গত বছর সেইন্ট জন’স-এ বরফ পড়া শুরু হয়েছিল ডিসেম্বরের শুরুতে। আমার প্রথম শীত ছিল সেটা কানাডায়, আর প্রথম বরফ দেখা তো বটেই। বরফ পড়া তিন রকম দেখেছি- ফ্লারিজ, ব্লিজার্ড আর ফ্রোজেন রেইন। ফ্লারিজ হলো সবচেয়ে স্বপ্নীল তুষারপাত, আকাশ থেকে পেঁজা তুলার মতো বরফ পড়ে। দেখতে ভালোই লাগে। তাপমাত্রাও থাকে সহনশীল পর্যায়ে, শূন্যের দু’এক ডিগ্রী নিচে। বরফ পড়ার এই দৃশ্যটা মাথায় ছিল আগে থেকেই। বাসায় পুরোনো বইয়ের গাদা থেকে একটা বই পেয়েছিলাম, বইয়ের শুরু আর শেষের কয়েকটা পাতা ছিল না। বইটা ছিল সৈয়দ মুজতবা আলীর “দেশে-বিদেশে”, সেখানে মুজতবা আলীর ভৃত্য আবদুর রহমান তার দেশ পানশিরে তুষার পাতের বর্ণনা দেয়। মুজতবা আলীর অপূর্ব লেখনীতে সেই বর্ণনাটা মাথায় গেঁথে গিয়েছিল, গোগ্রাসে পড়েছিলাম সেই ছেঁড়া বইটা। অনেক খুজেঁছি পরে পুরো বইয়ের একটা কপি, পাইনি। ২০০৭ – এর বইমেলায় আমার পার্বতী কিনে দিয়েছিল মুজতবা আলী সমগ্র- খন্ড এক এবং দুই। আবার পড়ার চেষ্টা করেছি, ভালো লেগেছে। কিন্তু ক্লাস ফোরের একটা ছেলের সেই অবাক মুগ্ধতা আর পাইনি।
যাহোক, কথা হচ্ছিল তুষারপাত নিয়ে। আমার দেখা দ্বিতীয় রকমের তুষারপাত হলো ব্লিজার্ড। দমকা হাওয়ার সাথে তুষার। বলে রাখি, তুষার আর বরফ আমার মতো গরমের দেশের লোকদের কাছে এক মনে হতে পারে, কিন্তু এরা এক নয়। তুষার হলো দানাদার মিহি লবণের মতো, নরম এবং কিছুটা তুলার মতোও বটে। আর বরফ হলো গিয়ে তুষার চেপে যা পাওয়া যায়। ডিপ ফ্রিজ খুললেই আমরা বরফ পাই, কিন্তু তুষার পাই না। ব্লিজার্ডের সময় তুষারই পড়ে আকাশ থেকে, কিন্তু দমকা হাওয়ায় তা ফ্লারিজের মতো আর উপভোগ্য থাকে না। ব্লিজার্ডের সময় বাইরে বের হওয়া এক বড় ঝামেলার ব্যাপার। মুখের না ঢাকা অংশগুলোতে তুষার এসে লক্ষ সুইঁয়ের মতো বিঁধে, ব্যাংক ডাকাতদের মতো স্কি মাস্ক পরাই হলো একমাত্র সমাধান। আর হাওয়ার চোটপাট তো আছেই। একবার আমাকে দুই তিন পা সামনে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল বাতাস। ব্লিজার্ড হলে স্কুল কলেজ, অফিস-আদালত সব বন্ধ হয়ে যায়। ব্লিজার্ডের পর মাঝে মাঝে ঘরের দরজাও খোলা যায় না, কারণ দরজার উপর দুফুট বরফ ঠেক দিয়ে আছে। গায়ের জোরে বরফ সরিয়ে দরজা খুলতে হয়। এবার আসি তৃতীয় প্রকারে- ফ্রোজেন রেইন। এসময় আক্ষরিক অর্থেই আকাশ থেকে বরফ পড়ে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো জমে গিয়ে সজোরে মাটিতে নেমে আসে। তুষারের নরম কোমলতা থাকে না এতে, থাকে বরফ শীতল পাথুরে কাঠিন্য। শরীরের খোলা জায়গায় পড়লে মনে হবে কে যেন গুলতি দিয়ে নুড়ি পাথর মারছে।
এ বছর ডিসেম্বরের শুরুতে কিছু তুষারপাত হলেও উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে সেগুলো বৃষ্টিতে ধুয়ে গিয়েছে। আসল তুষারপাত হয়েছে এই এক সপ্তাহ আগে। বাইরের জগত পুরোই সাদা। পুরো শীতকালটাই কাটবে এই তুষারের চাদরে। গত বছর ক্যাম্পাসের ভেতরেই থাকতাম। বরফ নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা ছিল না। ঘর থেকে বেরুলেই টানেলে ঢুকে ইউনিভার্সিটি চলে যাওয়া যেত। বরফ পরিষ্কারও করতে হতো না, ইউনিভার্সিটির লোক এসে পরিষ্কার করে যেত বিল্ডিং-এর প্রবেশ পথ আর লনের ভেতরের ওয়াক ওয়ে। এ বছর থাকি অফ ক্যাম্পাসে। সুতরাং এ দায়িত্বগুলো বাড়ি ওয়ালার সাথে ভাগ করে নিতে হয়। ওইদিন রেডি হলাম সকালে ইউনিভার্সিটি যাব। কিন্তু বরফে আটকে যাওয়ায় আর দরজা খুলতে পারি না। অনেক কষ্ট করে খুলে দেখি, বাসার ড্রাইভ ওয়েতে এক হাঁটু বরফ জমে আছে। পরিষ্কার না করলেই নয়। অগত্যা ব্যাকপ্যাকটা নামিয়ে রেখে বেলচা হাতে শুরু করলাম বরফের গাদায় পথ বানানো। বরফের ওজন যে এতো কে জানতো! প্রায় আধা ঘন্টা হাড় নাড়িয়ে দেয়া খাটুনির পর একটা লাইন তৈরী হল, বাসার দরজা আর রাস্তার মাঝে। ব্যাক প্যাকটা তুলে রওনা দিলাম ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে। নিজের তৈরী করা পথের উপর দিয়ে। মাথার ভেতর তখন নজরুলের লাইন ঘুরছে-
“পথিকই পথের সৃষ্টি করে।”
আমি এইদিক দিয়ে বাচছি, এপার্টমেন্টে থাকি ... কেয়ারটেকারের কাজ বরফ পরিষ্কার করা, নিজে ঝামেলা করা লাগে না ...
ঘুমা গিয়া যা, সাড়ে পাঁচটা বাজে। x-(
এইখানে পাঁচটা ... ঘুমানোর জন্য শুইছিলাম, কিন্তু বউ ফোন দিল ... তাই ভাবলাম যাওয়ার আগে একটু ঢু দেই 😀
ভাই...ছবি দেন না দুই একটা... আমরাও একটু দেখি... :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
ক্যামেরা নাইরে ভাই, গরীব মানুষ। :no: :no: :no:
আমি জীবনে ঐ সব দেশে যাব না... :thumbdown:
হাই কনফিগারেশন নিয়াও যদি তোমার এই হাল হয়...আমারে তো তাইলে সবসময় পকেটে পাঁচ/দশ কেজির বাটখারা নিয়া ঘুরতে হইব... :no:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
জুনায়েদ ভাই, আমার কনফিগারেশন হাই হইলেও লাইট ওয়েট আছি। তাই বাতাস মনে হয় সুবিধা করতে পারছিল।
তৌফিক তোমার বর্ননা এত সহজ, এত সাবলীল আর স্বভাবিক, পড়ে খুব আরাম লাগে।
থ্যাংকস বাডি
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
:shy: :shy: :shy: :shy: :shy: :shy: :shy:
আগামী মাসে কানাডা আসতেছি। তোমার লিখাটা কাজে লাগবে।
কোথায় আসবেন বাহলুল ভাই?
জীবনে একবার ফ্লারিজ আর ব্লিজার্ড দেখার শখ। ভাই আপনি খুবই জটিল লেখেন।
ধন্যবাদ শার্লী। 😛
বড়ই সত্য বলছেন... কিংকং ভাইয়ের মতো আমিও বাইচা গেছি... অ্যাপার্টমেন্টে থাইকা... 😀 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ভালো, তবে সবে তো শুরু হইলো। ভবিষ্যতে কই থাকবা তা তো আর জান না। বরফ না সরায়া মনে হয় না কানাডায় থাকতে পারবা।
যাহোক, ব্লগ কই মিয়া?? 😡 😡 😡
একটা আইডিয়া দেই, হলিডে সিজন কেমন কাটছে, ক্রিসমাস কেমন কাটতেছে এই সব নিয়া লেইখা ফেলো।
আমার তো ১৮ ঘন্টায় এইখানে মানে সিসিবিতে কাটে...আইচ্ছা লিখতাছি...... 😕 😕
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
এখনো ব্লগ পাইলাম না... x-(
যথারীতি আগেরগুলোর মতোই সুস্বাদু আচার। পড়তে এজ ইউজুয়াল দারুন।
সাথে কয়েকটা ছবি দইলে এক্কেবারে জইমা যাইতোরে।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
সেলে পায়া একটা ক্যামেরা অর্ডার দিসি। পয়েন্ট এন্ড শ্যুট। নিশ্চয়ই পরের পোস্টগুলায় ছবি আসবে। 🙂
ক্যামেরার অভাবে র্যাপিড প্রোটোটাইপিং পোস্ট দিতে পারতেছি না। 🙁
সাবলীল লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লাগল।
আমার এখানে ডিসেম্বর মানে গ্রীষ্মকাল 😛 ।
Life is Mad.
তাই নাকি? ডিসেম্বর মানে গ্রীষ্মকাল??
তাপমাত্রা কততে উঠে, সায়েদ ভাই?
আর আর্দ্রতাই বা কেমন?
ভালো লাগছে দেইখা আমারো ভালো লাগল। 🙂 🙂
তৌফিক, বর্ণনাটা দারুন হয়েছে। :clap: :clap:
তোমার লেখার ভঙ্গী অনেক সাবলীল, পড়তেও অনেক ভালো লাগল।
যদিও আমার কানাডায় যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম, তারপরও যেনে রাখা ভাল। 🙂
ধন্যবাদ তানভীর ভাই। :hatsoff:
"আচার" নামডা দেখলে আমার খালি বড়ই এর আচার, জলপাই এর আচার আরো কত ধরনের আচারের কথা মনে পইড়া যায় :-B
লেখার ভঙ্গী, বর্ণনা ভাল লেগেছে তৌফিক 🙂
আপনার কমেন্টও আমার খুব ভালো লাগছে। 🙂