত হয়েছে।

    কাগজ ছোট করার কোনো বিকল্প ছিল না। এ নিয়ে কিন্তু আগেই পত্রিকায় ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। নিউজপ্রিন্টের টন সাড়ে ৩শ ডলার থেকে বেড়ে ৮শ ডলারে ওঠেছে। পত্রিকাগুলোর বেঁচে থাকাই কঠিন। কিন্তু পত্রিকার আকার ছোট করলেও পৃষ্ঠা বাড়িয়েছে প্রথম আলো। এখন অধিকাংশ দিন মূল কাগজ দেখবে ২৪ পৃষ্ঠা। আগে ছিল ২০ পৃষ্ঠা।

    অনেক কিছু করার আছে, অনেক কিছু করতে হবে। এই না পারাটা আমাদের ভীষণ কষ্ট দেয়, যন্ত্রণা দেয়। আত্মগ্লাণিতে ভুগি। আমি নিশ্চিত মতিউর রহমান ও আনিসুল হকেরও তাই হয়।

    ল্যাব এইড ও এ বি এম মুসার কথা বলতে পারবো না। ওটা উনার অভিরুচি। তবে উনি কোথাও চাকরি করেন না। অর্থাৎ আর কোনো আয়ের উৎস নেই।
    ..............................................................................

    মুহাম্মদ : তুমি যেটা বলেছ সেটা "এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন" বা তাদের কোনো লোকের বক্তব্য। তুমি একপক্ষ শুনেছ। অন্যপক্ষ নয়। আমি অবশ্য প্রথম আলোর কথা জানিনা, ঘটনাটা আসলে কি হয়েছিল। এসিডদগ্ধদের নিয়ে "এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন" কাজ করছে, প্রথম আলোও করছে। আমি সঠিক জানি নি, এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন-এর তহবিল বাইরের, অর্থাৎ বিদেশের। ওটা একটা প্রতিষ্ঠান। আর প্রথম আলো দেশের মানুষের কাছ থেকে সংগৃহীত তহবিলে এসিডদগ্ধদের জন্য কাজ করছে। মাত্র একজন স্টাফ আছে এজন্য। প্রথম আলোর সাংবাদিক-কর্মীরা স্বেচ্ছাশ্রমে এর কাজ করে। নাসরিন হককে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, এর পেছনে মতিউর রহমানের ভূমিকা তোমার লেখায় স্পষ্ট নয়। আর আমি যতদূর জানি প্রথম আলো এসিডদগ্ধদের জন্য এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনকে সঙ্গে নিয়ে অনেক কাজ করেছে।

    প্রথম আলোর আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রথম আলো সম্পাদককে পুরস্কৃত করার ঘটনা তোমার কাছে প্রথম শুনলাম। এমনটা মতিউর রহমানের ক্ষেত্রে অভাবনীয়।

    প্রথম আলো এবং এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের মধ্যে বিরোধ কোথাও থাকলেও থাকতে পারে। আমার জানা নেই। তুমি দয়া করে প্রথম আলো দেখো, এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের প্রচুর প্রচার সেখানে হয়। হয়তো ওদের আকাঙ্খা পুরণ হয়না। প্রথম আলো নিজের কাজের প্রচার করবে এটা স্বাভাবিক। কারণ পাঠকরা এসব কাজের তহবিল যোগান দেয়। তাদের আস্থাটাও জরুরি। এটাকে তুমি অন্যভাবে ব্যাখ্যা করতে পারো। সে স্বাধীনতা তোমার।

    আর নাম কামানো? সে প্রশ্নের উত্তর মতিউর রহমানই দিতে পারবেন। গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগ, এসিডদগ্ধদের পাশে দাঁড়ানো, মাদকের বিরুদ্ধে প্রচার, কৃতিদের সম্মান জানানো, নির্যাতিতের পক্ষে অবস্থান নেয়ার মতো কাজ করার পেছনে যদি নাম কামানোর উদ্দেশ্য থাকে, আমি বলবো সবাই আমরা সেটাই করি না কেন? নামও হলো, সমাজেরও ভালো হলো।

    তোমাদের জন্য শুভ কামনা। সবাই ভালো থেকো। :salute:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      তা ঠিক। আমি আসলে একপক্ষের কথাই শুনেছি। কিন্তু এসিড আন্দোলনের জন্য মতিউর রহমানের পুরস্কার গ্রহণের বিষয়টি কিন্তু সত্য। বাকিগুলো পক্ষপাতিত্বমূলক হতে পারে। কিন্তু বিশেষ করে নাসরীন হককে যোগ্য সম্মান দেয়া হয়নি। সেটা প্রথম আলোর পক্ষ থেকেই হওয়া উচিত ছিল। কারণ তারা সম্মান দিলেই দেশের মানুষ সম্মান দেবে। কারণ মানুষ তো প্রথম আলোর মাধ্যমেই সবকিছু জানতে পারছে।
      তারপরও অনেকগুলো যুগান্তকারী কর্মসূচী গ্রহনের জন্য প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা।

      জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      ধন্যবাদ সানাউল্লাহ ভাই। প্রথম আলোকে আবার নতুন করে ভাবব আমি, এ নিশ্চয়তা আপনাকে দিলাম।
      কাজের সময় একটু উনিশ বিশ হতেই পারে, আমি মানি, মুল লক্ষ্য ঠিক থাকলেই হল।

      আরিফের ব্যাপারটায় কি আপনি কিছু বলতে পারবেন? তাকে কেন এতদিন জেলে থাকতে হল? ছাত্র হিসেবে সে একটা আপরাধ যদি করেই ফেলে, শিক্ষক হিসাবে মতিউর রহমান কি করলেন?


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
      • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

        প্রথম আলোর ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করলেন, কিন্তু লেখাটার অন্য ব্যাপার গুলো সর্ম্পকে আপনার অভিজ্ঞতা, সেগুলোও বলুন প্লিজ।


        পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

        জবাব দিন
      • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

        [কারাগার থেকে বের হবার পর ব্লগার অমি রহমান পিয়াল একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিল কার্টুনিস্ট আরিফের। সেটা সামুতে প্রকাশ হয় ২৮ মে ২০০৮। প্রথম আলো ও মতিউর রহমান নিয়ে প্রচুর বিষোদগার ছিল ওই লেখা ও ব্লগারদের মন্তব্যে। এক পর্যায়ে আমি একটা জবাব দিয়েছিলাম। সেটা এখানে তুলে দিচ্ছি।

        একটা সত্যি কথা বলি, আসলে বড় করে লেখার সময় এখন আমার নেই। নির্বাচনটা শেষ হলে হয়তো সময় পাবো। আমাদের সাংবাদিকদের জন্য এখনকার সময়টা ভীষণ কঠিন। ব্লগে ঢুকে টুকটাক মন্তব্য করা বা খোঁচাখুচি হয়তো করতে পারবো। তোমার বা অন্যদের আনা আরো নানা বিষয়ে মন্তব্য করাটা এখন সম্ভব হচ্ছে না। আর এসব বিষয় এতো আলোচিত ও বিতর্কিত যে মনের কথাটা বলতে ও বোঝাতে অনেকটা সময় লাগে। "সহমত" বলে মন্তব্য শেষ করা নিশ্চয়ই তুমি চাইছো না। সামনাসামনি আলোচনা বরং এক্ষেত্রে সুবিধাজনক। ]

        পিয়ালের পোস্টে আমার মন্তব্য :

        ধন্যবাদ পিয়াল চমৎকার সাক্ষাৎকারের জন্য। কার্টুনিস্ট আরিফকে অভিনন্দন।

        সাক্ষাৎকার ও এর সঙ্গে ব্লগারদের মন্তব্য পড়ে আমার মনে কিছু প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। সে সব প্রশ্নের উত্তরও খোঁজার চেষ্টা করেছি।

        আরিফের কার্টুন আঁকা, সেটা প্রথম আলোতে প্রকাশ এবং এর পরের ঘটনা প্রবাহে কিছু শূন্যস্থান পাওয়া যায়।

        আরিফ নিজে বলেননি বা পিয়াল তাকে প্রশ্ন করেননি যে, প্রেপ্তারের পর প্রথম আলো বা এর সম্পাদক তার জন্য কি কিছু করেছেন। আমি এর মধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য খুঁজতে যাচ্ছিনা। প্রথম আলোর একজন শুভানুধ্যায়ী হিসাবে আমি এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পেরেছি এবং সেটাই ব্লগে সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাইছি।

        প্রেপ্তারের পর আরিফকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে সম্পাদকসহ প্রথম আলোর কয়েকজন সাংবাদিক সরকার, গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের উপরমহলে বারবার কথা বলেছেন। (তদবির করে সফল হয়েছিলেন।)

        প্রথম আলোর দুজন আইনজীবী সাংবাদিকসহ আরো কয়েকজনকে আরিফের মামলার ব্যাপারে নিয়োগ করেছিল প্রথম আলো। কারাগারে আরিফের জন্য খাবার, কাপড়চোপড় (এমনকি অর্থ) পাঠিয়েছেন প্রথম আলো সম্পাদক।

        আরিফের নিয়মিত দেখাশোনার জন্য তার চাচাতো ভাই জুয়েলকে দফায় দফায় টাকা দিয়েছে প্রথম আলো (ও এর সম্পাদক)।

        কারাগারে আরিফের ওপর জঙ্গিদের (আরিফের কথায় জেএমবি, আর প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী মুফতি হান্নান ও তার দল হুজি) হামলার খবর পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সেল (কারাকক্ষ) বদলানোর কাজটিও করেছে প্রথম আলোর সাংবাদিকরা।

        আর সর্বশেষ আরিফের মুক্তির জন্য সরকারে বিভিন্নমহলে (দিনের পর দিন) ধর্নাও দিয়েছেন মতিউর রহমান। প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে ওর মুক্তির ফাইলে সই করানোর কাজটিও প্রথম আলোর সম্পাদকের করা।

        প্রথম আলো ও এর সম্পাদকের শত্রু কম নয়। এটা অনেকেই জানেন। পত্রিকাটির ঈর্ষনীয় উত্থান এবং সম্পাদক হিসাবে মতিউর রহমানের প্রতিষ্ঠা অনেকেরই (সাংবাদিকদের বড় অংশ ও মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী) চক্ষুশূল। তবুও বলবো- ঠান্ডা মাথায় ভাবুন কিছু বিষয়।

        ১. প্রথম আলোকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছিল মৌলবাদীরা। বর্তমান তত্তাবধায়ক সরকারের একাধিক প্রভাবশালী মহল (পাকিস্তানপন্থী গোয়েন্দা ও ব্যারিস্টার মইনুল) এই সুযোগে প্রথম আলো ও মতিউর রহমানকে দেখে নেয়ার চেষ্টা করছিল। পত্রিকাটি বাঁচাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিসে গিয়ে জামায়াত সমর্থক খতিব উবায়দুল হকের সঙ্গে মতিউর রহমানের আপসরফা কি ঘৃণ্য কাজ হয়েছে? সেটা না করে প্রথম আলোর ক্ষতি হলে ৫-৬শ সাংবাদিক-কর্মীর রুজি বন্ধ হলে, লাখ লাখ পাঠক প্রথম আলো পত্রিকাটি পড়তে না পেলে কি সত্যিই বিপ্লবী কাজ হতো?

        ২. মতিউর রহমান কি খতিবের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন? এমন একটা দাবি মোল্লারা আর প্রথম আলোর সমালোচকরা (নাকি নিন্দুক) করে থাকেন। (আমি উনার সঙ্গে এবং সাথে যারা ইসলামিক ফাউন্ডেশনে গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি) প্রথমত তিনি ক্ষমা চাননি। দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে মতিউর রহমানের নিন্দুকরা অনেক কথা বলতে পারেন, কিন্তু ওইরকম পরিস্থিতিতে যখন প্রথম আলোর পাশে তার নিরব সমর্থক পাঠকরা ছাড়া আর কেউ ছিলনা তখন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো জায়গায় গিয়ে খতিবের সঙ্গে সমঝোতা করতেও সাহস লাগে।

        এরপর পিয়াল কিছু জবাব দিয়েছিলেন। তার উত্তরে বলেছিলাম:

        পিয়াল বলেছেন, "তবে একটা ব্যাপার আমিও মেলাতে পারছি না। ঘটনাপ্রবাহে মনে হচ্ছে প্রথম আলো মনে করেছে যাও বাবা আমার জন্য জেল খেটেছো, ছাড়িয়ে এনেছি, শোধবোধ হয়ে গেলো। অন্তত চুপিচুপিও যদি প্রথম আলো আরিফকে ডাকিয়ে একটা স্বান্তনা দিতো আমার ধারণা আরিফের কৃতজ্ঞতাটুকু আরো বেশী পেতো।"

        ---প্রথম আলোতে একটা বড় সময় চাকরি করে প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে আপনার ধারণা দেখে বিষ্মিত হচ্ছি। আমি বেশ কিছু নাম বলতে পারি তারা সাক্ষ্য দেবে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য নয়, প্রথম আলো কারো জন্য করলে হৃদয় দিয়েই করে। প্রথম আলোর আইনজীবী কারাগার থেকে বের করার পর আরিফকে তার ভাইসহ বাসায় পাঠিয়ে দেন। তারপর এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আরিফের ভাইকে ফোন করেছে প্রথম আলোর একাধিক সাংবাদিক, আরিফের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য (আরিফের তখন কোনো মোবাইল ছিল না)। কিন্তু তার ভাই কোনো কিছু জবাব দেয়নি বা কিছু জানায়নি।

        পিয়াল বলেছেন, "আরিফ আলপিনে তো প্রদায়ক হিসেবে কার্টুন আকতো। ওকে একটি কার্টুনের জন্যও বিল বাবদ একটি টাকাও দেয়া হয়েছে কিনা?"

        ---পিয়াল, একেই বোধহয় বলে কোমরের নিচে আঘাত করা! আপনি নিজে প্রথম আলোতে কাজ করেছেন, আপনার বেতন-ভাতার কোনো টাকা কি প্রথম আলো বাকি রেখেছে? প্রথম আলোতে চাকরি করার সময় অন্য ফিচার পাতায় লেখার বিল কি বাকি আছে? যদি থেকে থাকে তার দায়িত্বটা কার ছিল? বিভাগীয় সম্পাদকের নাকি সম্পাদকের? প্রদায়কের বিল মেরে দেওয়ার রেকর্ড বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার থাকলেও প্রথম আলো সম্ভবত এক্ষেত্রে সবচেয়ে স্বচ্ছ। আরিফের বিল বাকি থাকলে তা প্রথম আলো সম্পাদকের নজরে আনা হলে আমি নিশ্চিত তা পুরোপুরি পরিশোধ করা হবে। (এ বিষয়ে একটা কথা বলি, কেউ প্রথম আলো ছেড়ে গেলে তিন মাসের মধ্যে তার পাওনা পুরো বুঝিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।)


        "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

        জবাব দিন
        • লাবলু ভাইকে ধন্যবাদ শত ব্যাস্ততার মাঝেও গুছিয়ে টুকটাক মন্তব্য করে যাওয়ার জন্য।
          ভাইয়া
          আমি শুনেছি (এখানে আপনি চাইলে আমি রেফারেন্স দিতে পারবো না, তবে সামনা সামনি হয়তো বলতে পারবো) কার্টুনিস্ট আরিফ এবং মতিউর রহমান সহ প্রথম আলোকে হেনস্থা করার এই ঘটনায় তখনকার উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কিছুটা ইন্ধন ছিলো। (মইনুল হোসেন উপদেষ্টা হবার পর তার রাজনৈতিক অতীত ও বর্তমান নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে মতিউর রহমান একটা কলাম লিখেছিলেন)।

          সবই রাজনীতির খেল!! তাই না?

          জবাব দিন
            • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

              আর্কাইভে পেলাম না। প্রথম আলো জানালো সার্ভার বদলের কারণে পুরোনো সংখ্যাগুলো আপডেট করা যায়নি। আমি ওদের লাইব্রেরিতে খুঁজতে বলেছি। পেলে তোমাদের জানাবো।

              বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন উপদেষ্টা নির্বাচন করলো, তখনি ব্যারিস্টার মইনুলের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন মতিউর রহমান। দুজনের আদর্শিক বিরোধ তো পুরোনো। ফলে মইনুল তখন চেষ্টা করেছে মোল্লাদের কাজে লাগিয়ে প্রথম আলোকে একহাত দেখে নিতে।


              "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

              জবাব দিন
        • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

          ব্যক্তিগত মত নিয়ে লেখা একটা পোষ্টে এত সময় দিয়ে আপনি আমাকে ঋনি করে ফেললেন সানউল্লাহ ভাই।

          অনেক কিছু জানার ছিল "মাস মিডিয়া" নিয়ে, আপাতত তুলে রাখলাম। পরে কোন এক সময় টেনে আনব আবার।

          আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।


          পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

          জবাব দিন
  15. তানভীর (৯৪-০০)

    ফয়েজ ভাই, সূক্ষ্ণ দৃষ্টিকোন থেকে লিখা এই লেখাটা খুব ভালো লাগল। আমি প্রতিনিয়ত শিখে যাচ্ছি আপনার কাছ থেকে।

    চমৎকার এই লেখাটার জন্য আপনাকে :salute:

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।