লেখাটা আমার নয়, আমাদের ব্যাচের পাবলিক স্পিকীং এ সবচেয়ে দূর্বল ছেলেটার। তার ব্যাচের গ্রুপে লেখা এক একটা পোষ্ট হয় জ্বালা ধরানো। এই লেখাটা পড়ে মনে হইসে, জীবনে কি করলাম ?? এমন একটা লেখা লিখতেও পারলেও তো হইতো।
ধন্যবাদ যাহীন বিদেশের মাটিতে থেকেও মনে হলো ঘুরে এলাম বরিশাল ক্যাডেট কলেজ থেকে 🙁
জীবন নিয়ে চিন্তা করাটা আমি আবু রায়হানের কাছ থেকে শিখেছি । ছেলেটাকে দেখতাম সারাদিন কী যেন আপন মনে ভাবে………… দেখে মনে হতো , হয়তোবা জীবনের মানে খোজে কিংবা সৃষ্টির রহস্য …… কে জানে? তাই আমিও মাঝে মাঝে ভাবার চেষ্টা করতাম……… অভ্যেসটা এখনো আছে। ইদানীং মাঝে মাঝেই হিসেব মিলাই । এমন কোন বয়স হয়নি মানি…… কিন্তু জীবনের হিসেবটা কিছুমাত্রায় এগিয়ে রাখার মতো অনেকটা সময় বোধ করি আমি পেড়িয়ে এসেছি……… হিসেব করার মতো ঘটনা , খুব বেশি কিছু পাই না……… তাই স্বভাবতই একসময় ক্যাডেট কলেজের ব্যাপারটা উঠে আসে । একে একে সবার কথাই ভাবি……………………
ব্যাচের ফার্স্ট ক্যাডেট ছিল রবি…… ছোটবেলা থেকেই প্রচুর সম্ভাবনাময়ী । সে ব্যাচের ফার্স্ট ক্যাডেট, তাই সে ফর্মে ঢুকলে নাকি আমাদের সিট্যুশান হতে হবে – এই ঘোষণা দিয়ে সে শুরুতেই প্রমান দিয়েছিলো , যে নেতৃত্ব দেয়ার সহজাত গুনাবলীর তার কোন কমতি নেই । কলেজ প্রিফেক্ট সে হোতোই… কিন্তু ”কলেজ অথোরিটি” নামক জিনিসটি সদয় হয়ে তাকে হাউস প্রিফেক্ট বানায়…। নানা চরাই উৎরাই পেড়িয়ে সে এখন ঢাকা ভার্সিটির ”ইকনমিক্সে” । অবাক হয়ে দেখি যে , বাস্তবতা তাকে পিষে ফেলতে পারেনি………… স্বপ্নের পিছু ছুটছে সে আজও।
এরপরই আসে একটি সাপ!!!! চুমো দিয়ে জান কবচ করা ছিল তার নেশা!!!! পরালেখায় বরাবরই বেশ ভাল……… । ভালোর দাম দিয়ে সে এখন বুয়েটে ………… আমাদের সাথেই আছে…… এখন সত্যিই সে একটি ঘনক……… প্রেম করে বেড়ায় বলেও কথিত আছে……… ভাবীর জন্যে রইল সহানুভূতি………………… তবে কবিতা আবৃত্তিটা এখন আর সে করে না……………………
তারপরই ছিল তানভীর ……………… কলেজে কিছু করে টিজ খায়নি , এমন কোন মুহূর্ত খুজে পাওয়া দুষ্কর । তবে তার মা’ টা বেশ ভাল……… বাইরের পৃথিবীর হার্টথ্রব তানভীর এখন গেট টুগেদারে না এসে সেই প্রতিশোধ নেয়……………… তানভীর তুমি ফিরে এস……… আমাদের উপুরযপুরি শিক্ষা হয়েছে……… ( তবে আসলে আবার টিজ করব না এমন কথা বলি নাই )
এরপর মশিউরের কথাটা এসেই গেল………… যত বড় মাথা ছিল তার, ঠিক তত বড়ই হৃদয় ছিল তার……… ক্লাস ইলেভেন, টুয়েলভে না পড়েই ঠিক ঠিক ফার্স্ট হয়ে যেতো……… তবে কথা বার্তায় সে বরাবরই দুর্বল………… এখন সে মেডিকেলে আছে…… ডাক্তারি পড়ে………। প্রেম , রাজনীতির মতো ইত্যাদি রগরগে বিষয় হয়তোবা তাকে ডাক্তারি পাস দিয়ে একজন পানশে ডাক্তার হতে দেবে না………… বিস্মিত হই, প্রতিবন্ধী আঙ্গুল নিয়েও কিভাবে সে আমাদের দেশের বাঁশ নিয়ে লাফিয়ে পড়া রাজনীতি করে????? এই আঙ্গুল নিয়েও বাঁশটা সে ঠিকভাবে শক্ত করে ধরতে পারে তো?????
নাজমুল ছিল আমাদের আনন্দের প্রাণকেন্দ্র………… বিবিধ পাগলামিতে ভরপুর ও ছিল আমাদের প্রাণখোলা হাসির উৎস । ও যখন ক্লাস এইটে এ ফর্ম থেকে বি ফর্মে চলে গিয়েছিল , তখনি অনেক খারাপ লেগেছিল …………………… তাই আজকে যখন সে সুদূর ইংল্যান্ডে বসবাসরত; এই খারাপ লাগাটার পরিমান আর বলতে চাই না……… নাজমুল, প্রতি গেট টুগেদারেই আমরা প্রচুর হাসি…… তবে কেন জানি এই হাসিগুলো কিছুতেই পূর্ণতা পায় না……………।
ঘোলা চোখের একটা অতি মোটা ছেলে ছিল…………… নাম তার “শুক্ল শশী” । ইলেভেন পর্যন্ত প্রতি গ্রামান্তরেই এই ছেলেটা আমার সঙ্গী ছিল………… এখন নাকি সে বুয়েট কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ……… কলেজে থাকতেই দেখতাম…… সাধারন মানুষ হয়েও একটু অন্যভাবে চিন্তা করে এই ছেলেটা……………। ‘শশী’ , তুই যখন অনেক বিখ্যাত হয়ে যাবি…, তখন আমি কিন্তু এই পোস্টটার একটা প্রিন্ট আউট নিয়ে তোর সাথে দেখা করতে যাব…………
কলেজের সব চাইতে অস্থির ছেলেটা ছিল রেজা …………… এই সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে তো, পরক্ষনেই ডিমের কুসুম দিয়ে “জৈবিক এক্সপেরিমেন্ট” করে………। অস্থিরতা কমানোর জন্যে তাকে শিব খেরার ‘তুমিও জিতবে’ বইটিও পরতে দেখেছি……। শুনেছি আজ নাকি সে ব্যাপক স্থির……। জাহাঙ্গীরনগরের টিচারও হবে……… ব্যাচের প্রথম বিবাহটা সেই করতে যাচ্ছে………… দাওয়াত খাওয়ার অপেক্ষায় আছি………… তবে ব্যাচেলর পার্টিটা বোধহয় করার অনুমতি হবে না………।
সিরিয়ালে এরপরেই আসে বিখ্যাত ক্যাসপার………। একহারা গড়নের মুস্তাকিমের মস্তিস্কের পুরটুকুই ছিল তার বিশেষ অঙ্গে………… কলেজে কি না করেছে সে?? যেটা বাকি ছিল সেটাও কুয়াকাটায় করেছে……… কিন্তু সামরিক প্রশিক্ষন তাকে বদলে দিয়েছে…… চিন্তাটা এখন সে মাথা দিয়েই করে , অন্যকিছু নয় । ………… কেউ গালি দিলে মিষ্টি হেসে বলে, “ভাই গালি দাও কেন??” ………………
এ ফর্মের প্রচণ্ড সিরিয়াসসুলভ ছেলেগুলোর মধ্যে এক নম্বরে ছিল মৢোসাদ্দেক……… কি পরালেখা কি খেলাধুলা…… সবজায়গাতেই নেতৃত্ব দেয়া চাই………… একদম ছোট থাকতে ইনামের সাথে প্রায়ই লাগত তার…… পরবর্তীতে ‘আলোর মিছিলে” না যাওয়া তাকে নিদারুন যন্ত্রণায় ভোগায়………… এই সিরিয়াস ছেলেটাই যখন প্রথমবার মেডিকালে পরীক্ষা দিয়ে এসে হৈ হৈ করতে করতে এবং গেঞ্জি খুলে মাথার উপর ঘুরাতে ঘুরাতে রিকশায় করে সারা শহর চক্কর দেয়….. তখন কেমন লাগে বল???? …… তবে এখন সে মেডিকালেই আছে………
মুশফিক ছিল বেশ চুপচাপ ধরনের ………… বাস্কেটবলে থ্রী মারা নাকি ‘টোকা’ মারা কোনটা সে ভাল পারে এই নিয়ে মতভেদ ছিল……… এখন সেও ইংল্যান্ডে প্রবাসী…… বন্ধুর সাথে প্রায়ই ভিডিও চ্যাট হয়……। ”স্কাইপি’র ব্রাইটনেস তাকে সহ্য করতে পারে না…… তবে হাসলে নিশ্চিত দেখি………………
একজন প্রেমিক ছিলেন……… কাজী বলেই তাকে চিনতাম । এই ছেলেটাকে শুরুতে কিছুতেই বুঝতে পারতাম না…… ‘বইয়ে’ লেখা ভাল ছেলেদের সাথে সবকিছুতেই তার অপরিসীম মিল ছিল………, খালি পরীক্ষার রেজাল্টটা বাদে । কলেজ থেকে বের হবার পরে তিনি প্রেমসাধনায় বৃন্দাবন গিয়েছিলেন………। এখন আবার অঙ্কন নাম নিয়ে তিনি ‘পিঙ্ক সিটি’তে নাজিল হয়েছেন…………।
এরপরেই ছিল একজন কুস্তীগির ………। তার নামের কোন শেষ ছিল না…… তবে কাম ছিল একটাই, ব্যাবসা করা । ব্যাবসায়িক মনভাবের মানুষ সাধারনত ছোট পরিসরে থাকতে পারে না, এখানেও তার ব্যাত্যয় হয়নি…… সে ক্যাডেট কলেজের গণ্ডি পেড়িয়ে বড় প্রেক্ষাপটে চলে গিয়েছিল…… আজকে সেও বুয়েটে আছে…। তবে ব্যাবসা করার কোন ফাকে যে ব্যাচের অনেকখানি দায়িত্ব সে নিজের কাধে নিয়ে নিয়েছে তা বোধ করি সে নিজেও জানে না……………
বলতে বলতে হিশামের কথাটা চলে আসলো……… কলেজে প্রথম দিককার দুর্বল ‘এ’ ফর্ম বনাম সবল ‘বি’ ফর্ম ম্যাচগুলোর কোনটায়ই , হিশামের মতো একজন অ্যাসেট থাকার দরুন আমাদের কখনোই হারতে হয়নি……… হারতে থাকা সবগুলো ম্যাচই , হিশামের কোন এক জাদুবলে পরিত্যাক্ত হয়ে যেতো!!!!!!!!………… এই হিশাম ছেলেটাই নির্ধারিত সময়ের দুই বসর আগে বাইরে এসে হটাৎ করে অচেনা হয়ে যায়…… ‘অউন পর্ণের’ ব্যাস্ততায় আমাদের সময় দিতে পারে না…………… এরি মাঝে সৃষ্টিকর্তা একবার তাকে উঠিয়ে নিতে গিয়েও কি মনে করে যেন আবার আমাদের কাছে ফেলে গেছে । আজ দশ বসর পর সেও আমাদের সাথে আছে । নারী তার জীবনে একদম ‘নারীসুলভ’ আচরণই করেছে………
আমার দৃষ্টিতে ব্যাচের সবচাইতে সাহসী ছেলেটি হচ্ছে মাহমুদ । ছিনতাইকারীকে এক হাত দেখে নিয়ে নিজের মানিব্যাগটি উদ্ধার করে ফেরত আসার নাম সাহস নয়, বরং কথা না রাখা জীবনকে পশ্চাতদেশ দেখিয়ে এগিয়ে যাওয়াই সাহস…… হ্যা জীবন মাহমুদের সাথে কথা রাখেনি…… কিন্তু ক্যাডেট কলেজের সেই দস্যি ছেলেটা আজও তেমনি আছে……… ছুটিতে যখন যাই, সবার সাথে তার ক্যাডেটসুলভ হাসিটাও তার পোড় খাওয়া জীবনের সবটুকু চিন্হই বেশ সফলভাবে ঢেকে দেয় ……
ক্লাস সেভেনে একবার লাইব্রেরী ক্লাসে বেশ গোলগাল ও পেটমোটা একটা ছেলের কাছে গল্পের বই চেয়েছিলাম…… সে দিতে রাজিও ছিল । কিন্তু একটু পরেই যখন তানভীরও এসে বইটা চাইল, তখন সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল যে তানভীর যেহেতু একই হাউসের তাই সে তাকেই দেবে বইটা , এক্ষেত্রে আমি আগে চাইলেও বইটা নাকি আমাকে দেয়ার নিয়ম নেই………। এই পেটমোটা মারুফ ছেলেটাই কেমন করে যেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও হাউস নির্বিশেষে সবাইকে এতোটাই আপন করে নিল!!!!! এখন আমাদের মধ্যে সবচে সুখে আছে সেই…… পাস করার আগেই অর্ধপ্রতিষ্ঠিত, টাকার বিছানায় শুয়ে আনমনে বেজ গীটার বাজায়, সুন্দরী বউও আছে সাথে…………… তবে আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে, এখনো মাঝে মাঝেই গভীর রাতে তার কলেজ মাঠের জন্যে বুক পোড়ে………
একরাম ছিল বরাবরই বেশ শান্ত শিষ্ট………… নামাজটা সে কলেজ থেকেই পড়তো……… এখন আরও নামাজী হয়েছে । লম্বা কাবলি’র সাথে পাল্লা দিয়ে দাড়িটাও তার লম্বা হয়েছে বেশ…… ভোদাই নামটা তার সাথে একেবারেই যায়নি………যেই ছেলেটা কলেজ জীবনেই একটি ফাইভের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিল তার নাম ভোদাই হয় কি করে এটা আমার মাথায় আসে না । তবুও সবাই ডাকত । মাঝখানে কিছুদিন নেটওয়ার্কের বাইরে ছিলেন…… এখন আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন……। নামাজী হলেই যে বন্ধুদেরকেও ছেড়ে দিতে হবে একথা তিনি বিশ্বাস করেন না…………।
এখন বর্তমানে আমাদের মধ্যে সবচে সম্ভবনাময়ী হচ্ছে মেহেদী । যে কোন বিখ্যাত মানুষের প্রারম্ভিক জীবনের সাথে তার জীবনটা একদম পুরোপুরিই মিলে যায় । অর্থাভাব, অপমান, দুর্ভাগ্য, ইত্যাদি বিখ্যাত হওয়ার সবগুলা উপাদানই তার জীবনে বহুলাংশে বিদ্যমান…। আর সৃষ্টির নেশায় পেটে পাথর বেঁধে মিথ্যে দিনানিপাত তো আছেই!!!!! তা না হলে IBA তে পড়া একজন ছেলের এরকম হওয়ার তো কোন কারন দেখি না…… …… মেহেদী ভাই তুমি চেষ্টা চালিয়ে যাও …আমরাও আছি, আর তাছাড়া নিজের স্বপ্ন নিয়ে চেষ্টা করার মতো সৌভাগ্যই বা কয়জনের হয়????? তবে মনে রাখিস…… এটা কিন্তু কলেজ না…… এখানে কিন্তু শুধুমাত্র ভাল খেলেই কলেজ গেমস প্রিফেক্ট হওয়া যায় না…………।
এরপরেই বলতে হয় আলমের গল্পটি…… গল্পটি খুবই ছোট। একদম সেভেনেই শেষ হয়ে যায় । আলমের সাথে আমার কেবল একটি কথোপকথনের স্মৃতিই আছে… তাও কলেজ থেকে চলে যাবার আগে…… আফসোস, ছেলেটা আমাদেরকে, তাকে ঠিকভাবে বোঝারও কোন সুযোগই দেয়নি । তাহলে গল্পতা হয়তো একটু অন্যরকম হতে পারত । …………… কিন্তু আজ এক দশক পরেও কোন সে টানে আলম আমাদের কাছে আসে তা আমার বোধগম্য হয় না……… তবে আলম দেখিয়ে দিয়েছে…………… কে বলেছে যে, শেষ হওয়া গল্পটিও আবার শুরু করা যায় না?????????
যে কোন ধরনের পার্টি’রই একটি অনবদ্য উপাদান আমাদের এই রব্বান্স…………সে তার মানবিক কিংবা বাস্তবিক যে কোন অবস্থায়ই আমাদেরকে নিষ্কলুষ আনন্দ প্রদান করত……… হাটার সময় তার ঐ ‘জিনিস’ দুইটার অস্বাভাবিক ছন্দ এখনো অনেকের হৃৎপিণ্ড থামিয়ে দেয়………… আজকে সে একটু হলেও আগের চাইতে বেশি সিরিয়াস, তবে আমার ভাবতে ভাল লাগে যে এটা নিছকই ”আই ইউ টি”র অমানবিক চাপে পড়ে……… কেন জানিনা, রব্বানীকে সত্যিকারভাবেই এতোটা সিরিয়াস ভাবতে আমার ইচ্ছা হয় না…………
এরপরই রয়েছে আমাদের নভিসেস কম্যান্ডার আবদুল্লাহ । আমার মনে হয় ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস ইলেভেন পর্যন্ত টানা ফার্স্ট হওয়ার রেকর্ড আর কারুর নেই………। খুবই খারাপ লাগে যখন দেখি এই ছেলেটা বুয়েটের পরিবর্তে আর্মির ঘানি টানছে…………… সম্প্রতি এই ছেলেটা এক ধাক্কায় হটাৎ করেই অনেকখানি বড় হয়ে গিয়েছে । আবদুল্লাহ তোর ঘোর বিপদের সময়ে আমরা কেউই তোর পাশে থাকতে পারিনি…… এজন্যে আমাদের সবার মধ্যেই অনেকটুকু অপরাধবোধ আছে………। এই পোস্টটি’র সুবাদে তোর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি………… আমাদের ক্ষমা করিস, আর যদি কখনো কোন বিপদে তোর পাশে দাড়াতে আসি, তবে আমাদেরকে তুই সেই অবকাশটুকু দিস…………………………
ব্যাচের কলেজ প্রিফেক্ট ছিল আহমেদ………… সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ছেলেটা কখনোই চালাক হতে চায়নি……। পরোক্ষভাবেও মনে হয় না কোন দিন সে পরিস্থিতিকে নিজের আয়ত্তে আনতে চেয়েছিল………। তবে তার মা’টা ছিল একদম বিপরীত…। তার ভয়ে প্যারেন্ট’স ডেতে ব্যাচের সব ছেলেরা কোথায় গিয়ে যে পালাবে তার যায়গা পেত না!!!!!! এখন সেও বহাল তবিয়তে আর্মিতেই আছে……। ঢাকা ভার্সিটি’র লোভনীয় রেজাল্টও তার আর্মিতে আসার অদম্য ইচ্ছাকে থামাতে পারেনি!!!!!!……………………………………।
হামীম ছিল অনেক আগেই বড় হয়ে যাওয়া একটি বালক (যুবক??) ………… আমার ব্যাক্তিগত ধারনা যে বয়স কমিয়ে সে কলেজে ঢুকেছিল……। কলেজ জীবনের শুরুতে সে যেসব গুনাবলী প্রদর্শন করেছিল, তা খুব সহজেই প্রথাগত ছেলে পটানো, জোচ্চোর, বেশি বোঝা, ভিলেনমার্কা বড় ভাইদের চরিত্রের সাথে হুবহু মিলে যায়……। তবে এক সাব্বির বাদে সহপাঠী অন্য কারোর সঙ্গে তার কোন অসুবিধা ছিল না………, তার জগতের সমস্ত অসুবিধা আবর্তিত হোতো সিনিয়ারদেরকে ঘিরে……। বর্তমানে সে নাকি রাশিয়ায় ডাক্তারি পরছে!!!! মাঝখানে একবার দেশ এসেছিল…… এবং আমার নিকত হইতে দুইশত টাকাও লইয়া গেছে………। মাঝে মাঝে খারাপ লাগে এই ভেবে যে, রাশিয়ানরা হয়তোবা বাংলাদেশীদের সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারনা পাচ্ছে………
ক্লাস সেভেনের প্রথম দিনে দ্বিতীয় যে ছেলেটির সাথে আমার পরিচয় হয় তার নাম মাহমুদুল । একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে রুমে ঢুকেই বেশ সাবলীল ভঙ্গিতে নিজের নাম বলল । একটুপড়ে আরও খানিকটা আত্মবিশ্বাসের সাথে জানালো যে, তার বাড়ি নাকি ”ন্যাত্রকোনা”……… পরবর্তীতে তার এই উচ্চারণভঙ্গিটাই ক্লাস নাইন পর্যন্ত টিজ খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ যুগিয়েছে……… তবে সবচে বিস্মিত হয়েছিলাম সেদিন, যেদিন দেখলাম এই একরত্তি মাহমুদুল লম্বা লম্বা পা ফেলে দৌড়বিদ হয়ে গিয়ে অ্যাথলেটিক্স খেলে ফেলল……… সেভেনে কোন জিনিষটা নিয়া তার সাথে আমার মারামারি হয় নাই??? …… এখন সে সামরিক বাহিনীর মিশনে বিলাতে আছে…… সামরিক বাহিনীতে গিয়ে এই ছোট ছেলেটা প্রেমও করে ফেলল……… তবে জীবন তার সামনেও একদম পরিকল্পনামাফিকভাবে উপস্থিত হয়নি……… হ্যা ঠিকই ধরেছেন…, দাগাটা নারীই দিয়েছে……………।
এবারে প্রথম ছেলেটির গল্প বলি……… ক্লাস সেভেনে আমার প্রথম পরিচয় হয় মঈনের সাথে । কি অমায়িক ছিল তার ব্যাবহার!!!! প্রথম দিনেই স্বভাবমতো আমি একটা সুঁই চেয়েছিলাম…… ঈষৎ হেসে মঈন বলেছিল, ” তায় নিবি না?? আরে তাইলে রুমমেট কি জইন্যে???” …… আপনারাই বলেন এমন নিঃস্বার্থও কী মানুষ হয়??? বাস্তবিকই হয় না, আর তাই ক্লাস টুয়েলভের শেষ দিন পর্যন্তও, মঈন জীন না মানুষ এই নিয়ে মতভেদ ছিল………… । ……… আজকে মঈন আমাদের মাঝে থেকেও নেই…… শুনেছি, কয়দিন আগে নাকি আশিকের তার সাথে শেষবারের মতো দেখা হয়েছিল………………
ব্যাচের সবচে নির্ভেজাল ছেলেটি হচ্ছে তৌহিদ…। অবশ্যি শুরুতে কিন্তু এটা মনে হয়নি আমার । আমার কি দোষ?? কলেজ জীবনের প্রথম রাতেই কেউ যদি টারজান এক্সে’র গল্প শোণায়, তবে তাকে আর যাই হোক অন্তত নির্ভেজাল ভাবাটা সমীচিন হয় না……। এখন সে IUT তে …… সবসময় দেখা হয় না, কিন্তু এটুকু জানি যে নানা প্রতিকূলতা পেড়িয়েও ব্যাচের জন্যে যে কোন কিছু করতে সে প্রস্তুত । স্বার্থহীন নির্ভেজাল মানুষেরা বোধয় এমনি হয়………
ব্রিলিয়ান্ট কিন্তু বাচ্চাদের ন্যায় নির্বোধ একটা ছেলে ছিল ইনাম । ঘুমের মধ্যেও পড়া ও পা নাড়ানো ছিল তার কাছে শ্বাসপ্রশ্বাসের মতোই সাবলীল ……। আর প্রেপ গার্ড ধরলেই মুখস্থ বলে বসত, ” ঘুমাইনি তো ভাইয়া” । তার জীবনটা রাবণরুপী তুষার বিষাক্ত করে তুলেছিল । ত্রাণকর্তার রূপে রামের ভূমিকায় মাঝে মাঝে মোরশেদও আবির্ভূত হোতো ………। খারাপ ছিল না দিনগুলি………… তারপরও ক্লাস এইটের কোন একদিন সে ছুটি গিয়ে আর ফিরে এল না । আজ দশ বছর পরের ইনামকে সেই ছোট ইনামের সাথে একদমই মেলান যায় না । মেডিক্যালে পড়া এবং উপুরযুপরি জিম করা এই ইনামকে বোধ করি আর কোন রাবণেরাই এসে জ্বালাতন করার প্রয়োজন বোধ করে না………।
সহ্যশক্তির কোন চরম উদাহরণ দিতে গেলে আমি মোরশেদের কথা বলি……… সকলের অগাধ গালিগালাজ ও টিজ সহ্য করেও সে যেভাবে অন্যদের জ্বালাতন করতো, তার উদাহরণ আমার জানা মতে এই মাটির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই………। জীবনের পীড়াদায়ক নিয়মে সংসারের দায়িত্ব নিয়ে সামরিক বাহিনীতে চাকরী করা, আজকের মোরশেদের হয়তোবা আমাদের সাথে এতোটা মাখামাখি আর নেই………………, কিন্তু জেনো, এক সময় কোন স্টাফের সাথে ব্যাচের গ্যাঞ্জাম হলে কিংবা অ্যাথলেটিক্সের দৌড়ে হাউস কিছুটা পিছিয়ে পড়লে, তখন এই মোরশেদেরও মাথাটা কিছুমাত্র কম গরম হোতো না……
সবসময়ই খ্যাতির পেছনে ছোটা ছেলেটির নাম তুষার………… কলেজে থাকতে খ্যাতির দেখা সে কিছুটা পেয়েওছিল । কিন্তু দশ বছর পড়ের পৃথিবীতে আজ তুষারকে ছারা কোন গেট টুগেদারই পূর্ণতা পায় না…… ব্যাচের জন্যে জীবন দিয়ে দেয়া ছেলেটার ব্যাচের কাছ থেকে চাওয়ার পরিমাণও অনেক……। সবসময় ব্যাচ তাকে তা দিতে সমর্থ হয় না কিংবা দিতে গিয়ে হিমশিম খায়……। তাই বলে ব্যাচের উপর বারংবার রাগ করেও আবার পূর্ণ শক্তিতে ফিরে আসে সে আমাদেরই মাঝে……………… কি চমৎকার ব্যাপার, তাই না??? …… আসলে শেকড়ের টান কি কখনো ”নারী” আটকে দিতে পারে???? …… এতই সহজ??????
আমার দেখা ব্যাচের সবচে উদাসীন ও নির্লিপ্ত ছেলে আশিক……… অসংখ্য যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যে কোন মানুষ এই পরিমান উদাসীন হতে পারে, তা আশিককে না দেখলে আমার কখনোই বিশ্বাস হোতো না…… কলেজ জীবনে সিরিয়াস সে কখনোই হতে পারেনি……… এখন বাস্তবতা হয়তোবা তাকে অনেক চেষ্টা করায়……, কিন্তু তাও পারে না । “আশিক” তুই কখনোই সিরিয়াস হোসনে ……… ক্লাস টুয়েলভের সবাই সিরিয়াস হয়ে গেলে পরিবেশটা হয়তোবা সহ্যসীমার ভিতরে থাকবে না…………।
ব্যাচে প্রথম যার কাছে থাপ্পড় খেয়েছিলাম, তিনি নিলায়…… অপরাধঃ তার ফুলদানীটি স্পর্শ করা…। আমার আসলে তখনি বোঝা উচিৎ ছিল যে এই ছেলেটা সবসময়ই স্রোতের বিপরীতে হাঁটবে…… এখনো হাঁটছেন । তিনি ডাক্তার হতে পারবেন কিনা এই গ্যারান্টি দিতে পারছি না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত । কেননা স্রোতের বিপরীতে যারা হাঁটেন, তাদের গল্পটা আমাদের কল্পনাশক্তিতে আসে না…। …… তবে ‘নিলায়’ তুমি ডাক্তার হতে পার বা না পার, তাতে আমার কিছু এসে যায় না…, আমি চিরটাকাল তোমার জন্যেই অপেক্ষা করবো…। :p
সাব্বির ছেলেটার ইতিহাস আসলে বরাবরের মতোই ব্যর্থতার ইতিহাস । একমাত্র দস্যিপনায়ই সে কখনোই ব্যর্থ হয়নি…। সে যেদিন কলেজ থেকে চলে যায়, সেদিন আমি তাকে আলাদা করে নিয়ে খুব ইমোশনালভাবে জিগ্যেস করেছিলাম, “যে সাব্বির তুই চলে যাচ্ছিস কেন??” সে কষ্ট করে একটুখানি হাসি ফুটিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলেছিল যে কলেজে নাকি তার ভাল লাগে না………। তিন বছর পার করার পর কোন ছেলের কলেজ ভাল না লাগার কোন কারন নেই । যাওয়ার আগেও সে আমাকে তার চলে যাওয়ার কারণটি বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিল । কলেজ থেকে বের হবার পর কোন একদিন সে টিএসসি’তে এসেছিল… তখন সে নটরডেমে ছিল । আমার কাছ থেকে কিভাবে ISSB’ তে টেকা যায় সে ব্যাপারে কিছু টিপসও সে নিয়েছিল……না আর্মিতে সে আসেনি…… আজ দশ বছর পর সে আবার নিখোঁজ……………
কলেজে একটা ছেলে সবকিছুতেই খুব অবাক হোতো…… স্যারদের পিটুনি খেয়ে ঠিক যে পরিমান অবাক হোতো, স্যারদেরকে ‘বিট’ দিয়েও ঠিক একই পরিমান সে অবাক হোতো… আজকের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাজহারকে অসংখ্য আকাঙ্খায় পরিপূর্ণ এই লোভী বাস্তবতা কিছুতেই আর অবাক হতে দেয় না……… কলেজ জীবনের চাইতে অনেক বেশি পরিপক্ব এই মাজহারের সাথে আমার বেশ কিছুদিন আগেই দেখা হয়…… ভাবীর সাথে দেখা করতে সে রংপুর এসেছিল…… বন্ধুবৎসল ছেলেটি আমার জন্যেও একজন ‘সঙ্গিনী’ খুজে দিতে চেয়েছিল……… সত্যিই দশ বছর আসলেই অনেক দীর্ঘ সময়!!!!……… এখানে পরিবর্তনের ঠাই পাওয়া মুশকিল………………।
ক্লাস সেভেনের শেষ দিক থেকে একটা ছেলের সাথে আমার মাত্রাতিরিক্ত সখ্যতা ছিল……, মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয় । তাই ধীরে ধীরে আমিই বদলে গেলাম । সে আগের মতোই ছিল……… এবং এখন মেডিকেল পড়ুয়া অবস্থায়ও এক ছটাকও বদলায়নি । অমানুষিক ধরনের বাস্তববাদী এই জামান ছেলেটা । ……… জীবন বিষয়ক ফালতু ভাবনা এদের মাথায় আসে না……….. “কল্পনা” এদের জন্যে এক নিষিদ্ধ জগত………। সামাজিকতাকে এরা শরীরে অলংকারের মতো ধারন করে, তাই একাকিত্তের শিকারে পরিনত হয়ে গভীর রাতে, কোন এক অদ্ভুত সময়কে ফিরে পাবার জন্যে এদের মন কাদে না………। সময়ের সাথে এগিয়ে যাওয়াই এদের একমাত্র আরাধনা । এরকম মানুষেরও প্রয়োজন আছে………।……………………ব্যাচে এদের মতো কেউ না থাকলে আমরা সত্যিকারের গর্ব করার মতো কাউকে খুজে পেতাম না………………
আমাদের ব্যাচের সবচাইতে স্বনিয়ন্ত্রিত ব্যাক্তিটি ছিল ইকবাল………। নিজের উপর তার নিয়ন্ত্রনের জন্যে আমি তাকে ব্যাক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা করি…………। আমরা সবাইই ইকবালকে ভয় পেতাম…… আর ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণও ছিল……। এমনকি দুঃসাহসী ও অকুতোভয় লাইমুনেরও ইকবালের সামনে এসে পানি ভেঙে যেতো…………। কিন্তু বাস্তবিকভাবে ইকবাল কখনোই মাত্রা ছাড়িয়ে যায় নি…… সীমার ভেতরে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করেছে অসংখ্যবার । ইকবালের মতো একটি শক্তিশালী শরীর আপনার থাকলে আপনি কি করতেন???????? আমি নিশ্চিত স্বায়ত্তশাসন চালাতাম……… দশটি বছর তাকে আরও নিয়ন্ত্রিত করেছে……… এখন সে প্রতি গেট টুগেদারে এসে শুধুই মিটমিট হাসে……………।
কলেজে লাইমুন ছিল একজন অপরিপক্ব ও হুজুগে কাজ করা মানুষের চরম উদাহরণ । ছেলে পটিয়ে বয়কট হওয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার
হলে খাতা ছেড়া পর্যন্ত মোটামুটি সবই করেছে সে…………। বাচ্চা বয়সের পর থেকে, কোন এক অদ্ভুত কারনে, বর্তমানে ঢাকা ভার্সিটি’তে অধ্যয়নরত লাইমুনের আর কোন মানসিক বৃদ্ধি ঘটেনি……… দশ বছরেও না । পার্থক্য হয়েছে কেবল এটুকুই, আগে সে হয়তোবা ”খেলনা” জমাত…… এখন সে ”মেয়ে” জমায়…………………………
মিনমিনে শয়তান বলতে একটা ব্যাপার আছে……। বই পুস্তকে পরিয়াছিলাম……। বাস্তবে আমি নূরকে দেখিলাম । কলেজের শুরুর দিকে সে পারতপক্ষে কথাই বলত না । ক্লাস সেভেনে একটি কথা,অতঃপর ক্লাস এইটে দুইটি কথা…… বেশ এই নীতিতেই সে দিন কাটাচ্ছিল ……… এরপর হটাৎ একদিন কি যে হল কে জানে?? …… সমগ্র পৃথিবীর সমস্ত কথার বাঁধ ভেঙ্গে পড়লো………… । এর থেকে বুঝেছিলাম যে আসলে কোন জায়গায় অভ্যস্ত হতে নূরের অনেকটা সময় লাগে…… আজকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী নূরের ফেসবুকে দুই একটি কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগের মাত্রা দেখে আমার ভাবতে ভাল লাগে যে সেও বদলায়নি । শুধু বাইরের পৃথিবীতে অভ্যস্থ হওয়ার জন্য একটু নূরসুলভ সময় নিচ্ছে…… আমরা অপেক্ষায় আছি যে, কবে সময় শেষ হবে…… নূর আবার পাগল হবে!!!!!!!!!!!
মুকিতের ব্যাপারে ঠিক কি বলব বুঝতে পারছি না……। কলেজে ভলিবল মাঠে ও ইন্টারমিডিয়েটে তার মেধার ঝলক আমরা দেখেছি………… সহিংসতাটা তার সবচাইতে বেশি ছিল মোহাম্মদের সাথেই । অন্তত আমার দেখা মতে……… । এখন সেও IUT’তে আছে………নিয়মিত না হলেও যোগাযোগটা সে কখনোই বিচ্ছিন্ন করে নি…………
তখন ক্লাস এইটের শেষের দিককার কথা………। শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল ছিলাম । মারপিটে কেবলমাত্র রিয়াদ ছেলেটার সাথেই পারতাম……। রিয়াদকে পিটিয়ে পৈশাচিক আনন্দ আছে………। এ ব্যাপারে হয়তো ইকবালও আমার সাথে একমত হবে……। রিয়াদ ছেলেটার নিশ্চয়ই কোন মানসিক সমস্যা ছিল……। নাইলে আজ দশ বছর পরে এসে চিন্তা করলে, আমি ঐ সময়ে রিয়াদ ছেলেটার এতোটা মার সহ্য করেও বন্ধু হয়ে যাবার আর কোন গ্রহণযোগ্য কারন খুজে পাই না…………। সেও এখন সামরিক বাহিনীর একজন অন্যতম ক্ষ্যাপা অফিসার……। তবে ইদানীং শুনেছি যে, একাকীত্ব নাকি তাকেও চেপে ধরেছে…………..। ফেসবুকে প্রায়ই কোন অপরিচিত ”নারী”কে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে অথবা চ্যাট করতে গিয়ে বন্ধুমহলে নিয়মিত ধরা খান বলে কথিত আছে……। দুর্নীতিবাজ পিতার রিকোয়েস্টে কোন দিন যে বিয়ে থা করে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, এখন এই ভয়েই থাকি……………………………………।
বর্তমান সমাজে ‘পার্ডি বয়’ বলে পরিচিত মোহাম্মদ তার পিতার সাথে যুদ্ধ করে এখনো বহাল তবিয়তেই আছে…… এতোটা জাঁদরেল বাপ থাকা সত্ত্বেও, পার্টি তার কোনটাই মিস নাই……। মাঝখানে একজনের সাথে দুর্দান্ত ঝামেলায় গিয়েছিলেন, তবে তা মিটেও গিয়েছে……। কলেজেও সকল ধরনের যোগ্যতাই তার ছিল, খালি অধ্যবসায় ব্যতীত…… । ফলাফল ”অ্যাসিস্ট্যান্ট হাউস প্রিফেক্ট” ………… এখন নাকি সে ল’ পাস দিয়ে উকিল বাবু হবে!!!!! ………… ২৫ বকক মোহাম্মদকে উকিল হিসেবে দেখার জন্যেও অপেক্ষা করে আছে……………………………।
আবু রায়হানের কথা আগেই বলেছি…………। অবসরে জীবনের মানে খোজা যার হবি ছিল…………। কলেজে থাকতেই জেনেছিলাম যে জীবনের মতো বৃহৎ বিষয় আসলে আবু রায়হানকে টানে না……, এই জীবন বিষয়ক চিন্তার মূলে থাকে আসলে কোন এক ক্ষুদ্র কাল্পনিক নারীর অতিকাল্পনিক প্রেমের আলট্রাকাল্পনিক বিরহ!!!!!!!!!!! শেষবার তাকে টিএসসিতে একটা মেয়েকে নিয়ে আসতে দেখেছিলাম……… বন্ধু ছিলরে ভাই, তোরা কেউ আবার অন্য কোন মিনিংয়ে নিস না……। ………………………………… এরপর একবার ফোনে কথা হওয়া ছারা আর কোনই যোগাযোগ নেই…………………………।
ব্যাচের অঘোষিত (স্বঘোষিত???) কলেজ প্রিফেক্ট ছিল তাহমীদ । আমরা যখন সবাই সাধারন মানুষের কাতারে ছিলাম, সেই সময়েও তাহমীদের জনরা(Genre) ছিল রক মিউজিক!!!!……………এবং তা নিয়ে তার লাফালাফিরও কোন প্রকার কমতি ছিল না………। তার এই লাফালাফির জন্যেই হোক আর তাহমীদের সাথে সম্পর্কের কারনেই হোক, ব্যাচের কিছু ছেলে পরবর্তী জীবনে আর কখনোই এই রক মিউজিককে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি…… আজো ব্ল্যাকের মতো ব্যান্ড তাদের কাছে কোন দাম পায় না………। এই সময়ে প্রায়ই, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অভিপ্রায়ে নিজের ব্যাস্ততাসর্বস্ব করুন জীবনের চিত্র তুলে ধরে অধিকাংশ গেট টুগেদার থেকেই ছুটি নেয় তাহমীদ………………। কে জানে, গেট টুগেদারগুলোতে রক মিউজিক বাজালে হয়তো এমনটি হোতো না……………
আমার দৃষ্টিতে ব্যাচের সবচাইতে অসাধারন প্রতিভাবান ছেলেটি হচ্ছে সাকিব……… একদিকে সঙ্গীতে যেমন, তিনি ছিলেন তানসেন!!!, তেমনি বিজ্ঞানে ছিলেন আইনস্টাইন…… আর সাহিত্যের ব্যাপারে অন্যকিছুর সঙ্গে তুলনা দেয়ার কোন প্রয়োজন দেখছি না………। এই অসাধারন মানুষটিকেই যখন বাইরে এসে দেখি একটি অতিসাধারন নারীর খপ্পরে পরে সাধারন মানুষের ন্যায় আচরণ করতে, তখন কোথায় জানি হিসেব মেলে না………। সাম্প্রতিককালে বেশ জোর গলায়ই তিনি নিজেকে অবিশ্বাসী বলে দাবী করেন……। এটা হয়তোবা নতুন কোন ট্রেনজ অথবা ”আর্কি”তে রেপুটেশন বাড়াতে গেলে হয়তো এমনটি বলতে হয়………………… অকেশন্যালি তার সাথে আমাদের দেখা হয়………………………
কলেজে রাফাত ছেলেটাকে যতবার দেখেছি, এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই দেখেছি ঘুমানো অবস্থায়……। ঘুম এবং চুল বড় রাখা ছারা অন্য কোন
কিছুতে এই ছেলেটার উৎসাহ আছে বলে আমার জানা ছিল না । ছেলেটাকে কলেজ জীবনে বড়ই নিরামিষ বোধ করতাম । যারা তাকে চেনেনা, তারা অনেকেই বোধ হয় আমার সাথে একমত হবে……। পরবর্তীতে চাকরী জীবনে তার সাথে রুমমেট থাকাকালীন সময়টি, আমার এই ধারনাকে বদলে দেয় । না, সে নিরামিষ নয় । গভীররাতে সমবয়সী বিবিধ বীপরিত লিঙ্গের প্রানীদের সাথে তার আলাপচারিতা অন্তত এর প্রমান দেয়………। কিছুমাত্র আমিষ তার ভেতরেও আছে । আমার চাইতে বেশিই আছে………………এবং কলেজের জন্যে তার মনও কোন অংশে কম কাঁদে না ।
বাংলা ফনেটিক্সের জনক বুলবুল ছিল সবসময়ই একটু আলাদা ধরনের……। এমনিতে নির্ভেজাল, কিন্তু মাঝে মাঝেই দেখা যেতো গেমসের সময়ে মামুনের উপর কোন তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে রাগ করে এক্সট্রা-ইমোশনাল হয়ে একাকী ঘুরে বেড়াচ্ছে । ………… মনে পরে কলেজে একবার কোন এক টেস্ট পরীক্ষার সময় সে তার বিখ্যাত ”উ” সাউন্ড দিয়ে পুরো হল ধসিয়ে দিয়েছিলো……… তার সাথে যোগাযোগ আমাদের এখনো আছে…… তবে অপেক্ষাকৃতভাবে শে বা হাউসের একটু বেশিই আছে…………
বেঁটেখাটো মামুনের মুখে সবসময়েই হাসি লেগে থাকতো……………। ক্লাসমেট ফিলিংসের তার কোন অভাব ছিল না…। ক্লাস টুয়েলভে হয়তোবা একটু ভাঁটা পরেছিল, তবে তাও আমরা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছি………। এই ছেলেটা নাকি এখন বিলাতে প্লেন বানানো শিখছে……। বি ফর্ম থেকে সে যখন এ ফর্মে প্লেন উড়াতে আসতো, এটা আসলে আমাদের তখনি ধারনা করা উচিৎ ছিল………। “বামুন” ভাই এত দিনে কি তুমি একটিও প্লেন বানাতে পারনি??, যেটায় করে তুমি একবার দেশে আসতে পারতে????????????
এ ফর্মের অনেকগুলো মহাজাগতিক সত্যের মধ্যে একটি হল, শাহরুখের কান্নাকাটি………। কেউ টিজ করলে তো বাদই দিলাম, এমনকি ”মা”কে নিয়ে খারাপ কথা বলার মতো নরমাল ঘটনায়ও সে কান্নাকাটি করে পুরো ফর্ম মাথায় তুলত …। অথবা যেটাই করতো সেটাই অন্তত কান্নাকাটির মতো শুনাত………। সেও এখন ডাক্তার হওয়ার পথে…। আমার অভিজ্ঞতা নাই, কিন্তু শুনেছি বাইরের ” রিয়েল লাইফ” নাকি খুবই কঠিন……………। আমরা না হয় মেনেই নিতাম, কিন্তু এখানেও কি তোর কান্নাকাটিতে কোন কাজ হয় বন্ধু??????
আমিন ছেলেটা শুধুই ব্রিলিয়ান্ট ছিল না, সাথে অন্যকিছুও ছিল । ক্লাস সেভেনের শেষের দিকে এই ছেলেটা আমার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছিলো………,হায় তখন যদি জানতাম যে একসময় এই ছেলেটারই ডিমান্ড এমন বেড়ে যাবে, তাহলে হয়তো আমিও পাল্টা নজর দিতাম :পি ……… নিশ্চিত ডাক্তারদের মধ্যে এও একজন । কলেজ থেকে বের হবার পর তার সাথে আমার আর দেখা হয়নি…… তবে ফেবু’র কল্যাণে যোগাযোগ আছে । মনে মনে ঠিক করে রেখেছি, যদি নিলায়, মশি দুজনেই ঝরে যায় তবে গোপন অসুখটা দেখাতে তোর কাছেই আসব…………… :পি ।
মেধাবী ছাত্র শাহীন বাস্তবিকই “মেধাবী” ছিলেন……। কথাটা তার একটু “আনঅর্থোডক্স” শুনালেও ঠিক ঠিক তিনি ক্যালকুলাসসুদ্ধ মুখস্থ করে ফেলতেন…………। সম্পূর্ণ একটি অপ্রীতিকর ঘটনায় তিনি তার টিজ নামটা অর্জন করেন । ………… তিনি ”জাবি”তে আছেন । আজকের পৃথিবীর ভয়ংকর রাজনৈতিক নেতা রাজীবের যখন ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ানোর লোমহর্ষক কাহিনী শুনি, তখন অবাক হই । ভালও লাগে, তবে অবাক হবার পরিমাণটাই বেশি থাকে…………… নিজেকে প্রবোধ দেই, আসলে পরিবর্তনকে সবসময়ই স্বাগতম জানানো উচিৎ……………
সম্ভবত ব্যাচের শেষ ক্যাডেট হওয়ার কারনেই সামীন সবসময়ই একটু বেশি রাগী…………। এত বছর পরেও রাগটা তার তেমনি আছে…। ভাল কথা পারতপক্ষে তার মুখ থেকে বোধ করি দু একটা বের হয় । বাকি সবই অকথ্য ও অশালীন বর্বরোচিত ভাষা । সামরিক বাহিনীর জাঁদরেল অফিসার সামীনের নিচে চাকরী করা সমস্ত সৈন্য সামন্ত সর্বদা তার ভয়ে টতস্ত থাকে…………… এত গালিগালাজের মাঝেও ব্যাচের খবর তিনি ঠিকই রাখেন…………………।
সবার কথা ভাবতে ভাবতেই আবার ক্যাডেট কলেজের কথা ভাবি……… চিন্তা করে বের করার চেষ্টা করি যে, বিগত জীবনে আমি কী এমন ভাল কাজ করেছিলাম, যার কারনে স্রস্টা আমাকে ক্যাডেট কলেজে জন্ম দিলেন??? বের করতে পারলে সেটা আবারও করার ইচ্ছা আছে…………। কলেজে থাকতে এই দশ বছর পরের বর্তমানরুপী ভবিষ্যতটার কথা কখনোই ভাবিনি……। তাই এখন হিসেব মিলাই……। আমার ক্ষেত্রে পার্থক্য খুব একটা হয়নি…, কলেজে থাকতে তোদের জ্বালায় বাপ-মা’র কথা মনেই পড়তো না, এখনকার দুনিয়ায়ও তোদের বিরহে বাপ-মা’র কথা খুব একটা মনে পরে না…… কলেজে থাকতে আমারা একে অন্যের জন্য কি না করতে পারতাম???……… এই কিছু করার ইচ্ছেটা আরও বেড়েছে…, অনেকের হয়তোবা কমেছেও………………………………… তবে এটুকু নিশ্চিত জানি যে, আগামী আরও ১০ বছর পর যখন পা ঠুকে প্রচণ্ড শব্দ করে সামরিক বাহিনীর এই চাকরীটাকে একটা যুতসই স্যালুট দিয়ে চলে আসব, তখন হয়তোবা আর কিছু না করতে পারলেও আমাকে শাহবাগের মোরের যাদুঘরটার সামনে একটা টিনের থালা নিয়ে দাড়াতে হবে না…………………………………………………।
লেখাটা ভাল হইছে...... তবে আরেকটা লেখা পরছিলাম ''বিশ বছর পর'' নামে...... লেখক মনে হয় ওইটা দেইখাই অনুপ্রানিত??? হইছে্...... 😀
লেখককে আমাদের মাঝে পেয়ে খুব ভালো লাগলো, কিন্তু লেখক থাকতে আমার পোষ্টে কেন পোষ্ট হবে,
যাহীন তোমার আইডি থেকে ব্লগটা পোষ্ট করতেসোনা কেন ??
:clap: :clap: :clap:
:boss: :boss: :boss: (সম্পাদিত)
লেখা ভালো হইছে, কিন্তু ২৫তম বকক ছাড়া আর কারো পক্ষে এই লেখার সম্পূণ স্বাদ আস্বাদন সম্ভব না।
যাহীন, সিসিবি তে স্বাগতম!
নাজ ভাই অসুবিধা নাই............ তুমি যেহেতু করে ফেলস...... তাই তোমার আইডিতেই থাক... 🙂
লেখা খুব ভাল হইছে।
তোদের ব্যাচে অনেক ডাক্তার দেখে ভাল লাগলো।
কিন্তু নাজমুল আর কতো???
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাইয়া আর কত ???
কোন ব্যাপারে বুঝলামনা 😀
একটু অগোছালো লেখা, কিন্তু আবেগটা টের পেলাম ১১০%
খুব ভাল হয়েছে... :clap: :thumbup:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
এই লেখাটায় একটা ভেজাল আছে; নাইলে কোনভাবেই লুমজান হাসানের নামে এত ভালো কথা আসে কেমনে!!! :grr:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
পোষ্টতো আমার আইডি থেকে আসছে, হালকা এডিট করার পারমিশন ছিল, সেটাই কাজে লাগাইসি 😀
আরে না রকিব ভাই............... ইহাই সত্য!!! লুমজান ছেলেটা দুষ্টু হইলেও নীতিবান!!! 😉
:boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss:
ভাল হইসে রে ভাই। এটা পরছিলাম র একে একে আমার চোখের সাম্নে কেডেট নামবার অনুজায়ী সবার চেহারা র চরিত্র ভেশে উঠছিলো। আহহহহহ.।
ক্লাস সেভেনের প্রথম দিনে দ্বিতীয় যে ছেলেটির সাথে আমার পরিচয় হয় তার নাম মাহমুদুল । একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে রুমে ঢুকেই বেশ সাবলীল ভঙ্গিতে নিজের নাম বলল । একটুপড়ে আরও খানিকটা আত্মবিশ্বাসের সাথে জানালো যে, তার বাড়ি নাকি ”ন্যাত্রকোনা”……… পরবর্তীতে তার এই উচ্চারণভঙ্গিটাই ক্লাস নাইন পর্যন্ত টিজ খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ যুগিয়েছে……… তবে সবচে বিস্মিত হয়েছিলাম সেদিন, যেদিন দেখলাম এই একরত্তি মাহমুদুল লম্বা লম্বা পা ফেলে দৌড়বিদ হয়ে গিয়ে অ্যাথলেটিক্স খেলে ফেলল……… সেভেনে কোন জিনিষটা নিয়া তার সাথে আমার মারামারি হয় নাই??? …… এখন সে সামরিক বাহিনীর মিশনে বিলাতে আছে…… সামরিক বাহিনীতে গিয়ে এই ছোট ছেলেটা প্রেমও করে ফেলল……… তবে জীবন তার সামনেও একদম পরিকল্পনামাফিকভাবে উপস্থিত হয়নি……… হ্যা ঠিকই ধরেছেন…, দাগাটা নারীই দিয়েছে……………।
পুলাডা মনে হয় আমার লগে মিশন করতাছে.........
লেখার জন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না । এর জন্যে পোস্টকারীই দায়ী স্যার । 😀
আপাতত মাহমুদুল কে :frontroll:
ওরে আমি লিংক দেয়ার পরও এইটা পড়ছে বলে মনে হয়না।