সেই সেপ্টেম্বর ২০১০ থেকে দেশে আসি আসি করে আর আসা হয়ে উঠছিল না। আইভরি কোস্টের ঘাড়-তেড়া প্রেসিডেন্টের তেড়ামির বলির পাঠা হয়েছিলাম আমরা। যাই হোক দেশে ফিরলাম সেজন্য নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। তবে এয়ারপোর্ট রোড ধরে যখন এগুচ্ছিলাম তখন ভাগ্যটাকে ততটা সুপ্রসন্ন মনে হচ্ছিল না। তবে দেশে ফেরার আনন্দে সেটাকেও কেন জানি উপভোগ্য মনে হচ্ছিল। গত ১লা ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরলাম। বহুল প্রত্যাশিত এই ঘরে ফেরাটা আরও এক নতুন মাত্রা পেল ৪ তারিখে এসে।
গত একমাস ধরে বাবা মা এর সাথে ফোনে কথোপকথনের টপিক বলতে গেলে একটাই ছিল। আর তা হলো আমার বয়স ২৬ হয়েছে। সেনাবাহিনীর চোখে আমি এখন প্রাপ্তবয়স্ক। তাই আমি এখন দিল্লীর লাড্ডু নামে পরিচিত সেই সম্পর্কে নিজেকে জড়াতে চাই। আমার কথা শুনে আমার বাবা মায়ের কি যে আনন্দ সে আসলে না দেখলে কেউ বুঝবে না। বাবা মা তো পারলে আমাকে ফোনেই বিয়ে দিয়ে দেয়। অবশেষে তাদেরকে ঠাণ্ডা করা গিয়েছিল। কিন্তু সেই ঠাণ্ডাটা দেশে আসার পর এমন ভাবে গলতে শুরু করেছে যে ৪ তারিখেই বিয়ে নামক এক মিষ্টি ছুরির নীচে নিজের গলাটাকে পেতে দিতে হলো। আমি মনে হয় একটু ভাব নিয়া ফেললাম। আসলে আমার এখন মনে হইতাছে বাপ মায়ের চাইতে আমার লাফালাফিটাই বেশি ছিল। তবে প্রকাশটা কম ছিল। শত হইলেও জামাই বলে কথা।
আচ্ছা আমার বউ আর শ্বশুর বাড়ি নিয়ে কিছু কথা বলি। আমি আমার বউকে চিনি সেই ১৯৮৭ সাল থেকে। প্রতিবেশী ছিলেন আমাদের। সেই প্রতিবেশী যে কবে মনের ড্রয়িং রুম থেকে বেড রুমে ঢোকার পাস নিয়ে ফেলেছেন তা ঠিক মনে নাই। তবে ২০০৭ সালে বেসিক কমান্ডো কোর্স করার সময় আমার মা কোন এক ব্যস্ত, কর্দমাক্ত, ঘামঝড়া দুপুরে আমার সেই ছোটবেলার প্রতিবেশিকে আমার বেডরুমে পৌঁছে দেবার অনুমতি চাইলেন তখন শত কষ্টের মাঝেও কেমন যেন এক লজ্জা আর খুশির রেশ বয়ে গিয়েছিল মনে। আমি তখন আম্মুকে বলেছিলাম দেখ যা ভালো মনে কর। আর তারপরেই ছুটে গিয়েছিলাম কমান্ডো আহসান ভাইয়ের কমান্ডো গ্রাউন্ডে। তবে সেদিন “কমান্ডো”……… “কমান্ডো” বলে মনে হয় একটু বেশি জোরেই চেঁচিয়েছিলাম। মোরাল তো তখন সত্যিই আকাশচুম্বী ছিল। যাই হোক সন্ধ্যাবেলা যখন আমার রুমমেট আহসান ( সি সি বি-র আকাশ দা) এর সাথে আলোচনা করলাম, মোটামুটি গ্রীন সিগন্যাল পেয়েছিলাম। আসলে গ্রীনসিগন্যালটা অনেক আগে থেকেই মনে হয় জ্বলছিল, আমি মনে হয় দেখতে পাই নি।
সেই থেকে শুরু। পোস্টিঙটাও ছিল ঢাকায়। কারণে অকারণে হবু শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া আসা, মোবাইল ফোনে রাত পার করে দেয়া, ধানমন্ডি লেকের শান্ত পানি দেখা, এবং ঢাকা শহরে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো। গত ৩ বছর ধরে শুধু স্বপ্নের জাল বুনেছি। আর ৪ তারিখ থেকে শুরু করেছি এক্সপেরিমেন্ট। সেই স্বপ্নগুলো কি শুধুই স্বপ্ন না কি এরা বাস্তবের মুখ দেখবে।
৪ তারিখ সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গেই দেখি বাসায় মেয়েদের সবার চেহারায় অন্যরকম এক আনন্দের আভা। জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে? শুনলাম আড়ং এ না কি সেল ( sale) শুরু হয়েছে। যথারীতি হবু বউ আর আমার বোনকে নিয়ে গেলাম সেখানে। গিয়া তো মোটামুটি আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। একি?? সব তো মেয়ে মানুষ। আমি এখানে কি করতে আসলাম? আমার সাথের ২ জন তো আমাকে রেখেই ভিতরে ঝাঁপ দিল। মনে হল আজকে ঈদ নয়তো বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। আর উনারা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন। আর আমার চেহারায় তখন হয়ত এমন কিছু একটা ছিল যে একজন আমাকে বললেন ভাই আপনি কি অসুস্থ? যাক জুম’আর নামাজ পড়ার দোহাই দিয়া কোন রকম বাসায় আসলাম। হবু সম্বন্ধী আর ভায়রার সাথে গুলশান -১ মসজিদে নামাজ পড়ে এসে দেখি শ্বশুরের বাসায় ড্রয়িং রুমে কয়েকজন হুজুর বসে আছেন। তখন তো বুঝি নাই ইনারাই কাজী সাহেব আর তার দলবল। এই বাসায় আমার প্রবেশাধিকার অনেকটা ঘরের ছেলের মতই। তাই হবু শাশুড়ি কে জিগাইলাম ব্যাপারটা কি? কিছু কইল না। আমার বোন কইল পাঞ্জাবী পায়জামা পড়তে। আমি কইলাম কি হইছে? বলল ছবি তুলবে। আচ্ছা কোন রকম পড়লাম আর কি। ও মা একটু পরে শুনি আমার বিয়া। আমি সামলে উঠার আগেই মনে হয় কবুল পড়ে ফেললাম। বিয়া কিন্তু করে ফেললাম। ব্যাপারটা এতই স্বাভাবিক ভাবে হল যে মনে হলো দুপুরের খাবার খাইলাম এখন একটু ঘুমাই। কিন্তু একটু পরে শুনলাম আবার নাকি যাইতে হবে আড়ং জাহান্নামে। এইবার একটা উদ্দেশ্য নিয়া। বউ আর বোন কে ২ টা শাড়ী কিনে দিলাম। পরে রাতের বেলা বাসায় এসে এক লম্বা ফটোসেশনে অংশ নিতে হল। রাতে নামাজ পরার পর খেয়াল হলো আমার বউ এর আগামী কাল সকালে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভা পরীক্ষা আছে। যথারীতি ঘুম থেকে উঠে বউকে কলেজে নামাইয়া দিয়া আসলাম। কলেজের সামনে গিয়া বউ আর গাড়ি থেকে নামে না। আমারও ছাড়তে ইচ্ছা করে না। আমরা ড্রাইভারকে নামাইয়া দিয়া কলেজের সামনে বসে বসে গাড়িতে একটা ছোট্ট ডেটিং সেশন সেরে নিলাম। বাসায় এসে আমি বসলাম আমার সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোকে আমার এই সদ্য ঘটে যাওয়া এক স্বাপ্নিক কাহিনী শেয়ার করতে। আমি দুঃখিত। আমি কাউকে জানাতে পারি নি। ইনশাল্লাহ সেপ্টেম্বরে আমার জেসিএসসি শেষে প্রোগ্রামে সবাইকে অগ্রিম আমন্ত্রণ রইল। সবাই আসবেন প্লিজ। সময় ও ভেন্যু পরে জানাব।
এই মাত্র বউ এর এসএম এস আসছে।—– “ পরীক্ষা শেষ। বাসা এত দূরে কেন? রাস্তা শেষই হয় না। তুমি ছাড়া ভালোই লাগছে না”। 😛 ;)) 😉 :tuski: :awesome:
এখন মনে হয় যেতে হবে। দোয়া করবেন সবাই।
ওয়েলকাম টু দ্য ক্লাব... 🙂
ফেইসবুকে দেখলাম। মমুসিং-এ আড়ং হইছে নাকি?
ঘটনাস্থল তো মনে হয় ঢাকা...
ঘটনা তো ঢাকায় এ......
গুডবাই ফ্রম আওয়ার ক্লাব... 😛
অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন... :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:khekz: :khekz:
অনেক অভিনন্দন তোমাকে...........
আবারো অভিনন্দন রুমমেট, ওয়েলকাম টু দ্যা ক্লাব 😀
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
কবে যে এইরকম একটা এস এম এস পাবো!! 😛
অভিনন্দন ভাই।
গাচ্চেকাষ্টলার্গোফেত্তৈল... :grr: :grr:
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
অভিনন্দন,
যাউজ্ঞা, ২৬-২৯ মে সি সি আরের রি-ইউনিয়ন। নয়া ভাবী দেখুম।।
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
😀 😛
মামা,অনেক ভাল লাগল রে,কিঞ্চিত কষ্টও...তোরা সবাই আমকে একা রেখে চলে যাচ্ছিস।যা মামারা,আমি একাই খেলমু :gulli2: ।অনেক অভিনন্দন।
নতুন নতুন বিয়ার ফুল ফুটলে ভালই লাগে। তয় বছর দুই যাইতে দাও। তারপরে বুঝবা, বিয়া কি জিনিস।
শুভ কামনা রইল।
বিয়া কইরা পোলা দেখি সিরাম খুশি ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
😛
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
যখন কেউ তার অত্যন্ত আনন্দের ঘটনাগুলো শেয়ার করে তখন সেই আনন্দটাকে নিজের বলে মনে হয় কেনু?? কেনু??
মুহিব্বুল,
আজ রবিবার তবে ভোর ৪টা থেকে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। বেশ কিছুক্ষন বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে তারপর ৫টা বাজলে উঠে পড়লাম। সকাল হতে এখনো দুই ঘন্টা বাকী। কম্পুউটার খুলে তোমার লেখা পড়ে মনটা ভাল হয়ে গেল। তুমি আমাকে আমার নিজের জীবনের ৪০ বছর আগের দিনে নিয়ে গেলে। তোমাকে আর তোমার বউকে আমি চিনিনা তবে দু'জনকেই খুব আপন মনে হলো। তোমাদের আনন্দ যেন আমার হয়ে গেল। দোয়া করি তোমাদের আগামী দিনগুলি খুশী ও আনন্দে ভরপুর হয়ে থাকুক।
ধন্যবাদ ভাই। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
বাহ,স্বপ্ন সত্যি হওয়ার সৌভাগ্য কজনেরই বা হয়?!! কংগ্র্যাটস ভাই :thumbup:
🙁
আমি এমন ব্লগ কবে লিখবো
:gulti:
অভিনন্দন মুহিব্বুল ভাই 🙂
বড় হয়ে একদিন এরকম একটা ব্লগ লিখতে চাই 😀
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
অভিনন্দন, মুহিব ভাই
এবওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওং
জেসিএসসি তে স্বাগতম।
ভাবির নাম ভালমত মুখস্ত কইরা আইসেন...।ভুইলা যাওনের সম্ভাবনা আছে...।।
=)) =)) =))
মুছে যাক গ্লানি/ঘুচে যাক জরা
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা
খুব ভাব
😀