৭৫,জেটল্যান্ড স্ট্রীট এর পর থেকে…।
ভাইয়ার সাথে বাসায় আসার পর খুব ভালো লাগলো। একটা অন্য ধরণের পরিবেশ। ভাইয়া আছে, ভাবি আছে এবং একটা ছোট্ট মেয়ে আছে। গোসল করে খাওয়া দাওয়া করলাম।
ভাই-ভাবি কিছু নিয়ম কানুন বললো, যেমন- কালোদের নিগ্র বলা যাবেনা ব্ল্যাক বলতে এধরণের কিছু কথাবার্তা। তারপর সন্ধায় বের হলাম এলাকা ঘুরে দেখার জন্য ভাইয়ার সাথে।
গিয়ে আমার মাথা নষ্ট। সবাই বাংলায় কথা বলে দোকান থেকে শুরু করে সবাই। রাস্তায় লিখা “বল খেলা নিষেধ”, “এখানে পানের পিক ফেলবেন না”, “পার্কিং করা নিষেধ”, “হালাল মোরগের গোস্ত” এধরণের আরো অনেক কিছু।
তারপরের দিন একটু রেস্ট নিলাম, কোথাও বের হলাম না। ২য় দিন কলেজে গেলাম, গিয়ে আমার মাথা আবার নষ্ট। কি ছবি দেখলাম আর কি এখানে!! প্রোস্পেকটাসে ছিল এরকম কিছু ছবি যে, বিশাল বড় মাঠে ১টা ছেলে ১টা মেয়ে বসে একটা বই পড়তেসে। আর কলেজে ঢুকে দেখি কলেজ আমার উদয়ন স্কুল থেকেও ছোট। কি আর করার ঢুকলাম কলেজে,
ছবি টবি দিলাম কাগজ পত্র দিলাম। প্রথম কথা “টিউসন ফী কিছু বাকি আছে কবে দিবেন(কথাগুলো বাংলায়)”??
আমিতো দেশ থেকে পুরা দিয়ে আসছি।
নাহ পুরা দেয়া হয়নাই অনেক বাকি আছে।
কত বাকি আছে ??
১৫০০ পাউন্ড।
আমি বাসায় কল দিলাম আম্মাকে বললাম এই কাহিনী। আম্মা বললো “আমি বাধন এর সাথে কথা বলে তোকে জানাই”। আম্মা একটু পর ফোন করলো বললো যে বাধন নাকি কলেজের সাথে কথা বলবে, আমাকে এখন বলতে বলা হলো যে পরে দিবো। আমি পরে আম্মাকে ফোন করে বলসি আম্মা কোনো সমস্যা নাই, ঠিক হয়ে যাচ্ছে নতুন দেশ তো প্রথমে সমস্যা হয়।
কারণ দেশে বসে খালি টেনশন ছাড়া আম্মা কিছু করতে পারবেনা। তাই চিন্তা করলাম এত কিছু বলার দরকার কি।
কলেজে গিয়ে আবার সাব্জেক্ট চেঞ্জ এর কথা বললাম। জিজ্ঞাস করল “কোন সাব্জেক্ট নিতে চাও?”
বললাম “এলএলবি”।
তারা হাসতে হাসতে কুটিকুটি। আমি অবাক কি হইলো? বাংলায় কথা বলতেসি ভুল ও তো বলতেসিনা।
বললাম কোন সমস্যা??
তারা বললো এলএলবি কোর্স তাদের নাই।
আমি বললাম দেশের কথা বাদ বাইরে বড় করে লিখা এলএলবি কোর্স আছে সেটা??
বলে ওটা ভবিষ্যতে আসবে
আমি বুঝলাম এখন যা বলে তা শুনে যাই পরে দেখা যাবে কি করতে পারি।
ক্লাস করা শুরু করলাম ক্লাস এর শিক্ষক ও বাঙ্গালী। আমি চিন্তায় পড়লাম ইংলীশ এ উন্নতি হবে কিভাবে বাসায় বাংলা কলেজে বাংলা। কিন্তু সব কিছুই মেনে নিলাম।
আমার পরের কাহিনী বলার আগে আমি এখানকার কলেজ সম্পর্কে কিছু ধারণা দেইঃ
লন্ডণে আমাদের ধান্মণ্ডির চেয়েও বেশি কলেজ আছে। বিশেষ করে হোয়াইট চ্যাপেলে।
এখানকার কলেজ গুলার কাজ, খালি দেশ থেকে স্টুডেন্ট আনো, স্টুডেন্টরা ক্লাসে আসেনা আসলেও শুধু উপস্থিতি দিয়ে চলে যায়। আবার এমন কিছু ভাই আসে যারা হিথ্রো থেকে এসে সরাসরি হোটেলে ঢুকে। সেখানেই তাদের জীবন কাটে। হোটেল এর উপরে বাসা খাওয়া হোটেলে। তারপর হোটেল থেকে বের হয়ে দেশে চলে যাওয়া।
মনে করেন আপনি লন্ডণ এর বাইরে কোনো হোটেলে কাজ করেন, ক্লাসে আসবেন কিভাবে?
ক্লাস তো আপনি করতে পারবেননা। কলেজ আপনার সাথে একটা চুক্তিতে আসবে। ২৫০ পাউন্ড(এটা কলেজ টু কলেজ এবং ম্যান টু ম্যান ভেরি করবে) দিয়ে দাও তোমার সব কিছু ঠিক থাকবে তুমি কলেজে আসো সবসময় হোম অফিস সেটা জানবে।
আমি এসব দেখার পর ভাবলাম, নাহ আমি বাংলাদেশেই আছি কিংবা এশিয়াতে
কারণ এইসব কলেজের মালিক সাধারণত বাংলাদেশি/ইন্ডিয়ান/পাকিস্তানী বা শ্রীলংকান দের হয়।
তখনই কলেজ চেঞ্জ করার জন্য ব্যাস্ত হয়ে গেলাম। ভাইয়ারা বললো এখন করে লাভ নাই। তুমি ১ বছর পর চেঞ্জ করো। ১ বছরের যেহেতু ফী দেয়া হয়ে গেছে। এখন ১ বছর এর জন্য অপেক্ষা করতেসি।
পরের পর্বে এখানকার বাঙ্গালীদের নিয়ে বলবো।
চলবে……
কি ভয়াবহ!!!! নামসর্বস্ব "ভিসা-কলেজের" কথা আগে শুনেছি এবং পত্র-পত্রিকায় পড়েছি কিন্তু এই অবস্থা তা জানতাম না।খুব খারাপ লাগলো পড়ে।নাজমুল,পারলে এই লেখাটা অন্যদের পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা সতর্ক হয়। নিজের এরকম দুঃখ এবং বিব্রতকর অবস্থার কথা এইভাবে লিখতে "গাটস" লাগে- সেই জন্য তোকে সেলাম :boss:
calaye ja
অবস্থা তো ভালো না 🙁
তোমার লেখায় ছবিটা চমৎকার আসছে (চমৎকার ছবি না), চালিয়ে যাও, আমরাও জানি, পরেররা জানতে পারবে।
আর কলেজে ঢুকে দেখি কলেজ আমার উদয়ন স্কুল থেকেও ছোট x-( x-( উদয়ন স্কুলকে পচাইলি নাকি? আজকেও আসলাম ওইটার সামনে দিয়া :shy: ওইখানে এককালে "একজন" পড়তো :shy: সে এখন আর আমার নাই :(( ওই স্কুলের সামনে দিয়া হাঁইটা গেলেই উদয়নের রিইউনিয়নের প্রস্তুতিতে শাড়ি পরা সেই "একজনের" সাথে কত স্মৃতি মনে পইড়া যায়রে 🙁 🙁 =((
নাহ ভাই উদয়ন কে পচাই ক্যামনে ;;) কেজি ওয়ান থেকে ৬ পর্যন্ত পড়া লেখা কইরা কি স্কুলের বদনাম করুম ??:D
আর যে স্কুলে এমন সুন্দর আপুরা থাকে সে স্কুল কে কিছু বলা যায় নাকি 😛
এখনও উদয়ন এ খালাতো ভাইরে আনতে গিয়া কেমন কেমন লাগে মনে হয় পোলাডা একটু পরে আসুক =((
:khekz:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
চালিয়ে যা!!
এসব সম্পর্কে আমার কোন ধারনাই ছিল না, আমি রীতিমত শকড। আশা করি এক বছর পরে ভাল ভাবে কলেজ চেঞ্জ করতে পারবে।
তবে তোমার লেখা খুব ভাল হয়েছে, সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছ। আর এ অভিজ্ঞতা নতুনদের কাজে দেবে, চালিয়ে যাও।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
নাজমুল তোমার সিরিজটা পড়ছি। এতদিন এই কাহিনী গুলো শুধু পত্রিকার পাতায় পড়ে এসেছি, তখন হয়ত তেমন একটা গা করেনি কিন্তু এখন তোমার সিরিজটা পড়ে শুধু একটা কথা মাথায় আসছে, ভয়ংকর প্রতারণা। আর মাস্ফু ভাইয়ের প্রথম মন্তব্যের শেষ লাইনের সাথে একমত :hatsoff:
আর লন্ডন বানান মনে হয় "ণ" দিয়ে নয় বরং "ন" দিয়ে। একটু ঠিক করে দাও, শিরনামে ভুল বানান চোখে লাগে 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ঠিক করে দিলাম 🙂
মনে হচ্ছে কোন কল্পিত উপন্যাস পড়ছি। খুব সুন্দর হচ্ছে তোমার সহজ সরল বর্ণনা।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ভোর আসবেই ।
কি সাবলীল বর্ননা!
সত্য কখনো কখনো খুব সাংঘাতিক হয়। মঙ্গল হোক।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
মনটা খারাপ হয়ে গেল...
তবে আমি জানি তুই সব বাঁধা-বিপত্তি পাড় হয়ে ঠিকই তোর লক্ষ্যে পৌঁছাবি। আমাদের শুভকামনা তোর সাথে সবসময় থাকবে। ভাল্ থাকিস।
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
কি ভয়াবহ ব্যাপার !!!!! আল্লাহ জানেন তোমার পরিস্থিতিতে পড়লে আমি কি করতাম ... পরের পর্বের জন্যে অপক্ষাতে থাকলাম।
নারে ব্যাটা মন খারাপ করে দিলি । এনিতেই প্রবাস জীবন কষ্টের তোরটা দেখি ডাবল । ভাল থাকিস । ইনশাল্লাহ সামনে শুভ দিন আসছে তোর জন্য ।
নিজের জীবনের তিক্ততার কাহিনী খুব কম মানুষই এমন সহজ সরল ভাবে বলতে পারে। আশা করি অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই এই কষ্ট দূর হবে।
আর এইরকম চমত্কার লেখার জন্য :salute:
"এতদিন নামেই শ্রুত ছিলাম। আজ চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জন হল।"
-- ভয়াবহ বর্ননা। যথারীতি ৫ তারা। পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
খুব বড়সড় একটা শক খেয়ে গেলাম নাজমুল। এতকিছুর পরও তুমি স্বাভাবিক থেকে লিখতে পারছ, এটাই আমার কাছে অনেক মনে হচ্ছে।
এ ধরনের লেখা আমাদের সম্ভাব্য বিপদ থেকে সাবধান করবে এবং নিজের লক্ষ্যের দিকে ছুটার অনুপ্রেরণা দিবে। :boss:
খাইছে রে,কি ভয়াবহ দশা 😮
দোয়া করি তোর জন্য।
চলেতে তো হবেই :clap: :clap: :clap:
ছোট ভাইয়া, তোমার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ইনশাল্লাহ এই বাধা গুলো তুমি দ্রুত অতিক্রম করতে পারবে,এই দোয়া করি।
নাজমুল, সত্যি লেখাটা খুব সরল এবং প্রয়োজনীয় ছিল। ভালো হচ্ছে। :clap:
ইনশাল্লাহ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। লেখাটা অন্যদেরও খুব উপকারে আসবে। ভালো থেকো।
নাজমুল...ব্যাপারটা সত্যিই কষ্টকর।ইনশআল্লাহ দ্রুতই সব সমস্যা কাটায় উঠতে পারবি...
:khekz: :goragori: মজা পাইলাম... :gulti:
সত্যিই খুব শকড হলাম শুনে। আসলেই দেশের অসহায় ছেলেদের অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে এমন নিষ্ঠুর শিক্ষা ব্যবসায় নেমেছে কিছু নীচু প্রকৃতির মানুষ। তোমার লেখাটা হয়ত ভবিষ্যতে কাউকে এমন প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা করবে। আর তোমার সাহসের প্রশংসা করতেই হয় এমন অকপট সরল প্রকাশকে। তুমি তোমার লক্ষ্য অর্জনে সফল হও এই কামনা করি।
লাইফ ইজ এ রেইস।শুনতে খুব কমন এবং গান্ধা মনে হইলেও বাস্তব।
হাল ছাড়িস না।আমার ধারনা তুই শক্ত আছিস। :dreamy:
ভয়ানক কথা...মিডিয়ার কথায় পটে গেছিলি ক্যামনে??
ইন্টারনেটে ওই কলেজ এর ব্যাপারে খোজ খবর না নিয়ে যাওয়াটাও একটা বোকামী হয়েছে।
যাই হোক, এসব বলে তো এক বছর ফিরে পাওয়া যাবে না।
দোয়া করি, যাতে তুই তোর মন মত সাবজেক্টে সময় মত ভর্তি হতে পারিস।
best of luck :thumbup:
ওয়েবসাইটেও সেইম ব্যাপার সেপার ভাইয়া 🙂
দোস্ত তোকে আমি তোকে একদিন একটা কথা বলছিলাম মনে আছে?? সেটাই হইছে দেখছস।।।।
তোর কথা সত্যি হইসে 🙁