আচার ০১২: নাথিং এলস ম্যাটারস

মেটালিকার বিখ্যাত নাথিং এলস ম্যাটারস গানটি শোনেনি এরকম মেটাল ভক্ত কম পাওয়া যাবে। আমি নিজে মেটাল গানের হার্ডকোর ভক্ত না। সেই প্রগৈতিহাসিক কালে একবার গিটার হাতে তুলে নিয়েছিলাম। অপেক্ষায় আছে আইজুদ্দিন, এখনো আমার গিটারে দখল যেকোন শিক্ষানবিশ গিটার বাদকের মতোই। তখন মেটাল শুনতাম, কারণ গিটারে ওদের গানগুলো তুললে অনেক টেকনিক শেখা যায়। গিটারে ওদের কাজগুলোও ভালো। সেইভাবে শুনেছিলাম মেটালিকার নাথিং এলস ম্যাটারস। আমার প্রিয় গানগুলির একটা।

কানাডায় আসার পর নেটের ধুম স্পিড দেখে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ইউটিউব থেকে যেকোন ভিডিও দেখা যায় নিজের পিসি থেকে দেখার মতো করেই। ফকিরকে এক লাখ টাকা এনে দিলে যে অবস্থা হবে আমার অবস্থাও ছিল সেইরকম। পাগলের মতো সারাদিন ইন্টারনেটে পড়ে থাকি। একদিন অন্তর্জালে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে ঘুরতেই পেয়ে গেলাম এপোক্যালিপ্টিকা ব্যান্ডের গান। এরা মেটাল ব্যান্ড কিন্তু কোন ভোকাল নেই। অবাক হওয়ার কিছু নেই, এরা হলো ইন্সট্রুমেন্টাল ব্যান্ড। চারজন চেলিস্ট নিয়ে ব্যান্ড শুরু হয়েছিল। এখন একজন ড্রামারও আছে। এই চারজন চেলিস্টের মধ্যে তিন জনের আছে ইউরোপিয়ান ক্লাসিক্যাল সংগীতের উপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। কিন্তু এরা ক্যারিয়ার শুরু করেছে মেটাল মিউজিক দিয়ে। চারজন চেলিস্ট চেলোতে মেটাল ঘরানার ইন্সট্রুমেন্টাল বাজায়। মেটাল শুনে যারা নাক সিঁটকান, তাদের জন্য বলছি, এদের গান একবার শুনে দেখতে পারেন। এক কথায় অসাধারণ! চারটি চেলো দিয়ে এরকম সুর মূর্ছনা তৈরী করে যে, সংগীতের গোঁড়া শুদ্ধবাদীও এদের বাহাবা দেবে বলেই আমার ধারনা। নিজেদের কম্পজিশান আছে। কিন্তু এরা বিখ্যাত হয়েছিল মেটালিকার মেটাল গানগুলোর ইন্সট্রুমেন্টাল বাজিয়ে। এদের মেটালিকার গানগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে নাথিং এলস ম্যাটারস। সত্যি বলতে কি আমার আসল গানটার থেকেও এপোক্যালিপ্টিকার গান বেশি প্রিয়।

মেটাল গান থেকে ইন্সট্রুমেন্টাল বাজানোর এই ধারা কিন্তু নতুন না। এই পাগলামির পাগল আরো অনেকেই আছে। যেমন পিয়ানিস্ট স্কট ডি ডেভিস। উনি অবশ্য শুধু মেটালিকা বাজান না, গানস এন্ড রোজেস, ইভানিসেন্সসহ অনেক মেটাল আর রক ব্যান্ডের গান বাজান। নিচের লিংকে তার মেটালিকার বিখ্যাত ওয়ান গানটার পিয়ানো কাভারের ইউটিউব ভিডিও দিলাম। আর একটি দুইজনের ব্যান্ডের নাম বলব। ব্যান্ডের নামটা একটু খ্যাত। সদস্যদের নাম দিয়ে ব্যান্ডের নাম, রড্রিগো ই গ্যাব্রিয়েলা। ঠিকই ধরেছেন, সদস্য দুজন হলেন রড্রিগো এবং গ্যাব্রিয়েলা। মেক্সিকান ব্যান্ড, এখন ইংল্যান্ডে থাকে। স্প্যানিশ ভাষায় ই মানে হলো এবং। রড্রিগো বাজায় লিড আর গ্যাব্রিয়েলা দেয় রিদম। আমার অবশ্য গ্যাব্রিয়েলাকে বেশি পছন্দ। মেয়েটা দেখতে সুন্দর (পছন্দ করার জন্য তো এইটুকুই যথেষ্ট) আর গিটার খুব ভালো বাজায়। ছয় তারে স্ট্রামিং করে কি অদ্ভুত সুর তুলে মেয়েটা! আমি প্রথমবার দেখার পর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে বৌয়ের রুদ্রমূর্তির কথা মনে হওয়ায় আমার প্রেমের বেলুন চুপসে যেতেও বেশি সময় লাগে নাই। এপোক্যালিপ্টিকার সাথে এদের মিল হলো, নিজেদের কম্পজিশান থাকলেও এরা বিখ্যাত হয়েছে মেটালিকা বাজিয়ে।

সবশেষে ক্লাসিক্যাল একজন গিটারিস্টের কথা বলি। নাম তার ডন রস। কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে যন্ত্রসংগীতের উপর পড়াশোনা করেছেন। ক্লাসিক্যাল গিটার বাজান। ইনিও গ্যাব্রিয়েলার মতো, ছয় তার থাবড়িয়ে কি যে করেন। পুরো গিটারটাকেই বাজান। আহা! শুনলে মনে হয় শুনতেই থাকি।

আল্লাহ সবাইকে সবকিছু দেন না। চেহারা ছবি ভালো হইলেও সংগীতবোধ আমার খুবই কম। তালকানা, সুরবয়রা আমি আংগুল ক্ষয় করে ফেললাম ,এখন পর্যন্ত কানে এক নোট থেকে আরেক নোটের পার্থক্য বলতে পারি না। এদের বাজানো দেখি আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। মাঝে মাঝে মনে হয় আল্লাহ আমার চেহারাটা খারাপ করে একটু সংগীতজ্ঞান যদি বেশি করে দিত!!!

এপোক্যালিপ্টিকাঃ নাথিং এলস ম্যাটারস

স্কট ডি ডেভিসঃ ওয়ান

রড্রিগো ই গ্যাব্রিয়েলাঃ ওরিয়ন

ডন রসঃ

আশা করি ডিজুস প্রজন্মসহ সবার ভালো লাগবে।

৩,৯২১ বার দেখা হয়েছে

৪১ টি মন্তব্য : “আচার ০১২: নাথিং এলস ম্যাটারস”

  1. আন্দালিব (৯৬-০২)

    জটিল পোস্ট! মেটালিকা শুনে শুনে একটা সময় পার করেছি, সেইরকম মাতাল সময়। ক্যালিপ্টিকার কম্পো আগে শুনেছি, তবে বাকিদের ব্যাপারে জানতাম না একেবারেই। তৌফিক থ্যাঙ্কস দোস্ত! 🙂

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    গানের কিছু বুঝি না তাও থ্যাংকস :boss: :boss: :boss:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. এপোক্যালিপ্টিকা'র কম্পোজিশন আগে দু একটা শুনেছি। ভালো লেগেছে। নেট লাইনের যা অবস্থা, ভিডিও গুলি মনে হয় দেখতে পারবো না।

    হেভি-মেটাল খুব বেশি ভালো লাগে না। তবে মেটালিকার কিছু গান বেশ পছন্দ। নাথিং এলস ম্যাটারস তেমন একটা।

    আমার নিজের সব সময়ের পছন্দ, স্করপিয়ন্স। ওদের 'হলিডে' আমি এখনো দিনে একবার করে শুনি।

    তৌফিক,
    লেখা এবং তথ্য সব দারুন। :thumbup:

    জবাব দিন
  4. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    জটিল পোস্ট তৌফিক :clap:
    আবারো নস্টালজিক হয়ে গেলুম
    মেটালিকা মেগাডেথ আয়রন মেইডেন শুনে পার করা সময়গুলো,
    কিংবা আমাদের রকস্টারটা, ইন ঢাকা, জলি রজার্স, ওয়ারফেজ....ইশ কি দিন ছিলো :thumbup: :thumbup:
    সেইন্ট অ্যাঙ্গার এ কিছুটা হতাশ হইছিলাম, কিন্তু ডেথ ম্যাগনেটিক এ কাইটা গ্যাছে সেইটা, হালারা বুড়া হইলেও ভালকি এখনো কমেনাই একটুও :boss:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  5. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    তৌফিক,
    তোমারে কমেন্টাইতে গেলে ঐ একই কথা চইলা আসে... আর কতবার কমু ভালো লেখ?
    অনেক ভালো লেগেছে তোমার সঙ্গীত পিপাসা দেখে।
    অপেক্ষায় রইলাম কোন একদিন তোমার গিটারে সুরের টানে উম্মাতাল হবো...।

    জবাব দিন
  6. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    তোমার লিখা তো পুরাই বুঝছি, মেটাল নিয়া মাতামাতি, মগার ভিডিও সব কয়টা দেখলেও একটারো মজেজা বুঝতে পারি নাই। তয় গেঞ্জি পরা মাইয়াটার গিটারের উপর ব্যাপক থাবড়া-থাবড়ি দেইক্ষা আমার কলেজ গেমস টাইমে বাস্কেটবল নিয়া থাবড়া-থাবড়ি করার কথা মনে পইড়া গেল।

    আহা কি সময় কাটাইতাম গেমস টাইমে, ওই সম যদি গেঞ্জি পড়া সাপোর্টার পাইতাম তিন চারটা।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  7. নাথিং এলস ম্যাটারস লিখে গুগোল দিসিলাম, তোর ব্লগ আসলো; তখন মনে পড়লো এই পোস্টটা আগেই দেখসিলাম ... কিন্তু ব্যাপক মজা পাইলাম সেকেন্ড লিংকটা দেখে, পাবলিক চুরি-চোট্টামি করতে করতে আর কিছু বাকি রাখে নাই :))

    জবাব দিন
  8. তৌফিক

    আমিও হাসতে হাসতে শেষ। কিংকং-এর এই ধরনের অনুসন্ধানী কাজ কারবার অবশ্য প্রথম না, আমার জানামতে সে আগেও বিভিন্ন চোরের স্বরুপ উদঘাটন করছে। তোর সম্মানে কিংকং-এর মতো বুকে দুইটা কিল দিলাম......... :salute: 🙂

    (সিসিবি এগিয়ে যাচ্ছে, নকিয়ার মোবাইল নকল হয়, নকলা-র মোবাইল হয় না B-) )

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।