হিস্টোলজির অ আ ক খ ( ত্বক)

বিজ্ঞান নিয়ে এটি আমার প্রথম লেখা। এনাটমি কিম্বা প্রাণরসায়ন নিয়ে হয়ত অনেকেই লিখছেন। তাই সেই দিকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি হিস্টোলজি নিয়ে লিখব,এবং সিরিজ আকারে। এক একটি পর্বে এক একটি তন্ত্র অথবা অঙ্গ তুলে ধরার চেষ্টা করব।

প্রথমেই ত্বক/চামড়া/স্কিন নিয়ে লিখব।

ল্যাটিন পরিভাষায় চামড়াকে বলা হয় ডের্মিস। আর ইংরেজি পরিভাষায় স্কিন। স্কিন মানবদেহের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। চামড়াকে মানবদেহের সবথেকে বড় একক অঙ্গ বলা হয়। সমস্ত মানবদেহের ১৫ থেকে ২০ ভাগ ওজন এই ত্বকের।
প্রথমে কাজ এবং পরে গঠন নিয়ে আলোচনা করব।

কাজ
১) রক্ষনাবেক্ষন ( protective)
অর্থাৎ মানবদেহকে একটি বেরিয়ার এর মধ্যে আবদ্ধ করা। অণুজীবের আক্রমন থেকে দেহকে রক্ষা করা। তাপ এবং আঘাত থেকে শরীর রক্ষা করা। ত্বকের মেলানিন অতিবেগুনি রশ্নিকে( ultra violet ray) প্রতিহত করে।
২) সেনসরি(sensory)
ত্বকে বিভিন্ন ধরনের রিসেপ্টরের উপস্থিতি ত্বকের সেনসরি ফাংশন পূর্ণ করে।
৩) তাপচক্র নিয়ন্ত্রন ( thermoregulatory )
থার্মো রেগুলিটরি ফাংশন।মানবদেহকে সর্বদা একটি নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় রাখতে সাহায্য করে। তাপ নির্গমনেও বড় ভূমিকা পালন করে।
৪) মেটাবলিক (metabolic)
ত্বকের কোষ ভিটামিন ডি৩(D) সংশ্লেষণ করে। যা কেলসিয়াম মেটাবলিজম এ একান্ত প্রয়োজন। বর্জ্য পদার্থ ঘাম আকারে বের করে দেয়।

এর পর গঠনের কথা। ত্বক মুলত মোট তিনটি উপাদানে গঠিত।
১) এপিডার্মিস( epidermis)
২) ডেরমিস(dermis)
৩) সাবকুটানিয়াস টিস্যু ( subcutaneous tissue)

এপি শব্দের মানে হল উপরে,অর্থাৎ ত্বকের সবথেকে বাইরের উপাদান কিম্বা লেয়ার(layer) । এই লেয়ার মূলত ডোরাকাটা এপিথিলিয়াম(epitheilum)দিয়ে গঠিত। একে
কেরাটিনসাইটস(keratinocytes) ও বলা হয়।

এছাড়াও আরও তিন ধরনের কোষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, এরা হল

ক) মেলানোসাইট ( melanocytes)
খ) লেঙ্গেরহেন্স কোষ/ ডেন্ড্রিটিক ( dendritic/lengerhans)
গ) মেরকেল কোষ / টেক্টাইল (tactile/merkel)

এপিডেরমিস আমাদের ত্বকের ঘনত্ব মাপতে সাহায্য করে, যেখানের এপিডেরমিস যত পুরু, সেখানের ত্বকও তত পুরু। এই জন্যই আমাদের হাতের তালুর ত্বক মোটা, আবার মুখের ত্বক খুব হালকা। এই হিসেবে ত্বককে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, পুরু এবং হালকা।
মেলোনোসাইট নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। আমাদের ত্বকের রঙ এই মেলনসাইটের উপর অনেখখানি নির্ভর করে। মেলানসাইট বাদামিয় কালো রঙের (brownish black )এক ধরনের পিগমেন্ট(pigment) তৈরি করে। সহজ ভাষায় বললে এই পিগমেন্ট যাদের বেশি ক্ষরণ(secretion) হয়,তাদের ত্বক তুলনামূলক ভাবে কালো হয়।
এছাড়াও রোদে থেকে ফিরলে আমাদের ত্বক তুলনামুলক কালো(tanning) দেখায় এর কারন হল
১) ফিজিওকেমিক্যাল(physiochemical) কিছু বিক্রিয়া ত্বকের মেলানিনকে কালো করে তোলে।

২) মেলানিন সংশ্লেষণ (melanin synthesis) প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়,এবং বাদামিয় কালো রঙের পিগমেন্ট ক্ষরণ বেড়ে যায়।
এরপর আসে ডেন্ডট্রিক( লেঙ্গেরহেন্স) কোষ এর কথা।এই কোষ গুলোর উৎপত্তি অথিমজ্জাতে। অণুজীব যখন মানবদেহে ঢুকতে চায়,তখন এই কোষগুলো আমাদের সতর্ক করে এবং রক্ষাকারী প্রতিক্রিয়া( immune response) উপস্থাপন করে।
মেরকেল কোষ(টেক্টাইল) প্রধানত মেকানোরিসেপ্টর( mechanoreseptor) কেউ যখন আমাদের ত্বক স্পর্শ করে আমরা এই কোষের মাধ্যমে সেই অনুভূতি পেয়ে থাকি। সেই সাথে তাপ,চাপ ইত্যাদি।


৩) ডেরমিস
ডেরমিস মূলত কানেক্টিভ টিস্যু(connective tissue) ।এই টিস্যু এপিডেরমিস কে চর্বি স্তরের সাথে লেগে থাকতে সাহায্য করে। ডেরমিসে মূলত দুইটি স্তর/ লেয়ার থাকে। এরা হল প্যাপিলারই লেয়ার(papillary layer) এবং রেটিকুলার লেয়ার (reticular layer) । প্যাপিলারই লেয়ার অনেক লুজ টিস্যু দ্বারা গঠিত। এবং তুলনামুলক কম ঘন। আর রেটিকুলার লেয়ার বেশ ঘন। অনিয়মিত ঘন টিস্যু দ্বারা এরা গঠিত। ডেরমিস নার্ভে সমৃদ্ধ। হরেক রকম নার্ভ রয়েছে এখানে।

৪) সাবকুটানিয়াস টিস্যু
লুজ কানেক্টিভ টিস্যু দ্বারা গঠিত। অন্য অঙ্গের সাথে এরা ত্বককে আটকাতে সাহায্য করে। এই লুজ টিস্যুর কারনেই আমরা আমাদের চামড়া নাড়াচারা করতে পারি( sliding of skin) ,অর্থাৎ অঙ্গের উপর থেকে স্লাইড করতে পারি। মাঝে মাঝে স্থান বিশেষে খুব ঘন চর্বির স্তর দেখা যায়।

এছাড়াও ত্বকের গ্রন্থিগুলো নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।

১) সেবাকিউস গ্রন্থি/ sebaceous glands
এখানে লিপিড প্রডিউসিং সেবসাইটস রয়েছে যার মূল প্রোডাক্ট হল সেবাম। সেবাম হল একটি কমপ্লেক্স মিশ্রন। যার মধ্যে রয়েছে এস্টার,কোলেস্টেরল,ট্রিগ্লিসারিড । এটি তৈলাক্ত লুব্রিকান্ট। মাথার চুলের গোঁড়ায়, মুখের ত্বকে যার উপস্থিতি খুব বেশি। বয়ঃসন্ধির সময়ে ক্ষরণ হয় খুব বেশি। সেবাম অণুজীবের গ্রোথ বা বৃদ্ধি বন্ধে সাহায্য করে।
অনেকদিন গোসল না করলে আমরা যে তৈলাক্ত ত্বক অনুভব করি, সেটি এই সেবাম ক্ষরণের কারনে।
চুল ছাড়াও সেবামের উপস্থিতি দেখা যায় যোনির ঠোটে,পুরুষাঙ্গে, নাকের দু পাশে,কিছু কিছু সময়ে চোখের পাতায়।

২) ঘাম গ্রন্থি ( সোএট গ্ল্যান্ড) / sweat gland
দু রকম পাওয়া যায় এক্রাইন এবং এপিক্রাইন।

ঘাম গ্রন্থি মূলত শরীরের বর্জ্য পদার্থ গুলো ঘাম আকারে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। আমাদের শরীর থেকে নিঃসৃত ঘাম মূলত গন্ধহীন। কিন্তু নিঃসরণের পর ব্যাকটেরিয়াল প্রভাবে ঘাম দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।

৩,১৪১ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “হিস্টোলজির অ আ ক খ ( ত্বক)”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    কিরে হামীম এইডা তুই কেমনে লিখলি 😕 😕
    সত্যি কইরা বল কই দিয়া ctrl+C, ctrl+V করছোস :grr: :grr:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  2. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ভাইডি মনে কিছু লইয়ো না। আমি বায়োলজি বাদ দিছিলাম মেট্রিকের ভয়ে। জুবায়ের অর্নব মাঝখানে সেই ভয় ফিরাইয়া আনছিলো এখন আবার তুমি আনলা।
    মজা করলাম। লিখতে থাকো। অল্প স্বল্প জ্ঞান অর্জন যদি করতে পারি খারাপ কি।

    জবাব দিন
  3. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    দারুণ উদ্যোগ, হামীম
    তবে তুমি একদম টেক্সট বইয়ের মত করে না লিখে খানিকটা গল্প বলার ঢংয়ে যদি জিনিসগুলোর তথ্য দিতে পারো তাহলে সবাই আরও আগ্রহ নিয়ে পড়বে। লিখতে থাকো বেশি বেশি।

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    একদম টেক্সট বইয়ের মত করে না লিখে খানিকটা গল্প বলার ঢংয়ে যদি জিনিসগুলোর তথ্য দিতে পারো তাহলে সবাই আরও আগ্রহ নিয়ে পড়বে। লিখতে থাকো বেশি বেশি।

    :thumbup: :thumbup:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    লেখা ভালো হইছে। শেয়ার দিছি ফেসবুকে।
    একবার ভাব্লাম তোরে বলি এইটা কি প্রোফাইল পিকচার দিছিস।
    পরেই মনে হইল মাইনষে যখন প্রোফাইল পিকচারে মসজিদ বা আয়া দেয় তখন ত প্রতিবাদ করি না। ক্যারি অন।
    খালি দোযগে বাঁশ খাওার সময় আমার নাম নিস না তোরে উৎসাহ দিছি বইলা। দুনিয়াতেই অনেক বাশের উপর আছি। বেহেশতে ঐশ্বরিয়া আর মধুবালার কোলে মাথা রাইখা আঙ্গুর খাইতে চাই; আর গান শুনুম আরবি; পেটনৃত্য সহযোগে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।