[স্বপ্নময় স্মৃতি – স্মৃতিময় স্বপ্ন ১] [স্বপ্নময় স্মৃতি – স্মৃতিময় স্বপ্ন ২]
ছোটবেলায় জামাকাপড় পাল্টানোর জন্য খুব বেশি চিন্তা করতে হত না। স্রেফ দিগম্বর হয়েই কম্মটা সেরে ফেলা যেত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে লজ্জা নামক ব্যাপারটা সংবেদনশীল হয়ে দেখা দিল। তখন হয় লুঙ্গী বা টাওয়েল পেঁচিয়ে অথবা রুমে খিল তুলে ড্রেস চেঞ্জ করতাম। ক্যাডেট কলেজে লুঙ্গি এক অচিন্তনীয় বিষয়। ব্যাপারটা আগেভাগে জানতাম বলে সেখানে ড্রেস কিভাবে চেঞ্জ করব তা নিয়ে বেশ টেনসিত ছিলাম। কিন্তু দেখি সবার জন্যই বেশ সুন্দর ব্যবস্থা আছে। রুম লিডারের দেখিয়ে দেওয়া কায়দায় নিজ লকারের পাল্লা পাশের লকারের সাথে ঠেকিয়ে অস্থায়ী ট্রায়াল রুম ব্যবহার করা শিখলাম। প্রথম প্রথম পা ভাঁজ করতেই পাল্লায় লেগে সটান খুলে যেত – মহা যন্ত্রণা। কিন্তু সময়ে সবই অভ্যাস হয়ে গেল।
আমাদের রিসিভ করে নেয়ার প্রোসিডিউরে পড়েন না এমন কারও সাথে মনে রাখার মতোন পরিচয় হয়েছিল সেদিন বিকেলেই। বাবা মা বোনদের বিদায় এবং মাগরীবের নামাজের জন্য মসজিদে যাবার গ্যাপে সাথে করে আনা জায়নামাজ বিছিয়ে আসরের নামাজ পড়া শুরু করলাম। রুমে আমার অবস্থান ছিল এক পাশে, দরজার কাছাকাছি। নামাজের মধ্যেই হঠাৎ করে দরজাটা খুলে গেল। কেউ একজন প্রবেশ করতে যেয়েও সামলে নিলেন আর মুখে ‘সরি’ বলে দরজাটা টেনে দিয়ে চলে গেলেন। নামাজ পড়ার পরপরই পাশের রুমে ডাক পড়ল। সেখানে আউট গোয়িং ক্লাস টুয়েলভের নজরুল ভাই ও রোমেল ভাইয়ের (৯ম ব্যাচ, ১৯৮৬-১৯৯২) সাথে পরিচয় হল। নজরুল ভাই তখন দরজা ঠেলে ঢুকেছিলেন। কর্মজীবনের বদৌলতে এখনও নজরুল ভাইয়ের সাথে দেখা হয়, কথা হয়। আর রোমেল ভাইকে পেয়েছি বিএমএ থাকাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে।
কলেজের কাস্টার্ডের সাথে আমার প্রথম যেই সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল সেটা ‘শত্রুতা’। একে সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার, তার উপর বাংলার সাইফুর রহমান স্যারের ফেয়ারওয়েল। আমাদের আগমন আর তার প্রস্থান। আলোকজ্জল ডাইনিং হলে ডোরাকাটা টাইয়ের সাথে মিতালী পাতিয়ে প্রথম যেই Meal’এ এ্যাটেন্ড করলাম সেটা স্পেশাল ডিনার। চারপাশে নতুন নতুন মানুষ তায় আবার হাউসের এক নম্বর টেবিল – সবাই চুপচাপ খাওয়া দাওয়া করছে। পোলাও জিনিসটা কখনোই খুব বেশি চলে না আমার। তারপরও চামচে তুলে ঘুপঘাপ করে পেটে চালান দিলাম খানিকটা। জেলির মতোন জমাট বাধা হলুদ রঙের কাস্টার্ডটায় কি যে ছিল জানি না, মুখে তোলার সাথে সাথেই ওয়াক মতোন হলো। চোখ বন্ধ করে, দম চেপে ধরে গিলে ফেললাম। এই স্বাদের জিনিস কিভাবে মানুষ খায় আর এটা আমাকে আগামীতে আরও খেতে হবে এই ভেবেই সারা হচ্ছিলাম।
প্রথম সফট ড্রিংকস (যতদূর মনে পড়ে পেপসি) খেয়েছিলাম ক্লাস ওয়ানে থাকতে। হাফ বোতল কোনরকমে খাওয়ার পর যেই ঝাঁঝালো ঢেকুরটা এসেছিল তা পথ খুঁজে পেয়েছিল নাক, মুখ উভয় দিক দিয়ে। সেদিন কান পাকড়েছিলাম। কিন্তু সেই কান পাকড়ানো কাজে দেয়নি। অল্প সময়ের ভিতরেই পেপসির সাথে সাথে ফান্টা, কোক, স্প্রাইটসহ এই গোত্রের সবকিছুর প্রতিই ভালো লাগা শুরু হয়েছিল। একইভাবে দিন যায় আর কলেজের সেই কাস্টার্ড আমার ভালো লাগতে থাকে। এক সময় সেই ভালো লাগাটা ভালোবাসায় পরিণত হয় (পুডিং এর সাথে অবশ্য কাস্টার্ড ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে)। কেউ যদি কাস্টার্ড নিজে না খেয়ে আমাকে পাঠাতো তবে খুব আনন্দ হতো। অবাক ব্যাপার এই যে কলেজের ছয় বছরের বিভিন্ন সময়ে সেই কাস্টার্ডের উপাদান, রং এবং ঘনত্বে পরিবর্তন আসলেও স্বাদে খুব বেশি পরিবর্তন কখনোই আসেনি। আর সেটাই কি যে মজা নিয়ে খেতাম তা আর বলার নয়।
আমাদের রুমগুলো তিনজন করে থাকার উপযোগী করে তৈরী করা। ক্ষেত্রবিশেষে চারজন থাকাও কমন ব্যাপার ছিল। সারা রুমে দুইপাশে দুটো ১০০ ওয়াটের বালব আর মাঝখানে একটামাত্র ফ্যান। রুমের লে আউটটা এমনই ছিল যে আমার বিছানাটা পড়ল এক কোনায় জানালার পাশে। ফ্যানের বাতাসের ছিটেফোঁটাও নেই সেখানে। জীবনে প্রথম সবুজ রঙের (হাউস কালার) কড়কড়ে নতুন স্লিপিং ড্রেস পড়ে বিছানায় যেতে হল – ইতিপূর্বে সেটার প্রয়োজনই পড়েনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবিস্কার করলাম আমি ঘেমে নেয়ে উঠছি। বোঝার উপর শাকের আটির মতোন দেখি করিডোরের লাইটটা সোজা চোখে এসে পড়ছে। এসব জাগতিক সমস্যা বাদে মনে ভেসে উঠল মা’র চেহারা। মনে পড়ে গেল বাবা আর বোনদের কথা। জীবনে এই প্রথম কোন নতুন পরিবেশে একা একা থাকতে যাচ্ছি। তারপরও কেমন করে যেন ঠিকই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে উঠে দেখি গেঞ্জি আর বিছানার চাদর সবুজ হয়ে গেছে – না চাইতেই হাউস কালার! রুমের ফ্যানহীনতার এই ব্যাপারটা একরকম সয়ে গিয়েছিল। বছরখানেকের ভিতরেই অবশ্য এই ব্যাপারে উন্নতি হল। প্রত্যেক রুমে একটার জায়গায় দুটো ফ্যান হলো আর দুটো ১০০ ওয়াটের বালবের সাথে যুক্ত হলো একটা চারফুটি টিউব লাইট। ভালোই হল, সুইচের কভার খুলে ফেলে সেখান থেকে ইলেকট্রিক সাপ্লাই নেয়ার মতো নানান কেরদানী করার জন্য আগে যেখানে মাত্র ৩টা সুইচ ছিল এখন সেখানে আরও দুইটা যোগ হল।
একটা টেরাই মাইরা দেহি প্রথম হইবার পারি কি না 😕
২য়... :grr: :grr: :grr:
২য় হওয়ার হেব্বি উপায় তো 😀 😛 !!!
Life is Mad.
পারছি মুনে অয়... :awesome: পড়ি গিয়া এহন :guitar:
মাত্র কয় বছর আগের কথা..অথচ আমার এত খুঁটিনাটি মনে নাই.. 🙁
আমার মেমরি এত খারাপ কেন??? :bash:
সায়েদ ভাই, জটিল লাগছে.. :thumbup:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
সেই বিকাল ৩:১৮ মিনিটে মাধা বাইরানি শুরু করছ, এখন বাজে প্রায় সকাল ৮:৪৫.......।
এই সময়ের মধ্যে কিছু না বাইর হইয়া যায় না।
কুইক নামায়া ফেলো 😛 ।
Life is Mad.
আহ...কি ছিল দিন গুলা... :dreamy: :dreamy: :dreamy:
আহা........ :dreamy: :dreamy: ।
Life is Mad.
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না
সে যে মোর নানান রঙের দিন গুলি
(কপিরাইট
রবিন্দ্রনাথ ও টিটো রহমান) 😀
দেখ শালা ......রবিগুরু কবিন্দ্রনাথেরও সোনার খাচা ছিল। বহুত দিন ইংল্যান্ডে থাকায় ক্রিকেট তার ভালই লাগত। ভাবতাছি একখান প্রবন্ধ লিখুম কিনা রবিগুরু কবিন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবন ও ক্রিকেটের টুকিটাকি :dreamy:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
ডাউট না নিয়া লিখা ফালাও।
Life is Mad.
অনেক মিল আর অনেক অমিল।
এই যেমন আমাদের রুম গুলোও তিনজনের জন্য তৈরি করা। ক্লাস সেভেন আর এইটে অবশ্য চারজন করে ছিলাম। আমাদের রুমে এইটাই মাত্র লাইট ছিল, টিউব লাইট, তবে টেবিল ল্যাম্প মনে হয় আমরা ব্যবহার করতে পারতাম। নীল রংগের ওভাল শেপের একটা টেবিল ল্যাম্প চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কিন্তু মনে করতে পারছিনা টেবিল ল্যাম্পের কানেকশন আসত কোথা থেকে।
খাবার হিসেবে আমার কাছে এক নম্বর ছিলা কাবাব, এর পর খাসির রেজালা কিংবা পুডিং। ইংলিশ ডিনারে রোষ্টটাও মন্দ হত না। তবে একদমই খেতে পারতাম না সুপ, পেটিস, দুধ নুডুলস এইগুলি।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
দুধের লগে নুডুলস???? বাঁচাও :bash: :bash: :bash:
আমাদের এইখানে সেমাই পাওয়া যায় না 🙁 । তার নুডুলস দিয়েই ইমপ্রোভাইজড সেমাই (দুধ নুডুলস আর কি 😀 )বানানো হয় 😛 ।
Life is Mad.
",(কমা)" বাদ পড়ছে। হবে দুধ, নুডুলস 🙁
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
😀 😀 😀 😀 😀 😛
Life is Mad.
:(( :(( :((
আমিও কাস্টার্ড খাপো 🙁 🙁 🙁
নেটেরিস্পিড ইমুনি মাক্ষিমারা যে এই পেজটা খুল্তে খবর্হৈয়া গেসে... লেখাটা আগে পৈরা ফেল্ছি। হেব্বি লাগ্লো। ম্যালা কিচু জানবার্পার্লাম। যাই এইবার আগের্গুলা পৈরাশী।
তুহিন,
অনেকদিন পর দেখা যাচ্ছে। আন্টির অপারেশন কেমন হলো? এখন কেমন আছে? আমাদের তো আপডেট জানালা না আর
সত্যিই, আন্টি কেমন আছেন????
Life is Mad.
ছুডবেলায় বেশশরম সায়েদে'র ব্যাঞ্চাই ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ছুড বেলায় তো মানুষ এম্নিতেই এট্টু ব্যশরম হয় 😛 😛 😛 😛 😛 😛
তুই তো এখনও বেশরম। তুই কি বড় হস নাই 😮 😮
ব্যাঞ্চাই ব্যাঞ্চাই.........ব্যাঞ্চাইতে হবে :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: 😀 😛 😛 😛 😀 😀 ।
Life is Mad.
সায়েদ ভাই এতকিছু মনে রাখেন কিভাবে? আপনার মেমোরী তো দেখি সেইরকম!!!
সাবলীল, সুন্দর লেখনীর এই সিরিজটা বেশ ভাল লাগছে। :clap: :clap:
তানভির ভাই সায়েদ ভাইয়ের যে শুধু মেমরি ভাল তা না, ওনার লেখনিও ভাল। নাহলে আমার মেমরিও কিন্তু খুব একটা খারাপ না 😛
থ্যাংকু ব্রাদারস :shy: :shy: ।
Life is Mad.
হুমমম, ভাল হচ্ছে :thumbup: । চলুক...
চলুক তবে :thumbup: :thumbup: ।
Life is Mad.
ফেলে আসা দিন নিয়ে তোমার চমৎকার শিরোনামের এই সিরিজটাও জনপ্রিয় হলো।
খুব সাবলীল লেখনী তোমার সায়েদ।
পড়তে ভাল লাগে।
চালিয়ে যাও।
:clap:
সৈয়দ সাফী
থ্যাংকস বস।
আপনাদের একটা একটা কমেন্ট আমার জন্য অনেক কিছু :salute: :salute: ।
Life is Mad.
সাযেদ ভাই :thumbup:
মুছে যাওয়া দিনগুলো আমায় যে পিছু ডাকে, গানটা মনে পড়ে গেলো আপনার লেখা পড়ে ভাই। আপনি ভস :boss: :boss:
😕 😕 তা ঠিক :-B :-B ।
Life is Mad.
অসাধারণ !!!!!!!! সারাদিন ক্লাস করে এসে সিসিবিতে ঢুকেছি, আপনার এই লেখাটা সমস্ত ক্লান্তি ভুলিয়ে দিয়েছে... চলতে থাকুক :clap: :clap: :clap: :clap:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ব্যাপারটা কল্পনা করতেই ভালো লাগছে।
Life is Mad.
আপনে শুনলে মাইর দিবেন, কিন্তু দেশ ও দশের স্বার্থে আমরা চাই আপনার প্রবাস জীবন আরো দীর্ঘায়িত হোক। দেশে গেলে তো ভাবীর চক্করে পইড়া আমাদের ভুইলা যাইবেন। 🙁
এখনো টাওয়েল ব্যবহার করি ড্রেস চেঞ্জের জন্য। এই অভ্যাস মনে হয় না জীবনে যাবে। 😀
কয় কি 😮 ?? আমার আর মাত্র ৬৮ দিন বাকি 😀 😀 ।
Life is Mad.
সায়েদ মামা, জটিল লেখছোস :clap: :clap:
প্রথম ২১শে মে'টার কথা আমারো ডিটেইল মনে আছে (আমার মেমোরি এতো ভালো কেন 😀 ) কিন্তু একটা সিঙ্গেল ওয়ার্ডও লেখবার পারুমনা (আমি এইরম লেখতাম পারিনা ক্যান :bash: :bash: )
কলেজের চালু করা একগাদা অভ্যাসের মধ্যে ড্রেস বদলানোর সিস্টেমটা এখনও ধরে রাখছি 😀
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
আচ্ছা, আমি কি খালি ড্রেস চেঞ্জ এর কথাই বলছি নাকি 😛 ???????
আর আব্বু,
লিখতে পার না বইলা খালি খালি মিথ্যার পাল্লা ভারী করার চাইতে কীবোর্ড নিয়া বইসা পড়।
বুশ্চ???
Life is Mad.
😮 এইটা কি সায়েদ ভাই, কাইয়ূম ভাইডিরে কইলেন? :-B
ওই যে কাইয়ূম ভাই যে আমারে মামা ডাকল 😛 ।
অবশ্য এইটা আদরের আব্বু ডাক।
আমি হলিউড বলিউডের অনেকরে আম্মোও ডাকি 😀 😀 ।
Life is Mad.
ভাইয়া খুব সুন্দর আর সাবলীল ভাবে লিখেছেন, আবার কখন দিচ্ছেন? 🙂
ধন্যবাদ ভাবী 😛 😀 🙂 ।
কবে যে দিব.......দেখি আর কি 🙂 🙂 ।
Life is Mad.