আমি এখন যে রুমটাতে শুয়ে আছি তা বেশ ছোট ।অস্বস্তিকর রকমের ছোট। আমি অনড় শুয়ে আছি একরাশ বিরক্তি নিয়ে। ঘরটা আরেকটু বড় হলে কি এমন ক্ষতি হতো সে কথাই ভাবছিলাম সটান। বিদ্যুৎ নেই এখানে। একটা হারিকেন জ্বালাতে পারলে বেশ হোতো। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। বড় ঝামেলায় পড়ে আমার এই জায়গায় আসা। এখানে আসার আগে বলা হয়েছিলো দু’জন লোক আসবে আমার বর্তমান দুর্দশা সমাধান করতে। নিশ্চয়ই ওরাই কুপি-বাতি কিছু একটা নিয়ে আসবে। ওদেরকে তো সব বলেই দেয়া আছে। অন্ধকারে নিশ্চয়ই কথা বলবোনা!নিজেকে প্রবোধ দেই। ধারণা করলাম কথাবার্তা শেষ হবার পর ওরাই ব্যাপারটা সুরাহা করবে। আমি তাই পিচের মতো আঠালো অন্ধকারে ভরা সঙ্কীর্ণতায় গভীর আগ্রহ আর শঙ্কা মেশা কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করছি।
আমার একটা চমৎকার ছিমছাম বাড়ী থাকতেও এই বিশ্রী অবস্থায় আসার পেছনে একটা ছোট ঘটনা আছে। হেঁয়ালি করে কথা বললে মানুষের মাঝে বিরক্তির উদ্রেক হওয়াটা অস্বাভাবিক না। কিন্তু এখানে আগমনের পেছনের গল্পটা খুব সাধারণ দৈনন্দিন একটা গল্প। তাই শেষের জন্য তুলে রাখা।
এ ঘরের সিলিংটা খুব বেশী ওপরে না। বাঁশ আর ছন দিয়ে বোনা চালা। বুননে কাঁচা হাতের ছাপ স্পষ্ট। বেতের ফাঁক গলে টুপ টাপ চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে। আমার মনে হচ্ছে গেদু মিয়াকে জোর গলায় ডেকে একটা ধমক দেই। অথচ আমার এমন ইচ্ছে করাটা খুব বেমানান, নিরীহ ধরণের মানুষ আমি। আমি প্রবল বিরক্তিতে অস্বস্তির আওয়াজ করলাম। একটা হাতপাখা তো অন্তত রাখতে পারতো আমার জন্য! যা গরম পড়েছে! বৃষ্টিতেও গরম কমছেনা। আমি শুনেছিলাম মাটির ঘর ঠাণ্ডা হয়। কিন্তু আমার দাদাবাড়ির এই ঘরটাতে শুয়ে আমার অভিজ্ঞতা সেই প্রচলিত তত্ত্বের মুখে জোর চপেটাঘাত করলো। কাছেই কোথাও হতে একটা তীব্র ঝাঁঝালো ঘ্রাণ আসছে। আমি শোঁকার চেষ্টা করলাম ভালভাবে। নাকটা কেমন বন্ধ হয়ে আছে। অথচ সর্দি-কাশি আমার একেবারেই লাগেনা। এত বয়স হোল তবু আমি এখনো বৃষ্টির শব্দে উতলা হই,ভেজার জন্য একটা বাধ্যবাধকতা বোধ করি, মোহগ্রস্তের মত ছাদের ছোট বাগানটার পাশে অনিচ্ছুক স্ত্রীকে বুকে টেনে ভিজতে থাকি।সব মানুষের কাছে স্বর্গের আলাদা আলাদা একটা সংজ্ঞা থাকে। ওর ঠোঁট থেকে বৃষ্টির পানি পান করাটা আমার স্বর্গ। মৌমী সবসময় বলে আমার আর ব্যাঙের মাঝে পার্থক্য শুধু একটাই, ব্যাঙের লেজ খসে যায় আমারটা জায়গামত রয়ে গেছে। ইঙ্গিতপূর্ণ একটা দুষ্টু হাসিতে ও কথাটার মানে বুঝিয়ে দেয়। আমিও মুচকি হাসি। ও শরীরে কল্লোল তুলে আমার আলিঙ্গন ভেঙে ছুটতে থাকে, যেন শরীরের ভাঁজ দিয়ে আমাকে ডাকে,যেন বলে-‘’আমাকে ধরো,মিশিয়ে ফেলো!’’। আমার কাছে ধরা পড়াতে ওর স্বর্গ। আমার ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। চোখ বন্ধ করে আমি ওর রহস্যঘেরা অবয়ব দেখতে পাই। অজস্রবারের উন্মোচনের পরেও যা আমার চোখে এক-ই গৌরব নিয়ে ধরা দেয়। আমার গলায় আর বুকে দলা পাকিয়ে ওঠে। একটু আগের ঝাঁঝালো গন্ধটা ছাপিয়ে ওর প্রতিটা পরতের সুবাস আমার অস্তিত্বে গিয়ে ঢোকে। ওর চুলের বাসি বকুল ঘ্রাণ- যাতে হালকা মিশেছে শ্যাম্পু,কন্ডিশনার আর গন্ধরাজ তেল, বুকের সোঁদা ঘ্রাণ-কতবার এই সুবাস আমি বৃষ্টির ঘ্রাণের সাথে গুলিয়ে ফেলেছি নিজেও মনে করতে পারবোনা। আমার মধ্যবয়স্কা স্ত্রী আমার কল্পনায় উদ্ভিন্নযৌবনা হয়ে ওঠে।
বুকের ভেতরটা হা হা করে ওঠে। কি অদ্ভুত একটা ব্যাথা! গত কিছুদিন ধরেই আরো একটা ব্যাথা বুকের বা-পাশে চিন চিন করে দিয়ে যাচ্ছে। মৌমীকে বললে ও শঙ্কা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে বলে। আমি হেসে বলি বিশ বছর তোমার অপ্সরী-সৌন্দর্য দেখেও যখন হৃদযন্ত্র বিকল হয়নি…কোনোকিছুতেই হবেনা। আমার আব্বার হার্টে ব্লক ছিলো। শেষমেশ ওটাই কাল হয়েছিলো। তাই মৌমীর চোখের আশঙ্কা কাটতে চাইতোনা। বদ অভ্যাস নেই আমার মোটেও। না চুরুট ছুঁই, না জর্দা-পান। মদ গাজা জীবনে স্পর্শ করিনি। তেল-চর্বিঅলা খাবার এড়িয়ে চলি। তাই গত কিছুদিন ধরে বুক ব্যাথার নালিশ করতে, মৌমীর হার্ট-এটাক তত্ব আমি হেসে উড়িয়ে দেই। খাওয়াদাওয়ায় মাঝে মাঝেই অনিয়ম হয়। এসিডিটির কারণেও বুক ব্যাথা হতে পারে, আমি ওকে বোঝাই- সাথে নিজেকেও। বৌ বলে, এখন বড় অসুখে পড়া নিষেধ, ছেলেমেয়েগুলোকে পার করতে হবে। আমি নিশ্চুপ ধরণের মানুষ। শুধু সম্মতিতে মাথা নাড়ি।
বড় ভালোবাসে আমাকে মেয়েটা- আমার তিন সন্তানের অতুলনীয়া জন্মদাত্রী। প্রিয়তমা স্ত্রীকে ভেবে আমার খুশি খুশি লাগতে থাকে, একটু আগে যে অস্বস্তিটা লাগছিলো সেটা কেটে যায়।
অন্ধকারে কেমন একটা ঘোর লেগে আছে। বোধ আর অবচেতনতার মাঝে আমি দোল খাচ্ছি। ঝাঁঝালো ঘ্রাণটা আবার পাচ্ছি। উফ! ভারী ঝামেলা তো! একটু পর ঘরে অপরিচত দু’জন আসবে। তারা গন্ধে অস্বস্তি বোধ করতে পারে ভেবে আমি বিচলিত হতে থাকি। বড্ড খোলসবন্দী মানুষ আমি। অল্পতেই বিব্রত হওয়ার স্বভাব। মনে পড়ে গেলো, আমার ছোট ছেলেটার স্কুলে যখন ওর অধ্যক্ষ ডেকে নিয়ে গেলেন- সন্তানের শৃঙ্খলা ভঙ্গের গল্প শুনে আমি লজ্জায় মাথা তুলেই তাকাতে পারিনি, হেট করে শুধু শুনে গেছি। মানুষ থেকে দূরে দূরে থাকতে ভালো লাগে আমার। কারো সাতে পাঁচে নেই আমি। ছাদের ওপর করা নিজ হাতে ছোট বাগানেই কাটিয়ে দেই বেশীরভাগ অব্যাস্ত সময়। ডালিয়া, রক্তজবা, রঙ্গন, পাতাবাহারে সময় বেশ কাটে। দোলনা বসানোটা বড় মেয়ের আইডিয়া ছিলো। মৃদুলা। কি লক্ষ্মীমন্ত হয়েছে মেয়েটা। বিয়ে দিয়ে পর করে দিতে হবে ভেবে আমার বুকটা আবার ফাঁকা হয়ে গেলো। সময় চলে যায়।মনে হয় এই তো, মাত্র কদিন আগেই ওর নবজাত মুখ দেখে প্রথম পিতৃত্বের গর্বে আমি কেঁপে উঠেছিলাম।
উত্তরের বাতাস গায়ে মেখে আমরা চায়ের কাপে চুমুক দেই। সংসার জীবনে অপরিসীম সুখ খুঁজে পাই আমি। ঘরছাড়া সিদ্ধার্থকে প্রগলভতার শিকার মনে হয়। চন্দ্রাহত হয়ে যে নবপরিণীতাকে ত্যাগ করেছিলো। চাঁদ মানুষকে অনেক উন্মাদনায় ভাসায়, তাই তো পাগলদের ইংরেজিতে বলে “লুনাটিক”। আমাকে চাঁদের আলো তেমন বিচলিত করেনা। আমি বর্ষাবিলাসী। চাঁদের আলোয় আমার শরীর ভেজেনা।
আমার স্মৃতিশক্তি বরাবরই ভালো। আজ পর্যন্ত কখনো স্ত্রীর জন্মদিন, আমাদের বিবাহবার্ষিকী ভুলে গিয়ে অভিমান করার সুযোগ দেইনি। গণিতে ভালো ছিলাম। মুখে মুখে যোগবিয়োগ,গুণ-ভাগ করে ফেলতে পারি বড় বড় সংখ্যা। ব্যাংকের চাকরীতে হোক কিংবা যৌবনের বিশ্ববিদ্যালয়ে- সহকর্মী সহপাঠীদের তাক লাগিয়েছি বিস্তর।
কিন্তু এখন-এক অসম্ভব প্রয়োজনীয় কালের সন্ধিক্ষণে আমার আজীবনের ভরসাস্থল হওয়া স্মৃতি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাচ্ছে। কিছুতেই প্রশ্ন দুটো মনে পড়ছেনা এখন। অথচ প্রশ্ন দুটোর উত্তর মনে করা খুব জরুরী। পাশবিক ভয়ে আমার বুকের বা’পাশে তীব্র ব্যাথা করতে থাকলো। ঠিক যেমনটা দু’দিন আগে করেছিলো যখন ব্যাথার দমকে দমকে আমার মহাবিশ্ব কাঁপতে কাঁপতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো।আর এখন শিরদাঁড়া বেয়ে চলে গেলো বরফের মতো হিম স্রোত, যেন বুকে ভর দিয়ে মেরুদণ্ডের ভেতর হেঁটে যাচ্ছে শীতল রক্তের সরীসৃপ। সাপ আমি বড্ড ভয় পাই। প্রশ্নের উত্তর মনে করাটা তাই আরো জরুরী!
আমার ঘরের অতিথিরা এসে গেছে। তাদের খচ খচ আওয়াজ পাচ্ছি। হঠাত করেই একটা রহস্যের জট খুলল, মনে পড়লো ঝাঁঝালো ঘ্রাণটা আসছে আমার নাকে চেপে দেয়া তুলোর গায়ে মাখা কর্পূর থেকে। তাই তো বলি। আমার নাক তো সহজে বন্ধ হয়না!
মৃত্যু বুঝি অনেককিছু ভুলিয়ে দেয়!
দাঁতে দাঁত চেপে আমি প্রশ্নোত্তর মনে করার চেষ্টা করতে থাকি,যেন এর উপর আমার জীবন নির্ভর করছে।অথচ জীবন আমাকে ছেড়ে গেছে আষাঢ়ের বর্ষায় গৃহত্যাগী চাঁদের আলোয় এক চিলতে ছাদের ওপরে। প্রাণহীন আমি মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম পাতাবাহারের ঝোপে।
পিচঢালা অন্ধকারে অতিথিদের অবয়ব এগুতে থাকে আমার দিকে।
আমার কবরের ওপর তাল মিলিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে,সেই আগের মাতাল করা রাতগুলোর মতো…যে বৃষ্টি আমাকে সিদ্ধার্থের মতো ঘরছাড়া করতো।
আমার মৃত দেহে তাতে আর কোন সাড়া পড়েনা।
যে বৃষ্টি আমাকে সিদ্ধার্থের মতো ঘরছাড়া করতো। :boss: :boss:
ভালো লাগছে ভাই ! শেষের দিকে কয়েক প্যারার লাইনগুলো খুব কাব্যিক। এই ভাবে চাইলেও সবাই লিখতে পারেনা।
ধন্যবাদ ভাইয়া। অনুপ্রাণিত করলে। 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
প্রথমবার পড়ে ঠিক বুঝি নাই, শেষে গিয়ে বুঝলাম ঘটনা কি............ তারপর আরেকবার পড়লাম, তারপর আরও একবার। দারুণ লিখেছ ভাই............
তোমার লেখনীর প্রশংসা তো অনেক করলাম, এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। এবার একটু অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরাই।
১। উপমা (SImily) ও রূপক (Metaphore) - 'SImily is an approximation, metaphore is an equation'. ক্ষেত্রবিশেষে 'গদ্যে' ও 'কাব্যে' এগুলোর ব্যবহার হয়। তুমিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলোর সফল প্রয়োগ করেছ। 'অপ্সরীর মতো সৌন্দর্য', উপমা, তাই তো! কিন্তু একটু খুঁত আছে। উপমা দিতে চাইলে লিখতে হবে, 'অপ্সরীর মতো সুন্দরী'। আর যদি রূপক তৈরি করতে চাও, তবে লিখ 'অপ্সরীর সৌন্দর্য'।
২। বুঝতে পারছি বানান তোমাকে বড় ভোগাচ্ছে। এর একটা টোটকা দাওয়াই আছে। অভ্র স্পেল চেকার ব্যবহার কর। স্পেল চেকারসহ অভ্র ইন্সটল করা থাকলে কীবোর্ডে Ctrl+F7 চাপ দিলেই সেটা চলে আসবে। পুরো রচনাটি কপি করে এনে ওখানের জানালায় পেস্ট করে দাও। এরপর স্পেলচেক মেনু ব্যবহার কর। অভ্র তোমার লেখার বানান ভুল ধরে দেবার পাশাপাশি একাধিক বানান সাজেস্ট করে। এতে দু'টো লাভ হবে। বানানের সমস্যা থেকে রেহাই পাবার পাশাপাশি শুদ্ধ বানানটি বারবার ভেসে উঠতে দেখে অল্পদিনের ব্যবহারে সেটি তোমার আয়ত্বে চলে আসবে।
৩। ইংরেজিতে যেমন বাংলায়ও তেমনি যতিচিহ্নের পূর্বে নয়, পরে স্পেস ব্যবহার করতে পার। একাধিক বিস্ময়সূচক চিহ্ন দিয়ে কি বিস্ময়ের মাত্রার তারতম্য আনতে চেয়েছ? প্রয়োজন আছে কি? কারণ তোমার লেখা পড়ে বিস্মিত তো হব আমরা পাঠকেরা। কতটুকু বিস্মিত হব, সেটি কিন্তু আমাদের সংবেদনশীলতার উপরেও নির্ভরশীল। বিস্ময়চিহ্নের পুনঃ ব্যবহারে তোমার ভেতরের বিস্ময়টা প্রকাশ পায় বেশি, পাঠকের বিস্মিত হবার ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে তেমন কাজ করে না।
৪। তোমার লেখায় তুমি পাঠককে একটা হেঁয়ালি/রহস্যের ভেতর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছ। কুশলী লেখকরা এমন করেই পাঠকের মস্তিস্ককে খেলাতে পসন্দ করেন। তুমিও খেলিয়েছ এবং সফল হয়েছ। এবার আরেকটু জটিল খেলায় নামো। প্রথমেই রহস্যটা বলে দাও। তারপর পাঠকের মস্তিস্কের গতিবিধিটা কল্পনা কর। পাঠক কি ভাবছে, কি ভাবতে পারে, গল্পে এরপর কি হবে? তারপর পাঠকের ভাবনাকে ফাকি দিয়ে অভাবিত ভিন্নতর ঘটনার অবতারণা করে চমক লাগিয়ে দাও।
তোমার কাছে প্রত্যাশা অনেক। একটু একটু করে বলি। তুমিও ধীরে ধীরেই এগুতে থাক, তবে দৃঢ় পদক্ষেপে।
তোমার লেখনীর প্রশংসা তো অনেক করলাম, এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। এবার একটু অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরাই।
১। উপমা (SImily) ও রূপক (Metaphore) - 'SImily is an approximation, metaphore is an equation'. ক্ষেত্রবিশেষে 'গদ্যে' ও 'কাব্যে' এগুলোর ব্যবহার হয়। তুমিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলোর সফল প্রয়োগ করেছ। 'অপ্সরীর মতো সৌন্দর্য', উপমা, তাই তো! কিন্তু একটু খুঁত আছে। উপমা দিতে চাইলে লিখতে হবে, 'অপ্সরীর মতো সুন্দরী'। আর যদি রূপক তৈরি করতে চাও, তবে লিখ 'অপ্সরীর সৌন্দর্য'।
২। বুঝতে পারছি বানান তোমাকে বড় ভোগাচ্ছে। এর একটা টোটকা দাওয়াই আছে। অভ্র স্পেল চেকার ব্যবহার কর। স্পেল চেকারসহ অভ্র ইন্সটল করা থাকলে কীবোর্ডে Ctrl+F7 চাপ দিলেই সেটা চলে আসবে। পুরো রচনাটি কপি করে এনে ওখানের জানালায় পেস্ট করে দাও। এরপর স্পেলচেক মেনু ব্যবহার কর। অভ্র তোমার লেখার বানান ভুল ধরে দেবার পাশাপাশি একাধিক বানান সাজেস্ট করে। এতে দু'টো লাভ হবে। বানানের সমস্যা থেকে রেহাই পাবার পাশাপাশি শুদ্ধ বানানটি বারবার ভেসে উঠতে দেখে অল্পদিনের ব্যবহারে সেটি তোমার আয়ত্বে চলে আসবে।
৩। ইংরেজিতে যেমন বাংলায়ও তেমনি যতিচিহ্নের পূর্বে নয়, পরে স্পেস ব্যবহার করতে পার। একাধিক বিস্ময়সূচক চিহ্ন দিয়ে কি বিস্ময়ের মাত্রার তারতম্য আনতে চেয়েছ? প্রয়োজন আছে কি? কারণ তোমার লেখা পড়ে বিস্মিত তো হব আমরা পাঠকেরা। কতটুকু বিস্মিত হব, সেটি কিন্তু আমাদের সংবেদনশীলতার উপরেও নির্ভরশীল। বিস্ময়চিহ্নের পুনঃ ব্যবহারে তোমার ভেতরের বিস্ময়টা প্রকাশ পায় বেশি, পাঠকের বিস্মিত হবার ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে তেমন কাজ করে না।
৪। তোমার লেখায় তুমি পাঠককে একটা হেঁয়ালি/রহস্যের ভেতর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছ। কুশলী লেখকরা এমন করেই পাঠকের মস্তিস্ককে খেলাতে পসন্দ করেন। তুমিও খেলিয়েছ এবং সফল হয়েছ। এবার আরেকটু জটিল খেলায় নামো। প্রথমেই রহস্যটা বলে দাও। তারপর পাঠকের মস্তিস্কের গতিবিধিটা কল্পনা কর। পাঠক কি ভাবছে, কি ভাবতে পারে, গল্পে এরপর কি হবে? তারপর পাঠকের ভাবনাকে ফাঁকি দিয়ে অভাবিত ভিন্নতর ঘটনার অবতারণা করে চমক লাগিয়ে দাও।
তোমার কাছে প্রত্যাশা অনেক। একটু একটু করে বলি। তুমিও ধীরে ধীরেই এগুতে থাক, তবে দৃঢ় পদক্ষেপে। (সম্পাদিত)
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
ভাইয়া আপনার অসাধারণ নিরীক্ষণের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। I have learned loads from it। আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে এভাবে আপনার wisdom দিয়ে দিকনির্দেশ করবেন। আপনার মন্তব্যে নিজেকে আরো ভালো করার অনুপ্রেরণা পেলাম। :boss: :boss: :boss: :boss:
আমিও অনেক কিছু শিখলাম।
অনেক ধন্যবাদ...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
অনেক ধন্যবাদ মোস্তফা সুন্দর কথাগুলোর জন্য ।
এই বাংলা টাইপিংটা সত্যি বিড়ম্বনায় ফেলে দ্যায় । কিছুতেই বাগে আনতে পারলাম না আজো ।
সেই প্রথমে একবার যখন অভ্র ডাউনলোড দিয়েছিলাম আমার নোটবুকে । খুব ঠিক ছিলো ।
তারপর থেকে নিজের নামটা লিখতে গেলে অন্য কোথাও থেকে কপি পেস্ট না করলে 'খন্ডত'টা আর লিখাই সম্ভব হয় না । চন্দ্রবিন্দু তো মর্জি মাফিক আসলে আসে তো অটো সাজেশনে, নইলে কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না ।
সেলফোনে তো আরো বাজে অবস্থা । পাঠকরা দয়া করে সঠিক শব্দটা বেছে না নিলে ...
যেমন ' পাকে আর পাঁকে ' যেমন উঁও তো আসবেই না । সং লিখে কি আর হয় ব্যাং লিখে !
এসবের কিছু টিপস তো দিলে ... কিন্তু আমার মতোন কারো জন্যে তা হয়তো লোহা দিয়ে বেতের আসবাব বোনার কাজ সম ।
😀 😀
সুন্দর লেখা। চলুক।
ধন্যবাদ ভাইয়া (সম্পাদিত)
সুন্দর এগিয়েছে, তোমার ভাষাটা বড় স্বচ্ছন্দ। একেবারে তরতরিয়ে চলে যায়
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া! 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
ভাল যে লিখেছো তা তো আগেই জানিয়েছি...
:clap: :clap: :clap:
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
প্রিয় লেখকের তালিকাটায় আরো একটা নাম যোগ হলো। :boss:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
নাটকীয়তা যে কোনো লেখার চেকনাই । বুনন তার গড়া-পেটা গতর । উপমা আর রূপকেরা পরিধেয়ের ধোপ-দুরস্ততা কিংবা বৈচিত্রমাখা চাকচিক্য ।
আর কাহিনীটা যেনো ব্যক্তিত্ব । চরিত্রগুলো প্রতিপার্শের ব্যাপ্তি ।
তোমার লেখায় একজন পাকা লেখকের গন্ধ মাখা আছে । তোমার প্রকাশভংগীতে একজোড়া অন্তর্দৃষ্টি উন্মীলিত চোখ আছে ।
তোমার স্টাইলে এক রকম সামুরাই টাইপ ধার আছে ।
অথচ সবটুকু খুব সাবলীল । সহজ । সুন্দর । পাঠকের সাথে সংযোগ সিদ্ধ হস্ত ।
এর উল্টোপিঠের যা কিছু কথা আমি বলতে পারতাম, তারো চেয়ে বেশী পুংখ বলে গেছে মোস্তফা ।
আরো লিখ । আমরা মুগ্ধতার বুনট বুনে যাই ।
আমি বলবো তোমার শক্তি হচ্ছে "বিষয় নির্বাচন" আর তাকে "প্রকাশের ভংগী নির্ধারণ" ।
এ দুটোকে সবল ও সাবলীল রেখো । বাকীটুকু লিখতে লিখতে আরো গভীর, প্রোজ্জ্বল ও ধারালো হয়ে উঠবে ।
আমার আশাবাদ আর শুভ কামনা ।
"চাঁদ মানুষকে অনেক উন্মাদনায় ভাসায়, তাই তো পাগলদের ইংরেজিতে বলে “লুনাটিক”" - চমৎকার পর্যবেক্ষণ!
"আমাকে চাঁদের আলো তেমন বিচলিত করেনা। আমি বর্ষাবিলাসী। চাঁদের আলোয় আমার শরীর ভেজেনা।" - তা বেশ বলেছো!
গল্পের সাসপেন্স একেবারে ব্রেথটেকিং! এক কথায় অসাধারণ।
তুমি কী বিষয়ে পড়াশোনা করে কী পেশায় যোগ দিয়েছো, জানতে পারি কি?
প্রথমেই আপনার স্তুতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আমি পড়াশুনা করছি অর্থনীতিতে। এখনো কোনো পেশায় যোগ দেইনি। 🙂 🙂 🙂 🙂
দ্যাটস ওয়ান্ডারফুল, থ্যাঙ্কস। :thumbup: