ল্যাপটপের কোনার ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে সকাল ৭ টা বেজে ০৪ মিনিট। গতরাত ঘুমাইনি। একটা ছোট ডাইনামোমিটার ডিজাইন করেছি, এখন কাজ হচ্ছে বিভিন্ন কম্পোনেন্ট জোড়া লাগানো। কিছু কিনে এনেছি আর কিছু বানাতে হচ্ছে মেশিন শপে আর র্যাপিড প্রোটোটাইপিং মেশিনে। রাতে দুটো জিনিস বানাতে দিয়েছিলাম র্যাপিড প্রোটোটাইপিং মেশিনে এবং আরও কিছু কাজ ছিল। কখন সকাল হয়ে গেছে টের পাইনি। র্যাপিড প্রোটোটাইপিং মেশিনটাকে আমার চমৎকার লাগে। মেশিনের কম্পুটারে আপনি যে জিনিস বানাতে চান তার ক্যাড মডেল দিতে হবে, তারপর সে একটু একটু করে প্লাস্টিক স্প্রে করে করে মডেলটাকে বানাবে। অনেক সময় নেয় বটে, তারপরও ব্যাপারটা বেশ সুবিধাজনক। অনেক গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টই তাদের রিসার্চ সেট আপ দাঁড় করাতে এটা ব্যবহার করে। আগেই বলেছি, আমার দুটো জিনিস বানাতে হতো। ঘন্টা চারেকের মধ্যে একটা বানিয়ে দিল। পরেরটা দিলাম, সময় হিসাব করে বলল ৬ ঘন্টা ৩৩ মিনিট। একটা ডেডলাইন তাড়া করছি বলে বাসায় যেতে ইচ্ছা করল না। নিজের ডিজাইন করা একটা জিনিস, মেশিনটা কেমন বানায় দেখার একটা আগ্রহও কাজ করছিল নিজের মাঝে। অতএব বাসার বিছানাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজের অফিসের চেয়ারে টুকটাক কাজ করতে করতে ছয় ঘন্টা পার করে দিলাম। (ফিরলাম না মরার বাসায়, কার কাছেই বা ফিরব? রাতে খালি বাসায় ফেরার অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারাই বুঝবে বাসায় ফেরার প্রতি বিতৃষ্ণা কি প্রচন্ড হতে পারে।)
এই একটু আগে যখন গেলাম শেষ করা পার্টটা নিয়ে আসতে, মেজাজটা খিঁচড়ে সপ্তমে উঠে গেল। ব্যাটা উজবুক মেশিন, বানাতে দিয়েছি কি আর বানিয়েছেটা কি! মেশিনের বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্টিকে উদ্ধার করতে করতে এটা ওটা চেক করা শুরু করলাম, কোথায় সমস্যা হয়েছে বোঝার জন্য। বেশিক্ষন লাগল না, দেখি ব্যাটার প্লাস্টিক ফুরিয়ে গেছে। দুই রকমের প্লাস্টিক ব্যবহার করেন মেশিন বাবাজি, একটা মডেল বানানোর জন্য আর আরেকটা সাপোর্ট দেয়ার জন্য। সাপোর্ট দেয়ারটা শেষ, তাই আমার সাধের পার্ট ভেঙে চুড়ে বিকলাঙ্গ হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। আমার আর কিছু করার নাই, মেশিনে কাচঁমাল কিভাবে ভরতে হয় জানি না, ল্যাব টেকনিশিয়ানরা আসতে আসতে এখনো দুই ঘন্টা বাকি। সুতরাং বসে বসে তাদের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।
কয়দিন ধরে খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। টিচিং এসিসটেন্ট হিসাবে কাজ করতে হচ্ছে, নিজের রিসার্চ আর পড়াশুনা তো আছেই। মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা যাকে বলে আর কি। এর মাঝেই আমার প্রফেসর ধরে নিয়ে গেলেন গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট বারে, সুপারভাইজারস’ নাইট ছিল ওইটা। সুপারভাইজারস’ নাইট কি জিনিস ওইটা মনে হয় আগে বলে নেয়া ভালো, এটা হল গিয়ে সুপারভাইজার আর স্টুডেন্টদের মাঝে বরফ গলানোর একটা প্রচেষ্টা। স্টুডেন্ট আর সুপারভাইজার মিলে বারে যাবে, একজন আরেকজনকে বিয়ার কিনে দিবে, পড়াশুনা বাদ দিয়ে এটা সেটা নিয়ে গল্প করবে এই আরকি। আমার সুপারভাইজার আর আমার মধ্যে বরফ কিছুই নাই, বলতে গেলে ঠাট্টা মস্করার সম্পর্ক। ফুর্তিবাজ মানুষ, তাই এই রকম সু্যোগ হাতছাড়া করার লোক সে না। সুতরাং আমরা দল বেধেঁ রওনা দিলাম গ্র্যাজুয়েট বার বিটার’স – এর উদ্দেশ্যে। বারে ঢুকেই সে ঘোষনা দিল, গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টরা খুব গরীব, বিয়ার কিনে খাওয়ার পয়সা তাদের কাছে থাকার কথা না। সুতরাং সে সবার বিয়ার কিনে দিবে। আমি বাদে আরো তিনজন ছিল, তার বৌ, আর তার আরো দুই স্টুডেন্ট। তারা বিয়ার নেয়ার পর আমার পালা, সে জানে আমি বিয়ার খাই না। মজা করার লোভ সামলানো তার পক্ষে অসম্ভব। খুব সিরিয়াস মুখ করে সে বারটেন্ডারকে জিজ্ঞাস করল, “Do you have a glass of milK?” বারটেন্ডার মোটামুটি স্থির দৃষ্টিতে আমার সুপারের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করা শুরু করল, লোকটা কি মসকরা করছে নাকি? শুড়িখানায় এসে দুধ চায়! আমার সুপার তখনো মুখের সিরিয়াস ভংগি বদলায় নাই, আমার দিকে ইশারা করে সে বলল, “My friend here doesn’t drink beer. That’s why I was wondering if you have a glass of milk for him.”
তার কান্ড কীর্তি আরো আছে, আরেকটা বলি যেহেতু সময় আছে। সে সব স্টুডেন্টকে একটা করে ল্যাপটপ দেয়। আমাকেও দিয়েছিল একটা, এক বছর আগে, তোশিবা। নতুন স্টুডেন্টদের সে ম্যাকবুক দিতেছে, যেন তেন ম্যাকবুক না, সেই রকম ম্যাকবুক। আমার কলিজা তো টাটানো শুরু করল নতুন আসাদের ভাগ্য দেখে। কিছু তো আর করার নাই। তবু তার সাথে ঠাট্টা করার জন্য একদিন বললাম, আমার ল্যাপটপে আর কাজ হয় না, পুরান হয়া গেছে, নতুন একটা চাই। ওদের মতো হইলে ভালো হয়, তবে ম্যাকবুক প্রো হইলে সবচেয়ে ভালো হয়। তার উত্তর ছিল, তোমার ল্যাপটপ পুরান হইছে মানে তোমার গ্র্যাজুয়েশানের টাইম হয়ে গেছে। থিসিস যদি আগামী সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে পারো তাহলে ভালো হয় আর জার্নাল পেপারে একটা পেপার সাবমিট যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে করতে পারি তাহলে সে আমার উপর খুব খুশি হবে। ঢিলের বদলে পাটকেল খেয়ে আমি অফ গেলাম। ব্যাটা ভালো করেই জানে আমার আরো এক বছর আছে থিসিস জমা দেয়ার, কিন্তু কথায় তার সাথে কে পারবে?
:khekz: :khekz: :khekz:
লইলাম..
যেমন ছাত্র তেমন শিক্ষক..দুইজনেই.. B-)
আমারো এক্টা ম্যাকবুক লাকপো...
লেখা পইরা একপাক
কত স্মাইলি দেয় রে 😀
ধ্ন্যবাদ বন্য ভাই।
তোমার মেশিনটার বানানো জিনিস দেখতে ইচ্ছা করতেছে। ভালোমত বানাইতে পারলে একটা ছবি দিও ব্লগে অথবা আমার মেইলে।
শিওর বাহলুল ভাই, এই ব্লগেই ছবি দিব ইনশাল্লাহ।
:clap:
😛
তোমার প্রফেসর দেখি খুব ভালো, কয়দিন আগে একটা সিরিজ পড়ছি অন্য ব্লগে, প্রফেসর ব্যাটা মহা ধান্দাবাজ, ষ্টুডেন্ট এর টাকা মাইরা দ্যায়।
থিসিস কর কিসের উপর? তোমার সাবজেক্ট কি?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমার থিসিস মেশিন ভিশনের উপর। সাবজেক্ট এখন জগাখিচুড়ি। ছিলাম যন্ত্র মিসত্রি, এখন কইতে পারুম না। 😀
আমার প্রফেসর আসলেই ভালো, প্রফেসর খারাপ হইলে গ্র্যাড স্টাডিজ খুব কষ্টকর হয়ে যায়।
ধন্যবাদ ফয়েজ ভাই।
মজা পাইলাম পড়ে।
ম্যাকবুক ইউজ করিনি কখনো, খুব কি ভালো কিছু?
www.tareqnurulhasan.com
ধন্যবাদ তারেক ভাই ওরফে নূরুল হাসান সাহেব। 😀
একটা আলুমিনিয়ামের ব্লক কেটে কেসিং বের করে, ফাটাফাটি দেখতে হয় ওইটা। আর কম্পিউটিং পাওয়ার অবশ্যি অনেক ভালো। এঞ্জিনিয়ারিং-এর পোলাপানদের খুব সুবিধা হয়। 🙂
ভালো কথা, তারেক ভাই। আপনার লেখা থাইকাই আচার নামটা চুরি করছিলাম। আশা করি মাইন্ড খান নাই। কৃতজ্ঞতা নামটা চুরি করতে দেয়ার জন্য।
ম্যাকবুক দেয়? বাহ!!
তৌফিক ভাই, মন খারাপ কইরেন না। সুখের দিন অচিরেই আসবে।
আমারও সেই মেশিনটা দেখতে ইচ্ছা করছে।
আপাতত এইটা দেখ, ছবি অচিরেই দিব। 🙂
অফ টপিকঃ
আমাদের কমান্ডো আহসান ভাই কই? জানেন নাকি কেউ কিছু?
ফেসবুকে মেসেজ দিছিলাম, জবাব দেয় না। উনি ঠিক আছেন তো? কেউ জানলে আওয়াজ দিয়েন।
উনারে কল দিছিলাম নাইট ফায়ারিং না কি নিয়া জানি ব্যস্ত।নেটের ব্যবস্থা নাই।এমনিতে ভাল আছেন-সবাইরে দোয়া করতে কইছেন।আমি কল দিছি কলের মইধ্যেই কারে জানি কইলেন-ইউ নাট, কান্ট ইউ শুট প্রোপারলি?আমি শুইনা ডরায়া মানে মানে রাইখা দিলাম।উনার ওইদিন নাইট জাম্প ছিল প্যারাশুট দিয়া-সবাইরে আল্লা বিল্লা কইরা দোয়া করতে কইছেন,তয় নিজের জন্য না-উনার ক্যাডেটদের জন্য।
উনার ক্যাডেটরা কি কখনো জানবে যে এই হ্যাংলা পাতলা,উস্কো খুস্কো অল্প চুলের এই মানুষটার মধ্যে ভালবাসার কি মহাসমুদ্র লুকায় আছে?
ওরে পাগলা, এই ভালোবাসা কি লুকায়া রাখার জিনিস? ঐটা ঠিকই বুগবুগ কইরা বাইর হয়া যায়। উনার ট্রেইনি অফিসাররা সেইটা ঠিকই টের পায় 😛 😛 ।
Life is Mad.
তুমি আর কি কি খাও না সুনা ??
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ভাল্লুক খাওয়া হারাম।
চিকেন ট্রাই কইরা দেইখেন।
তাইফুর ভাই তো কইলে বিশ্বাস করবেন না। কয়া কি লাভ? 😕
তৌফিক, এই বাড়ন্ত বয়সে খাওয়া নিয়ে এত বাছ-বিচার করলে চলবে???
নাহ্, তোমারে নিয়া তো টেনশনে পইড়া গেলাম... 🙁
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:khekz: :khekz: :khekz:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
টেনশন কইরেন না, লাইনেই আছি। 😀
সবাইরে কমেন্ট বিলাইতাছি। তোমারে :salute:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আপনারেও :salute:
র্যাপিড প্রোটোটাইপিং মেশিনটার ডিটেইলস নিয়া + এইটার আউটকাম মডেলগুলার ছবি দিয়া আরেকটা ব্লগ চাই তৌফিকের কাছে। জিনিসটা সেইরম লাগছে :clap:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ইনশাল্লাহ, একটু ব্যস্ত আছি, ব্যস্ততা কমলেই দিব।
আচ্ছা এই র্যাপিড প্রোটোটাইপিং মেশিন দিয়া অতীতে কেউ কি কখনও জ্যান্ত জিনিস (এই মানে ঐশ্বরিয়া, এঞ্জেলিনা জোলি, ড্রিউ ব্যারিমোর 😀 😀 ) বানানোর চেষ্টা করছে 😉 😉 ?
Life is Mad.
সায়েদ ভাই, ওদেরকে আল্লাহ এক পিস কইরাই বানাইছে। বানায়া ফর্মা ভাইঙ্গা ফেলছে। এখন কেউ চাইলেও বানাইতে পারব না। 😀
আমারও একখান ম্যাখভুখ লাকপো
:clap: :party:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
ওরে বাপ্পস !! macbook দেয় !! কোন স্কুল ভাই ?? জগদান করা লাগে !!
এইখানে ত এক ল্যব বানায় দিয়াই খালাস।
স্কুল থাইকা দেয় না তো। সুপারভাইজার তার রিসার্চ ফান্ড থাইকা দেয়। 😀
র্যাপিড প্রোটোটাইপ মেশিনটার উপরে একটা ব্লগ দিবেন বলছিলেন। এখনো তো দিলেন না ভাইয়া।
অফটপিকঃ খুব মজা করতেছেন নাকি দেশে? 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..