আলতু মগজের ফালতু কথাঃ একটি এপ্রনের আত্মকাহিনী

undefined

[আদিকথাঃ শুরুতেই বইলা নেই, নিচের  রচনার কন্টেন্টখানা পুরাপুরি উদ্ভট, কাল্পনিক আর আলতু মগজপ্রসূত। আজাইরা প্যাঁচালে ইরিটেট হওয়া পাবলিকদের পড়া নিষেধ]

আমি এপ্রোন।

দেখতে আমি লম্বা সাইজের জাস্ট একটা সাদা কাপড়ের টুকরা হইলেও বাইরের দেশে আমার মর্যাদা ব্যাপক। অথচ আফসুশ, আমার কোনো মর্যাদা নাই। কারণ এপ্রোন হইলেও আমি বাংলাদেশী এপ্রোন। 😐 মেডিকেল পার্সোনাল, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান…ইনারা ছাড়াও আইজকাল অনেক স্কুল-কলেজের পুলামাইয়্যারাও ল্যাব-ওয়ার্কের বাইরেও আমারে ইউজ করা শুরু করছে। পোলারা বললে ভুল হবে, বিশেষ করে মাইয়্যারা। ~x(  মাঝে মইধ্যে নিজেরে এপ্রন কম মাইয়্যাগো বোরখা মনে হয়। সেইটা নিয়া অবশ্য আমার কোনো আপত্তি নাই, আপত্তি অইন্যখানে। আইজ আসছি আমার সেই নানান আপত্তি-অভিযোগ, দুঃখ-জ্বালাতন আর জীবনের টুকরা টুকরা ঘটনাময় কাহিনীগুলান শিয়ার করতে।  ;;;

এমনিতে আমার অভিযোগগুলান শোনার মত কাউরে পাই না। আমারে ইউজ করে অথচ আমারে বেল দেওয়ার মতন পাবলিকের বড় অভাব। ইফতেখার ভাইরেই পরথম পাইলাম যিনি কিনা আমার দিকে ইট্টুশখানি মুখ তুইলা চাইলেন। ভাইডা বড় ভালা মানুষ গো। আমার কথাগুলান কত্তুসুন্দর মনযোগ দিয়া শুইনলেন, আবার মাঝেমধ্যে টুকেও রাখছেন, ইট্টুও বিরক্ত হন নাই ভাইজান। তাই তার থ্রু তেই আইজ আমার সিসিবি-তে পদার্পন।

পরথম যখন আমারে বানানো হইলো ভাবতেও পারিনাই আমারে শেষ পর্যন্ত মেডিকেল কলেজ নামের এইজায়গায় পাঠানো হবে। আমার জন্মস্থান ওরিয়েন্টাল টেইলার্স-এ। দর্জিসম্রাট কুদ্দুস মিয়ার কাছে আমার জন্ম। কুদ্দুস মিয়া একটা রংগীন চক দিয়া আমার গায়ের উপর যখন দাগ দিতেছিলো, বহুত সুড়সুড়ি লাগতেছিলো। অনেক সহ্য কইরা ছিলাম, ইট্টুও চিল্লাই নাই। সমস্যা তখন হইলো যখন ব্যাটা একডা রাম-কেঁচি নিয়া আমার দিকে আউগাইয়া আসা শুরু করলো। ভয়ে আমার আত্মা সেই যে খাঁচাছাড়া হইছে আইজও ফির‌্যা আসে নাই। ভাগ্যিস আত্মা আছিলো না, নাইলে কেঁচির আঘাতের সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তটায় আমি কেন, আমার বাপ-ও বাপ-বাপ কইরা পালাইতো, শিউর। (বিঃদ্রঃ আমার বাপের নাম আলখাল্লা, আমি সাদা হইলেও তেনার বিভিন্ন কালার এভেইল্যাবল)।

যা হউক, কেঁচি-কাটা খাওয়ার পর আর কিচ্ছু মনে নাই। জ্ঞান হারাইছিলাম মনে হয়। জ্ঞান ফেরার পর কিচ্ছু দেখি না। টের পাইলাম আমি কোথায় জানি বন্দী। চারিদিক ক্যামন যেনি অন্ধকার অন্ধকার। দমডাও বন্ধ বন্ধ লাগে। এক কোনায় ইট্টুখানি ফুটা দিয়া ইট্টুখানি আলো আইসা পড়তেছে ঘরটাতে। সাহস কইরা সেই ফুটা দিয়া উঁকি মাইরা দেখার চেষ্টা করলাম। ওমা!! এইডা কোন জায়গা?? বিশাল একটা হলরুম দেখা যায়! ইট্টু ইট্টু ঠান্ডাও লাগে, সামনে বিশাল একখান পর্দায় কীসব যেন লেখা আসতেছে আবার যাইতেছে!! আর হল-ভর্তি মানুষগুলান হুড়মুড় কইরা সেই লিখা-গুলান তুলতেছে! কিছু পোলাপাইন গালে হাত দিয়া বইসা থাকতেও দেখছি, তয় পিছনের বেঞ্চের বেশির-ভাগ পোলা-মাইয়াই হাতে কালো রঙের কী যেন একটা বাক্সে আঙ্গুল দিয়া টিপাটিপি করতেছে। কী আজব জায়গা রে ভাই? কী এইডা? কই আইলাম? কী সমাচার?

যতই দিন যাইতে থাকলো, ধীরে ধীরে জানলাম, বুঝলাম, চিনলাম। এইটা হইলো মেডিকেল কলেজ। আমার যে মালিক, তিনি এইখানকার ছাত্র। উনার নাম নাঈম, দেখতে-শুনতে মোটামুটি, হাইট মিডিয়াম, তয় স্বাস্থ্য মাশাল্লা। বাইরে বাইরে ভালো মনে হইলেও আমার ধারণা উনি বহুত মিচকা শয়াতান পুলা। যাহউক, তিনি মানুষ কীরকম জানি না, তয় তার প্রতি আমি কিছু বিষয়ে বহুত পিলিজ্‌ড। ভাইজান আমারে কান্ধে নিয়া পুরা মেডিকেল ঘুরায় দেখাইছিলেন। পরথম পরথম তো সারাডা দিন আমার লগেই থাকতেন, পুরাডা সময় আমারে জড়ায়া রাখতেন গায়ের সাথে। কত্তু আদর আমারে!!! ভাইজান আমারে ল্যাব দেখাইছেন, টিউটো ক্লাস দেখাইছেন, হাসপাতাল দেখাইছেন, হোস্টেল দেখাইছেন। কত্ত জায়গায় ঘুরছি উনার লগে!! LH-এর সামন দিয়াও ঘুরায়া আনছেন ভাইজান। মাইয়াগো হোস্টেল-এর বারান্দায় আমার মতন আরেকডা এপ্রনরে দেইখা তো রীতিমত পাগলও হয়ে গেছিলাম একবার। হ্যাঙ্গারে এত্ত সুদর কইরা বাতাসে দুলতাছিলো এপ্রনডা। আহারে, দুঃখ একডাই, অগো কাছে যাওয়া নাকি নিষেধ। তার থেইকা দুঃখের বিষয় আমারে ভাইজান কোনোদিন হ্যাঙ্গারের ঐ লেডি এপ্রনের মতো ঝুলনি তো খাওয়াইলো না-ইই, বরং এখন আমার উপর আরো কত্তু টরচারও করেন। ডেইলী আমারে কুচকায়-মুচকায় ব্যাগের মধ্যে ভইরা নিয়া যান, মাঝেমধ্যে অতি অবহেলায় কাচুমাচু কইরা কান্ধে ঝুলায় রাখেন। সাবান ডইলা ডইলা আর গোসলও করায় দেন না আগের মতন। আগে আয়নার সামনে দাঁড়াইলে নিজের রূপ দেইখা নিজেই লইজ্জা পাইতাম। সেই আমি অহন অবহেলায় অযতনে এক্কেরে শ্যাষ। সাদা গায়ের কালারডাও প্রায় হলুদ হওয়ার পথে। রাস্তা দিয়া যাওয়ার সময় লেডি এপ্রন-গুলা আইজকাল আমার দিকে ফিরাও তাকায় না। ইশ অগো মালকিন-রা অগো কতই না যত্ন নেয়।

৫ টা বছর ধইরা সার্ভিস দিতেছি, আমার চেহারা আইজ কত্ত মলিন, বিবর্ণ, কুচকানো-মুচকানো, অথচ লেডি এপ্রন-গুলান? আইজো কত্তু যৌবনময়, কত্তু সুন্দরী। আইচ্ছা অগোরে কী কুদ্দুস মিয়া-ই জন্ম দিছে তো? নাকি অন্য কোনো ইক্সপার্ট দর্জি? নাইলে অগো এত্তু সোন্দর লাগে ক্যান? কী সুন্দর ছোড ছোড সাইজ একেকডার, সাদা ধবধবা গায়ের কালার, দুইপাশ দিয়া পিছন দিকে দুইডা লেন্‌জাও আছে বেল্টের মতন বাইন্দা রাখন যায়। আর আমরা মেল-এপ্রন গুলান-এর দিকে তাকানোও যায় না। বেঢপ লম্বা লম্বা একেকডার সাইজ, গায়ের কালার হলুদ না সাদা ঠাওর করবার পারি না, মালিক সেই কবে ইস্ত্রী করছিলো সেই ডেটও ভুইলা গেছি। মাঝে মইধ্যে আফসুশ হয়, আহারে যদি লেডি-এপ্রন হইয়া জন্মাইতাম! অগো কত্তু সুখ! শুনছি আফারা নাকি অগোরে নিয়া সুপার-মার্কেট, উচা উচা শপিং কমপ্লেক্স, কফিশপ, চাইনিজ রেস্ট্যুরেন্ট-এর মতন দামি দামি জায়গাগুলানেও ঘুরায়া নিয়া বেড়ায়। আমগো পোড়া, ছেড়াফাডা কপাল, সেই কপালে এত্তু সুখ নাই। আইজ পর্যন্ত হ্যাঙ্গারেও ঝোলার ভাগ্য হইলো না। আমগোও তো স্বাদ-আল্লাদ বইলা কিছু আছে নাকি? আমগোও তো শখ হয় লেডি-এপ্রন গুলানের মত ইট্টু ইস্মার্ট থাকি, রাস্তায় চলাফিরা করনের সময় লেডি-এপ্রনরা এট্টু আড় চোখে তাকায় দেখুক। ছুট্ট এই জীবনে এর চাইতে বেশি আর কী বা চাওয়ার আছে আপনেরাই কন? যদি না-ই পারেন এট্টকু স্বাদ না মিটাইতে তাইলে আমগো মালিক হইছেন ক্যান, আমগো ঐ আফাগুলার কাছে রাইখা আসলেই তো পারেন।……..

এই পর্যন্ত বলতে বলতে দেখলাম ইফতেখার ভাই আমার  মর্মান্তিক দুর্দশা, দুঃখ-অভি্যোগের এই কথাগুলান শুনতে শুনতে কাইন্দা ফেলছেন। খুব শখ আছিলো ভাইজানরে আমার এক লেডি এপ্রনের সাথে পিরীতের কাহিনীটাও শুনামু। ভাইজানের কান্দন দেইখা মনে হইতেছে আইজ আর না শুনাই। আরেকদিন সময় কইরা শুনামু নে আমার লাইফের পরথম প্রেমের সেই কাহিনীডা। আইজ আসি। ভালো থাইকেন, আমগোরেও ভালো রাইখেন। ;))

৪৩ টি মন্তব্য : “আলতু মগজের ফালতু কথাঃ একটি এপ্রনের আত্মকাহিনী”

    • ইফতেখার (৯৯-০৫)

      শাহেদ ভাইও এপ্রন পইড়া আছেন দেখা যায়!! 🙂
      আমাদের মেডিকেলের মেয়েগুলান ভাই, কী যে কারণ জানি না রাস্তাঘাটে, মার্কেট যেইখানেই যায় ঐ এপ্রন পরা থাকেই। কী যে আজীব লাগে!!
      ওখান থেকেই এইটা লিখার আইডিয়া।
      anyway, থ্যাংক্স শাহেদ ভাইকে 🙂

      জবাব দিন
      • শাহেদ_৯৭-০৩

        হুম...আমিও এপ্রন ...পরে আছি...তবে আমাদের এপ্রনগুলো অন্যরকম...আমেরিকায় মেডিকেল স্টুডেন্টরা পরে শর্ট এপ্রন...অনেকটা ব্লেজারের মত...আর ডাক্তাররা পরে আমাদের দেশের মত লম্বা এপ্রন...যাতে মেডিকেল কলেজ হাস্পাতালে এপ্রন সাইজ দেখে চিনা যায় কে ডাক্তার...আর কে স্টুডেন্ট...

        জবাব দিন
  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ব্যাপক মজা পাইলাম।
    আমারেও তো এ্যাপ্রন পরেই কাজ করতে হয় সারাদিন। মেডিকেলে একদম ভাল্লাগতোনা এ্যাপ্রন পরতে। কান্ধে ঝুলিয়েই লাইফটা পার করে দিসি। এখন তার শোধ উঠছে কড়ায় গন্ডায়..... হা হা হা...
    মেয়েরা আসলেই এ্যাপ্রনের ভালো যত্ন নেয়। ব্যাগের মধ্যে শত ভাঁজে কুঁচকে যাওয়া বস্তুটাকে পাঁচ বছর বহুত জ্বালিয়েছি।

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    শপিং মলেও মেডিকেলের মাইয়াগো এপ্রন পইড়া ভাব নেওয়া দেইখা এই প্রশ্নডা আমার মনের ভিতরে সেই ছুডোকাল থেইকাই কিরকির করত আইজকা উত্তর পাইলাম...থেঙ্কু!!!

    জবাব দিন
  3. আমীন (০১-০৭)

    আমাগো হলের সামনে দিয়া রেগুলার এপ্রোন পরা মাইয়ারা যায়।ইচ্ছা থাকলেও তাকান যায় না, তারা যে বাইকের পিছনে বসে সামনের জনরে শক্ত কইরা বইসা থাকে!!

    লেখা পুরাই :thumbup

    জবাব দিন
  4. মুহিব (৯৬-০২)

    আইডিয়াটা দারুন ইফতেখার। লিখাটা খুবই ভালো লাগছে। :hatsoff: :hatsoff: আমার আম্মা আমারে এপ্রন পড়াইতে চাইছিল। কিন্তু ১১ এ উঠেই সেই স্বপ্ন ধ্বংস করে দিছিলাম। পরে আমার প্রক্সি দিছে আমার বোন। আমার মনে হয় এপ্রন পড়াটা একটা ঝামেলা। গরম............

    জবাব দিন
    • ইফতেখার (৯৯-০৫)

      ম্যাক্সিমাম প্যারেন্টস্‌রাই ক্যান যে ছেলেমেয়েদের এপ্রন পড়াইতে চায়, বুঝি না 🙁
      ভাই, সেই যে ১টা ঘন্টার এডমিশন টেস্ট দিছিলাম, যারা চান্স পায় নাই অগো জীবন থেকে বৃথা হইছিলো খালি ১টা ঘন্টা। আর আমরা যারা টিকছিলাম আমগো বৃথা হইলো সারাটা জীবনের সব ঘন্টা :(( :(( :(( 😕 😕 😕 কী যে চিপায় আছি 😐 😐 :bash: :bash:
      সো, বস্‌ বড় বাঁচা বাইচা গেছেন 😀

      anyway, থ্যাংক্স এ লট ভাইয়া for দ্যা appriciation 🙂

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।