“রক্ত দেখলে ভয় লাগে!!! আজব কথা কস কেন?” – ঝাঁঝের সাথে বলে ওঠেন মাসুম ভাই।
আজকাল উনিই আমাদের স্বঘোষিত সর্দার। একসময় ডাকসাইটে ছাত্রনেতা ছিলেন, তাই গলার স্বর চড়তে খুব বেশি সময় নেয় না। এমনিতে মানুষ ভালো, আমাকে বেশ স্নেহই করেন।
“আগেরবারই তোর টার্ন ছিন, ধানাই পানাই কইরা কাশেমরে দিয়ে করাইছিস। এইবার যদি ছুরি না চালাস, তাইলে কইলাম গিরিঙ্গি হইয়া যাইবো।” বড় করে একটা দম নিতে গিয়ে পাশে পড়ে থাকা ছুরিটা তুলে নেন মাসুম ভাই।
-“গত মাসেই নতুন ধার করাইছি, ছুট্ট একটা পোচ দিলেই কাজ শ্যাষ। এত টেনশন নিস ক্যান?”
দিশেহারার মতো ছুরিটার দিকে তাকাই, প্রায় সাত ইঞ্চি লম্বা, কাঠের হাতলটার একপাশে একটু ক্ষয়ে গেছে। জানালার কোন দিয়ে আসা আলোয় কেমন যেন ঝলসে উঠছে মনে হলো।
জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলি, “ মাসুম ভাই, আমি না হয় ঐটারে ধরে রাখবো, এইবারো কাশেমই ছুরি চালাক না। ওর হাতের কাজ ভালো, কোন মিস নাই।”
“দ্যাখ মেজাজ খারাপ করাইস না, প্যানপ্যানানি বন্ধ কইরা বইসা থাক। সময় হইলে ঝামেলা সরায় দিস।”- কথা শেষ করেই মাসুম ভাই রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়লাম। এসব আমার ভালো লাগে না। টেবিলের উপরে মায়ের চিঠিটা পড়ে আছে। বাবার অসুস্থতার সংবাদ পাবার পর থেকেই মনটা আর সুস্থির নেই। কবে যে আবার বাড়ি যাবো !!! অনেক আশা নিয়ে বাবা পানের বরজটা বন্ধক রেখেছিলেন। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, বড় চাকরি করবে; খুব প্রচলিত ধারার স্বপ্ন, এজন্যই বোধহয় পূরণ করার তাগিদটা সেভাবে বোধ করিনি। আজ খুব বেশি মনে পড়ছে বাবার কথা, মার কথা, আর…….…।
আচমকা পাশের রুম থেকে কেমন যেন একটা গোঙ্গানীর আওয়াজ ভেসে এলো। শালা আবার নাড়াচাড়া শুরু করেছে। মাসুম ভাই তো নিজের হাতে বেঁধেছেন, আবার বাঁধন ঢিলা হয়ে গেলে তো বিপদ। আর তো মাত্র কিছুক্ষণ, তারপর আরো একটা প্রাণস্পন্দন থেমে যাবে। ধুর ভালো লাগছে না।
টেবিলের উপর ছুরিটা কেমন রক্তলোভীর মতো পড়ে আছে। গতবার দেখেছি, কাশেম যখন ছুরিটা হাতে নেয় ওর মুখে একটা পৈশাচিক আনন্দের আভা ঠিকরে বের হয়। কেমন নির্ভার মুখে খুন করে ফেলে, যেন হাওয়ায় ছুরি চালাচ্ছে। আর চিন্তা করতে ইচ্ছে করছে না। কাশেম না আসা পর্যন্ত একটু রিলাক্স থাকার চেষ্টা করাই ভালো।
“কীরে, ওভাবে কি চিন্তা করছিস? মাসুম ভাই কই?” –বলতে বলতে ঘরে ঢুকে কাশেম। সহসা চমকে উঠে তাকাতেই ও হেসে ওঠে।
“এই কিছুক্ষণ হলো বাইরে গেছেন। আর কাজটা এখনই সেরে রাখতে বলেছেন।”- যথেষ্ট বিরক্তির সাথে বললাম।
-“আজকে কিন্তু আমি কল্লা নামাইতে পারবো না, কাজটা তুই করবি। আমি বড়জোর ব্যাটাকে জাপটে ধরে রাখবো।”
আমার শুকনো মুখের দিকে চেয়ে খানিকটা ব্যাঙ্গ করে বলে উঠলো, “খোকাবাবু কি ভয় পেয়ে গেলেন নাকি?”
“না, ভয় পাবো কেন!!! আমিই করবো আজকে। তুই খালি ঠিকমতো ধরিস ওকে।” – নিজেকে স্বান্ত্বনা দেবার ভঙ্গিতে বলি।
শিষ দিতে দিতে পাশের ঘরে ঢুকে কাশেম, হাক দিয়ে আমাকে ডেকে বলে, “আমি দড়িটা ঢিল দিচ্ছি, তুই ছুরি নিয়ে আয়।”
অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও টেবিলের উপর থেকে ছুরিটা তুলে নেই, পা বাড়াই পাশের ঘরে। ছুরি হাতে আমাকে দেখেই কাশেম হেসে ওঠে,“শালা বেশি নড়াচড়া করছে না, ভয়েই বোধহয় অর্ধেক মরে গেছে। আর কাল থেকে তো দানাপানিও তেমন মুখে পড়েনি। নে, নে, তাড়াতাড়ি কর।”
বেচারা কেমন করুণ আর্তিভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে; শুন্য একটা দৃষ্টি। ছুরির ফলায় নিজের মুখচ্ছবিটা কেমন যেন হিংস্র লাগে।
কিছু না ভেবেই সজোরে ছুরিটা চালিয়ে দেই। ফিনকি দিয়ে ওঠা রক্ত আমার আকাশী নীল শার্টটাকে কেমন লালচে করে দেয়। আরো একটা পোচ দেই, কেমন যেন হিতাহিত জ্ঞানশুন্য মনে হয় নিজেকে। ধরে থাকা শরীরটা ছেড়ে দিয়ে কাশেম দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। আমি নেশাগ্রস্থের মতো রক্তের ধারার দিকে তাকিয়ে থাকি। খুনীদের অভিজ্ঞানটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে থাকি।
কলিং বেলের শব্দে কাশেম উঠে দাঁড়ায়। বেরিয়ে যেতে যেতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “দেখলি, কত সহজে তুই করে ফেললি, খালি খালি ভয় পাচ্ছিলি।” কথাগুলো কানে খুব একটা বাজে না, আমি অপলক দৃষ্টিতে কাতরানো দেহটার দিকে তাকিয়ে থাকি। হঠাৎ করেই সমস্ত নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র মিনিট খানিকের ব্যবধানে একটা তরতাজা প্রাণ চিরকালের মত থমকে গিয়েছে।
ছুরিটা ফেলে আমি উঠে দাড়াই। কলের নিচে রক্ত মাখা হাত দুটো মেলে ধরি। মাতাল চোখে বেসিনের উপরেrর আয়নায় নিজেকে নতুন করে খোঁজার এক ব্যর্থ চেষ্টা চালাই।
পাশের রুম থেকে মাসুম ভাইয়ের পরিতৃপ্ত গলা ভেসে আসে, “কাশেম, বুয়াকে বলিস আজকের মাংসটা ঝাল দিয়ে কষিয়ে রাঁধতে। অনেকদিন দেশি মুরগীর হাঁড় চিবুইনিরে।”
যদিও বুইঝা গেছিলাম শেষে কী হবে, তবুও ভালোইছে।
আরো গল্প দাও। পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। 🙁
এবার চার তারা দিলাম। পরের গল্পে পাঁচে পাঁচ দিতে চাই। 😀
ধন্যবাদ ভাইয়া। আসলে, সময় বেশি দিতে পারিনি। লেখার প্রতি আরো একটু যত্নশীল হবার চেষ্টা করব। 😀 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
খিক খিক। লাস্টের লাইন আগে পড়ে ফেলছি। :grr: :grr: :grr:
😕 😕 😕 আমি এগেই বুঝছিলাম, এডিট করতে গিয়া দেখি, আপনি পুষ্টে কি জানি করতেছেন 🙁 ।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ছেলেপিলে এত চমৎকার লেখে কিভাবে ?? জটিল হইসে ... :boss: :boss:
লিখতে গিয়ে আমি নিজেই খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলেছি। থ্যাঙ্কু ভাইয়া :shy: :shy:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
রকিব কি বলবরে ভাই, খুবই ভাল লাগলো । রায়হানের মত ভুল করিনাই, প্রথম থেকে পড়েছি । :hatsoff:
😀 😀 ভাইয়া বোধহয় খানিকটা ব্যস্ত, সময় পেলে দু'য়েকটা লেখা দিয়েন। 🙂
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আসলেই ব্যস্তরে । দিব ইনশাল্লাহ ।
আমি নিজে ভেজিটেরিয়ান নই তারপরেও কোরবানি বা মুরগি জবাই কেন জানি দেখতে পারিনা।গল্পটা পড়ে গা শিউরে উঠল,মুরগি জবাই হয়েছে বলে বীভৎসতা একটুও কমেনি।রকিব,তুই তো বেটা ছুপা রুস্তম রে!
আমিও পারি না :no:
আমি পারি, তবে প্রথমবার এই কাজ করতে গিয়ে মুরগি ছুটে গেছিলো। গলা অর্ধেক কাটা মুরগী্ ছোটাছুটির দৃশ্য হরর মুভির মতই 😕 ।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আপনার তো ভাই মুরগি ছুইট্টা গেসিলো, আমি তো বডি আর মাথা পুরাই আলাদা কইরা ফালাইসিলাম :)) কিন্তু যাই বলেন না কেন, গল্পটা জটিল হইসে 🙂
থ্যাঙ্কস ভাই্ডি। এবার তুমিও কিছু লেখা ছাড়ো মিয়া।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
:clap: ভালো হইসে।
শেষটা ভালো লাগেসে। :clap:
ধন্যবাদ আপু। :shy:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
দারুণ হৈছে রকিব।
তুই কি চায়ের পাশাপাশি চিকেন ফ্রাইয়ের ব্যবসাও শুরু করলি নাকি?
চিকেন ফ্রই এর কথা শুনে ক্ষুধা লাগছে 🙁 হাসেরবাচ্চারব্যান চাই :grr:
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
চিকেন আর ডাক দুইটাই ফ্রাই করার চিন্তা করতাছিলাম, আপনার কথা মনে পড়ায় সিদ্ধান্ত বদলায় ফেলছি 😛 😛 ।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
:no: :no: :no:
অনেক দিন হয়, খুন করিনি... :grr: :grr: :grr:
মুইদ ভাই, আপনারো কি ভয় লাগে নাকি 😛 ?
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
:thumbup: :thumbup: :thumbup:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
:boss: :boss: ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
🙂
বুইজা ফেলছিলাম।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ভাইয়া, একটু ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েন, কারণ নিজে পড়তে গিয়ে কয়েক জায়গায় অসঙ্গতি টের পেয়েছি, কিন্তু বুঝে উঠতে পারিনি ঠিক করবো কিভাবে :bash: :bash:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
লিখতে থাক, দূর্বলতা নিয়ে এত ভাবার কি আছে, অটোমেটিক কেটে যাবে ওটা।
🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমি আসলে বুঝাতে চাচ্ছিলাম, সমস্যা গুলো ধরিয়ে দিলে ভালো হত 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
কাশেম আর মাসুম নামটা পইড়া ভাবছিলাম পরিচিত লোকজন 😀
গল্প আগেই কেম্নে যেন আন্দাজ করে ফেলছিলাম 🙁 তবে গল্প ভাল লাগছে :clap:
এইবার চা টা বাদ দিয়া কিছু গল্প লিখে ফেল B-)
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
গল্প লেখা বহুত কঠিন কাজ, আমারে দিয়া এই ব্যবসা হইবো না, তার থেকে চা-ই ভালো।
এই চা গরম :teacup: :teacup: ।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমিও। ভাবছিলাম মাস্ফুরে নিয়া কোন গল্প 😉 😉
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
ক্যান ?? মাস্ফু ভাই কাশেম-মাসুম? কেমনে কি?? 😐
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ভালো লাগল রকিব।
ভাইয়া কেমন আছেন? পড়ার জন্য ধন্যবাদ 😀 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
সবাই এত আগে বুঝল কেমনে?
আমি তো কিছুই টের পাইনি। এক অজানা শংকা কাজ করছিল শেষ পর্যন্ত খুন হবে কি হবে না? মনে হচ্ছিল সিরিয়াস কোন ঘটনা।
তাই ফিনিশিংটা পড়ে খুব মেজাজ খরাপ হল ।
:grr: :grr: :grr:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
সুন্দর লেখা। ভাল লাগল 😀
থ্যাঙ্কু ভাই।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
রকিব ভালো লিখছিস।
আপনে তো খারাপ হইলেও খারাপ কন না। 😀 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমি নিজেই খারাপ লিখি। মানুষরে কি খারাপ বলব? 😀
খুবি ভালো হইছেরে :clap:
সাবাস, আরও লেখ :thumbup:
ঠ্যাঙ্কুউউউউউউ :hug: :hug:
বহুদিন জীবনের গল্প এর কোন সিরিজ পাচ্ছি না 😕 😕
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ভালো হইছে রে। আরেকটু যত্ন নিয়া লিখিস। আর চা এর পাশাপাশি চিকেন ও চালাইতে পারোস।
ভাবতাছি সি,ভি,এম (ক্যাডেটস ভাজা মুরগা) খুলমু :grr: :grr:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
গল্পটা চমৎকার।
ধন্যবাদ ভাইয়া
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আগেই পড়েছিলাম, তখন মন্তব্য করা হয়নাই ... তুমি গল্প লিখতে পারো?
চা'ও বানাতে পারো ... আরেকটা শুরু করে দিও, পরীক্ষার পর। 😀