আচার ০১৩: পরবাসীর রোজনামচা

ঘুম ভাঙে সাড়ে পাঁচটার দিকে। ল্যাপটপটাকে আবিষ্কার করি মেঝের উপর। ঘুমের ঘোরে ফেলে দিয়েছিলাম নাকি নিজেই মেঝের উপর রেখেছিলাম মনে করতে পারি না। তুলে চালু করি। আমার মতোই শীতনিদ্রা ভেঙে জেগে উঠেন আমার প্রবাস জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধুটা। ক্রিক ইনফোর পেজ খোলাই ছিল। আলস্য ভেঙে অতি কষ্টে আঙুল তুলে F5 চাপি। চারখানা উইকেট পড়েছে, লিড চারশর ঘরে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। কেউ কথা রাখে না। সাকিবকে ঠেকানোর বুদ্ধি ঠিকই বের করে ফেলেছে শ্রীলংকা। আর মরা পিচে মাশরাফি কিইবা করতে পারে। শামীম চৌধুরীকে শুনলাম মাশরাফির ফিটনেস নিয়ে বিষেদাগার করতে। জুতা দিয়া গালে দুইটা মারতে ইচ্ছা হলো। পাইলটের ক্যাপ্টেন্সিতে নিউজিল্যান্ড সফরে এই ছেলেটাকে দিয়ে ইনজুরির সময় ছোট রান আপে বল করানো হয় নাই? তারপর ইনজুরি যখন জটিল আকার ধারন করেছিল, ছেলেটা হারিয়ে যেতে বসেছিল, তখন তোর তত্ত্বকথা কই ছিল? মফস্বল থেকে একটা ছেলেকে ধরে আনবি, মেধাবী তাই কোন প্রস্তুতি ছাড়া ব্যবহার করবি, তারপর ছেলেটাকেই দোষ দিবি? মুখ খারাপ করে গালি দিতে ইচ্ছা হয় সাত সকালে।

ইয়াহুর বার্তাবাহকে দেখলাম আয়াজ ঢুকলো। আন্ডারগ্র্যাড করে এখানে ইকোনমিক্সে। কাল দাওয়াত দিয়েছিলাম ওকে। পরোটা বানিয়েছিলাম, চানার ডাল দিয়ে কলেজ স্টাইলে গরুর মাংস, সরিষার তেলের ড্রেসিং দিয়ে টোমটোর সালাদ, বিফ স্টেক। আমার প্রায় ঘন্টা পাঁচেক খাটা খাটনি করতে হয়েছিল। হলিডে সিজন, কাজ কর্ম নাই। সুতরাং ওই সময়টুকু দিতে গায়ে লাগেনি। খাওয়া দাওয়ার পর ব্যাটা আমার লিভিং রুমের সোফায় শুয়ে ঘুম দিল। আমিও বাড়তি কম্বলটা দিয়ে ঢেকেঢুকে দিয়ে, থার্মোস্ট্যাটে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে ঢুকলাম। অনলাইনে স্ট্রিমিং করে লেকারস-ট্রেইলব্লেজারস খেলা দেখবো বলে। অগ্নিশৃগালের আরেক ট্যাবে বাংলাদেশ শ্রীলংকার খেলা। এক ট্যাবে জিতছি, আরেক ট্যাবে অপমানের চূড়ান্ত। দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। সকালে ঘুম ভেঙে কম্পিউটার ছেড়ে আয়াজকে অনলাইনে দেখে অবাকই হয়েছিলাম। ও বলল, পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে উঠে চলে গিয়েছে বাসায়। অগত্যা আমার উঠতেই হলো। যাওয়ার সময় দরজা লক করে গিয়েছিল কিনা দেখার জন্য।

ততোক্ষণে দিনের খেলা শেষ হয়ে যায়। আরেক ইনিংস ঘুমানোর আগে এন বি এর গতকালের খেলাগুলোর ফলাফল দেখি। পরে যখন ঘুম ভাঙে, ঘড়িতে দেখি ১১টা বাজে। সিসিবির নতুন পোস্টগুলো পড়ি। বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা হয় না। মাথায় নতুন কতোগুলো পোস্টের আইডিয়া ঘোরে। সেগুলো লিখে ফেলতেই শুরু করেছিলাম এটা। কিন্তু কি যে হলো, লিখতে শুরু করার পর কিভাবে কিভাবে যেন সব গুলিয়ে গেল।

৬,৩৫৫ বার দেখা হয়েছে

৭০ টি মন্তব্য : “আচার ০১৩: পরবাসীর রোজনামচা”

  1. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    আমার ল্যাপটপটা বিছানা থেকে পড়ে গেলে ভেঙ্গে গুড়া হয়ে যেতো এইটা নিশ্চিত।

    কিন্তু কি যে হলো, লিখতে শুরু করার পর কিভাবে কিভাবে যেন সব গুলিয়ে গেল।

    ঠিকই তো আছে। আইডিয়া পরে মুড উঠলে নামায়েন। ব্যাপার না।

    জবাব দিন
    • তৌফিক

      তুমি আমার থেকে বস না, আমি এক সপ্তাহ বাড়ির ভিতরে কাটাইলাম।

      কালকে বাজার করার জন্য একটু বাইর হইছিলাম। এখন ঘড়িতে তিনটা বাজে, এখনও উঠি নাই।

      খোমাখাতায় নিজের স্ট্যাটাস লিখে রাখছি......তৌফিকুর গা ঝাড়া দেওয়ার চেষ্টা করতেছে...

      কিন্তু ঐ পর্যন্তই। গা ঝাড়া আর দেওয়া হইতাছে না।

      জবাব দিন
      • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

        পড়লাম।হিংসা হইতেসে শোয়া বসা জীবন দেইখ্যা।সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার কথা মনে হলে কলেজের পিটির আগের সময়টা এসে দাড়ায়।
        আর জুনা ভাই ,হাজার তম পোস্ট আমি দিমু ডিক্লেয়ার।যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি।আমার মোটামুটি হিসাবে বৃহস্পতিবারের কোন এক সময়ে সেটা হবে। আগামীকাল সারারাত ডিউটি।তারপর চারদিন ফ্রি।আপনেরা এর মধ্যে আর পঞ্চাশটা না দিতে পারলে আমার অবশ্যম্ভাবী সম্ভাবনা।

        *** অফটপিক: তৌফিকের একটি পোস্ট নিয়ে ধর্ম বিষয়ক জটিলতা হইছিল যে পোস্টে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় আরেকজনের পোস্ট পড়লাম। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এসব পোস্ট মডারেট না করার পক্ষপাতী।ব্যাক্তিগত আক্রমণ ছাড়া চলুক না প্রাণবন্ত আলোচনা।

        জবাব দিন
        • তৌফিক

          কাব্য ভাই তো চইলাই গেলেন মাথা গরম কইরা। ওই পোস্টটা লিখার জন্য নিজেরে লাত্থি দিতে ইচ্ছা হয়। আমি কিন্তু কোন মতবাদই প্রচার করি নাই। একটা ঘটনার কথা লিখছিলাম। তার পর কি থেকে যে কি হয়ে গেল। ভাগ্য ভালো, এডু স্যারের হালকা ভৎসনার উপর দিয়াই গেছে। ভ্যান খাই নাই। 😀

          জুনায়েদ ভাইয়ের ব্যাপক চিন্তাশীল পোস্টে আমি একটা টিপস দিছি কিভাবে হাজারতম পোস্টটা করা যায়। ওইটা মাইনা করতে পারো। 😛

          জবাব দিন
        • আমি ব্যাক্তিগতভাবে এসব পোস্ট মডারেট না করার পক্ষপাতী।ব্যাক্তিগত আক্রমণ ছাড়া চলুক না প্রাণবন্ত আলোচনা।

          প্রনবন্ত আলোচনা হলে আমারো আপত্তি নাই। আমার মনে হয় এর জন্যই তো ব্লগ। কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা সীমালঙ্ঘন করে ফেলি যে! ওইখানে যেমন কেউ কেউ ব্যাক্তি আক্রমন করে ফেলেছিলেন। নইলে সব ধরনের একাডেমিক ডিবেট বা মুক্ত আলোচনা করতেই তো আমরা সবাই একত্র হয়েছি।

          আর তৌফিক
          তোমার বারবার ওই পোস্ট নিয়ে আক্ষেপ করার কোন কারন নেই। তোমার পোস্ট এবং আমরা যারা কমেন্ট করেছি সবাই কিন্তু একাডেমিক ডিবেট করছিলাম। 😀

          জবাব দিন
            • ফয়েজ (৮৭-৯৩)
              তৌফিকের একটি পোস্ট নিয়ে ধর্ম বিষয়ক জটিলতা হইছিল যে পোস্টে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় আরেকজনের পোস্ট পড়লাম। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এসব পোস্ট মডারেট না করার পক্ষপাতী।ব্যাক্তিগত আক্রমণ ছাড়া চলুক না প্রাণবন্ত আলোচনা।

              ধর্মীয় ব্যাপার গুলা খুব সেনসেটিভ। এবং এটা অশেষ, শেষে দেখা যায় জিহাদ (নাকি ক্রুসেড) শুরু হয়ে গেছে।

              এই অনুভুতি নিজস্ব, নিজের মধ্যেই রাখা ভাল। আমার নিজের সবকি আমি শেয়ার করি? এটা কি উচিৎ? প্রোডাক্টিভ কিছু কি পাই এখান থেকে?

              ব্যক্তিগত ভাবে আমি অনেক বেশি ধর্মীয় অনুভুতি প্রবন। আমার গে-টাপ দেখে মুহম্মদ আর রায়হান আমাকে পিটায় কিনা এই চিন্তা মাঝে মাঝে চলে আসে। এই জন্য গেট-টুগেদার এড়িয়ে চলি, যদি লাইট বন্ধ করে পিটায় পোলাগুলা। কিন্তু আমি খুব আগ্রহ নিয়ে মুহম্মদের পোষ্ট গুলো পড়ি সচলে,বির্তকে নামি না দুটা কারনে, ১। আমার এত পড়াশুনা নেই, ২। এই বির্তক আমার কাজ না। কিন্তু ওর পোষ্ট পড়ে আমার অনুভুতি বদলায় না, এটা শেয়ারও করি না। ঝগড়াও করি না।

              কিন্তু সবাই আমার মত নয়। এরা কিছু মানুক আর না মানুক, চিল্লা চিল্লি করে। পরিবেশ নষ্ট হয়। আমার কাছে যেটা স্বাভাবিক, অন্যে সেটা নাও মানতে পারে। অসুবিধা কোথায়। এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলোতে আমরা একমত। সেইরকম কিছু ব্যাপারে ভিন্নমত হতেই পারে। তুমি তোমার কথা বল, আমি নাও মানতে পারি। আমি আমার কথা বলি, তুমি মান কিংবা না মান তোমার ব্যাপার। কিন্তু জোর করে আমার মত কি অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া যায়?

              তৌফিকের পোষ্টটা পড়েছি অনেক দেরী করে। ঈদের পরে। কারন ঈদের লম্বা ছুটিতে নেট বিহীন জীবন কাটিয়েছি। খুব কষ্ট পেয়েছি সাদিদের সিদ্ধান্তে। এটা আমার নিজের কষ্ট। সাদিদের জানা আর নাজানাতে কিছু যায় আসেনা। কষ্ট কমবে না, কিংবা বাড়বে না।
              আমরা যে কবে বুঝব এই অতি সাধারন ব্যাপার গুলো।

              তৌফিকের পোষ্ট পরে এই কথা গুলো বলতে চেয়েছিলাম। এই কথা অথবা এই রকম কিছু কথা। দেরি করে ফেলেছিলাম। আজ বলে ফেললাম।


              পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

              জবাব দিন
  2. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    পরোটা বানিয়েছিলাম, চানার ডাল দিয়ে কলেজ স্টাইলে গরুর মাংস, সরিষার তেলের ড্রেসিং দিয়ে টোমটোর সালাদ, বিফ স্টেক

    আহা... ভাইজান মুখে পানি আইসা পরলো। :dreamy:
    কিন্তু উপায় নাই...যাই বিস্কুট চিবাই গিয়া। 🙁

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    সাকিবরে দিয়া আজকে বেশি বল করায়নাই, ক্যাপ্টেন সাব নিজেই দুইটা উইকেট নিছে। দিলশান বদমাইশটা আমাগোরে পাইলেই ফুইলা উঠে। আইসিসি আবারো লাগলো আমাগো টেস্ট স্ট্যাটাসের পিছে, এইবার যদি জিম্বাবুয়ে টাইপ কোনো ডিসিশন চলে আসে তাইলে যে কি হবে আল্লাহ মালুম।
    তৌফিক, তোর আচারে পরটা মাংসের কথা দেইখা এই রাইত তিনটার সময় পেট টা মোচর দিতাছে :((


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সকালে পিটি ( ~x( ~x( ~x( ) থেকে এসে তোর পরাটার গল্প পইড়াই মেসে পরাটার অর্ডার দিয়া দিছি, এখন যাচ্ছি খাইতে।

    বাংলাদেশের খেলার অনলাইন স্ট্রিমিং কোথায় পাবোরে?


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    খেলা দেইখা মনে হইতেছে সবগুলা যদি icl এ ভাইগ্যা যাইত তাইলেই ভাল ছিল, ক্রিকেটের মত বোরিং খেলা এদেশ থেকে বিদায় নিত আর আবার ফুটবলের সেই পুরানা দিন ফিরা আসত।

    অফটপিকঃ সাকিব ৪৬ রান কইরা আউট, মুরালি বা মেন্ডিস না, দিলশানের বলে, মুশফিকের সাথে ৯৬ রানের পার্টনারশিপ করছিল।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    তোমার এই লেখাগুলো বেশ...
    আমি কখনও ডায়েরী লিখি না.....তবে মনে কত কথা জমে!
    অনেক অনেক পরে যখন এই লেখাগুলো পড়বা তখন কি যে আনন্দ পাবা! কেমন মুচকী হাসবা, কখনো অভিমানী হবা......মোদ্দা কথা সময়টাকে ফিরে পাবা।
    টাইম মেশিন আবিষ্কারের আগে সেটাই বা কম কি?
    তোমার সেইদিনের আনন্দময় মুখ কামনায় :hatsoff:


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  7. দিনের সর্বোচ্চ মন্তব্যকারী
    কামরুল হাসান (৯৪-০০) (33)
    তৌফিক (৯৬-০২) (25)
    রায়হান আবীর (18)

    যেদিনই ফার্স্ট হবার একটা সম্ভাবনা জাগে তৌফিক আমারে টার্গেট করে। নাহ! ধুর, এমন করলে খেলুম না। ওই দিন তোমারে ছাড় দেই নাই? 😀 😀

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।