কেউ বলেন তিনি আধুনিকতম কবি; সময়ের অনেক আগেই জন্ম নেওয়া সাহিত্যিক। রবীন্দ্র-যুগের উদ্ভাস কালে জন্মেও তিনি ছিলেন রবীন্দ্র-ছায়ার বাইরে। কেউ বলেন বিষণ্ণতার কবি; লেখনীর পরতে পরতে বিষণ্ণতার-চাপা দুঃখের বীজ বুনে যান; মন খারাপের ছায়ায় লুকিয়ে থাকা ছত্র লিখে যান কালজয়ের জন্য। এতটা অবশ্য বুঝে উঠতে পারি না। আমার জন্য তিনি জীবনের কবি, মন খারাপের কবি, প্রেমের কবি… সৃষ্টির কবি-মৃত্যুর কবি।
কি অবলীলায় তিনি বলে ফেলেনঃ
আলো — অন্ধকারে যাই — মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাছ তুচ্ছ হয়, পণ্ড মনে হয়,
সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়! (বোধ)
বনলতা সেনের প্রতীক্ষায় যিনি হাজার বছর অপেক্ষা করেন; মুগ্ধ হয়ে আমি সেই অপেক্ষার প্রহরালাপ জেনে নেই-
হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো;
চারি দিকে চিরদিন রাত্রির নিধান;
বালির উপরে জ্যোৎস্না — দেবদারু ছায়া ইতস্তত
বিচূর্ণ থামের মতো: দ্বারকার — দাঁড়ায়ে রয়েছে নত, ম্লান।
শরীরে ঘুমের ঘ্রাণ আমাদের ঘুচে — গেছে জীবনের সব লেনদেন;
‘মনে আছে?’ শুধালো সে — শুধালাম আমি শুধু, ‘বনলতা সেন?’ (হাজার বছর শুধু খেলা করে)
ছেলেবেলায় কবিতার প্রতি তেমন সম্প্রীতি ছিল না; হয়তো পরীক্ষার খাতায় কবিতার প্রথম/শেষ আট লাইনের ছেপে দেবার জন্য মুখস্থকরণের কারণে। ভালো লাগাটা শুরু হলো যখন কেবল পড়বার জন্যই পড়তাম। ভালো লাগাটাকে ভালোবাসায় রূপ দেন তিনি। এখন নিয়মিত কবিতা পড়া হয়; নিজের তাগিদে পড়ি– হর্ষে পড়ি, বিষাদেও পড়ি; বিষণ্ণতার নিকষ প্রহরেও পড়া হয় কবির মন্ত্রসম শব্দচয়ন। আপন মনেই অজান্তেই আওড়াতে থাকিঃ
পরী নয়, মানুষও সে হয়নি এখনও;
বলেছে সে, কাল সাঝরাতে
আবার তোমার সাথে
দেখা হবে?–আসিবে তো?–তুমি আসিবে তো?
দেখা যদি পেত !
নিকটে বসায়ে
কালো খোঁপা ফেলিত খসায়ে–
কি কথা বলিতে গিয়ে থেমে যেত শেষে
ফিক করে হেসে!
তবু, আরো কথা
বলিতে আসিত–তবু, সব প্রগলভতা
থেমে যেত!
খোঁপা বেঁধে, ফের খোঁপা ফেলিত খসায়ে–
সরে যেত, দেয়ালের গায়ে
রহিত দাঁড়ায়ে!
রাত ঢের–বাড়িবে আরো কি
এই রাত!–বেড়ে যায়, তবু চোখাচোখি
হয় নাই দেখা
আমাদের দুজনার!–দুইজন, একা !
(পরস্পর)
_______________________________________________________
শুভ জন্মদিন জীবনানন্দ দাশ। আপনি বার বার ফিরে আসবেন আপনার সৃষ্টিতেই।
শিরোনামটুকুর জন্য কামরুল ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা এই পোষ্টের জন্য।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
শুভ জন্মদিন জীবনানন্দ দাশ। আপনি বার বার ফিরে আসবেন আপনার সৃষ্টিতেই।
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
"আকাশ ছড়ায়ে আছে নীল হয়ে আকাশে- আকাশে"
আর কেউ কখনো এইভাবে আকাশকে এতোটুকু বিশালতা নিয়ে আঁকতে পারবে?
ভাগ্যিস বাংলা আমার মাতৃভাষা, তাই জীবনানন্দের কবিতা পড়ার সৌভাগ্য হইসিল!
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
সব বস পাবলিকরা দেখি এই মাসে জন্মাইসে। এই মাসে জন্ম নিয়ে আমিও ধন্য।
রকিব বন্ধু এই উপলক্ষে বাঁশি বাজানো হোক।
Reza .'সব বস পাবলিকরা দেখি এই মাসে জন্মাইসে। এই মাসে জন্ম নিয়ে আমিও ধন্য।'...tomar montobbo er jonno dhonnobad.. 😀
ধন্যবাদ রকিব। বেশ কয়েকটা কবিতা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।
বিলম্বিত শুভেচ্ছা কবিকে!
কবিতা পড়ি কম, বুঝি আরো কম 😕 তবু কারো প্রিয় কিছু কবিতা নিয়ে এরকম লেখা পড়তে বেশ ভালোই লাগে 🙂
জীবনানন্দ আমার প্রিয় কবিদের একজন।
তবে উনার জন্ম তারিখ বা সাল নিয়া ধোয়া আছে। অনেকে বলেন ১৮৯৮ আবার অনেকে ১৮৯৯। যেমন ধোয়া আছে তার মৃত্যু নিয়ে। আত্মহত্যা না নিছক দুর্ঘটনা!
আর বনলতা সেন এডগার এলান পোর হেলেন কবিতা অনুসরণে লেখা। তাতে কি?
হাওয়ার রাত, হায় চিল, অন্ধকার, আট বছর আগের একদিন, নির্জন স্বাক্ষর, অবসরের গান নিঃসন্দেহে বাঙলা সাহিত্যের মহত্তম কবিতা।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
কবির জন্য শুভেচ্ছা।
অফ টপিকঃ
রকিব,
তোমার কাছে আমার কিন্তু এক কাপ গরম চা পাওনা আছে।
আমার শেষ লেখাটি পড়বার জন্য (অরণ্যের... শেষ পর্ব) আমন্ত্রণ দিয়ে গেলাম।
🙂
সৈয়দ সাফী
পাওনা চা দেশে এসেই খাওয়াবো- কথা দিচ্ছি ভাইয়া।
কেমন আছেন আপনি?
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..