মকবুল স্যার বাঁচবেন, আবার ফিরবেন আমাদের মাঝে

ফেসবুকে Reza Shawon ভাইয়ের লেখা পড়ে আমারো একটা ঘটনা মনে পরে গেল।

ক্লাস ৯ অথবা ১০ এর কথা। আমাদের B ফর্মে সেদিন ছিল ভূগোল ক্লাস। আমরা মোটামুটি সবাই বিরক্ত এই ক্লাস নিয়ে। কারণ, ভূগোল অনেক মুখস্ত টাইপের পড়া। কোন দেশ কোথায়, কোন অঞ্চলে আম গাছ, আর কোথায় বাঁশ গাছ বেশি পাওয়া যায়, এসবের বিস্তারিত বর্ণনা। আফ্রিকাতে “রকি” মাউন্টেন, নাকি “কিলিমাঞ্জারো” এই নিয়ে আমাদের কেন এত মাথাব্যথা করতে হবে তা বুঝতাম না।

তবে দ্রাঘিমাংশ আর অক্ষাংশ উল্টাপাল্টা লেগে গেলেও, এগুলো দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা খুঁজে বের করা মোটামুটি ইন্টারেস্টিং লাগতো।

ক্লাস নিতে আসেন মকবুল হোসেন স্যার। খুব ফর্সা, মাঝারি উচ্চতা, মুখে বেশ জমকালো গোঁফ। গম্ভীর লোক, হাসেন একটু কম। তিনি ভালই পড়ান। তবে আমরা ফাঁকিবাজ পোলাপান খালি ঘুমানোর চেষ্টা করি।

স্যার যথারীতি ক্লাস নিচ্ছেন; বোর্ডে লিখছিলেন। হঠাৎ করেই পেছন থেকে কেউ একটা খুব আপত্তিকর শব্দ করে উঠলো। স্যার শুনতে পেয়েই লেখা থামিয়ে দিলেন।

চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলেন, “কে বাজে কথা বললো? তারাতারি নাম বলো।”

কেউ কথা বলে না।
আমরা ভয়ে চুপ। স্যার রেগে গেলে খুব বাজে অবস্থা হয় আগেই শুনেছি।
পুরো ক্লাস থ হয়ে আছে। স্যার বারবার বলছেন, “কে করেছে? বলো।”

কেউ হয়তো জানে কে করেছে, কিন্তু ফ্রেন্ডকে বাঁচাতে মুখ খোলে না।

উনি বললেন- “বলো কে করেছে?? শেষবারের মত বলছি। নাহলে কিন্তু সবাই মার খাবে। ”

মকবুল স্যারের হাতে নাকি জাদু আছে শুনেছিলাম বড় ভাইদের কাছে। কলেজে কথিত ছিল – তার হাতে যে একবার চড় খেয়েছে, তার দুধ-দাত ও নাকি নড়ে গিয়েছে।

কেউ মুখ খোলে না দেখে স্যার ফর্ম লিডার রাফিকে ধরলেন। কলেজের নীতি অনুযায়ী ফর্মের সকল পাপের জন্য সে দায়ী থাকবে, যদি না আসল পাপী ধরা পড়ে।

রাফি বলে, “স্যার, আমি জানিনা।”

ওই কাল হল তার। ঠাস ঠাস করে দুইখানা বসিয়ে দিলেন রাফির গালে।
বেচারার ফর্সা মুখ একেবারে লাল হয়ে গেল।

এরপর স্যার ধরলেন রাফির পাশে বসা হক’কে।
সেও বলতে নারাজ।

অতঃপর, ঠাস, ঠাস।

আমিতো ভয়ে একেবারে কাঠ। কারণ হকের পিছনেই আমি বসে আছি। এবার নিশ্চয়ই আমার পালা। মনে মনে আল্লাহ্‌র নাম জপছিলাম।

হঠাৎ স্যার থেমে বললেন- “কে করেছো, এখনো বলো। দোষ স্বীকার করলে আমি কিছুই বলবো না। আর না করলে সবাই মার খাবে।”

পিছন থেকে ক্লাসের অফিশিয়াল ঘাপলাবাজ আসিফ উঠে দাঁড়ালো। “স্যার, আমি করেছি।”

স্যার ওর দিকে এগিয়ে গেলেন। ভাবলাম, ওর কপালেও আছে একটা।

কিন্তু না, উনি আস্তে করে আসিফের কাছে গেলেন। ওর কাঁধে হাত রেখে বুঝাতে লাগলেন। বললেন, সে যদি আগেই দোষ স্বীকার করতো, তাহলে ওই দুজন মার খেতো না। ভাল করে বুঝিয়ে আবার ক্লাস নেয়া শুরু করলেন। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

এই হল আমাদের মকবুল স্যার। বাইরে অনেক গম্ভীর হলেও ভিতরে বেশ নরম মানুষ।

ভূগোলে আমিসহ আমাদের ক্লাসে সবার যতটুকু জ্ঞান আছে সবটাই তার অবদান।

ক্লাসের বাইরেও তার খুব দাপট ছিল খেলার মাঠে। পঞ্চাশের বেশি বয়সেও তিনি ফুটবলে যত জোরে কিক করতেন, আমাদের অনেক ভাল প্লেয়াররাও তা পারতো না।

প্রতিবার এথলেটিক্স আর সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি ছিলেন বিচারক।

অসাধারণ একজন উদ্যমী মানুষ তিনি।

কালকে হঠাৎ করেই শুনলাম, স্যার নাকি লিভার ক্যান্সারে ভুগছেন।
খুব মন খারাপ লাগছে তার পর থেকেই।
স্যার নাকি ইন্ডিয়া যাবেন কয়েকদিনের মধ্যেই।

অনেক টাকার দরকার তার চিকিৎসার জন্য।

আমরাতো স্যারের কাছে পড়া কয়েকশ ছেলে আছি। আরো আছেন অন্য কলেজের ভাই-বোনেরা। যে স্যারের জন্য পৃথিবী গোলাকার নাকি চ্যাপ্টা তা শিখেছি, পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে চলতে শিখেছি; তাকে এত সহজে চলে যেতে দেবো না আমরা।

যেভাবেই হোক, তাকে বাঁচাতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে। তার মুখের মিলিয়ে যাওয়া হাসি আবারো ফিরিয়ে আনতে হবে।

পারবো আমরা ইনশাআল্লাহ।

ব্র্যাক ব্যাংকের নীচের একাউন্টটি স্যারের জন্য সাহায্য পাঠাতে পারেন-

নাম: মোঃ তৌহিদুল ইসলাম।
একাউন্ট নম্বরঃ ১৫১২২০২৪৯০৯৫৫০০১
ব্রাক ব্যাংক, শাখাঃ রামপুরা।

অন্যান্য যেকোন তথ্যের জন্য এপেক অফিসের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে এই নম্বরে, +8801912046212। দেশের বাইরে যারা, তাঁরা কীভাবে কি করবে- সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে, এপেকের ফেইসবুক পেইজে।

২,৬৩০ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “মকবুল স্যার বাঁচবেন, আবার ফিরবেন আমাদের মাঝে”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।