পাঠ প্রচেষ্টা – বনলতা সেন

জীবনানন্দ পড়ার মতন দুঃসাহসে প্রবৃত্ত করার জন্যে মাহবুব ভাইকে দায়ী করতে চাই আমি সবার আগে। আর আপনাদের যদি কিছুমাত্রও ভালো লাগে এ পাঠ তাহলে ধন্যবাদটিও তাঁরই প্রাপ্য।

বনলতা সেন

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ‘পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী — ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

৩,২০৫ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “পাঠ প্রচেষ্টা – বনলতা সেন”

  1. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    সবার গলায় বা ভঙ্গিমায় সব কবিতা আসে না। কেউ হয়তো নজরুল আবৃত্তি করে ফাটিয়ে দিলো, কিন্তু শামসুর রাহমানে জমলো না। আমার ধারনা জীবনানন্দ বেশ বেশ কঠিন, বেশীরভাগ আবৃত্তিকার কবিতার মূল সুরটি যেন ধরতে পারে না, সেখানে ভয়েস মড্যুলেশনই যথেষ্ট নয়।
    ভাল হয়েছে, খুবই ভাল। আরো চাই... :clap:

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      মাহবুব ভাই,
      সত্যি আপনি পড়তে বললেন তাই সাহস করে পড়ে ফেললাম। 'বনলতা সেন' বহুবছর ধরে আমার অবসেশনের অংশ -- যতবার পড়ি নতুন মনে হয়।
      আপনার মন্তব্যে আরেক প্রস্থ প্রশ্রয়-প্রাপ্ত হলাম। 🙂
      আরেকটু ক্রিটিকালি বলবেন প্লিজ? আমি জানি আরো অন্তত দশটা জায়গায় ইম্প্রুভ করা যায়।
      আপনি এবং সবাই অভয় দিলে সিসিবির ঘাড়ে আরেকটু চেপে বসার স্পর্ধা পোষণ করছি। 😀

      জবাব দিন
  2. অরূপ (৮১-৮৭)

    নুপুর, খুবই ভালো লাগলো। পরপর দুইবার শুনলাম। :thumbup: :thumbup: :thumbup: :thumbup: মুগ্ধ।
    কবিতার দ্বিতীয় প্যারার শেষ লাইনটা মিসিং।একটু এডিট করে দিও ............... তোমার গলা ব্যপক। আমার মাথায় কিছু কুবুদ্ধি ঘুরতেছে । যদি শেপ দিতে পারি তাইলে জানাব। কাজটা যদিও তোমার করা লাগবে। 😀 😀 😀


    নিজে কানা পথ চেনে না
    পরকে ডাকে বার বার

    জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    নূপুর দাদা রকস!

    পারভেজ ভাইয়া কাল গভীর রাতে জরুরী বার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছিলেন, আমাদের কবি এবার জীবনানন্দ পাঠ করছেন! ঘুম ভাঙ্গাবার মামলায় তার জেল, ফাঁস একটা কিছু হতো নিশ্চিত, কিন্তু বাঁধ সাধল ব্যাটা কন্ঠ! আর করা যায় বলো, ঘুম শিকেয় তুলে আটঘাট বেঁধে পাঠ শুনলাম। জগতের প্রতি এমনিতেই আমার মুগ্ধতার সীমা নাই। এরই মাঝে এই পাঠ শুনে কী যে বলি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না! একখানা এ্যালবাম বের করা যেতে পারে এইবার। কাজ শুরু করে দাও। মার্কেটিং করবার দরকার নেই। আমি একাই সব কিনে নিয়ে বন্ধুদের উপহার পাঠাবো।

    কন্ঠ, পাঠ অথবা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সব মিলিয়ে অনবদ্য!

    জবাব দিন
  4. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    চেহারার সাথে কণ্ঠের মিল বেমিল, ভার্চুয়াল মানুষদের ভয়েস চেহারা ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহ আমার সব সময়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মানুষের সাথে বাস্তবের মানুষ তেমন মিলে না। তবে আপনার ভয়েস শুনে মনে হলো আপনার লেখা বা কমেন্ট পড়বার সময় যে শব্দ শুনি আপনার আসল কণ্ঠ তার কাছাকাছিই হবে।

    আবৃত্তি খুব ভালো বুঝি না। তবে আবৃত্তির কিছু জায়গাতে একটু গোলমেলে লেগেছে মনে হলো। মানে কবিতা পড়বার সময় যে টোনে শুনি সেটা যেন এলো না। তবে আপনার ভয়েসটা অসম্ভব সুন্দর ভাইয়া।

    ভালো থাকবেন অনেক।

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      অশেষ ধন্যবাদ আমিন তোমার মন্তব্যের জন্যে।
      হুট করে বার দশেক পড়লেই কি মানসম্মত পাঠ সম্ভব? তার জন্যে তো সাধনা দরকার।
      জীবনানন্দ পড়া তো সহজ ব্যাপার না। আজকে আমি ইউটিউবে না হলেও দশজনের কণ্ঠে 'বনলতা সেন' শুনলাম। কোনটাই ভালো লাগেনি। সৌমিত্র পড়েছেন অবশ্য একদম শেষ বয়সে -- বেশি ধীর যেন। আমার মনে হয়, একটা কবিতাকে পুরোপুরি আত্মস্থ করা না গেলে পাঠ হয়ে ওঠেনা সেটা।

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।