সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। অঝর ধারায়। ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না। একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙল মুঠোফোনের MSG Tone শোনার পর। চোখ বুজে মোবাইল টা হাতে নিলাম। নাম্বারটা পরিচিত । ০১৭৪১১৪….
“তুমি কি এখনও বৃষ্টি ভালোবাসো ?”
Msg-টা পড়ার পর থেকে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। কোথায় যেন হারিয়ে ফেললাম নিজেকে। আজকাল আমার আমি কেই চিনতে বড় কষ্ট হয়। মনের ক্যানভাসের সব রঙ যেন সেই ভালোবাসার বৃষ্টি ধুয়ে ফেলেছে। আমার জীবনটা ছিল আর পাঁচটা সাধারণ ছেলেদের মত। সকাল বেলা প্রাইভেট,তারপর স্কুল। মায়ের কাছ থেকে অতি ক্রন্দন এর পর ১০ টাকা হাত খরচ আদায় করা। আর সেই টাকাগুলো জমিয়ে একটা ক্রিকেট ব্যাট কেনা বা আমার প্রিয় খেলোয়াড়ের পোস্টার কেনাতে আমার সকল আনন্দ নিহিত ছিল । প্রায়শই স্কুল ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেট খেলা এবং পরে ক্লাস টিচার কর্তৃক ধোলাই খাওয়া আমার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। বিকেলে প্রতিদিন বন্ধুরা এক সাথে হতাম আমদের মফস্বলের মাঠে। ছোট্ট শহরটা দাপিয়ে বেড়াতে সঙ্গী ছিল আমার দ্বিচক্রযানটি।
সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে পড়তে বাসার পর ভয়ে থাকতাম কখন বাবার কথা শোনা যায়। মাকে তিনি ভাব বাচ্যে বলে যাবেন “ও কি পড়াশুনা করে? আমার তো মনে হয় না…।এখনও কি কচি খোকা আছে? সারাদিন শুধু খেলা আর খেলা………।” বাবার কথাগুলো আমার এক কান দিয়ে ঢুকত আর অন্য কান দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে যেত। আমি আমার ফাঁকিবাজির প্ল্যান করতে থাকতাম।
এই ফটিক জীবনের মাঝে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটল। না,আমার জীবনে বিশ্বম্ভর বাবুর আগমন ঘটেনি তবে অন্য আর একজনের আগমন ঘটেছিল।
তখন আমাদের স্কুলে ম্যাথ অলিম্পিয়াড চলছিলো। পরীক্ষার পরে দেখি বাবা এক ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছেন। উনি বাবার অফিসের বড়কর্তা। ভদ্রলোক তার মেয়েকে দেখিয়ে বললেন, আমার মেয়ে ত্রপা। এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। গভ. গার্লস স্কুলে পড়ে। এভাবেই তার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। পরিচয় ঠিক নয়, দূর দর্শন মাত্র।
আমাদের দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিল এসএসসি রেজাল্টের পর।আমার অপ্রত্যাশিত ভাল রেজাল্ট বাবা-মাকে একটু বেশিই আনন্দ দিয়েছিল। বাবা-মা একটা পারিবারিক ভোজনের আয়োজন করেছিল,আর সেখানে আমন্ত্রিত ছিল ওদের পরিবার। সেই দিনই প্রথম কথা হয়েছিল। ও আমার রুমে যখন ঢুকল,আমি কেন জানি হুড়মুড় করে চেয়ার থাকে উঠতে যেয়ে পা বেঁধে পড়ে গেলাম। আর এটা দেখে ওর সে কি হাসি…………। আমি খুবই লজ্জা পেলাম। কিছু বলার আগে ওই বলল, “কি হইছে?”
-কিছুই না।
আমার ভ্যাবাচ্যাকা ভাব দেখে ও আরও জোরে হাসতে লাগল। আর ঐ হাসিই আমার জীবনের নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করল।
আমি আর ও একই কলেজে ভর্তি হলাম। আমার সকল ভাবনায় এখন শুধুই সে। কিন্তু দূর থেকে আর কত? কী ভাবে তাকে বলা যায় সেটা ভাবছিলাম। নিজের রুমে নানান স্টাইল – এ অনেক প্র্যাকটিস ও করলাম। পরে বুঝলাম এইসব আমার দিয়ে যায়না। অবশেষে একদিন ওকে ডেকে বললাম, “তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।” এটা বলতেই ও আবার সেই হাসি দিল। আর আমি কিছুই বলতে পারলাম না। তবে সেই যাত্রায় ওই আমাকে উদ্ধার করেছিল। বলল ,“আমি জানি তুমি কি বলবে।” সেই থেকে আর কিছুই ওকে বলতে হয়নি। বলার আগেই ও সব বুঝে নিত। আমার সব কল্পনায় ও মনের মাধুরী মিশেয়ে রঙ তুলি দিয়ে ছবি আঁকিয়ে নিত।
ও আমার সাদাকালো জীবনে অনেকটা রং ছড়িয়ে দিয়েছিল। দু’জনে এক সাথে শিশির ভেজা ঘাসের উপর পা মাড়াতাম, কখনও বা শহর থেকে অদূরের ছোট্ট নদীর তীরে হাতে হাত রেখে স্বপ্ন বুনতাম। তবে সবচেয়ে মাজার ছিল পরিচিত লোকজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রিক্সায় ঘুরে বেড়ান। আমি বৃষ্টি খুব ভালবাসতাম। যখন বৃষ্টিতে দু’জনে অবগাহন করতাম তখন ওকে অপার্থিব সুন্দর লাগত। প্রথম প্রথম ও ভিজতে চাইত না। বাসাতে গেলে সমস্যা হবে এ জন্য। আমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হারিয়ে যেতাম কল্পনার স্বপ্নরাজ্যে।
HSC-এর পর আমি ভর্তি হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার এখন একটিই ভাবনা কি ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ান যায়। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য একটা স্কলারশিপ পেয়ে গেলাম। ওকে ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। কিন্তু ওই আমাকে বেশি প্রেরণা দিল। আর দেখতে দেখতে সময় কেটে যাচ্ছিল। নিয়মিত যোগাযোগ হত ওর সাথে। এর ই মাঝে একদিন ওর একটা পার্সেল পেলাম সাথে দুই লাইন এর একটি চিঠি। ওর একটি ছবি ছিল ওখানে, আমার স্বপ্নের নীল পরী বৃষ্টিতে ভিজছে। সে লিখেছিল, “তুমি না বৃষ্টি খুব ভালবাস? আমার ভালবাসার সব রঙ বৃষ্টির জলে মিশেয়ে তোমাকে দিলাম………………………………।”
তারপর থেকে ও আর আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। আমি শত চেষ্টা করেও কোন খবর পাইনি তার। চার বছর পর দেশে ফিরলাম। দেশে ফিরেই ওদের বাড়িতে ছুটে গেলাম। জানলাম ওরা আর ওখানে থাকে না। ওর বিয়ের পর ওর বাবা-মা এখান থেকে চলে গেছে। ওর বাবা-মার পীড়াপীড়িতে ওকে বিয়ে করতে হয়।
আজও আমি বৃষ্টিতে ভিজি। তবে আগের ভেজার মাঝে অনেক ভালোবাসা ছিল, অনেক স্বপ্ন ছিল। আর আজকে ভিজি বৃষ্টির জলের সাথে নিজের মনের ব্যথা গুলোকে মিশিয়ে দিয়ে মেঘেদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করার জন্য।
তানভীর 😮 😮 😮
ভালো ছিল দোস্ত।
প্রথম পোষ্টের জন্য অভিনন্দন।
অফটপিকঃ সব তানভীরেরই প্রিয় পছন্দ দেখি প্রেমের গল্প 😛
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
কড়াভাবে সহমত। সব তানভীর ই রকজ।
শুভ ব্লগিং তানভীর। দশটা ফ্রন্ট রোল পড়ে দিলেও হবে। আমিও এখনো দেই নাই। ১৭ টা ব্লগ লিখলাম। 😛 😛
দোস্ত ব্লগে প্রথম লেখা............।জানিনা কেমন হইসে ।
আর জানিস তো বাপ সাধকরে নাম্ রাখসে রোমিও :)) :)) :))
প্রেম এর গল্প না লিখে কই যাই ...। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
তানভীর আহমেদ
:)) :)) অসাধারণ লিখেছেন, লিখাটি আমার মন ছুঁয়ে দিলো, মনে করে দিলো আমার শৈশবের কথা।
প্রথম অংশটুকু ভাল লাগল। খুবই চমৎকার। সব মিলিয়ে, শেষের অংশটা একটু গুছিয়ে লিখলে আরও চমৎকার হত 🙂
ধন্যবাদ আপু। চেষ্টা করব। দোয়া রাখবেন। কষ্ট করে পড়েছেন এতেই খুশি 🙂 🙂 🙂
তানভীর আহমেদ
হ্যা রে, পড়তে খুব কষ্ট হইছে। দুইটা কোক আইনা দিস ক্যান্টিন থেকে।
আপু, এনে দিব। যদি আপনার ভউচার বুকটা একবার দিতেন তয় সুদে-আসলে পোষায় নিতাম :)) :)) :))
তানভীর আহমেদ
তানভীর দোস্ত ভাল লাগলো পড়ে।শেষের বাক্যটাতে অনেক আবেগ মেশানো। প্রেমবোধ জাগ্রত করার জন্য যথেষ্ট। 😛 😛
জহেব, দোস্ত তোকে এখানে পেয়ে ভাল লাগল। আমি যে তোর মত একজনের মনে প্রেমের অনুভূতি জাগ্রত করতে পারলাম এটা অনেক বড় পাওয়া।
তানভীর আহমেদ
লেখা খুব ভালু হইছে, প্রিয়তে নিলাম। আর শুভ ব্লগিং। :clap:
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুনে ভাল লাগল যে আপনার ভাল লেগেছে। দোয়া রাখবেন। (সম্পাদিত)
তানভীর আহমেদ
তোর প্রথম ব্লগ পড়ে তো তোদের ক্লাস সেভেনের কথা মনে পড়ে গেল। তোর ডাকনাম নিয়ে তো মনে পড়ে তোকে ভালই ক্ষ্যাপানো হত। 🙂 আসলেই ডর্ম ১২ এ কিছু স্মৃতিময় সময় পার করে আসছি তোদের সাথে।
হা হা হা............ হাসান ভাই, মজা পেলুম। আর ডরম ১২ এ আসলেই আমরা দারুণ একটা সময় পার করেছিলাম। খুব মিস করি সেই দিনগুলো।
তানভীর আহমেদ