বাংলাদেশের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। ওই সময় আমাদের সংসদে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স এন্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট’ পাস হয়। সেই আইন অনুযায়ী সরকার বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ঘোষণা করে। এই সীমারেখা ভারত ও মিয়ানমারকে জানিয়ে দিলে তারা সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ জানায়। একই সঙ্গে তারা এই সীমানা মানতে অস্বীকার করে। তারা সেই সময় জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ যথাযথ পন্থায় তার সীমানা নির্ধারণ করেনি। এরপর থেকেই বঙ্গোপসাগরের এই বিরাট অংশ বিরোধপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে টিকে রয়েছে। বিরোধ মীমাংসার জন্য বাংলাদেশ গত ৩৮ বছরে এই দুই দেশের সঙ্গে অসংখ্যবার আলাপ-আলোচনা করেছে কিন্তু কোনো অগ্রগতি ঘটেনি। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হয়েছে তিনটি দেশকেই।
ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান খুব একটা সুবিধাজনক নয়। তার ওপর বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকাংশেই সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বিরোধ থাকার কারণে বাংলাদেশ পুরোপুরি তার সমুদ্রসীমার অন্তর্গত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছে না। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত ‘Territorial Waters and Maritime Zones Act of ১৯৭৪’ অনেক আশা জাগালেও বস্তুত নীতিনির্ধারক মহলে উদাসীনতার দরুন বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমা ও সমুদ্র তলদেশে অবস্থিত নানা সম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়। এ কারণে দেখা যায় যে, দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে এরকম যুগান্তকারী আইন প্রণয়ন করলেও বাস্তবে এর তেমন কোনো প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি।
এ ছাড়াও রয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। ভৌগোলিক রাজনীতির কারণে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে। একদিকে ভারত-মার্কিন শক্তি অপর দিকে তাদের বিরোধী চীন-মিয়ানমার শক্তি এই এলাকায় তাদের শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। ভারত মহাসাগরের দিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। এখান থেকেই তারা এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে মিয়ানমারের অদূরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন করতে চাইছে। এ ছাড়াও জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য তারা মিয়ানমারের তেল-গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। তারা দেশটির তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই দুই মহাশক্তির রশি টানাটানি আমাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বেশ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা
সমুদ্রের সংবিধান বলে অভিহিত ১৯৮২ সালের ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি-এর আবির্ভাব বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। বাংলাদেশের সমুদ্র তলদেশ নানা রকম প্রাকৃতিক, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। আর এই কনভেনশন নিঃসনেদহে বাংলাদেশকে সুযোগ করে দিয়েছে এসব সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে অনেক গুণে।
বাংলাদেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে তেল ও গ্যাসসহ বিপুল পরিমাণ খনিজসম্পদ রয়েছে। কিন্তু এ সম্পদ আহরণের জন্য সমুদ্রসীমা নির্ধারণ প্রয়োজন। বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমার ‘সমদূরত্ব’কে ভিত্তি ধরে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের দাবি করে আসছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ‘ন্যায়ভিত্তিক নীতি’ অনুযায়ী এই সীমারেখা দাবি করে। ফলে সমুদ্রসীমা নিয়ে চলে আসছে অমীমাংসিত বিরোধ এবং গত ৩৮ বছরে আলোচনা করে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তিতে ২০০৯ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান নেয় বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর ইটলসে ১৬তম মামলা হিসেবে বাংলাদেশের মামলাটি অন্তর্ভুক্ত হয়।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষও অবশ্য ইটলসের রায় মেনে নিতে রাজি হয়ে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেয়।
ট্রাইব্যুনালে ২০১০ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ ও ১ ডিসেম্বর মিয়ানমার নিজের পক্ষে প্রথমবারের মতো নথিপত্র উপস্থাপন করে।
এরপর মিয়ানমারের যুক্তি খ-ন করে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ তাদের যুক্তি তুলে ধরে এবং মিয়ানমার গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশের যুক্তি খণ্ডন করে পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ৮-২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দফায় মৌখিক শুনানিতে অংশ নিয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।
জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত ইটলস গতকাল বুধবার এই রায় দিয়েছেন। জার্মানি থেকে পাঠানো বাংলাদেশ দূতাবাসের বার্তায় বলা হয়েছে, ২১-১ ভোটে স্বীকৃত এই ১৫১ পৃষ্ঠার রায় ইটলসের সভাপতি জোসে লুই জেসাস পড়ে শোনান। রায়ের মাধ্যমে তেল-গ্যাসসমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমানা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হলো। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দুই নিকট প্রতিবেশীর তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা বিরোধেরও নিষ্পত্তি হলো। সালিসি আদালতে দুই বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে সমুদ্রসীমা বিরোধের রায়টি দেওয়া হলো।
ট্রাইব্যুনালের এই রায় চূড়ান্ত। আপিল করা চলবে না।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের দাবি ছিল এক লাখ সাত হাজার বর্গকিলোমিটার, সেখানে আদালত এক লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ এখন বঙ্গোপসাগরের ওই এলাকায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কাজ করার প্রক্রিয়া শুরু করবে। পররাষ্ট্র দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ রায়ের ফলে বঙ্গোপসাগরে ৪৬০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপান এলাকায় বাংলাদেশের দাবি প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজিব ভাই বহুদিন আপনার লেখা পড়ি না। একটা লেখা নামান প্লীজ।
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
কয়েকটা লেখা অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে। দেখি।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভালো লেখা!!!
রমিত ভাই অনেক ধন্যবাদ।
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
মিয়ানমার এখন ঠিকমতন মেনে নিলে হয়...
গতকাল পর্যন্ত ওরা আমাদের এলাকা ছেড়ে যায় নি...
গভীর রাতে বাংলাদেশের ছয়টা যুদ্ধ জাহাজ গেছে...
দেখা যাক কি হয়...
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ